পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
জ্বালানি খরচ কমিয়ে আনতে এবং সহজলভ্য হওয়ায় বাসাবাড়িতে এবং যানবাহনে সিএনজি (এলএনজি) গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহার দিন দিন বেড়ে চলেছে। দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ ও পাইপলাইনে গ্যাসের চাপ কমে আসায় গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহার বেড়ে চলেছে। গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সাথে এর বিস্ফোরণে ভয়াবহ দুর্ঘটনার হারও বাড়ছে। গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার, সংযোজন, মাননিয়ন্ত্রণ ও পুরনো সিলিন্ডার রি-টেস্টিংয়ে সরকারি কিছু নিয়ম-নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে তা কেউই মানছে না। ফলে মানহীন গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের খেসারত দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। গত শনিবার কুমিল্লায় সিএনজি চালিত অটোরিক্সার সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ৫ যাত্রী অগ্নিদগ্ধ হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে। গত বছরের জুনে কক্সবাজারের চকোরিয়ায় সিএনজি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ৮ জন এবং গত ফেব্রæয়ারীতে সিরাজগঞ্জে বাসাবাড়িতে রান্নাঘরের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে একই পরিবারের ৭ জন অগ্নিদগ্ধ হওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ছোটখাট সিলিন্ডার দুর্ঘটনা ঘটছেই। সিলিন্ডারের চাহিদাবৃদ্ধির সাথে এর ব্যবসা বৃদ্ধিতে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী ও সিএনজি কনভারশন সেন্টার পদ্ধতি ও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা নিয়ে যেনতেনভাবে গ্যাস সিলিন্ডার রি-ফুয়েলিং ও সিএনজি কনভার্ট করার কারণে একেকটি সিএনজি চালিত গাড়ী যেন চলন্ত টাইমবোমায় পরিনত হচ্ছে।
একেকটি সিএনজি সিলিন্ডারে গ্যাস ভরতে গ্যাসকে কমপ্রেসড করতে প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে ৩২শ’ পাউন্ড চাপ সৃষ্টি করতে হয়। পুরনো মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডারে এমন উচ্চচাপে গ্যাস ভরার কারণে এসব সিলিন্ডার খুবই ঝুঁকির মধ্যে থাকে। সেই সাথে সিলিন্ডার ক্যাপ, বাল্ব ও হোসপাইপের মান ও লিকেজ থেকেও গ্যাস দুর্ঘটনা হয়ে থাকে। ব্যাপক দাহ্য এবং বিস্ফোরণের আশঙ্কা থাকায় গ্যাস সিলিন্ডারের মাননিয়ন্ত্রণের কঠোর নীতিমালা ও বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গাড়ীর ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয়ার ক্ষেত্রে সিএনজি সিলিন্ডারের মান ও রি-টেস্টিংয়ের বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। প্রথমত: গ্যাস সিলিন্ডার রি-ফুয়েলিং ও কনর্ভাশনের ক্ষেত্রে কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরকে নিশ্চিত করতে হবে। নিয়মিত তদারকির মধ্য দিয়ে মাননিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য দায়ী ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতা আওতায় আনার কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে সিএনজি চালিত ব্যক্তিগত গাড়ী, সিএনজি অটোরিক্সা এবং গণপরিবহণের ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয়ার ক্ষেত্রে সিএনজি সিলিন্ডারের মান ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা জরুরী হয়ে পড়েছে।
সিএনজি সিলিন্ডারের মান নিয়ন্ত্রণ একই সঙ্গে ভোক্তা অধিকার, বিএসটিআই, জননিরাপত্তা, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ এবং বিষ্ফোরক অধিদফতরের দায়িত্ব। সারাদেশে বেশ কিছু অবৈধ সিএনজি কনভার্সন সেন্টার গড়ে উঠেছে। অবৈধ উপায়ে মানহীন রি-ফুয়েলিং কারখানায় ২০-২৫ বছরের পুরনো সিলিন্ডারে গ্যাস ভরে গাড়িতে ও বাসাবাড়ির জন্য সরবরাহ করা হচ্ছে। এমনকি অপেক্ষাকৃত অনেক দুর্বল অক্সিজেন সিলিন্ডারেও গ্যাস ভরে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। মানহীন ও নকল গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের মাধ্যমে গাড়ীর মালিকরা ১০-১৫ হাজার টাকা সাশ্রয় করার বিনিময়ে গাড়ীর চালক ও যাত্রিদের চরম ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছেন। তিন হাজার থেকে ৫ হাজার বা তার বেশি পিএসআই ক্ষমতাসম্পন্ন ভাল মানের ইস্পাতের সিলিন্ডারের বদলে মানহীন নকল সিলিন্ডার উৎপাদন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, গাড়ীর ফিটনেস সার্টিফিকেটের জন্য প্রতি ৫ বছর অন্তর সিএনজি সিলিন্ডার রি-টেস্টিংয়ের বাধ্য বাধকতা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। বিশেষত অক্সিজেন সিলিন্ডারকে গ্যাস সিলিন্ডারে পরিনত করার মত ঝুঁকিপূর্ণ মুনাফাবাজির ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। বাসাবাড়িতে মানহীন গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে বেশ কিছু মর্মান্তিক ঘটনা গতে কয়েক বছরে ঘটেছে। বড় ধরনের বিস্ফোরণ ও হতাহতের ঘটনা ছাড়াও গ্যাসপাইপের সামান্য লিকেজ থেকে ছড়িয়ে পড়া গ্যাসে পরিবারে বড় ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়ার আশঙ্কা কথা বলছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। অননুমোদিত সিএনজি রিফুয়েলিং এবং কনভার্সন সেন্টারগুলো বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। মানহীন গ্যাস সিলিন্ডার উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহারের সাথে জড়িত সকলকেই আইনগত জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।