পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
যেসব দেশে গণতন্ত্র রয়েছে, সেসব দেশে মানুষের ভোট বা মতামত নিয়ে ক্ষমতাসীন হওয়ার আনন্দ আলাদা। এতে নির্বাচিত প্রতিনিধি যেমন মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হন, তেমনি দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে তার উৎসাহ, উদ্দীপনা এবং দায়বদ্ধতা সৃষ্টি হয়। তিনি বা তারা বলতে পারেন, আমি ও আমরা জনগণের পূর্ণ মতামত নিয়ে দেশ পরিচালনা করছি। এতে জনগণও খুশি হয় এই ভেবে, আমাদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়েই দেশ পরিচালিত হচ্ছে। তার ভোটের মূল্য দেয়া হচ্ছে। ভোটের মূল্য দিয়ে শাসন কাজে নিযুক্তরাও গণতন্ত্রমনস্ক হয়ে দেশ পরিচালনা করেন। এতে ন্যায় ও ন্যায্য শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। জনতন্ত্র ও গণতন্ত্রের সৌন্দর্য এখানেই নিহিত। যেসব দেশে জনগণের মতামতের তোয়াক্কা না করে শাসকরা শাসন কাজ পরিচালনা করে তারা কেবল তাদের খেয়াল-খুশির ভিত্তিতেই চলেন। তাদের উপর জনগণের মতামত চাপে না বরং তারা তাদের নিজস্ব মতামত জনগণের উপর চাপিয়ে দেন। জনগণকে তাদের মত অনুযায়ী চলতে বাধ্য করা হয়। তাদের এ মত প্রতিষ্ঠা করতে প্রশাসনিক শক্তি ব্যবহার করা হয়। রাজতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, কর্তৃত্বতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্রে এমনটি দেখা যায়। আমাদের দেশের মানুষের সবচেয়ে পছন্দের তন্ত্র হচ্ছে গণতন্ত্র। তারা দেখেছে, রাজতন্ত্র, জমিদারতন্ত্র, সামন্ততন্ত্র, কর্তৃত্বতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র কতটা ভয়ংকর এবং নিষ্ঠুর হয়। এসব তন্ত্র এবং এসবের ধারকরা কীভাবে তাদের মতামত দমন করে অত্যাচার, নিপীড়নের মাধ্যমে যুগের পর যুগ শাসন করেছে। ফলে ক্ষুধা, দারিদ্র্যের মধ্যে থেকেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তারা সুদীর্ঘকাল আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। তাদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাম্য ও ন্যায়বিচার সর্বোপরি গণতান্ত্রিক অধিকার পাওয়ার তীব্র আকাক্সক্ষার মধ্য দিয়েই আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে। বিশ্বের খুব কম দেশই রয়েছে, যেখানে জনগণকে নিত্য অভাব-অনটনের মধ্যে থেকে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে। গণতন্ত্র বা নিজ মতামতকে প্রতিষ্ঠা করার কতটা তীব্র আকাক্সক্ষা থাকলে মানুষ এভাবে জীবন উৎসর্গ করতে পারে! দুঃখের বিষয়, গণতন্ত্রের প্রতি জনগণের এই দুর্নিবার আকাক্সক্ষার মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হলেও তা পুরোপুরি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরের দ্বারপ্রান্তে এসেও মানুষকে গণতন্ত্রের খোঁজ করতে হচ্ছে। ভোটের অধিকার পাওয়া নিয়ে হাহাকার করতে হচ্ছে।
দুই.
গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রশ্নে বিগত একযুগের দিকে যদি আমরা তাকাই তাহলে দেখব, এ সময়ে গণতন্ত্রের পথটি সংকুচিত হয়েছে। যুগের শুরুটা মানুষের বিপুল ভোটের অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে শুরু হলেও পরবর্তীতে তা হোঁচট খেতে শুরু করে। দিন দিন মানুষ ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে এবং হচ্ছে। অথচ শুধু এই ভোটের অধিকার ফিরে পেতে রাজনৈতিক দলগুলো অনেক ত্যাগ ও সংগ্রামের পর সমঝোতার ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিল। এর মাধ্যমে মানুষ সুষ্ঠুভাবে ভোটও দিতে পেরেছে। এক পর্যায়ে ক্ষমতাসীন দলের কাছে মনে হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনির্বাচিত, পূর্ণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে হলে নির্বাচিত সরকারের অধীনে মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা উচিৎ। আর কতকাল অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন হবে! স্বাভাবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ক্ষমতাসীন দলের এই মনোভাব গ্রহণযোগ্য। গণতন্ত্রের সৌন্দর্যই হচ্ছে, যে দল ক্ষমতায় থাকবে সে সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করে হেরে গেলেও বিজয়ী দলকে অভিনন্দন জানিয়ে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেবে। দেশ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি উঠিয়ে দেয়ায়, সবাই আশা করেছিল, যে দলটি গণতন্ত্র এবং মানুষের ভোটের অধিকারের জন্য সুদীর্ঘকাল আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে, সে দল ক্ষমতায় থেকে নিশ্চয়ই সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত করবে। দুঃখের বিষয়, মানুষের এ আশা পূরণ হয়নি। দেখা গেল, তার অধীনের প্রথম নির্বাচনটিই নিদারুণ বিতর্কের সূচনা করে। বিনা ভোটে ১৫৩ আসনের প্রার্থীর নির্বাচিত হওয়ার অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়, যা বিশ্বে রেকর্ড সৃষ্টি করে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ক্ষমতাসীন দলের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের যে আশা মানুষ করেছিল, তা পূরণ করতে দলটি নিদারুণ ব্যর্থতার পরিচয় দেয়। সাংবিধানিকভাবে বা পুস্তকীয় ভাষায় এই নির্বাচন বৈধ হলেও, বাস্তবে মানুষের ভোটের মাধ্যমে যে নির্বাচন দলটি তা করতে পারেনি। ফলে দেশ-বিদেশে পুরো নির্বাচনটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। এ থেকে বোঝা যায়, ক্ষমতাসীন দলের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না বলে মানুষের যে ধারণা ছিল, তা ভুল ছিল না এবং এ জন্য যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়েছিল, তা সঠিক ছিল। কারণ, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক মনোভাব যেমন সৃষ্টি হয়নি, তেমনি যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় থাকা এবং যাওয়ার লোভ থেকেও বের হয়ে আসতে পারেনি। দলীয় সরকারের অধীনে বিতর্কিত নির্বাচনের আগে ও পরে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক এমনকি ক্ষমতাসীন দলীয় সমর্থক বুদ্ধিজীবীরা বিভিন্ন টেলিভিশনের টক শোতে বলেছিলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কোনো না কোনো সময় তো শুরু করতে হবে। এবার শুরু হলো। এর মাধ্যমে নির্বাচন হতে হতে এক সময় তা সুষ্ঠু হতে শুরু করবে। গণতান্ত্রিক এ ধারা চালূ করতে হবে। তাদের এ কথা যে একেবারে মাঠে মারা গেছে, তা বিগত একযুগে জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে ইউনিয়ন, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন এবং বিভিন্ন উপনির্বাচন ভোটারবিহীন এবং গণহারে বিনাভোটে নির্বাচিত হওয়া থেকেই বোঝা গেছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে তাদের কথা মতো, দলীয় সরকারের অধীনে আর কত নির্বাচন হলে তা নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুরূপ লাভ করবে? দলীয় সরকারের অধীনে এই যে একচেটিয়া নির্বাচন হলো, এগুলো কি গণতন্ত্র এবং মানুষের মতামত প্রতিষ্ঠায় কোনো ভূমিকা রেখেছে এবং রাখছে? এসব নির্বাচনকে এখন তারা কীভাবে মূল্যায়ণ করবেন? আর ক্ষমতাসীন যে দলটি গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করে বছরের পর বছর আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে, সে-ই বা কি জবাব দেবে? না, সে এখন এর কোনো জবাব দেয় না। দেবেও না। কারণ, সে এখন ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে গেছে, গণতন্ত্রের স্বাদ মানুষকে দেয়ার তার দরকার নেই। গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে তার যে সুদীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম ছিল, তা এখন মানুষের কাছে লোক দেখানো এবং ধোঁকা হিসেবে ঠেকছে। মানুষের মধ্যে এখন এ প্রশ্ন জেগেছে, সাধারণ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন যার মাধ্যমে ক্ষমতা পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই কিংবা একটি-দুটি সংসদীয় উপনির্বাচনে জেতার লোভ যে দলটি সামলাতে পারে না, সে কেমন করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে? বরং দলটি যদি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আন্তরিক হতো, তাহলে এসব নির্বাচন সুষ্ঠু করার মধ্য দিয়ে প্র্যাকটিস করতে পারত। মানুষ বুঝত, দলটি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যাত্রা শুরু করেছে। অথচ মানুষের এখন এই ধারণা বদ্ধমূল, দলটি গণতন্ত্র এবং মানুষের ভোটের ও মতামতের অধিকারের ধার ধারে না। মানুষ এখন চরমভাবে হতাশ। তারা ভোটের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। ভোট হলেও তারা ভোট দিতে যায় না। কারণ, তারা জানে, ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচিত (!) হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের ভোটের কোনো প্রয়োজন নেই। ফেসবুকে ফেক আইডি দিয়ে ‘লাইক’ বড়ানোর ‘বুস্টআপ’ পদ্ধতিতে ভোটও ‘বুস্টআপ’ করে নির্বাচন কমিশন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকেই বিজয়ী ঘোষণা করবে।
তিন.
এখন নির্বাচন মানেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর জয়জয়কার। মানুষের মধ্যে এ ধারণা পাকাপোক্ত, যেকোনো নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হওয়া মানেই নিশ্চিতভাবে সংসদ সদস্য, মেয়র বা অন্যান্য প্রতিনিধি হওয়া। ফলে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হওয়া নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়। বিগত জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে সব ধরনের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য প্রার্থীদের যে ঢল দেখা গেছে, দেশে তার নজির বিরল। এমনকি সাংস্কৃতিক অঙ্গণের অখ্যাত-বিখ্যাতদেরও মনোনয়ন পাওয়ার জন্য লাইন ধরে থাকতে দেখা গেছে। এই যে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য প্রার্থীদের ঢল, আগ্রহ এবং লোভ, এর কারণ কি গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার জন্য? মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে মিডিয়ার সাথে কথা বলার সময় কি তারা এ কথাগুলো বলেন? বলেন না এবং তাদের বলতেও দেখা যায়নি। একজন অতি সাধারণ মানুষও জানে, তারা মনোনয়ন পেতে আগ্রহী শুধুমাত্র তাদের নিজ স্বার্থ হাসিল ও ক্ষমতার স্বাদ পাওয়ার জন্য। তাহলে কি দাঁড়াল? ক্ষমতাসীন দল এই সংস্কৃতি চালু করেছে, আমার দলের মনোনয়ন পাওয়া মানে নিশ্চিত বিজয়ের বø্যাঙ্ক চেক পাওয়া এবং ক্ষমতাবান হওয়া। হচ্ছেও তাই। নির্বাচন নিয়ে এই একচেটিয়া মনোভাবের কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ক্ষমতাসীন দল সংশ্লিষ্ট নির্বাচিত-অনির্বাচিত ব্যক্তিদের দাপট মানুষ এখন ভালভাবে টের পাচ্ছে। দেশজুড়ে এই যে ধর্ষণ মহামারি আকার ধারণ করেছে, এর নেপথ্যের অন্যতম কারণ যে ক্ষমতাসীন দল সংশ্লিষ্ট একশ্রেণীর লোকজনের ক্ষমতার দাপট, তা সকলেরই জানা। শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এবং রাজনৈতিক দল ধর্ষণবিরোধী কমন ইস্যুতে যে আন্দোলন করেছে, সেখানে ক্ষমতাকামী ঐসব বিখ্যাতদের তো লাইন ধরে যেতে দেখা যায়নি। তার অর্থ এই, তাদের কাছে সাধারণ মানুষের ন্যায্য দাবী-দাওয়া গুরুত্বহীন। ক্ষমতাসীন দল সংশ্লিষ্ট একশ্রেণীর লোকজনের অপকর্ম তাদের কাছে জায়েজ। অথচ তারা জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকেন। করোনার এই সময়ে দেশের গণতন্ত্র এবং মানুষের ভোটের অধিকার কি অবস্থায় রয়েছে, তা গত ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত দুটি সংসদীয় উপনির্বাচন থেকে বোঝা যায়। ঢাকা-৫ ও নওগা-৬ আসনে নির্বাচন দুটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচন দুটিতে বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি অংশগ্রহণ করে। বলা বাহুল্য, দলটি দুটি আসনেই শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। এমনকি জামানত রক্ষা করার মতো ভোট পায়নি। ঢাকা-৫ আসনে তো ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী নিজেই তার ভোট দেয়নি বলে পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। নিজের ভোট নিজে না দিয়ে বিজয়ী হওয়ার এমন নজির বিশ্বে খুব কমই রয়েছে। এ থেকে এটাই প্রমানিত হয়, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী নিশ্চিতভাবেই জানে, নিজের ভোট না দিলেও তার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। শুধু প্রার্থীই নয়, ক্ষমতাসীন দলের অনেক সমর্থক ও ভোটাররাও এখন ভোট দিতে যায় না। তারাও জানে, লাইন ধরে কষ্ট করে ভোট দেয়ার দরকার নেই। তাদের প্রার্থী এমনিতেই জিতে যাবে। অথচ তারাও যে ভোটের অধিকার হারিয়ে ফেলেছে এবং তার দলের জন্য তার ভোটের মূল্য কি, তা বুঝতে পারছে না। এ থেকে বোঝা যায়, দেশের গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার কোন পর্যায়ে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোট ছাড়া অনেক মানুষ এখন জানেই না কখন, কোথায়, কি ভোট হচ্ছে। এ নিয়ে তাদের আগ্রহও নেই। ভোটের প্রতি মানুষের এই অনীহা সৃষ্টির জন্য দায়ী কে? এর প্রথম দায় ক্ষমতাসীন দলের। কারণ, তার দায়িত্ব মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং গণতন্ত্রকে সুদৃঢ় করা। যেহেতু বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থা এবং সাংবিধানিক ধারাই হচ্ছে, গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটাধিকারের মধ্য দিয়ে পরিচালিত করা, তাই ক্ষমতায় গিয়ে এর ব্যত্যয় ঘটানো বা মুখে মুখে গণতন্ত্রের কথা বলা এবং লোক দেখানো নির্বাচন করা এ ধারার খেলাপ করা। আমরা দেখেছি, স্বৈরশাসনকালে লোক দেখানো নির্বাচন প্রতিরোধে রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলন করে কিভাবে সরকারকে নাকানিচুবানি খাইয়েছে। এই ভোটের অধিকার এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত স্বৈরশাসককে বিদায় নিতে হয়েছে। শুধু এখানেই শেষ নয়, ভোটের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে বিএনপি যখন ক্ষমতাসীন হয়, তখন দলটি এক মাগুরা আসনের নির্বাচনে কারচুপি করায় প্রবল আন্দোলনের মুখোমুখি হয়। সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের কাছে পর্যন্ত ভোট কারচুপির অভিযোগে দলটি নিন্দিত হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় পরবর্তী নির্বাচনে দলটি হেরে যায়। এই বর্তমান ক্ষমতাসীন দলই সে সময় ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল। অথচ তার শাসনামলেই মাগুরা মার্কা অসংখ্য নির্বাচন হওয়ার পাশাপাশি ভোটারবিহীন এবং রাতের আঁধারে নির্বাচন সম্পন্ন করার নজির সৃষ্টি হয়েছে ও হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারচুপি আর জবরদস্তির নির্বাচনই এখন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চার.
মানুষ আবার কবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে উৎসবমুখর হয়ে ভোট দিতে পারবে এবং তাদের প্রকৃত ভোটাধিকার ফিরে পাবে, তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারবে না। তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার পদক্ষেপ কে নেবে, তাও বলা যাচ্ছে না। ভোটাধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকারের যেমন সদিচ্ছা থাকা প্রয়োজন, তেমনি বিরোধী দলেরও জোরালো ভূমিকা থাকা দরকার। দুঃখের বিষয়, এর কোনোটাই এখন নেই। দেশে ক্ষমতাসীন দল ছাড়া আর কোনো দল রয়েছে, এমন পরিস্থিতি প্রতীয়মান হচ্ছে না। ক্ষমতাসীন দলের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপরই মানুষের ভোটাধিকার এবং গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা নির্ভর করছে। দলটির যে এদিকে আগ্রহ কম এবং এ পথে হাঁটতে অনিচ্ছুক, তা বিগত একযুগ ধরেই মানুষ দেখছে। তার মধ্যে নিজের সাথে নিজে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে লোক দেখানো ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকার প্রবণতাই বেশি। সে বিরোধী দলগুলোকে প্রশাসনিক ও দলীয় ক্ষমতা দিয়ে দমিয়ে নিস্তেজ করে রাখতে সক্ষম হয়েছে। দলগুলো মাথা তুলে দাঁড়ানোর শক্তি ও সাহসও হারিয়েছে। ফলে দেশের গণতন্ত্র এবং ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার একমাত্র এখতিয়ার ক্ষমতাসীন দলের ওপরই নির্ভর করছে। এটা এখন সকলের কাছে স্পষ্ট এবং তারা ধরে নিয়েছে, ক্ষমতাসীন দলটি এভাবেই ক্ষমতায় থাকতে চায়। তার মধ্যে নিজের মতো নির্বাচন করা এবং ক্ষমতায় থাকার মানসিকতা প্রবল। অন্য কারো কাছে তা পছন্দ হোক বা না হোক, নিজ দলের লোকজনের পছন্দই তার জন্য যথেষ্ট। ফলে গণতন্ত্রের বিকাশ এবং মানুষের ভোটের অধিকারের বিষয়টি এখন অনিশ্চিত হয়েই আছে।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।