২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
প্রতি বছর নভেম্বর মাসে সপ্তাহ ব্যাপী বিশ্ব এন্টিবায়োটিক সচেতনতা সপ্তাহ পালিত হয়ে থাকে। এবছর ১৮ থেকে ২৪ নভেম্বর বিশ্বব্যপী এই দিবস পালিত হচ্ছে। ২০২০ সালে হিউম্যান হেলথ্ সেক্টর বা জনস্বাস্থ্য খাতে এন্টিবায়োটিক সচেতনতা সপ্তাহের থিম বা মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো “United to Preserve antimicrobials.” অর্থাৎ সারা বিশ্বব্যাপী কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এন্টিবায়োটিক এবং এন্টিমাইক্রোবায়ালস্ এর রেজিষ্টেন্ট সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য সম্মিলিতভাবে এন্টিমাইক্রোবায়ালসকে সংরক্ষণ বা রক্ষা করতে হবে। সহজ ভাষায় এন্টিবায়োটিক এবং এন্টিমাইক্রোবায়ালস্ এর অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে। এন্টিবায়োটিক সচেতনতা সপ্তাহে সব সেক্টরের জন্য ২০২০ সালের স্লােগান হলো “Antimicrobials: handle with care.” অর্থাৎ অত্যন্ত যত্নের সাথে এবং দক্ষতার সাথে এন্টিমাইক্রোবায়ালস্ ব্যবহার করতে হবে এবং পরিচালনা করতে হবে।
দাঁত ও মুখের চিকিৎসায় প্রতিনিয়ত এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। অনেক সময় দেখা যায় মুখের সাধারণ একটি আলসারে এন্টিবায়োটিক প্রদান করা হয় যা আসলে রোগীর আলসার ভাল হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো কাজে আসে না। বরং এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণে মুখে অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয়। মুখের ছত্রাক সংক্রমণের ক্ষেত্রে এন্টিফাংগাল ওষুধ প্রদান করতে হবে। অহেতুক এন্টিবায়োটিক দেওয়া যাবে না। ভাইরাসজণিত মুখের কোনো সংক্রমণের ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক কোনো কাজ করবে না। আমরা সবাই জানি যে এন্টিবায়োটিক ভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো কাজ করে না। তারপরেও আমরা মুখের কোনো সংক্রমণে না বুঝে তৃতীয় প্রজন্মের এন্টিবায়োটিক প্রদান করি, যা কোনো ভাবেই ঠিক নয়। এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণে অনেক সময় মুখের অভ্যন্তরে লাইকেন প্ল্যানাসের মতো লাইকেনয়েড রি-অ্যাকশন দেখা যায় যার কারণে রোগীর খাদ্য দ্রব্য গ্রহণে সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। রোগী ঝাল বা মসলা জাতীয় খাবার গ্রহণের সময় মুখে জ্বালাপোড়া অনুভব করতে পারে। এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করার সময় আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এন্টিবায়োটিক ওষুধ কোনো অবস্থাতেই বিক্রি করা হয় না। অথচ আমাদের দেশে চাওয়া মাত্রই এন্টিবায়োটিক বিক্রয় করা হচ্ছে যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এন্টিবায়োটিকের নিয়ম বহির্ভূত ব্যবহারের কারণে এখন রোগীদের উপর এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট হয়ে পড়েছে। এন্টিবায়োটিক আগের মত আর কাজ করছে না। কোনো কোনো রোগের ক্ষেত্রে শিরা পথে এন্টিবায়োটিক প্রদান না করলে রোগ ভাল হয় না। উদাহরণ স্বরূপ টাইফয়েড জ্বরের ক্ষেত্রে তৃতীয় প্রজন্মের সেফালোস্পোরিন গ্রুপের এন্টিবায়োটিক অনেক সময় শিরা পথে প্রয়োগ করতে হয় রোগ ভাল করার জন্য। অথচ এই টাইফয়েড বা এন্টেরিক ফিভার এর ক্ষেত্রে সিপ্রোফ্লক্সাসিন জাতীয় এন্টিবায়োটিক এক সময় বেশ কার্যকর ছিল। কিন্তু নিয়ম না মেনে এন্টিবায়োটিক সেবনের ফলে এখন তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে রেজিস্ট্যান্ট হয়ে পড়েছে। এন্টিবায়োটিকের ভুল ব্যবহারের জন্য দিন দিন এ হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এফডিএ অনেক আগেই ক্লারিওথ্রোমাইসিন জাতীয় এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা জারি করেছে। কারণ ক্লারিওথ্রোমাইসিন হৃদরোগীদের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী হৃদরোগের সমস্যাজনিত ঝুঁকি এবং অকাল মৃত্যুর সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে থাকে। যারা লো ব্লাড প্রেসারে ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে সিপ্রোফ্লক্সাসিন জাতীয় এন্টিবায়োটিক বিশেষ জরুরী না হলে ব্যবহার না করাই ভাল। কারণ সিপ্রোফ্লক্সাসিন জাতীয় এন্টিবায়োটিক রক্তচাপকে কমিয়ে দেয়। ফলে রোগীর লো ব্লাড প্রেসার থাকলে তা আরও কমে গিয়ে বিপদ ঘটতে পারে। কফ কাঁশির ক্ষেত্রে কোনো কারণ ছাড়াই এন্টিবায়োটিক সেবন করবেন না। নতুন গবেষণায় দেখা গেছে মহিলাদের ক্ষেত্রে যাদের বয়স ৬০ বছর বয়সের উপর তাদের ক্ষেত্রে লম্বা সময়ের জন্য এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণে হৃদরোগজণিত মৃত্যুর যোগসূত্র রয়েছে। হাইড্রোক্সি ক্লোরোকুইন এবং এজিথ্রোমাইসিন ওষুধের কম্বিনেশন হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিউর সহ হার্টের বিভিন্ন সমস্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে থাকে। কম্বিনেশন ছাড়াও হাইড্রোক্সি ক্লোরোকুইন অথবা এজিথ্রোমাইসিন আলাদা আলাদা ব্যবহার করলেও কারো কারো ক্ষেত্রে হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এ দুটি ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ চলাকালীন সময়ে ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে থাকা উচিত। রেনাল ফেইলিউর বা কিডনির অকার্যকারিতায় স্ট্রেপটোমাইসিন এবং জেন্টামাইসিন দেওয়া যাবে না। ক্লোরোকুইন অত্যন্ত সতর্কতার সাথে দেওয়া যেতে পারে। পেনিসিলিন ও সেফালোস্পোরিন সতর্কতার সাথে দেওয়া যেতে পারে। সব কিছু একজন ডাক্তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। ডাক্তার ছাড়া কেউই এন্টিবায়োটিক প্রদান করার ক্ষমতা রাখেন না। আমাদের সাধারণ জনগণের এ সব বিষয়ে সচেতন হতে হবে। আজ আপনি ওষুধের দোকান থেকে একটি এন্টিবায়োটিক সেবন করে খুব অল্প সময়ের মধ্যে ভাল হয়ে গেলেন। কিন্তু ভুল এন্টিবায়োটিক সেবনের ফলে আপনি দ্রুত অন্য একটি মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হতে পারেন সেটিও মনে রাখতে হবে। ভুল এন্টিবায়োটিক সেবন করতে করতে এবং ঠিকভাবে সঠিক নিয়মে এন্টিবায়োটিক সেবন না করার কারণে এক সময় আপনি সুপারবাগ সংক্রমণে আক্রান্ত হবেন। এর অর্থ হলো এন্টিবায়োটিক আপনার উপর আর কাজ করবে না। সব এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট হয়ে পড়ে।
আমাদের দেশে প্রতি বছর সুপারবাগ সংক্রমণের কারণে অনেক মানুষ মারা যায়। যখন আপনাকে হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয় তখন যদি কোনো এন্টিবায়োটিক আপনার উপর কাজ না করে তাহলে মৃত্যু ছাড়া আর বিকল্প কোনো রাস্তা খোলা থাকে না। আপনি লাইফ সাপোর্টে না থাকলেও রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া নিউমোনিয়া, মুত্রনালী সংক্রমন বা চর্মে সংক্রমন সৃষ্টি করতে পারে। এন্টিবায়োটিক মুখের সংক্রমন ও আলসার সৃষ্টি করতে পারে। এন্টিবায়োটিক মুখে ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য পরিবর্তন করতে পারে। এ কারণেই এন্টিবায়োটিক ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া সেবন করবেন না। অনেক সময় এন্টিবায়োটিক ছাড়াই সঠিক ওষুধ প্রয়োগ করলে একজন রোগী সুস্থ হয়ে যায়। সমাজের বিভিন্ন স্তরে এবং বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের মধ্যে এন্টিবায়োটিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। অন্যথায় আমাদের দেশে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট এর কারণে লাইফ সাপোর্টে থাকা বা লাইফ সাপোর্ট ছাড়াও অনেক মানুষ প্রতি বছর মৃত্যুবরণ করছে এবং এ সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। হাসপাতালের এই করুণ দৃশ্য দেখতে নিশ্চয়ই আমাদের ভাল লাগবে না।
ডাঃ মোঃ ফারুক হোসেন
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
মোবাইল ঃ ০১৮১৭৫২১৮৯৭
ই-মেইল ঃ [email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।