পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
নদীমাতৃক বাংলাদেশের বেশির ভাগ নদীর অবস্থা ভালো নেই। অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ছে অনেক নদী। অনেক নদী হারিয়ে গেছে। একসময়ের খর¯্রােতা নদীর বুকজুড়ে দেখা দিচ্ছে ধু ধু বালুচর। শুকনো মৌসুমে পানি নেই। বর্ষা মৌসুমে এই নদীই আবার দুই কূল ছাপিয়ে দুর্দশার কারণ হয়। বর্ষার পানি ধারণ করার ক্ষমতা নেই বেশির ভাগ নদীর। সুষ্ঠু পরিচর্যার অভাবে নাব্য হারিয়েছে অনেক নদী। এমন অনেক নদী আছে, যে নদীতে একসময় স্টিমারসহ বড় বড় নৌকা চলত, সেসব নদী আজ হেঁটে পার হওয়া যায়। বাংলাদেশের মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা নদীর আজ খুবই করুণ দশা।
চর পড়ে এবং দখল-দূষণের কারণে নদ-নদীগুলো এখন মৃতপ্রায়। নদীর ধারে গড়ে উঠেছে বড় বড় কলকারখানা, নদীতে শত শত বাঁধ। যখন যেভাবে প্রয়োজন তখন সেভাবে নদীকে ব্যবহার করা হচ্ছে। নদী ভরাট করে দখল করার উৎসবে মেতে উঠেছে অনেকে। বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ, এখন এ কথা বলার আর কোনো উপায় নেই। এ দেশ এখন নদীবৈরী দেশে পরিণত হয়েছে।
দেশের স্বার্থে নদী রক্ষা করতে হবে। বাঁচাতে হবে দেশের সব নদী। সঠিক পরিচর্যা করতে হবে। ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। নদী সংস্কার ও পরিচর্যার গুরুত্ব বিবেচনা করেই গত ৩ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় বছরব্যাপী নদী খননের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক সভাপতি শেখ হাসিনা। নদীর পানিপ্রবাহ ঠিক রাখা এবং ভাঙন প্রতিরোধে বড় নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের পুরো বছরের পরিকল্পনা থাকতে হবে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। নদীর প্রবাহ বা পানি ব্যবস্থাপনার ওপর প্রধানমন্ত্রী গুরুত্ব দিয়েছেন। নদীর পানি যখন কমে যায়, তখন চর পড়ে বা অন্যান্য কারণে পানি বেড়ে গেলে ভাঙন শুরু হয়। তাই নদীর প্রবাহ ঠিক রাখতে বড় নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের পুরো বছরের পরিকল্পনার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রকৃতি, জনজীবন, চাষাবাদ প্রায় সবই নদীনির্ভর। তাই বলা হয়, নদী না বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে না; অর্থাৎ বাংলাদেশের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। অথচ বাংলাদেশ সে পথেই এগিয়ে চলেছে। বহু নদী এর মধ্যেই মরে গেছে। বহু নদী মৃত্যুর পথে। নদীগুলোর গভীরতা কমে যাওয়ায় তখন বন্যা ও জলাবদ্ধতা অবধারিত হয়ে পড়ে। হাজার হাজার কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়। প্রধানমন্ত্রী বছরব্যাপী নদী খননের নির্দেশনা দিয়েছেন। তাঁর এই নির্দেশনাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্প নিতে হবে। নদী বাঁচাতে হবে। নদী বাঁচলেই বাংলাদেশ বাঁচবে।
আমাদের জীবন, জীবিকা, সংস্কৃতি, শিল্প-সাহিত্য সবকিছুর সঙ্গে আমাদের নদীগুলো সম্পর্কযুক্ত। হাজার বছর ধরেই এসব নদ-নদী আমাদের কৃষি, প্রকৃতি ও অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে। নদী রক্ষা না করলে তাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রক্ষা পাবে না।
এ জন্য নদী রক্ষাকে অগ্রাধিকার বিবেচনা করে সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে। এ জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারকে নদ-নদী বাঁচাতে খুব দ্রুত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। সরকারি-বেসরকারি প্রকল্পগুলোর কাজের গতি যেমন ত্বরান্বিত করতে হবে, তেমনি এসব কাজের জবাবদিহি বাড়াতে হবে। নদী দখল-দূষণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
নদীবিধৌত জনপদ বলে বাংলাদেশের খ্যাতি ইতিহাস স্বীকৃত। দেশের মানুষ শঙ্কিত বৃহৎ চার নদী পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও তিস্তাসহ ছোট-বড় অসংখ্য নদীর ভবিষ্যৎ নিয়ে। পানিপ্রবাহ এই দেশটির হৃদস্পন্দন। নদী বিপন্ন হলে বাংলাদেশ বিপন্ন হয়ে পড়বে, তা বোঝার জন্য সাধারণ ধারণাই যথেষ্ট।
বাংলাদেশে ছোট-বড় যে তিন শতাধিক নদী আছে সেগুলো আজ বিপন্ন এবং এ বিপন্নতার মূলে রয়েছে নদী দখল করে দখলদারদের ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট, উপনগরী গড়ে তোলার ব্যবসা। ভরাটের কারণে পানি প্রবাহ কমে গেছে ও ক্রমেই কমছে। স্রােতস্বিনী নদীগুলোতে জেগে উঠছে ছোট-বড় অনেক চর। নাব্যতা হারাচ্ছে নদী। দূষণের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে নদী খেকোদের কারণে পানি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ছে এবং ইতোমধ্যে দেশের ছোট-বড় ২৩০টি নদীর মধ্যে ১৭৫টি নদীই মৃতপ্রায়। তাছাড়া প্রতি বছরই দু’টি একটি করে নদী মরে যাচ্ছে বা শুকিয়ে যাচ্ছে। নদীমৃত্যুর নানা কারণ রয়েছে। বেশিরভাগই মানুষের সৃষ্টি।
পানিপ্রবাহের জটিলতার পাশাপাশি আমাদের অপরিণামদর্শী কার্যক্রমও নদীমৃত্যুর অন্যতম কারণ। মানুষের দখল-আগ্রাসনের কারণে প্রায় সব নদীর শরীর দিন দিনই ক্ষীণ হয়ে আসছে। নদী বাঁচাতে দেশের প্রত্যেকটি মানুষকেই সচেতন হতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে এই সীমাহীন নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে। দেশের নদী বাঁচাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সংযুক্তিও দরকার। তবে নিজেরা আগে ঠিক হলে, বিশ্ববাসীর সহযোগিতা চাওয়া যাবে।
প্রকৃতপক্ষে নদীপ্রধান বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষা করতে হলে নদী রক্ষা, তথা নদীর নাব্য রক্ষা করার বিকল্প নেই। টেকসই উন্নয়নেও প্রয়োজন নদী রক্ষা ও পানিখাতে শুদ্ধাচার। নদী বাংলাদেশের প্রাণ। কাজেই দেশের প্রাণশক্তি রক্ষা করতে হলে নদী দখল বন্ধ ও নদী দূষণরোধ করতেই হবে।
লেখক: কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সাবেক সিনিয়র সচিব, জ্বালানি, স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।