Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতীয় হাঁস-মুরগির অনুপ্রবেশ ঠেকাতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৫ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০৬ এএম

বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে এখনো ভারতসহ বিভিন্ন দেশের সাথে বিমান যোগাযোগ খুব সীমিত রয়েছে। ভারতে এখনো প্রতিদিন শত শত লোক করোনাভাইরাসে মারা যাচ্ছে। এরই মধ্যে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে হাঁস-মুরগি ও পাখিদের মধ্যে বার্ড ফ্লু নামে পরিচিত এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। কয়েকদিন আগে আনন্দবাজারসহ ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ, হিমাচল, হরিয়ানা ও গুজরাটে ক্রমবর্ধমান হারে বার্ড ফ্লু ছড়িয়ে পড়ার খবর জানা যায়। হাঁস-মুরগি ও পাখিদের মাধ্যমে এই ভাইরাস দ্রুত প্রতিবেশী রাজ্যগুলোর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় হাঁস-মুরগি আমদানি চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। এ কারণে দেশীয় পোল্ট্রিশিল্প অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ পোল্ট্রিশিল্পের স্বার্থ রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের তরফ থেকে ভারতীয় হাস-মুরগি ও ডিম আমদানি বন্ধের দাবি জানানো হলেও বৈধ-অবৈধ পথে হাঁস-মুরগি ও ডিম আমদানি অব্যাহত রয়েছে। এখন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়া বার্ড ফ্লু ভারত থেকে অনুপ্রবেশ করা এসব হাঁস মুরগির মাধ্যমে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়লে দেশের পোল্ট্রিশিল্পের জন্য তা বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তবে সরকার ইতোমধ্যেই ভারতীয় হাঁস-মুরগির অনুপ্রবেশ রোধে তিনটি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছে বলে গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত খবরে জানা যায়।

ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি খবরে বলা হয়, গত শনিবার বার্ড ফ্লু উপদ্রুত রাজ্যগুলোতে একদিনেই ১২০০’র বেশি পাখির মৃত্যু হয়েছে। মহারাষ্ট্রের একটি পোল্ট্রি খামারে ৯০০ মুরগি মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এহেন বাস্তবতায় ভারত থেকে হাঁস-মুরগি ও ডিমের অনুপ্রবেশ বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ ও নজরদারি জোরদার করার কোনো বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে যে সব নির্দেশনা ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা জরুরি। সার্বিক বিবেচনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য ও নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়ের সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়ে সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে ভারত থেকে কোনো হাঁস-মুরগি, পাখি এবং ডিম প্রবেশ রোধে কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসামসহ বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে বার্ড ফ্লু ছড়িয়েছে কিনা তা এখনো নিশ্চিত হওয়া না গেলেও পাখির মাধ্যমে সহজেই এ রোগ হাঁস-মুরগির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার আগেই সর্বোচ্চ সতর্কতা নিশ্চিত করা জরুরি। প্রাণীসম্পদ অধিদফতর এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ ও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শুধু বার্ড ফ্লুর কারণেই নয়, দেশের পোল্ট্রিশিল্পের স্বার্থ রক্ষায় ভারতীয় হাঁস-মুরগি ও ডিমের অনুপ্রবেশ বন্ধের স্থায়ীভাবে নীতিগত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

সীমান্তবর্তী রাষ্ট্র হওয়ায় ভারতের সাথে বাংলাদেশের বড় আকারের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যের প্রায় পুরোটাই ভারতের অনুকূলে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কোন্নয়ন এবং বাণিজ্য বৈষম্য কমিয়ে আনতে কখনো ভারতের সদিচ্ছার প্রতিফলন দেখা যায়নি। উপরন্তু কৃষিপণ্যে আমাদের আত্মনির্ভরশীলতার সম্ভাবনা ঠেকিয়ে রাখতেই ভারত ও বাংলাদেশের একটি মধ্যস্বত্বভোগীমহল সদা তৎপর। ধান কাটার ভরা মওসুমে ভারত থেকে নি¤œ মানের চাল আমদানি করে দেশের কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত করা, পেঁয়াজের ঘাটতি মেটাতে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে গিয়ে যখন তখন নিষেধাজ্ঞা ও বাড়তি ট্যাক্স চাপিয়ে দিয়ে ভোক্তাদের পকেট থেকে বাড়তি শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া এবং পেঁয়াজের ভরা মওসুমে ভারতীয় পেঁয়াজের অনুপ্রবেশের সুযোগ করে দিয়ে দেশের পেঁয়াজ চাষিদের ক্ষতিগ্রস্ত করার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত দেখা যাচ্ছে। তবে এবার দেশের ভোক্তাদের একটি অংশ ভারতীয় পেঁয়াজের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। মোদি সরকার বাংলাদেশে গরু রফতানি নিষিদ্ধ করার পর দেশীয় খামারিরা দেশকে গোসম্পদে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে কৃতিত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। একইভাবে মৎস্য ও পোল্ট্রিশিল্পেও বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশীয় উৎপাদন ও চাহিদার নিরীখে ভারতীয় কৃষিপণ্য, পোল্ট্রি ও গবাদিপশু আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা গেলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের মাধ্যমে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। পোল্ট্রিশিল্প দেশের অন্যতম বড় বিনিয়োগ এবং শ্রমঘন খাত। এ খাতে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান ও দেশীয় উদ্যোক্তাদের হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। ভারতীয় পণ্যের অনুপ্রবেশ যেন দেশের পোল্ট্রিশিল্প খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। ভারতে ছড়িয়ে পড়া বার্ড ফ্লু যেন আমাদের হাঁস-মুরগি ও পাখিদের মধ্যে সংক্রমিত হতে না পারে তার জন্যও কার্যকর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন