পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য এবং নদ-নদীর অস্তিত্বের প্রশ্ন এখন যেকোনো দেশের মৌলক জাতীয় স্বার্থ ও টেকসই উন্নয়নের মূল স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীকে সামনে রেখে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের হিসাব মেলাতে গেলে যে চিত্র বেরিয়ে আসে তা অত্যন্ত হতাশাজনক। গত ৫০ বছর ধরে আমরা অব্যাহতভাবে ভারতের পানি আগ্রাসনের শিকার হচ্ছি। বন্ধুরাষ্ট্রের কথা বলে জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে অনেক সমঝোতা এবং বিসর্জন দিয়ে আমরা ভারতের কাছ থেকে গঙ্গা, তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা পাইনি। এর ফলে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিশাল এলাকায় নদ নদী শুকিয়ে মরুপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দেশের আবাদযোগ্য ভূমি মরুভূমিতে পরিনত হলে অর্থনীতির কোনো সম্ভাবনাই আর কাজে আসবে না। এ কারণে, অভিন্ন নদীর পানিবন্টনসহ ভারতের সাথে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থের বিষয়গুলো নিয়ে নতুন সিদ্ধান্তে আসা সময়ের দাবী। এছাড়া সীমান্ত হত্যা নিয়ে ভারতের দ্বিমুখী আচরণ এবং একতরফা দাবীর বিষয় নিয়ে নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করা বাঞ্চনীয়।
বর্তমান সরকারের আমলে ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতায় উপনীত হয়েছে বলে মাঝে মধ্যেই ভারত ও বাংলাদেশের সরকারি পর্যায় থেকে উচ্চারিত হয়। গত এক দশকে ভারতকে যেসব স্বার্থের প্রশ্নে ছাড় দেয়া হয়েছে তা নজিরবিহীন। গত ৭০ বছরেও অন্য কোনো প্রতিবেশী দেশ থেকে একপাক্ষিক স্বার্থ হাসিল করতে পারেনি ভারত। অথচ ভারত যখন যেভাবে যা চেয়েছে বাংলাদেশ তাই দিয়েছে। বিনিময়ে কিছুই পায়নি। আন্তর্জাতিক নদীর পানির ন্যায্য হিস্যাটুকু দিতেও রাজি নয় দেশটি। দেশের বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষ এ জন্য সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতিকে দায়ী করলেও কিছু বিচ্ছিন্ন ব্যতিক্রম ছাড়া স্বাধীনতাত্তোর প্রতিটি সরকারই প্রতিবেশীদের সাথে ভারতের আধিপত্যবাদী নীতির প্রশ্নে তেমন কোনো রাজনৈতিক-কূটনৈতিক সাফল্য দেখাতে পারেনি। ভারতের কংগ্রেসের সাথে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক সুসম্পর্কের ঐতিহ্য থাকায় আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর দেশের মানুষ আশা করেছিল, ভারতের সাথে চার দশকের অমিমাংসিত ইস্যুগুলোর ন্যায়ভিত্তিক সুরাহা হবে। সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা, মাদক চোরাচালান, বাণিজ্য বৈষম্য ইত্যাদি ইস্যুগুলো ভারত তেমন আমলে নিচ্ছে না। তিস্তা চুক্তির ইস্যুটি কেবল আশ্বাসের মধ্যে রেখে দিয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কথা বলে তার সব স্বার্থ আদায় করে নিয়েছে এবং নিচ্ছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ভারতের সাথে বন্ধুত্বের যে কথা বলা হচ্ছে, তা ভারতের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের অনুগত বন্ধুত্ব ছাড়া কিছুই নয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, একটি দেশের সরকারের সাথে আরেক দেশের সরকারের রাজনৈতিক সুসম্পর্ক থাকতে পারে। তবে প্রকৃত বন্ধুত্ব বলতে দেশের জনগণের সাথে অন্য দেশের সুসম্পর্কই প্রকৃত বন্ধুত্বের নিদর্শন। দেশের জনগণ ভারতের সাথে বন্ধুত্বকে কীভাবে দেখছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের একপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্য দিয়ে ভারতের সব স্বার্থ হাসিল করে নিয়ে যাওয়া জনগণ ভালভাবে মেনে নিচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না।
ভারতকে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়েও যখন দেশের ন্যূনতম স্বার্থ আদায় করা যাচ্ছে না, তখন বাংলাদেশকে তার জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে বিকল্প উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের নদ-নদী ও টেকসই উন্নয়নের প্রশ্নে ইতিমধ্যেই সরকার শতবর্ষ মেয়াদী ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। সেই সাথে ভারতের অসহযোগিতার কারণে অনেকটা অকার্যকর গঙ্গার পানিচুক্তি পুনর্বিবেচনাসহ তিস্তা ও গঙ্গা ব্যারাজ নির্মানের সম্ভাব্যতা নিয়ে সক্রিয় পদক্ষেপ নেয়া সময়ের দাবী। এক্ষেত্রে গঙ্গা ও তিস্তাসহ পানি ধরে রাখার যে প্রকল্প নেয়া প্রয়োজন তাই নিতে হবে। নিজেদের ব্যবস্থা নিজেদেরই করতে হবে। এক্ষেত্রে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার কথা বলা হলেও ভারত তা রক্ষা করছে না। উল্টো বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বলেছেন, বিএসএফ আত্মরক্ষার্থে নাকি গুলি করছে। হাইকমিশনারের এ ধরনের বক্তব্য সীমান্ত হত্যাকান্ডকে প্রশ্রয় দেয়া এবং বিএসএফকে উসকে দেয়ার শামিল। এমনকি সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার চুক্তির বরখেলাপ। এ ধরণের মন্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয়, সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশী হত্যা দেশটির রাষ্ট্রীয় নীতিরই অংশ। একদিকে গুলি করে সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা, অন্যদিকে বন্ধুত্বের সোনালী অধ্যায়ের দাবি একসঙ্গে চলতে পারেনা। বৈশ্বিক রাজনৈতিক যে পরিবর্তন ঘটছে তাতে বাংলাদেশ সুদৃঢ় অবস্থানে রয়েছে। এখন বাংলাদেশের সময়। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, বাংলাশেকে এখন আর ভারতের প্রয়োজন নেই। বরং ভারতেরই বাংলাদেশকে প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের যেকোনো স্বার্থে ভারতকে আর ছাড় দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে তারা মনে করছেন না। এক্ষেত্রে, বাংলাদেশের সরকারকে দেশের যেকোনো স্বার্থে অনমনীয় অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। ভারতের স্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে দৃঢ়তা দেখাতে হবে। একপাক্ষিক স্বার্থ পরিহার করে জনগণের সাথে জনগণের সম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য প্রথমে ভারতকে তার সদিচ্ছার প্রতিফলন দেখাতে হবে। অমীমাংসিত ইস্যুগুলো মিমাংসার ক্ষেত্রে সরকারকে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।