Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আফ্রিকায় আবারও পঙ্গপালের আক্রমণের হুমকি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

ঝাঁকে ঝাঁকে মরু পঙ্গপালের কারণে পূর্ব আফ্রিকা ও আরব বিশ্বের কয়েকটি দেশের লাখ লাখ মানুষের জীবিকা আবারও বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়েছে। এরইমধ্যে বিষয়টি নিয়ে সতর্ক বার্তা উচ্চারণ করেছে জাতিসংঘ। বছরখানেক আগেও এসব দেশে পঙ্গপালের হানায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। এরপর প্রচুর কীটনাশক ছিটিয়ে এসব পঙ্গপাল নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এখন জাতিসংঘ বলছে, তাতে খুব একটা কাজ হয়নি বলেই মনে হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটি বলছে, মরুভূমির এসব পঙ্গপালের বংশ বিস্তারের জন্য ইথিওপিয়ার পূর্বাঞ্চলে এবং সোমালিয়ায় এখনও আদর্শ পরিবেশ বজায় রয়েছে। এর ফলে ঝুঁকির মুখে রয়েছে কেনিয়াও। কর্মকর্তারা বলছেন, লোহিত সাগরের উভয় পাশে প্রচুর পঙ্গপালের জন্ম হচ্ছে। এর ফলে ইরিত্রিয়া, সৌদি আরব ও ইয়েমেনও নতুন করে হুমকির মুখে পড়েছে। বলা হচ্ছে, পূর্ব আফ্রিকাতে এ বছর পঙ্গপালের যে ধরনের আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে, গত ৭০ বছরের ইতিহাসে তেমনটা কখনও চোখে পড়েনি।

পঙ্গপালের আক্রমণের পূর্বাভাস নিয়ে কাজ করেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থার এমন একজন ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি। ওই কর্মকর্তা জানান, ‘কেনিয়াতে এই হুমকি আসন্ন। এখন থেকে যে কোনও সময়ে তারা হানা দিতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘এবারকার পরিস্থিতি গতবারের মতোই খারাপ হতে পারে। কারণ বিভিন্ন দেশের সাড়ে তিন লাখ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত এলাকায় এসব পঙ্গপালের বংশ বৃদ্ধি ঘটছে।’ এ বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত কোটি কোটি পঙ্গপাল পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলোতে আক্রমণ করে ব্যাপক ফসলহানি ঘটিয়েছে। কেনিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় একজন পশু খামারি গঞ্জোবা গুইয়ো বলেন, ‘পঙ্গপালের আক্রমণের কারণে আমরা অনেক পশুচারণভ‚মি ও গাছপালা হারিয়েছি। আর এ কারণে এখনও আমাদের প্রচুর গবাদিপশু মারা যাচ্ছে।’ বিবিসি-কে তিনি বলেন, ‘পঙ্গপালের প্রকোপের কারণে আমি ১৪টি ছাগল, চারটি গরু এবং দুইটি উট হারিয়েছি। এখনও ভীতি তৈরি হয়েছে যে, আমরা আবারও একই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারি কিংবা এর পরিণতি আগের বারের চেয়েও খারাপ হতে পারে।’

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার কর্মকর্তারা বলেছেন, এই অঞ্চলের দেশগুলো পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখন আগের বারের তুলনায় ভালোভাবেই প্রস্তুত রয়েছে। তবে তারা বলছেন, এবার নজরদারি বেশি, প্রস্তুতিও ভাল- যেমন জমিতে কিংবা বিমান থেকে কীটনাশক ছিটানো হয়েছে। ১০টি দেশের ১০ লাখ একরেরও বেশি জমিতে পোকামাকড়ের উৎপাত ঠেকাতে ওষুধ দেয়া হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের মধ্যে এই ভীতিও তৈরি হয়েছে যে পঙ্গপালের ঝাঁক খুব বেশি বড় হলে তারা হয়তো নিরুপায় হয়ে পড়তে পারে। কিন্তু এবার এরকম পরিস্থিতির তৈরি হল কেন? এই অঞ্চলে কেন এতো পঙ্গপালের জন্ম হচ্ছে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বছরের বর্ষা মৌসুমে সোমালিয়ার মধ্যাঞ্চল ও ইথিওপিয়ার পূর্বাঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত গড় বৃষ্টিপাতের হার ছিল খুব বেশি। এর ফলে জমিতে নানা ধরনের ও প্রচুর পরিমাণে গাছপালার জন্ম হয়েছে। ক্রেসমান বলেন, ‘এর ফলে পঙ্গপালের বংশ বিস্তারের জন্য অনুক‚ল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এসব অঞ্চলে প্রকৃত অর্থেই প্রচুর পঙ্গপালের জন্ম হচ্ছে।’ এ রকম পরিস্থিতিতে কয়েক মাসের মধ্যেই ঝাঁকে ঝাঁকে পঙ্গপালের আবির্ভাব ঘটে। এগুলো প্রথমে থাকে ডানাবিহীন ফড়িং এবং পরে সেগুলোর পাখা গজায়। এরা তখন ঝাঁকে ঝাঁকে চলতে শুরু করে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা এবং বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মরুভূমির পঙ্গপালের খুব দ্রুত বংশবিস্তার ঘটে এবং এক বছরের মধ্যে এদের সংখ্যা এক লাখ ৬০ হাজার গুণ বৃদ্ধি পেতে পারে। উত্তর সোমালিয়ার আবহাওয়া শুষ্ক। এর ফলে পঙ্গপালের পক্ষে সেখানে বেঁচে থাকা কঠিন। কিন্তু গত নভেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড় গাতি আঘাত হানার পর থেকে সেখানকার পরিবেশ পুরোপুরি বদলে গেছে। মাত্র দুই দিনে দুই বছরের সমান বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর ফলে পঙ্গপালের জন্য সেখানকার পরিবেশ যেখানে বিরূপ হওয়ার কথা ছিল সেটা বদলে গিয়ে তাদের বংশ বিস্তারের জন্য অনুকূল হয়ে উঠেছে। বন্যার পর জমিতে পানি জমার কারণে পঙ্গপালের জন্য সেখানে ডিম পাড়ার আদর্শ পরিবেশ তৈরি হয়েছে। একইসঙ্গে সেখানে যে প্রচুর গাছপালার জন্ম হয়েছে সেগুলোও তাদেরকে খাদ্য জুগিয়েছে। মরুভূমির পঙ্গপালের আক্রমণের কারণে এ বছর এই অঞ্চলের যেসব দেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের অন্যতম এই সোমালিয়া।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আক্রান্ত বিভিন্ন অঞ্চলে নজরদারির কারণে সেসব এলাকা থেকে পঙ্গপালকে দূরে রাখা সম্ভব হয়েছে। তারা সতর্ক করে দিয়েছেন, যেসব জায়গায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেই সেসব এলাকায় তা করা সম্ভব হয়নি। উদাহরণ হিসেবে দক্ষিণ সোমালিয়ার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে, সেখানে কোনও নজরদারি ছিল না। কর্মকর্তারা বলছেন, ইয়েমেনের বিভিন্ন জায়গাতেও মরুভূমির পঙ্গপালের বংশবিস্তারের উপযোগী পরিবেশ রয়েছে। তবে সংঘাত ও যুদ্ধের কারণে গত কয়েক বছর ধরে কয়েকটি এলাকাতে নজরদারি চালানো সম্ভব হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এছাড়াও অনেক পঙ্গপাল সৌদি আরব থেকে ইয়েমেনের দিকে চলে আসছে। তারা বলছেন, বেশি সময় ধরে উড়তে পারার কারণে এসব পঙ্গপাল লোহিত সাগরও পাড়ি দিতে পারে যার দূরত্ব ৩০০ কিলোমিটারের মতো।পরিস্থিতি খারাপ হলে এই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ কীটনাশক ব্যবহারের জন্যও প্রস্তুত রয়েছে। জমিতে ও আকাশ থেকে এই কীটনাশক ছিটানো হবে। কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিভিন্ন দেশকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঢালতে হচ্ছে। এর মধ্যে অনেক দেশই দারিদ্রপীড়িত। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য আরো কিছু উপায় খুঁজে দেখা প্রয়োজন। কেনিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় মারসাবিত এলাকায় পঙ্গপালের ওপর নজরদারি কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন পরিবেশ বিজ্ঞানী জেরেমিয়া লেকোলি। তিনি বলেন, ‘আমরা নজরদারি বজায় রেখেছি। কিন্তু আমাদেরকে কোনও যন্ত্র বা ছিটানোর জন্য কীটনাশকও দেয়া হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘এসব জিনিস থাকা খুব জরুরি। নাহলে এর মধ্যেই পঙ্গপাল এসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়ে চলে যাবে।’

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, আক্রান্ত পাঁচটি দেশে ইতোমধ্যে সাড়ে তিন কোটি মানুষ খাদ্য সংকটে ভুগছে। তারা বলছে, পঙ্গপালের বর্তমান প্রকোপ সামাল দেওয়া না গেলে তাদের সংখ্যা আরও প্রায় ৩৫ লাখ বেড়ে যেতে পারে। সূত্র : বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আফ্রিকা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ