Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যুক্তরাষ্ট্রে বিচারের হাত থেকে অব্যাহতি পেলেন এমবিএস

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ নভেম্বর, ২০২২, ২:০১ পিএম

যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ বলছে, সউদী আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে (পশ্চিমা বিশ্বে তিনি এমবিএস নামে পরিচিত) আমেরিকার কোন আদালতে বিচারের সম্মুখীন করা যাবে না। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর ও বিচার বিভাগ এ ঘোষণা দিয়েছে।

দু'হাজার আঠারো সালে খুন হওয়া সউদী ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিক জামাল খাসোগজির প্রেমিকা হাতিস চেঙ্গিজ ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট আদালতে একটি মামলা করেছিলেন। তাতে তিনি যুবরাজ মোহাম্মদ ও অন্য কিছু সউদী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে জামাল খাসোগজিকে “অপহরণ করে বেঁধে মাদক প্রয়োগ ও অত্যাচার এবং হত্যা করার” অভিযোগ এনে মামলা করেন। তবে এখন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর ও বিচার বিভাগের আইনজীবীরা বলছেন, যুবরাজ মোহাম্মদ যেহেতু একই সাথে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী – তাই একজন সরকার প্রধান হিসেবে তিনি আমেরিকায় করা কোন মামলার বিচারের হাত থেকে রেহাই পাবেন।

ইস্তাম্বুলের সউদী কনস্যুলেটের ভেতরে ২০১৮ সালের অক্টোবরে খাসোগজিকে হত্যা করা হয়। মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা বলেছে, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানই এ হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে তারা বিশ্বাস করে। যুবরাজ মোহাম্মদ বরাবরই খাসোগজির হত্যাকাণ্ডে কোন ভূমিকা রাখার কথা অস্বীকার করে আসছেন। কিন্তু আদালতে দেয়া দলিলপত্রে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর বলেছে, সউদী যুবরাজ সেদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নতুন দায়িত্ব নেবার ফলে তিনি বিচার থেকে অব্যাহতি পাবেন। হাতিস চেঙ্গিজ এর পর টুইটারে এক বার্তায় লিখেছেন, এই রুলিংএর মাধ্যমে ‘জামাল আজ আবার মারা গেল।’

চেঙ্গিজ এবং জামাল খাসোগজির প্রতিষ্ঠিত অধিকার সংগঠন ‘ডেমোক্রেসি ফর দি আরব ওয়ার্ল্ড নাউ’ (ডন) - দু পক্ষ মিলে এ মামলাটি করেছে এবং তারা এই হত্যার জন্য সউদী যুবরাজের কাছ থেকে অজ্ঞাত ক্ষতিপূরণ দাবি করছে। মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেছেন, আজ যে বিচার থেকে ‘অব্যাহতি’ দেয়া হলো তা অবশেষে ‘বিচারহীনতায়’ পরিণত হতে যাচ্ছে।

সউদী আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুলআজিজ আল সউদ ২০১৭ সালে তার পুত্র প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে যুবরাজ বলে ঘোষণা করেন। সাঁইত্রিশ বছর বয়স্ক যুবরাজ মোহাম্মদকে এ বছর সেপ্টেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের আইনজীবীরা বলছেন, বিদেশী কোন সরকারের ক্ষমতাসীন প্রধান হিসেবে যুবরাজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোন আদালতের বিচারের সম্মুখীন হওয়া থেকে অব্যাহতি পান। আইনজীবীরা বলেন, সরকারপ্রধানদের কোন ভিন্ন দেশের আদালতে বিচার থেকে অব্যাহতি পাওয়াটা আন্তর্জাতিক আইনে প্রতিষ্ঠিত একটি বিষয়। তবে বাইডেন প্রশাসন গুরুত্ব দিয়ে বলেছে, এই রুলিংএর মাধ্যমে কাউকে নির্দোষ বলা হচ্ছে না।

সউদী আরব বলে আসছে - একদল এজেন্টের অননুমোদিত অপারেশনের ফলে ওয়াশিংটন পোস্টের সাবেক সাংবাদিক খাসোগজি নিহত হন – যাদের পাঠানো হয়েছিল তাকে দেশে ফিরে আসার জন্য প্রভাবিত করতে। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন - গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে যুবরাজ মোহাম্মদ এতে জড়িত ছিলেন বলে তারা মোটামুটি নিশ্চিত।

জামাল খাসোগজি হত্যাকান্ড সারা দুনিয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল এবং এ ঘটনা যুবরাজ মোহাম্মদ ও তার দেশের ভাবমূর্তিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। সউদী-মার্কিন সম্পর্কেও বড় অবনতি হয়। জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হবার পর মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে কথা বলতে অস্বীকার করেন। তবে বিবিসির বিশ্লেষক ফ্র্যাংক গার্ডনার বলছেন, এগুলোর পিছনে ওয়াশিংটন যে সউদী নেতৃত্বের সাথে তাদের সম্পর্ক ভালো করতে চায় সেই ইচ্ছারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। এ বছর জুলাই মাসেই মি বাইডেন সউদী আরব সফরে যান এবং তার আগে তিনি দুদেশের সম্পর্ক ‘পুনর্নবায়নের’ কথা বলেন।

ফ্র্যাংক গার্ডনার বলছেন, এটা কোন গোপন ব্যাপার নয় যে প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং যুবরাজ মোহাম্মদ – যাকে এমবিএস বলেও ডাকা হয় – পরস্পরকে পছন্দ করেন না। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে জ্বালানির দাম কমিয়ে আনতে তেলের উৎপাদন বাড়াতে অস্বীকার করে সউদী আরব – যাকে ওয়াশিংটনকে পাত্তা না দেবার দৃষ্টান্ত হিসেবেই দেখা হয়েছিল। তার ওপর ইদানিং রাশিয়া আর চীনের সাথে সউদীদের সম্পর্ক ক্রমাগত উষ্ণতর হতে দেখা যাচ্ছে।

ফ্র্যাংক গার্ডনার বলছেন, সউদী আরব যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত মিত্র এবং তাদের অস্ত্রের ক্রেতা, তাই ওয়াশিংটন কখনো এমবিএসের গ্রেফতারের পথ সুগম করবে এমনটা হবার সম্ভাবনা অতি ক্ষীণই ছিল – তবুও তিনি যদি এই পন্থায় বিচার থেকে অব্যাহতি পেয়ে যান তাহলে তা সউদী রাজদরবারে কিছুটা হলেও স্বস্তি তৈরি করবে। সূত্র: বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাষ্ট্র


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ