মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইরানের প্রবীণতম পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসিন ফাখরিযাদে হত্যাকান্ডে প্রতিশোধের ঘোষণা দেয়ায় মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে যুদ্ধের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাজধানী তেহরানের কাছে আততায়ীর হামলায় গত শুক্রবার তিনি নিহত হয়েছেন। দামাভান্দ এলাকায় হামলার পর জনাব ফাখরিযাদে হাসপাতালে মারা যান। তেহরানের কাছে দামাভান্দ কাউন্টির আবসার্ড এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।
ইরানের বার্তা সংস্থাগুলো বলছে, আততায়ীরা প্রথমে তার গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোঁড়ে এবং তারপর তাকে গুলি করে। পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাকে ইরানের গোপন পরমাণু কর্মসূচির জনক এবং মনে করে দেশটির গোপন পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচিতে ফাখরিযাদে মূল ভ‚মিকা রাখছেন বলে মনে করে।
কোন পক্ষ থেকেই এ হামলার দায়িত্ব স্বীকার করা হয়নি। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের শীর্ষস্থানীয় পদার্থবিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদে’র হত্যাকান্ডে কুখ্যাত ইহুদিবাদী গোয়েন্দা সংস্থা- মোসাদের হাত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি নিজের অফিসিয়াল টুইটার পেজে একজন ইসরাইলি সাংবাদিকের একটি পোস্ট রিটুইট করে ইরানি বিজ্ঞানী হত্যায় তেল আবিবের হাত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ সম্পর্কে ট্রাম্পের রিটুইটে বলা হয়েছে, ‘ফাখরিজাদে’কে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা (মোসাদ) বহু বছর ধরে হত্যার চেষ্টা করছিল’। এছাড়া, ট্রাম্প নিজে এক টুইটার বার্তায় মোহসেন ফাখরিজাদেকে তার ভাষায় ইরানের ‘পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি’র কারিগর বলেও দাবি করেছেন।
মোহসেন ফাখরিযাদে হত্যার ঘটনায় ইহুদিবাদী ইসরাইল জড়িত বলে তিনজন মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এ খবর দিয়েছে আমেরিকার প্রভাবশালী পত্রিকা ‘দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস’। আমেরিকার তিন কর্মকর্তার মধ্যে দুজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা রয়েছেন।
এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ তার অফিসিয়াল টুইটার পেজে লিখেছেন, ইরানি পদার্থবিজ্ঞানীর কাপুরুষোচিত হত্যাকান্ডে ইসরাইলের হাত থাকার যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে এবং এ ঘটনায় বোঝা যায়, যারা এ হত্যাকান্ড চালিয়েছে তারা নিজেদের অসহায়ত্বের কারণে একটা যুদ্ধ বাধানোর চেষ্টা করছে। তিনি আন্তর্জাতিক সমাজ বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে তাদের নির্লজ্জ দ্বৈত নীতি পরিহার করে এই ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানানোর আহ্বান জানান।
ইরান সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদনের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে নতুন করে উদ্বেগ বেড়েছে। এরই মধ্যে ফাখরিযাদেকে হত্যার ঘটনা ঘটল। বেসামরিক খাতে পারমাণবিক জ্বালানি তৈরির জন্য এবং একইসঙ্গে সামরিক কাজে ব্যবহারযোগ্য পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদনের জন্য সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম একটি আবশ্যিক উপাদান। ইরান সবসমেয়েই বলে এসেছে তারা শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের জন্যই একমাত্র তাদের পরমাণু কর্মসূচি ব্যবহার করে। ২০১৮ সালের মে মাসে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে একটি বক্তৃতার সময় জনাব ফাখরিযাদের নাম বিশেষভাবে উল্লখ করে বলেছিলেন তিনিই ইরানের গোপন কর্মসূচির নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
প্রতিক্রিয়া
পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যার সঙ্গে জড়িত সবার শাস্তি নিশ্চিত করতে বলেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী। তিনি বলেছেন, এ ক্ষেত্রে কোনো দ্বিধা-সন্দেহের অবকাশ নেই। পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহ’র হত্যাকান্ডের প্রতিক্রিয়ায় এক বার্তায় তিনি গতকাল এ কথা বলেন। ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল মোহাম্মাদ বাকেরি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ও উদ্ভাবন বিষয়ক সংস্থার চেয়ারম্যান মোহসেন ফাখরিজাদে হত্যার কঠিন প্রতিশোধ নেবে তেহরান। তিনি শুক্রবার রাতে এক বার্তায় ঘোষণা করেন, বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও শয়তান ইহুদিবাদী সরকারের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা ইরানের আরেকজন বিজ্ঞানীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ইরানের চারজন পরমাণু বিজ্ঞানী আততায়ীর হাতে প্রাণ হারিয়েছেন এবং এসব হত্যার ঘটনায় ইসরাইল জড়িত বলে ইরান অভিযোগ করেছে।
ধৈর্য ধরুন : ইরানকে সাবেক সিআইএ প্রধান
আমেরিকার দায়িত্ব যোগ্য ব্যক্তিদের কাছে প্রত্যাবর্তনের আগ পর্যন্ত ইরানকে অপেক্ষা করার আহ্বান জানালেন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সাবেক পরিচালক জন ব্রেনন। ইরানের শীর্ষ পরমাণুবিজ্ঞানী মোহসিন ফাখরিযাদে হত্যাকে ‘জঘন্যতম অপরাধম‚লক কর্মকান্ড’ অভিহিত করে বিবৃতি দিয়েছেন সংস্থাটির সাবেক এ পরিচালক। তেহরান যখন এ হত্যাকান্ডের পেছনে ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্রের হাত রয়েছে দাবি করে বদলা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে তখনই এমন মন্তব্য করলেন তিনি। একই সঙ্গে একে বেপারোয়া হত্যাকান্ড অ্যাখা দিয়েছেন গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান।
কে ছিলেন মোহসিন ফাখরিযাদে?
মোহসিন ফাখরিযাদে ইরানের সবচেয়ে বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ও উদ্ভাবনী সংস্থার প্রধান। তিনি ইরানের রেভরল্যুশনারি গার্ডের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও ছিলেন। তাকে কূটনীতিকরা ‘ইরানে বোমার জনক’ বলে বর্ণনা করতেন।
ইসরাইল এবং পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে, তিনি ইরানের খুবই ক্ষমতাশালী ব্যক্তি এবং ইরানের পরমাণু কর্মসূচির প্রধান স্তম্ভ। ২০১৮ সালে ইসরাইল বলেছিল, তাদের হাতে যেসব গোপন নথিপত্র এসেছে সেগুলো অনুয়ায়ী ইরানের পরমাণু কর্মসূচির তিনি প্রধান রূপকার। জনাব ফাখরিযাদের নেতৃত্বেই ইরানের পরমাণু কর্মসূচি গড়ে উঠেছে।
প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু সেসময় বলেছিলেন ‘ওই নামটা মনে রাখবেন’- তিনি বলেছিলেন, ইরানের পরমাণু কর্মসূচির তিনিই প্রধান বিজ্ঞানী। ২০১৫ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমস তার তুলনা করেছিল জে রবার্ট ওপেনহাইমারের সাথে। মি. ওপেনহাইমার দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় ম্যানহাটান প্রকল্পের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যে প্রকল্পের অধীনে প্রথম আণবিক বোমা তৈরি করা হয়। ফাখরিযাদের হত্যার ঘটনা নিয়ে ইসরাইল এখনও কোন মন্তব্য করেনি। সূত্র : বিবিসি বাংলা, দ্য গার্ডিয়ান, পার্স টুডে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।