মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইরানের সাথে পরমাণু চুক্তি যে ভাবে হয়েছিল এবং পরবর্তীতে চুক্তিতে সাক্ষরকারী জার্মানি, ফ্রান্স ও ব্রিটনের আপত্তি সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র সেই চুক্তি থেকে যে ভাবে বেরিয়ে এসেছিল, তা খুব স্বাভাবিক ঘটনা নয়। পুরনো সেই চুক্তি ফিরিয়ে আনাও খুব সহজ কাজ নয়। কারণ, মধ্যবর্তী সময়ে অনেক ঘটনা ঘটে গিয়েছে। তবে নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নতুন করে পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনার কথা বিবেচনা করেছেন এবং ইরান তাকে স্বাগতও জানিয়েছে।
গত সপ্তাহের শুরুতে ইরানের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছিলেন, আমেরিকা চুক্তিতে ফিরে এলে তার দেশও নতুন করে পরমাণু চুক্তিতে অংশ নিতে পারে। কিন্তু তাতেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না। আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন শুধুমাত্র পরমাণু চুক্তিতে আটকে নাও থাকতে পারে। ইরানের বিতর্কিত মিসাইল প্রোগ্রাম নিয়েও তারা আলোচনা চাইতে পারে। কিন্তু ইরান একটি বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছে। এ বিষয়ে আরব দেশগুলির সঙ্গে আলোচনা করতে তাদের আপত্তি নেই। কিন্তু ইইউ বা আমেরিকার সঙ্গে এই প্রসঙ্গে তারা কোনো কথা বলতে চায় না। আমেরিকা এবং ইইউকে এই বিষয়গুলি আগে স্পষ্ট করতে হবে। নইলে নতুন করে পরমাণু চুক্তি সফল হবে বলে মনে হয় না।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন বার বার একটি কথা বলতেন। ইরান পরমাণু চুক্তির স্পিরিট নষ্ট করছে। এ কথা বলেই তিনি ইরানের উপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছেন। ট্রাম্পের প্রশাসন বার বার বলেছে, পরমাণু চুক্তি বিফল হয়েছে। ইরানের বিবিধ সামরিক কাজ এই চুক্তি বন্ধ করতে পারেনি।
ট্রাম্প চাইলে পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে না এসেও সমস্যার কথাগুলি তুলে ধরতে পারেন। এমনই মনে করেন ননপ্রলিফিরেশন পলিসি অ্যাট দ্য আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের ডিরেক্টর কেলসি ডেভপোর্ট। তার মতে, ট্রাম্প বারবারই বলেছেন, ইরানের সঙ্গে একটি নতুন চুক্তি করা দরকার, যা আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য সমস্যাগুলিকেও অ্যাড্রেস করবে। কিন্তু চার বছরে ট্রাম্প সেই বিকল্প চুক্তির ব্যবস্থা করতে পারেননি। জো বাইডেন এখন বলছেন, নতুন করে পরমাণু চুক্তিতে যুক্ত হবে আমেরিকা। ফলে দেশের ভিতরেই ফের নতুন চুক্তির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
সম্প্রতি জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, পুরনো পরমাণু চুক্তিতে যোগ দেয়া এখন অর্থহীন। ‘পরমাণু চুক্তি প্লাস’ই হলো এখন বিকল্প ব্যবস্থা। সেই চুক্তি নিয়েই এখন ভাবতে হবে। জার্মানি ছাড়াও ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য একই ইঙ্গিত দিয়েছে। ডিসেম্বরের গোড়ায় তিনটি দেশ একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছিল। সেখানে ইরানের সঙ্গে একটি কূটনৈতিক আলোচনার পরিসর তৈরির প্রস্তাব গৃহিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের পরমাণু সংক্রান্ত সংস্থার প্রধান রাফায়েল গ্রসি বলেছেন, ‘আমেরিকা এখন পুরনো চুক্তিতে ফিরে এলে হবে না। কারণ সেই পরিস্থিতি আর নেই। নতুন চুক্তির প্রয়োজন তৈরি হয়েছে।’ ইউরোপান কাউন্সিলের পররাষ্ট্র বিশেষজ্ঞ এলি গেরানমায়েহের বক্তব্য, ইরানকে চাপ দেয়া এখন খুবই কঠিন কাজ। ইরানের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করতে হলে দেশের রাজনৈতিক সমাজকে আশ্বস্ত করতে হবে। ইরানকে বোঝাতে হবে, এই চুক্তিতে তাদের উপকার হবে। চুক্তিটি দীর্ঘমেয়াদি হবে।
২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে নতুন আরো কিছু বিষয় ঢুকিয়ে জো বাইডেন যদি বর্তমান পরমাণু চুক্তির খসড়া তৈরি করতে চান, তা হলে তা বাস্তবসম্মত হবে না। ইরান সেই প্রস্তাব কোনো ভাবেই মেনে নেবে না। ট্রাম্পের প্রশাসনিক পরামর্শদাতারা অবশ্য অন্য কথা মনে করছেন। গত চার বছরে ইরানের উপর ব্যাপক চাপ তৈরি করা গিয়েছে। ফলে বাইডেনের পক্ষে নতুন করে দর কষাকষি করা সহজ হবে। ইরানের উপর চাপ এতটাই বেশি যে, তারা সহজেই নতুন চুক্তি মেনে নেবে।
কিন্তু ডেভেনপোর্ট মনে করেন, এই যুক্তিটির কোনো বাস্তবতা নেই। বরং তার ধারণা, বাইডেনের পরিস্থিতি পরমাণু চুক্তির আগের অবস্থার মতো। আমেরিকাকে প্রথমে ইরানের হুমকি বন্ধ করতে হবে। ইরান যে ভাবে পরমাণু পরীক্ষার কথা ভাবছে, তা আটকাতে হবে। তারপর একটি চুক্তিতে আসতে হবে। ফলে চাপ তৈরি করে কিছু করা সম্ভব নয়। তাতে হিতে বিপরীত হবে। প্রাথমিক একটি চুক্তি করে, ইরানের বিশ্বাস অর্জন করে তারপর পরবর্তী আলোচনায় যেতে হবে।
এখন পর্যন্ত ইরান স্পষ্ট করে দিয়েছে তারা পুরনো চুক্তিতে নতুন কোনো বিষয় যুক্ত করতে চায় না। অন্য কোনো বিষয় নিয়ে আমেরিকা বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে তারা আলোচনাও করতে চায় না। তাদের স্পষ্ট বক্তব্য, যে চুক্তি একবার হয়ে গিয়েছিল, তার উপর নতুন করে আলোচনার কোনো প্রশ্ন ওঠে না। রোমের একটি কনফারেন্সে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ এ কথা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন। ব্যালেস্টিক মিসাইল প্রোগ্রাম নিজেদের অধিকার বলে মনে করে ইরান। ইরানের বক্তব্য, এই ধরনের প্রোগ্রাম নিয়ে তারা প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলতে পারে। প্রতিবেশীরা যদি এ ধরনের সামরিক বিষয় বন্ধ করে এবং ইরানকে বন্ধ করার অনুরোধ করে, তা হলে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
ফলে এই সমস্যা কাটানোর একমাত্র উপায় হলো আঞ্চলিক আলোচনা। ইরান জানিয়েছে, আঞ্চলিক শক্তিগুলিকে নিয়ে হরমুজ পিস এনডেভর বা হোপ অনুষ্ঠিত হোক। সেখানে প্রতিবেশী দেশগুলো যোগ দিক এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করুক। আমেরিকা বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন নয়, হোপে অংশ নিতে পারে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কোনো সংস্থা। যারা আলোচনায় উঠে আসা বিষয়গুলোকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
ইরানের এই প্রস্তাব খুব বাস্তবসম্মত বলে মনে হয় না। পশ্চিমের দেশগুলোই আরব দেশ বা উপসাগরীয় দেশগুলোর কাছে অস্ত্র বিক্রি করে। ফলে ওই অঞ্চলের সামরিক আলোচনা কখনোই পশ্চিমা দেশগুলোকে বাদ দিয়ে করা সম্ভব নয়। ডেভেলপোর্ট মনে করেন, এ বিষয়ে আঞ্চলিক শক্তির সঙ্গে ইরানকে যেমন কথা বলতে হবে, তেমনই পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গেও কথা বলতে হবে।
কিন্তু আপাতত সেই সুযোগ নেই। বরং ইরানের প্রস্তাবকে মেনে নিয়েই আলোচনা শুরু করা যেতে পারে। আলোচনা শুরু না হলে কোনো চুক্তিই বাস্তবায়িত হবে না। পরমাণু চুক্তির বিষয়টি সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ফলে সেই বিষয়ে আলোচনা শুরু করে ক্রমশ শিকড়ে পৌঁছনো যেতে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সূত্র: ডয়চে ভেলে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।