Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উচ্চ রক্তচাপ ও ক্যান্সার প্রতিরোধে কমলা

| প্রকাশের সময় : ৬ নভেম্বর, ২০২০, ১২:১৬ এএম

এই মৌসুমের বিভিণ্ণ ফলের মধ্যে কমলা একটি জনপ্রিয় ফল। এ ফলটি অতি সুস্বাদু ও নানা পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। এ ফলের রস ছোট বড় সকলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কমলা গোলাকৃতির রসে টুইপম্বুর এক প্রকার লেবু জাতীয় রসালো ফল। জাম্বুরা, মালটা ইত্যাদি ফল প্রাকৃতিক শংকরায়িত সাইট্রাস ফল কমলা থেকে উদ্ভূত এবং কমলাই একমাত্র মিষ্টি স্বাদের আদি সাইট্রাস ফল। কমলা সারা বছরই পাওয়া যায় তবে শীতকালে বাজারে প্রচুর পাওয়া যায় এবং দামও সস্তা এ সময়ের কমলা স্বাদও বেশি।

রাসায়নিক উপাদানঃ পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে প্রতি ১০০ গ্রাম তরতাজা খোসা ছাড়ানো কমলার পুষ্টি উপাদান হলো: জলীয় অংশ ৮৯.৪ গ্রাম, প্রোটিন ০.৯ গ্রাম, স্নেহ ০.৩ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম, শর্করা ১১.৪ গ্রাম, খনিজ পর্দাথ ০.৪ গ্রাম, আয়রন ০.৬ গ্রাম, আঁশ ০.৩ গ্রাম, ভিটামিন বি ০.৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৫০ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩৩ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৩০০ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ২৩ মিলিগ্রাম, ফসফেট ২০ মিলিগ্রাম, খাদ্য শক্তি ৮০ কিলোক্যালরি, সামান্য পরিমানে ভিটামিন এ, সোডিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, তামা, সালফার এবং ক্লোরিন আছে।

উপকারিতাঃ ভিটামিন এ. বি. সি এবং ক্যালসিয়াম, পটাশিয়ামের মত সুরক্ষা প্রদানকারী খাদ্য উপাদান সমৃদ্ধ কমলালেবু। এতে উপস্থিত ভিটামিন সি আমাদের দেহের কোষ কলায় ক্যালসিয়াম ব্যবহারে সহায়তা করে। কমলাতে উপস্থিত বিটা ক্যারোটিন সেল ড্যামেজ প্রতিরোধে সহায়তা করে। প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় পটাশিয়ামের সাত শতাংশ পূরন করা যায় কমলা থেকে। যা শরীরের তরলের ভারসাম্য বজায় রাখে। কমলার উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ফ্রি র‌্যাডিকেল ড্যামেজ করে। ফলে চামড়ার সজীবতা বজায় রাখে। ভিটামিন বি ফোলেটের খুবই ভালো উৎস যা জন্মগত ক্রটি ও হৃদরোগের ভালো কাজ করে। মানবদেহে হাড় এবং দাঁত গঠনে কমলার ক্যালসিয়াম গুরুত্বর্পূণ কাজ করে। কমলায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম আছে এবং ম্যাগনেশিয়াম উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে। পটাশিয়াম ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখে এবং কার্ডিও ভাস্কুলার সিস্টেম ভালো রাখতে সাহায্য করে। কমলার লিমিনয়েড উপাদান থাকে যা মুখ, ত্বক, ফুসফুস, পাকস্থলী কোমল রাখে এবং স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। প্রচুর পরিমানের ভিটামিনের পাশাপাশি কমলাতে আলফা ও বিটা ক্যারোটিনের মতো ফ্ল্যাভনয়েড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগও রয়েছে যা মানবদেহের নানা ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। কমলার সবচেয়ে বড় গুণ এটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। একটি কমলা সারা দিনের দেহের সকল পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণ করে। কমলায় যেসব উপাদান রয়েছে তা সেবনে মানব মস্তিষ্ককে সুস্থ সবল রাখে এবং মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাধতে দেয় না। ফলে স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্ত ক্ষরণ রোগ প্রতিরোধ করে। নিয়মিত কমলার রস খেলে হৃদরোগের সম্ভাবনা কমে যায়। কমলার খোসা দেহের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। ফলে দেহের শিরা উপশিরা সুস্থ ও সবল থাকে এবং রক্ত সঞ্চালন ভালো থাকে। কমলার খোসার কেমিক্যাল কম্পাউন্ড দেহের অক্সিজেনের মৌল ধরে রাখতে সাহায্য করে। ফলে ক্যন্সার কোষ বৃদ্ধি পায় না। এতে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। তাছাড়া কমলার রস আমাদের দেহকে সুস্থ সবল রাখতে আরো যে গুরুত্বর্পূণ কাজ করে তা হলো:

* যারা ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন তারা নিয়মিত কমলা খান উপকার পাবেন।

* যাদের দেহের ওজন বেশি তারা নিয়মিত কমলা খান ওজন ধীরে ধীরে কমে আসবে।

* যারা শীতে ঘন ঘন সর্দি, কাশি, হাঁপানিতে ভোগছেন তারা শীত মৌসমে কমলা খান। এতে সমস্যা কমে আসবে দেহের রোগ প্রতিরোধ ও ক্ষমতা বাড়বে।

* যাদের শীতে হাত, পা ঠান্ডা হয়ে আসে বা বেশি শীত লাগে তারা প্রতিদিন একটা করে কমলা খান সাথে এক কাপ দুধে এক চামচ খাঁটি মধু মিশিয়ে খান সমস্যা কমবে এবং শরীরও সুস্থ থাকবে।

* যারা জ¦রে ভুগছেন তাদের জন্য কমলার রস সবচেয়ে আর্দশ খাবার। জ¦রের রোগীদের লালার অভাবে জিহ্বায় আস্তরণ পড়ে এবং প্রায়ই তার পানি পানে এবং খাদ্য গ্রহণে ইচ্ছা কমে যায়। এ সমস্যায় কমলার রস খুবই উপকারি। এটি শক্তি যোগায়, মূত্রের পরিমাণ বাড়ায় এবং সংক্রমনের বিরুদ্ধে শরীরে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে।

* যারা মুখের ঘা, জিহ্বার ঘা, দাঁতের সমস্যা ভোগছেন তারা নিয়মিত্র কমলার রস খান বেশ উপকার পাবেন।

* কমলার লেবুর রসের সাধারণত উদ্দীপিত্তকারী প্রভাব পেরিষ্টালটিক ক্রিয়াকে উত্তোজিত করে এবং মলাশয়ে খাদ্য বস্তুর অবশিষ্টাংশ জমা হতে বাধা দেয়। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা কমে যায়।

* কমলা দেহের চামড়া ও চুলের সৌর্ন্দয্য বৃদ্ধি করে এবং চর্মরোগ প্রতিরোধ করে।

* যারা হৃদ রোগে ভুগছেন বা বুকে ধরফড় করে বা সামান্যতেই হাঁপিয়ে উঠেন তারা কমলার রসের সাথে খাঁটি মধু মিশিয়ে খান বেশ উপকার পাবেন।

* মহিলাদের মাসিকের পর শরীরে দুর্বলতা দেখা দেয় বা অলসতা দেখা দেয় এসময় সকাল বিকাল একটি করে কমলা খান উপকার পাবেন।

* যেসব শিশুরা মায়ের দুধ খায় নাই তাদের কমলার রস খাওয়ান শিশুরা নিরোগ দেহে বড় হয়ে উঠবে।

* যাদের দেহে অপারেশন বা কাটা ছিঁড়া হয়েছে তারা প্রতিদিন কমলার রস খান। কাটা ছিঁড়ার স্থান তাড়াতাড়ি শুকিয়ে আসবে।

সর্তকতা: শীতে কমলা মজাপেয়ে বেশি খাবেন না। যাদের কিডনিতে সমস্যা আছে বা কিডনি রোগী তারা কমলা খাবেন না। যাদের কমলা খেলে এসিডিটি বা গ্যাসের সমস্যা হয় তারা সর্তকতার সাথে কমলা খান। ফলটি খেলে কোনো সমস্যা দেখা দিলে খাওয়া বন্ধ রাখুন।

মোঃ জহিরুল আলম শাহীন
শিক্ষক ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কলাম লেখক।
ফুলসাইন্দ দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
গোলাপগঞ্জ, সিলেট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কমলা

১০ ডিসেম্বর, ২০২১
৬ নভেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন