পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশে নদীভাঙনে ক্ষয়ক্ষতির নানাবিধ সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রভাব তীব্র হয়ে উঠছে। কয়েক দফা দীর্ঘস্থায়ী বন্যা ও নদীভাঙনের তীব্রতা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। অসংখ্য মানুষ বাড়িঘর, ভিটা-মাটি, জমি-জিরাত হারিয়েছেন। সেই সাথে ভাঙনের গ্রাসে তলিয়ে গেছে শত শত সরকারি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদরাসার ভবনসহ ব্যক্তিগত ও প্রশাসনিক অবকাঠামো। প্রতি বছর নদীভাঙনে দুই শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে বলে গতকাল প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়। এটি একটি সাংবাৎসরিক ঘটনা। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট বিভাগ অনেকটা জেনে-শুনেই ভাঙ্গনের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে ভবন নির্মান করছে। ফলে প্রতিবছর শিক্ষাবিভাগের অবকাঠামো খাতে হাজার হাজার কোটি টাকার অপচয় হচ্ছে। এর মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যাই বেশি। গত দুই দশকে দেশের নদীভাঙন কবলিত জেলাগুলোতে ৮ হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার তথ্য জানা যায়। এবারের বন্যার পর এ সংখ্যা অনেক বাড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, একটি চক্র অনেকটা ইচ্ছাকৃতভাবেই ভাঙনপ্রবণ এলাকায় সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মানের প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ভাঙনপ্রবণ এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ভবন নির্মানে প্রয়োজনীয় নীতিমালা না থাকার সুযোগে ভাঙনপ্রবণ এলাকায় যেনতেনভাবে স্কুল ভবন নির্মান করে প্রকল্পের টাকা তুলে নেয়ার পর তা উদ্বোধনের আগেই পানিতে তলিয়ে যাওয়ার নজির রয়েছে বলেও জানা যায়। এমনকি ভাঙ্গন সামনে রেখেই ভবন দোতলা করার পর পুরো ভবন নদীর গ্রাসে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থ তুলে নিতেই নদীভাঙনপ্রবণ এলাকায় যেনতেন ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মানের মাধ্যমে বছরে হাজার কোটি টাকা গচ্চা দেয়ার এই অশুভ প্রক্রিয়া কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এর সাথে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া অপরিহার্য। ভাঙনপ্রবণ এলাকায় ভবন নির্মানের ক্ষেত্রে স্থান নির্বাচনসহ ভূমির গঠন, মাটির প্রকৃতি এবং সামগ্রিক ফিজিবিলিটি রিপোর্ট সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পাবলিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মানের নামে হাজার হাজার কোটি টাকার অপচয়সহ সামাজিক-অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি রোধে উপযুক্ত স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মানের স্থান নির্বাচন করার পর তা নিয়ে চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মানে নানাবিধ অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতির বিষয়গুলো সামনে রেখে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ এখন নদীভাঙনপ্রবন এলাকায় ভবন নির্মানের আগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী সংক্রান্ত মরফোলজিক্যাল রিপোর্ট বিবেচনায় রাখার কথা ভাবছে বলে জানা গেছে। ভাঙ্গনের আশঙ্কা আছে এমন এলাকায় নদী তীর থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন তৈরীর আগে মরফোলজিক্যাল রিপোট বিবেচনায় রাখার কথা বলা হচ্ছে।
নদীবিধৌত ব-দ্বীপ অঞ্চলে নদীভাঙন রোধের সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হচ্ছে, নদীর আন্ত:¯্রােত এবং ভাঙ্গনের প্রকৃতি নিরূপণ করে কিছু বিশেষ এলাকায় নদীশাসন, ড্রেজিং এবং তীর সংরক্ষণের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। উজানে ভারতের বাঁধ নির্মান এবং যৌথনদী থেকে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহারের কারণে আমাদের নদীগুলোর পানিধারণ ক্ষমতা অস্বাভাবিক হারে কমে যাচ্ছে। বর্ষায় এসব বাঁধের গেট উন্মুক্ত করে দিলে বন্যা ও ভাঙনের শিকার হয় বাংলাদেশ। ভারতের এই পানি আগ্রাসন বছরের পর বছর ধরে চলছে। তবে এ বাস্তবতা সামনে রেখে দেশের স্বার্থে সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। প্রস্তাবিত ডেল্টা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি তিস্তা ব্যারাজ নির্মাণের উদ্যোগ দ্রæতায়িত করতে হবে। তবে নদীভাঙন ও বন্যাপ্রবণ এলাকায় সরকারি বেসরকারি ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে একটি সমন্বিত নীতিমালা এবং সমীক্ষা রিপোর্টের বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সাথে ভবন নির্মাণের প্রথাগত মেটেরিয়াল, প্রযুক্তি ও পদ্ধতি সম্পর্কেও নতুনভাবে চিন্তা করতে হবে। স্থানান্তরযোগ্য অবকাঠামো নির্মাণের বিষয়টিও এখন বিবেচনায় নিতে হবে। প্রাথমিক স্তরে বছরে শত শত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হওয়ায় দুর্গম অঞ্চলের অসংখ্য গ্রাম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শূন্য হয়ে পড়ছে। এতে শিশুরা শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। লাখ লাখ শিশুর শিক্ষার এ অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া কোনোভাবেই বাঞ্চনীয় নয়। নদীভাঙনে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়ে গেছে সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রæত বিকল্প স্থানে টেকসইভাবে নির্মাণ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।