মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
আমেরিকার নেতৃত্বে মধ্য প্রাচ্য জুড়ে মিলিশিয়াদের নেতৃত্ব দানকারী ইরানী জেনারেল কাসেম সুলাইমানিকে হত্যার বছর পূর্তিতে গেল জানুয়ারীর ৩ তারিখে আমেরিকা প্রতিশোধের আশঙ্কা করছিল। তবে, ইরানের প্রতি শান্তির ইঙ্গিত হিসাবে আমেরিকান বিমানবাহী ইউএসএস নিমিটজকে কয়েক দিন আগে পার্সিয়ান উপসাগর থেকে দেশে ফেরার আদেশ দেয়া হয়। ৩ জানুয়ারি ঘটনাবিহীন কাটলেও, ৪ জানুয়ারী ইরান জানায় যে, তারা পুনরায় ইউরেনিয়ামকে ২০ শতাংশ বিশুদ্ধ করে মজুদ করতে শুরু করেছে, যার বিধ্বংসী ক্ষমতা সমরাস্ত্রের সর্বোচ্চ ১০-এর মধ্যে ৯ মাত্রার।
২০১৮ সালে আমেরিকার বাতিল হওয়া ২০১৫ সালের ইরান এবং ৬টি বিশ্ব পরাশক্তির মধ্যে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তির শর্তাবলীর অধীনে ইরানকে পারমাণবিক শক্তি মজুদ করতে নিষেধ করা হয়। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সর্বোচ্চ চাপ ও নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় ইরান ইতোমধ্যে গত দুই বছরে এই চুক্তির বেশ কয়েকটি অংশ লঙ্ঘন করে। পরে গত ২৭ নভেম্বর ইরানের শীর্ষ পারমাণবিক বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহকে হত্যা করা হলে ইরানের সংসদ প্রতি বছর কমপক্ষে ১শ’ ২০ কেজি ২০ শতাংশ পরিশোধিত ইউরেনিয়াম উৎপাদন ও সংরক্ষণ করার অনুমোদন দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে একটি আইন পাস করে।
আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থাগুলি মনে করে যে, ২০০৩ সালে ইরান একটি গোপন পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছে। বরং আমেরিকাকে পারমাণবিক চুক্তিতে ফিরে আসতে বাধ্য করার লক্ষ্যে দেশটি একটি ক্ষেত্র তৈরি করছে। এ প্রেক্ষিতে, ইরান কঠোরভাবে বিধিনেষেধ মানতে রাজি থাকলে আমেরিকার নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পুনরায় পারমাণবিক চুক্তি নবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে বাইডেন তার কথা মতো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করলে ইরানও নিজের কৌশল প্রয়োগ করতে মরিয়া। দেশটি একে একে আরও কৌশল প্রয়োগের ইঙ্গিত দিয়েছে। গত ৫ জানুয়ারী ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার এক মুখপাত্র উল্লেখ করেছেন যে, ইরান ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারে। এটি এমন একটি স্তর যার কোনও বোধগম্য নাগরিক ব্যবহার না থাকলেও পামানবিক বোমার তৈরির পথটি সংক্ষিপ্ত করতে পারে।
পাশাপাশি, ইরানের ইসলামিক রেভুল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) দক্ষিণ কোরিয়ার একটি তেলবাহী ট্যাঙ্কার জব্দ করার জন্য একই দিন অর্থাৎ ৪ জানুয়ারী বেছে নেয়। আইআরজিসির সাথে যুক্ত সংবাদ সংস্থা তাসনিমে স্পষ্ট করে বলা হয়, ‘দক্ষিণ কোরিয়ায় ইরানের অবরুদ্ধ অর্থ মুক্ত করার পক্ষে জাহাজটি আটকানো একটি ভাল অজুহাত, যা প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার।’ সেইসাথে, ইরানি সংবাদপত্র তেহরান টাইমস বলেছে যে, আমেরিকান নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য ইরান এই তহবিল ব্যবহার করতে চায়। দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইরানের মধ্যে বর্তমানে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে।
এদিকে, ইরান যখন নিজের অবস্থান পুনরুদ্ধারে একের পর এক বিরোধে জড়াচ্ছে, তখন অন্যদিকে সউদী শহর আল-উলাতে উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিলের শীর্ষ সম্মেলনে ইরানের প্রতিদ্ব›দ্বীরা ইরানকে ঠেকাতে তাদের নিজেদের মধ্যকার বিরোধ মেটানোতে মনোনিবেশ করেছে। সউদীতে অবতরণ করার পর, কাতারের আমিরকে সউদী ক্রাউন প্রিন্স ও শাসক মোহাম্মদ বিন সালমান অভ্যর্থনা জানান। তাদের পরস্পরকে আলিঙ্গন করার দৃশ্য এক বছর আগেও অকল্পনীয় ছিল। ২০১৭ সালে সউদী আরব এবং বাহরাইন, মিসর এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত তাদের সীমানা এবং আকাশসীমা বন্ধ করে কাতারকে এক ঘরে করে দেয়।
কাতারের ওপর থেকে অবরোধ তুলে নিতে তারা দেশটিকে ১৩টি শর্ত দেন। সেগুলির মধ্যে ইরান ও রাজনৈতিক ইসলামপন্থীদের উভয়ের সাথে সম্পূর্ণভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং কাতারের প্রভাবশালী স্যাটেলাইট-নিউজ চ্যানেল আল জাজিরা বন্ধ করার জন্য বিশেষ চাপ ছিল। তবে কাতার তাতে রাজি হয়নি। তবুও, মধ্যপ্রাচ্যের আধিপত্যের লড়াইয়ে ইরানকে মোকাবেলা করার জন্য চারটি দেশ কাতারের সাথে সম্পূর্ণভাবে ক‚টনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে সম্মত হয়েছে। সম্ভবত প্রতিদান স্বরূপ কাতারও আল জাজিরা এবং অন্যান্য গণমাধ্যমগুলিতে দেশগুলির বিরুদ্ধে সুর নরম করবে।
ট্রাম্পের জামাতা এবং পরামর্শক জ্যারেড কুশনার সউদীর সম্মতিতে আমিরাত-ইসরায়েল চুক্তির জন্য কয়েক মাস মূল্যবান সময় ব্যয় করেছেন। তবে নভেম্বরে ট্রাম্পের পরাজয়ে তার পরিশ্রম বিফলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বাইডেন এবং তার সহ-ডেমোক্র্যাটরা ইয়েমেনের ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ এবং ২০১৮ সালে সউদী সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যা সম্পর্কে ক্ষুব্ধ এবং সউদী আরব তার প্রধান আঞ্চলিক প্রতিদ্ব›দ্বী ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তিতে আমেরিকাকে পাশে পাওয়ার বিষয়ে বাইডেনের ইতিবাচক আচরণে উদ্বিগ্ন। সে কারণে কাতারের ওপর থেকে অবরোধ তুলে নিয়ে সউদীরা ওয়াশিংটনে কিছু রাজনৈতিক সুবিধা অর্জন করেছে, যা তারা সম্ভবত দ্রুতই কাজে লাগাবে। সূত্র : দ্য ইকোনোমিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।