পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঈদ উপলক্ষে রেলের টিকিট বিক্রিতে শুরুর আগেই বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বাড়ি ফেরার টিকিটের জন্য কমলাপুর রেলস্টেশনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও মিলছেনা প্রত্যাশিত টিকিট। গতকাল শুক্রবার টিকিটের জন্য কমলাপুর রেল স্টেশনে টিকিটপ্রত্যাশীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। অনেকেই স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদযাত্রায় বাড়ি ফিনতে চান তারা গতকাল শুক্রবার সকালেই লাইনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু সবার কপালে জোটেনি প্রত্যাশিত টিকিট। বেশিরভাগ লোকজনকেই নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়। ঈদের টিকিট বিক্রির শুরুতেই এমন পরিস্থিতিতে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। অনলাইনে ঢুকতে না পেরে কাউন্টারে ভিড় করছেন তারা। কাউন্টারেও হ্যাং সার্ভার থাকার কারণে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুণ।
গতকাল শুক্রবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই ভিড় আরও বাড়তে থাকে। সাধারণ মানুষ ঈদের আগেই তাদের পরিবার-পরিজনকে গ্রামের বাড়ি পাঠানোর জন্য আগেভাগে ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করার জন্য এসেছেন বলে জানা গেছে। গত তিন-চার দিন ধরেই কমলাপুরে রেলস্টেশনে অগ্রিম টিকিট কাটতে যাত্রীরা সকাল থেকেই ভিড় করছে। তবে গতকাল ছুটির দিন হওয়ায় এবং ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রির এক দিন আগে ভিড়টা আরও বেড়েছে।
ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রির নির্ধারিত দিন ২৩ এপ্রিল। তবু আনুষ্ঠানিক টিকিট বিক্রি শুরুর আগের দিনেই কমলাপুর রেল স্টেশনে টিকিটপ্রত্যাশীরা ভিড় করেছেন। কাউন্টারের সামনে যেন যাত্রীদের তিল ধারণের ঠাঁই নেই। প্রতিটি কাউন্টারের সামনে থেকে টিকিটপ্রত্যাশীদের সারি এঁকে-বেঁকে চলে গেছে স্টেশনের বাইরে। শুক্রবার কাউন্টার থেকে বিক্রি হচ্ছে ২৬ এপ্রিলের ট্রেনের টিকিট। আর এ টিকিট পেতেই সকাল থেকে কমলাপুরের লাইনে দাঁড়িয়েছেন টিকিটপ্রত্যাশীরা।
রেলের আগাম ঈদের টিকিট বিক্রি শুরুর আগেই অনলাইনেও বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। সকাল থেকে সার্ভার ডাউনের কারণে বেশির ভাগ টিকিটপ্রত্যাশী প্রবেশ করতে পারেননি অনলাইনে। ফলে ২৬ তারিখের টিকিটপ্রত্যাশীদের ভিড় ছিল উপচেপড়া। কাউন্টারেও সার্ভার ডাউনে মাঝেমধ্যেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অফলাইন টিকিট বিক্রি। আগাম ঈদ টিকিটের ৫০ শতাংশ অনলাইনে বিক্রির কথা থাকলেও শুক্রবার সকাল থেকেই সার্ভার ডাউন। শত চেষ্টা করেও অনেকেই প্রবেশ করতে পারেননি ওয়েবসাইটে। যারাও বা ঢুকতে পেরেছেন বেশির ভাগই পড়েছেন ভোগান্তিতে। কারও টাকা কেটে নিলেও দেয়া হয়নি টিকিট। এছাড়া যাত্রার তারিখ, ট্রেনের নাম এমনকি যাত্রার সময়ও ভুলে ভরা বলে অভিযোগ অনেকের।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকিট বিক্রির নতুন সফটওয়্যার মানসম্মত নয়। ঈদের সময় অতিরিক্ত মানুষের চাহিদা থাকায় অনলাইনে এমন নাজুক সফটওয়্যার দিয়ে ঈদের টিকিট বিক্রিতে বিপর্যয় হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বিক্রির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান সহজ ডট কম বলছে ভিন্ন কথা। ভোগান্তির কথা অস্বীকার করে প্রতিষ্ঠানটির মিডিয়া ম্যানেজার ফারহাত আহমেদ বলেন, টিকিট বিক্রির প্রস্তুতি আমরা শতভাগ সম্পন্ন করেছি। সকাল থেকে স্বাভাবিকভাবেই টিকিট বিক্রয় কার্যক্রম চলছে। যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্য মতোই বরাদ্দকৃত টিকিট পাচ্ছেন। অনলাইনের পাশাপাশি ৭৭টি কাউন্টার থেকে যাত্রীরা কোনো ভোগান্তি ছাড়াই টিকিট ক্রয় করতে পারছেন।
জানা গেছে, অনলাইন ছাড়াও রাজধানীর কমলাপুর, বিমানবন্দর, তেজগাঁও, বনানী ও গুলিস্তান পুরাতন রেলস্টেশনের ৭৭টি কাউন্টারে ঈদের টিকিট বিক্রি করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। অনলাইনে ই-টিকিটিংয়ের মাধ্যমে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি সকাল ৮টায় শুরু হবে। এ ছাড়া কাউন্টারে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এক টানা অগ্রিম টিকিট বিক্রি চলবে। প্রতিটি টিকিট বিক্রয় কেন্দ্রে একটি করে নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য কাউন্টার থাকবে। একজন যাত্রী একসঙ্গে সর্বোচ্চ চারটি টিকিট কিনতে পারবেন। বিক্রি করা ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট ফেরত নেয়া হবে না। স্পেশাল ট্রেনের কোনো টিকিট অনলাইনে পাওয়া যাবে না। শুধু স্টেশন কাউন্টারে বিক্রি করা হবে।
যাত্রীদের সুবিধার জন্য এবার রাজধানীর পাঁচটি কেন্দ্র থেকে টিকিট বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় রেল মন্ত্রণালয়। কাউন্টার থেকে জানানো হয়, একজন যাত্রী সর্বোচ্চ ৪টি করে টিকেট কিনতে পারবেন। আজ দেয়া হবে ২৭ এপ্রিলের যাত্রার টিকিট। এভাবে পর্যায়ক্রমে ২৪ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত বিক্রি হবে ২৮ এপ্রিল থেকে পয়লা মে-এর টিকিট। আগামী ৫ মে ঈদের ফিরতি যাত্রা শুরু হবে। ফিরতি যাত্রার অগ্রিম টিকিটি বিক্রি শুরু হবে ১ মে। যথাক্রমে ৬ মের জন্য ২ মে, ৭ মের জন্য ৩ মে এবং ৮ মের জন্য ৪ মে টিকিট বিক্রি করা হবে বলে জানানো হয়। এই অগ্রিম টিকিট বিক্রি ২, ৩ ও ৪ মে চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করা হবে। সেক্ষেত্রে ১ মে সন্ধ্যার পর নেয়া সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে টিকিট বিক্রি করা হবে।
কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে সমগ্র পশ্চিমাঞ্চল ও খুলনাগামী স্পেশাল ট্রেনের টিকিট বিক্রি হওয়ার কথা রয়েছে। ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে পাওয়া যাবে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট। তেজগাঁও স্টেশন থেকে ময়মনসিংহ, জামালপুর ও দেওয়ানগঞ্জ স্পেশালসহ সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট মিলবে। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে মোহনগঞ্জ ও হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হবে। এবার ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের জন্য ৬ জোড়া বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা রয়েছে রেলের। এর মধ্যে চাঁদপুর স্পেশাল-১ ও চাঁদপুর স্পেশাল-২ দুটি ট্রেন চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে ১ মে এবং ঈদের পর ৪ মে থেকে ৮ মে পর্যন্ত চলাচল করবে। এছাড়া ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রুটে দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল একই সময়ে চলাচল করবে। ঢাকা-খুলনা রুটে খুলনা স্পেশাল ট্রেনটি বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চলাচলকারী মৈত্রী এক্সপ্রেসের অতিরিক্ত রেক দিয়ে চলাচল করবে আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত। এ ছাড়া ঈদের দিন ভৈরব বাজার ও কিশোরগঞ্জ রুটে শোলাকিয়ায় স্পেশাল-১ এবং ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রুটে শোলাকিয়ায় স্পেশাল-২ চলাচল করবে।
রাজশাহীগামী বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কাটতে আসা এক যাত্রী বলেন, অগ্রিম টিকিটের জন্য কমলাপুরে প্রচন্ড ভিড় হবে। তাই একদিন আগের টিকিট কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু সকালে কমলাপুরে এসে দেখি প্রচন্ড ভিড়। দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। লাইনে এত দূর দাঁড়িয়েছি কাউন্টারের কাছে আসতে আসতে মনে হচ্ছে না আর টিকিট পাব।
দিনাজপুরের টিকিট কাটতে আসা আরেক যাত্রী বলেন, কমলাপুর হাজার হাজার মানুষের ভিড়। অনলাইনে টিকিট কাটার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারছিনা। তাই কাউন্টারে চলে এসেছি। তবে কাউন্টারে দাঁড়িয়েও টিকিট পাওয়ার কোন নিশ্চয়তা পাচ্ছিনা।
কমলাপুর রেল স্টেশনে টিকিট কাটতে আসা আবদুর রশিদ বলেন, টিকিট না পাওয়ার সন্দেহে ভোরে সেহেরি খেয়ে স্টেশনে চলে এসেছি। কিন্তু সকাল শুরু হওয়ার পর টিকিটের জন্য দীর্ঘ লাইন সৃষ্টি হয়। আর যেভাবে টিকিট বিক্রি হচ্ছে তাতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। কাউন্টার থেকে একজন গ্রাহককে টিকিট কিনতে অনেক সময় লাগছে। কোন কোন গ্রাহককে তার টিকিট নেয়ার জন্য ২০ মিনিট থেকে আধা ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে।
কমলাপুর রেল স্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার বলেন, কাউন্টারগুলোতে টিকিটপ্রত্যাশীর সংখ্যা অনেক বেশি। ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরুর আগের দিন অনেকে ভোগান্তি এড়াতে টিকিট কাটতে এসেছেন। ফলে ভিড় দেখা দিয়েছে। শনিবার থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রির সব প্রস্তুতি শেষ করেছি। আশা করছি সুষ্ঠু, সুন্দর পরিবেশে ও সুশৃঙ্খলভাবে টিকিট বিক্রি শুরু করতে পারব। অনলাইনের পাশাপাশি কাউন্টারে ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হবে। সবগুলো কাউন্টারে টিকিট দেয়া হচ্ছে। যতক্ষণ টিকিট থাকবে, ততক্ষণ যাত্রীরা টিকিট পাবে।
রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন গত ১৩ এপ্রিল রেল ভবনে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ঈদের সম্ভাব্য তারিখ ৩ মে ধরে অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হবে। টিকিট যার, ভ্রমণ তার এই শ্লোগান বাস্তবায়নে যাত্রীদের এনআইডি/জন্ম সনদ ফটোকপি কাউন্টারে প্রদর্শনপূর্বক টিকিট ক্রয় করতে হবে। ইন্টারনেটে ই-টিকেটিংয়ের মাধ্যমে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি সকাল ৮টায় শুরু হবে। এছাড়া কাউন্টারে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অগ্রিম টিকিট বিক্রয় চলবে। প্রতিটি টিকিট বিক্রয় কেন্দ্রে একটি করে মহিলা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য কাউন্টার থাকবে। প্রতিটি আন্তঃনগর ট্রেনে শুধুমাত্র মহিলা ও প্রতিবন্ধী যাত্রীদের জন্য একটি করে স্বতন্ত্র কোচ সংযোজন করা হবে। একজন যাত্রী একসাথে সর্বোচ্চ ৪টি টিকিট ক্রয় করতে পারবেন। ###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।