Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতের পানি আগ্রাসন

কমল চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ১৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। নদীপ্রবাহের সাথে মানুষের জীবনপ্রবাহ জড়িত। সেই অর্থে নদী বাঁচলে, আমরাও বাঁচব। ভারত থেকে ৫৪টি এবং মিয়ানমার থেকে তিনটিসহ মোট ৫৭টি নদী শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত হয়ে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত। বাংলাদেশে একসময় ১২০০ নদীর নাম শোনা যেত, এখন ২০০ নদীও সচল নেই। সব শুকিয়ে চিকন মরা খালে পরিণত হয়েছে। চিহ্নই থাকছে না। আমাদের তিন দিক দিয়ে ঘেরা বৃহৎ প্রতিবেশী দেশ ভারত আন্তর্জাতিক নদীর সকল নিয়ম-কানুন লংঘন করে একতরফাভাবে উজানে বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করে বাংলাদেশকে মরুভ‚মিতে পরিণত করছে। সারাদেশে প্রায় আট কোটি মানুষ আর্সেনিক আতঙ্কে রয়েছে। কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুষ্টিয়া, বগুড়ার বিস্তর এলাকায় ৬০-৭৫ শতাংশ টিউবওয়েলে আর্সেনিক সমস্যা বিরাজমান। দেশের মোট ৬০টি জেলা ও ২৭১টি উপজেলায় আর্সেনিক বিষ কম বেশি রয়েছে। নদীর পানি কমে যাওয়ায় কৃষি, শিল্প, সেচ, নৌ-পরিবহন, গাছ-পালা, পরিবেশ, মৎস্য সম্পদ, পানীয় জলসহ বহুবিধ শঙ্কা প্রবল হয়ে জমির উর্বরতা নষ্ট ও শিল্প কারখানা ধ্বংস করে দিচ্ছে। উত্তরাঞ্চলের পদ্মা, যমুনা, তিস্তা নদীতে এখন সম্পূর্ণ চর পড়ে গেছে। চরে এখন মানুষেরা ফুটবল, ক্রিকেট ইত্যাদি খেলাধুলা করছে।

বাংলাদেশের পশ্চিম সীমান্তে অন্যততম প্রধান নদী পদ্মার ১৯ মাইল উজানে মুর্শিদাবাদ জেলার ফারাক্কা নামক স্থানে ভারত ১৯৬১ সালে বাঁধ দেয়ার কাজ শুরু করে এবং ১৯৭৪ সালে ফিডার কেনেলসহ নির্মাণকাজ শেষ করে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করে। ভারত সরকার প্রায় আলোচনা ও সেমিনারে বলে থাকে, বাংলাদেশের ক্ষতিকারক কিছুই করবে না। ফারাক্কা বাঁধ চালুর আগে বাংলাদেশে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের কাছে শীত মৌসুমে, ৪৭ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহ থাকত। ’৭৫ সাল থেকে নানা প্রকার সমঝোতা-চুক্তি ইত্যাদি স্বাক্ষরের পরও জমি এবং কয়েক কোটি মানুষের জীবন ও পরিবেশকে বিপন্ন করা হয়েছে। শীতকালে বহু নদীতে নৌকার বদলে গরু-মহিষের গাড়ি চলে। আমাদের দেশের ১৯৭১ সালের রেকর্ড থেকে দেখা যায়, নৌপথের দৈর্ঘ্য ছিল ২৪ হাজার কিলোমিটার এবং বর্তমানে ছয় হাজার কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ নদীবাহিত পানির প্রায় ৬১ শতাংশ আসে ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে। ভারত আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের নামে ব্র‏হ্মপুত্রের পানি উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের মরুভ‚মি অঞ্চলে (মরুভ‚মিকে মরুদ্যানে পরিণত করার উদ্দেশ্য) সরিয়ে নেয়ার যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, তা বাস্তবায়িত হলে আমরা পানির জন্য হাহাকারের দেশে পরিণত হবো। ভারতের এরকম বৈরী আচরণ অব্যাহত থাকলে এ দেশে একদিন কারবালার মাতম উঠবে। সুবজ, শ্যামল, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর প্রাণী বৈচিত্র্যে ভরপুর সুবৃহৎ বদ্বীপ বাংলাদেশ হারিয়ে যাবে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে। বিশেষ করে জাতিসংঘ ঘোষিত পৃথিবীর মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ সর্বশ্রেষ্ঠ ম্যানগ্রোভ বনভ‚মি সুন্দরবনও হারিয়ে যাবে। ইতোমধ্যে ভারসম্যহীন লবণাক্ততার কারণে সুন্দরী গাছের আগামরা রোগ দেখা দিয়েছে। ফলে শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, গোটা পৃথিবীর পরিবেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা করেছেন খ্যাতনামা ভূতত্ত¡বিদ ও পানি বিশেষজ্ঞরা।

শুধুমাত্র ফারক্কা বাঁধের প্রভাবে এত বছরে বাংলাদেশ হারিয়েছে ৮০ ভাগ নৌপথ। নৌপথে যাতায়াত ও মালামাল পরিবহন কম খরচে করা যায়। নৌ-চলাচলের জন্য নদীর গভীরতা কমপক্ষে দরকার তিন মিটার, বাংলাদেশের কোনো কোনো নদীতে এখন তা দুই মিটারের নিচে। পানি চুক্তি অনুসারে ৩৬ হাজার কিউসেক পানি পাওয়ার কথা। কিন্তু ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে ভারত পানি নিয়ন্ত্রণ করায় বাংলাদেশ পায় মাত্র আট হাজার কিউসেক পানি। ফারাক্কার পানি প্রবাহ বাড়ানোর জন্য ভারত সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে বলে প্রতিশ্রæতি দিলেও আসলে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ভারত মুখে আর অন্তরে ১০০ ভাগ উল্টো কাজ করছে। উপরন্তু বিগত বছরগুলোতে ভারত গঙ্গার উজানে আরো ব্যারেজ এবং কয়েকশ’ ছোট-বড় জলাধার নির্মাণ করেছে। ফলে ফারাক্কায় গঙ্গার পানি প্রবাহ মারাত্মকভাবে কমে গেছে। শীত ও গ্রীস্মকালে যখন আমাদের প্রচুর পানি দরকার, তখন ভারত সবগুলো গেট বন্ধ রাখে। আর যখন বর্ষাকাল, আমাদের পানির দরকার নেই, তখন সবগুলো গেট খুলে দেয়। ফলে প্লাবনে আমাদের দেশ ডুবে যায়।

পানি আল্লাহর দান ও নেয়ামত। পানির অপর নাম জীবন। মানবকুলসহ সব প্রাণী ও উদ্ভিদের সৃষ্ট উপাদানও পানি। পৃথিবীর ৭৫ শতাংশ পানি। পানি জীবনের জন্য আবশ্যক বলে মহান আল্লাহতায়ালা পানিকে সহজলভ্য করে দিয়েছেন। অথচ, এই হিংসুক মানব গোষ্ঠী একে অপরকে পানির অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। ইয়াজিদ কারবালার প্রান্তরে হযরত ইমাম হোসেন (রা.) এর পরিবারসহ সঙ্গীদের পানি থেকে বঞ্চিত করে দুধের শিশুসহ সবাইকে শহীদ করেছিল। ভারতও তেমনি ৫৪টি নদীর উজানে বিভিন্ন বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশকে একবার শুকিয়ে ও আবার ডুবিয়ে মারার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তাই সুজলা-সুফলা, শষ্য-শ্যামল বাংলার ভবিষ্যৎ অস্তিত্ব রক্ষার্থে ধর্ম-বর্ণ, দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং ভারতের পানি আগ্রাসন মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

 

 

 



 

Show all comments
  • Jack Ali ১৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ১১:৪৪ এএম says : 0
    When Muslim used to by the Law of Allah then they were super power not only that they were superior in Science and Technology. When Muslim avoid to follow Qur'an and Sunnah kafir country occupied all the Muslim land and they rule all muslim land by colonial rule [Fascist rule] They dissected Ummah of Rasul [SAW] nearly 57 countries and they created Fascist group. After liberation the 57 so called muslim countries the fascist group is ruling all these 57 countries as such they kill our own people/Rape/enforced disappear/looting our hard earned tax payer billion billion dollar and sending to foreign country. These Fascist ruler's propaganda is that they are developing our country, but our country looks like big junk yards and open garbage centre, extremely polluted air, extreme traffic jam, million million people live under poverty level and they live in Bastee and also thousands of people are homeless and they are living on the street and myriad of crimes are committed by the government and their supporter. We are the salve of our government and India and Myanmar. If our country rule by the Law of Allah then we would have build our country better than any Europeans countries.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন