পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গত ৬ জানুয়ারি মার্কিন সিনেট ভবন আক্রান্ত হলো রিপাবলিকান পার্টির একদল সমর্থক দ্বারা। সংখ্যায় তারা খুব কম ছিলেন না। এ রকম ঘটনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইতোপূর্বে আর কখনো ঘটেনি। অনেকেই এর জন্য দোষারপ করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। কিন্তু এত লোক হঠাৎ ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথায় এসে সিনেট ভবন আক্রমণ করেছে ভাবলে মনে হয় ভুল করা হবে। এর মূলে আছে মার্কিন জনমতের গভীর রাজনৈতিক বিভক্তি। এক সময় বলা হতো, মার্কিন রাজনীতি হলো অস্পষ্ট দ্বিদলীয়। কারণ, রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটদের মধ্যে ছিল না বিরাট কোনো মতবাদিক বিরোধ। এখন আর সেটি আগের মতো বলা যাচ্ছে না। ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশেষভাবে তুলেছেন মার্কিন জাতীয়তাবাদের যুক্তি। যেটা ঠিক আগে এভাবে কেউ ওঠায়নি। বর্তমান মার্কিন জাতীয়তাবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে শ্বেতকায় ইংরেজি ভাষী প্রটেস্টান খ্রিস্টান মার্কিন জাতীয়তাবাদ হিসাবে। ডোনাল্ড ট্রাম্প গত নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ক্যাথলিক খ্রিস্টান, স্প্যানিস ভাষী লাতিন আমেরিকানদের বিপক্ষে আওয়াজ তুলে। তিনি বলেছিলেন, মেক্সিকো থেকে স্প্যানিস ক্যাথালিক খ্রিস্টানদের আগমন বন্ধ করতে হবে। নইলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শ্বেতকায় ইংরেজি ভাষাভাষী প্রটেস্টান স্বার্থ সংরক্ষিত হতে পারবে না। ডোনাল্ড ট্রাম্পের পিতৃ পুরুষ হলেন প্রটেস্টান খ্রিস্টান। মা হলেন স্কট প্রটেস্টান খ্রিস্টান। হিসপ্যানিক ভাষী ক্যাথালিক খ্রিস্টানরা দলে দলে আসছে ভাগ্যের খোঁজে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। যেটা ইংরেজি ভাষাভাষী প্রটেস্টান শ্বেতকায় খ্রিস্টীয়দের করে তুলেছে উদ্বিঘ্ন। ডেমোক্র্যাকটরা এবার নির্বাচনে জিতেছেন। তারা ভোট পেয়েছেন ৭ কোটি ৯২ লাখ। রিপাবলিকানরা ভোট পেয়েছেন ৭ কোটি ২২ লাখ। ভোটের ব্যবধান হলো ৭০ লাখ। তাই ডেমোক্র্যাটদের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়াকে বলা যাচ্ছে না ভূমিধ্বস বিজয়। মনে হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মার্কিন শ্বেতকায় প্রটেস্টান জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে আরম্ভ হতে পারে ডেমোক্র্যাটদের জোর গৃহবিবাদ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ আমাদের ভাবিত করছে। কারণ, বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ভোটারের সংখ্যা হলো চার লাখের উপর। আমেরিকার গৃহবিবাদে জড়িয়ে পড়ে তারা হতে পারে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।
এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যা আমাকে বিশষভাবে বিস্মিত করেছে, তা হলো, কমলা হ্যারিসের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হতে পারা। ইতোপূর্বে কোনো নারী যে এই পদে নির্বাচিত হতে পারেন, তা ভাবা যায়নি। কমলা হ্যারিসের পিতা হলেন একজন জ্যামাইকান। যিনি উচ্চ শিক্ষা লাভের লক্ষ্যে আসেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি ছিলেন অর্থনীতিতে খুবই ভালো ছাত্র। তিনি অর্থনীতিতে পিএইচডি করেন ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলি ইউনিভার্সিটি থেকে। কমলা হ্যারিসের মা ভারতের তামিল মেয়ে। তিনিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসেন উচ্চশিক্ষা লাভ করতে। তিনি ছিলেন জীববিজ্ঞানের ছাত্রী। তিনিও ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলি ইউনিভার্সিটি থেকে রাজনীতির উপর গবেষণা করে লাভ করেন পিএইচডি ডিগ্রি। এসময় তিনি বিবাহ করেন কমলা হ্যারিসের পিতা ডোনাল্ড জে হ্যারিসকে। ডোনাল্ড জে হ্যারিসের ওরসে দুই কন্যার জন্ম হয়। একজন হলেন কমলা হ্যারিস। আর একজন হলেন মায়া হ্যারিস। কমলা হ্যারিসের বয়স যখন ৭ বছর, তখন তার পিতা-মাতার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। তার মা শ্যামলা গোপালাম তার দুই কন্যাকে মানুষ করেন নিজে চাকরি করে। তিনি চাকরি করতে যান কানাডার কুইবেক প্রদেশে। কমলা ও তার ছোট বোন মায়া কুইবেকে পড়াশোনা করেন প্রধানত ফরাসি ভাষার মাধ্যমে। পরে তার মা চাকরি পেয়ে কানাডা থেকে আবার ফিরে আসেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মা ছিলেন স্কট। পিতা ছিলেন কেনিয়া থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য যাওয়া একজন মুসলমান। বারাক ওবামার দেহে কিছু শ্বেত রক্ত ছিল। কিন্তু কমলা হ্যারিসের দেহে তা নেই। কমলা হ্যারিস বিবাহ করেছেন ডং এম হফ নামক একজন ইহুদি-আমেরিকানকে। ইনি কমলা হ্যারিসকে বিবাহ করার আগে বিবাহ করেছিলেন একজন চিত্র তারকাকে। তার প্রথম পক্ষের গর্ভজাত দুই সন্তান রয়েছে। কমলা হ্যারিস তাদের সৎ মা। কমলা হ্যারিসের জীবনী খুবই অদ্ভুত। তিনি এর আগে ছিলেন ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল। পরে তিনি ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে সিনেটর নির্বাচিত হন। এখন তিনি ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে দাঁড়িয়ে হতে পেরেছেন মার্কিন যুক্তরারষ্ট্রর ভাইস প্রেসিডেন্ট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাদা-কালোর বিরোধ হয়নি তার নির্বাচনের পথে কোনো বাধা। কিন্তু আগামিতে কী ঘটবে বলা যাচ্ছে না। ডোনাল্ড ট্রাম্প হেরেছেন। কিন্তু মার্কিন শ্বেতকায় ইংরেজি ভাষাভিত্তিক প্রটেস্টান্ট খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদের ধাক্কা যুক্তরাষ্ট্রকে শেষ পর্যন্ত কোথায় নিয়ে যায়, সেটাই দেখার বিষয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।