নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
আগের ম্যাচে সেরেনা উইলিয়ামসকে বিদায় করে দিয়ে দারুণ ছন্দে ছিলেন ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা। সাত বছর ধরে একটা গ্র্যান্ড স্লাম জেতার যে আক্ষেপ, সেটা এবার ঘুচতেও পারে, মনে হচ্ছিল প্রত্যয়ী এই বেলারুশ-তারকাকে দেখে। কিন্তু শেষমেশ তারুণ্যের জয়গানই গাইল ইউএস ওপেন। শিরোপা উঠল নাওমি ওসাকার হাতে।
প্রথম সেটে ছিটেফোঁটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করতে পারলেন না। দ্বিতীয় সেটের শুরুতে পিছিয়ে পড়লেন ২-০ গেমে। ওসাকার শেষ ততক্ষণে দেখে ফেলেছিলেন অনেকে। তবে আসর জুড়ে র্যাকেট হাতে নৈপুণ্য দেখানোর পাশাপাশি বর্ণবৈষম্য ও যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশের নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরব হয়ে আলোড়ন তোলা এই টেনিস তারকা তো হাল ছাড়ার পাত্র নন! দৃঢ় মনোবল নিয়ে ঘুরে দাঁড়ালেন। ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কাকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ইউএস ওপেনের নারী এককে চ্যাম্পিয়ন হলেন তিনি। গতপরশু রাতে নিউইয়র্কের আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামে পিছিয়ে পড়েও জয় তুলে নেন ২২ বছর বয়সী ওসাকা। ফাইনালে বেলারুশের আজারেঙ্কাকে ১-৬, ৬-৩ ও ৬-৩ গেমে হারিয়ে শিরোপার উল্লাসে মাতোয়ারা হন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত জাপানিজ তারকা।
ওসাকা নিজেও বিরক্ত হচ্ছিলেন নিজের খেলা দেখে। একবার নিজের র্যাকেটের ওপর বৃথা ক্ষোভ দেখালেন। কোর্টে ছুড়ে ফেললেন ‘যুদ্ধাস্ত্র’কে। কিন্তু মেজাজ খারাপ করলে তো আর জেতা হবে না! ওসাকা নিজেও শুধু শিরোপাটা জিততে তো আসেননি, এসেছেন বিশ্বব্যাপী চলমান কৃষ্ণাঙ্গদের ‘বø্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র হয়ে। প্রতি ম্যাচে একেকজনের নাম সংবলিত মাস্ক পরে খেলতে নেমেছেন এই টুর্নামেন্টে, যারা বিভিন্ন সময়ে পুলিশের অত্যাচার কিংবা বর্ণবাদের শিকার হয়েছেন। জানিয়েছেন মৌন প্রতিবাদ। ফাইনালে এসেছিলেন ‘তামির রাইস’ লেখা মাস্ক পরে, ২০১৪ সালে ক্লিভল্যান্ডে ১২ বছর বয়সের যে শিশুকে গুলি করে হত্যা করেছিল দেশটির পুলিশ। ওসাকা হেরে যাওয়া মানে যে তাদেরও হেরে যাওয়া! তাদের কীভাবে হারতে দেখতে পারেন ওসাকা?
সবমিলিয়ে এটি ওসাকার তৃতীয় গ্র্যান্ড সø্যাম। এর আগে ২০১৮ সালে ইউএস ওপেন ও ২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতেছিলেন। এখন পর্যন্ত তিনটি গ্র্যান্ড সø্যামের ফাইনালে উঠে প্রতিবারই বিজয়ীর বেশে কোর্ট ছাড়ার কৃতিত্ব দেখালেন তিনি। ২৬ বছর পর ফাইনালের প্রথম সেট হেরেও ইউএস ওপেনের নারী এককে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নজির গড়লেন ওসাকা। সবশেষ ১৯৯৪ সালে একইভাবে সেরার মুকুট জিতেছিলেন স্পেনের আরান্তজা সানচেজ ভিকারিও। তিনি হারান জার্মান কিংবদন্তি স্টেফি গ্রাফকে।
অন্যদিকে, বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের সাবেক এক নম্বর তারকা আজারেঙ্কা ২০১৩ সালের পর প্রথমবারের মতো কোনো গ্র্যান্ড সø্যামের ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিলেন। চোট, মাতৃত্ব ও সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণে মাঝে খেলা থেকে অনেক দিন দ‚রে ছিলেন তিনি। এমনকি চলতি বছরের শুরুর দিকে করোনাভাইরাসের কারণে সব ধরনের টেনিস আসর স্থগিত হয়ে যাওয়ায় অবসরের ভাবনাও জেঁকে বসেছিল। সেটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে ইউএস ওপেনে দারুণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চে জায়গা ঠিকই করে নিলেন ৩১ বছর বয়সী আজারেঙ্কা। কিন্তু ২০১২ ও ২০১৩ সালে জেতা দুটি অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সঙ্গে ঝুলিতে নতুন আরেকটি গ্র্যান্ড সø্যাম যোগ করা হলো না তার।
নাটকীয় জয়ে নারী এককের বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে তৃতীয় স্থানে উঠে যাবেন বর্তমানে নয় নম্বরে থাকা ওসাকা। ম্যাচ জেতার জন্য ওসাকা যে কী পরিমাণ বদ্ধপরিকর ছিলেন, জানা গেছে ম্যাচ শেষে, ‘আমি যখন অতিরিক্ত জেতার ব্যাপারে চিন্তা করি, তখনই সমস্যা হয়। আমি আর আমি থাকি না। জেতার জন্য শান্ত থাকা খুব জরুরি। কিছুক্ষণ খেলার পর মনে হচ্ছিল, জেতা হবে না। পরে ভাবলাম, আমি একটা ফাইনাল খেলতে এসেছি। অনেক মানুষ ফাইনাল খেলতে চায়। এমন অবস্থায় এক ঘণ্টায় ৬-৩, ৬-০ সেটে হারতে পারি না আমি।’ প্রতিপক্ষ আজারেঙ্কাকে উদ্দেশ্য করে ঠাট্টার ছলে তিনি বলেন, ‘আমি তোমার সঙ্গে আর একটি ফাইনালেও খেলতে চাই না। আমি একটুও উপভোগ করিনি। এটা আমার জন্য খুব কঠিন ম্যাচ ছিল।’ রসিকতা বাদ দিয়ে তিনি যোগ করেন, ‘সত্যিই এটা আমার জন্য অনুপ্রেরণাম‚লক ম্যাচ ছিল। যখন আমি ছোট ছিলাম, তখন তোমাকে এখানে খেলতে দেখেছি। অনেক কিছু শিখেছি। তোমাকে ধন্যবাদ।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।