নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব গোটা বিশ্বেই। বাদ যায়নি ক্রীড়াঙ্গণও। এবার দেখা গেল ইউএস ওপেনের মঞ্চেও। ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ায় রাশিয়া ও তার সহযগী দেশ বেলারুশের খেলোয়াড়দের নিষিদ্ধ করে উইম্বল্ডন। তবে পুঁজিবাদে বিশ্বাসী যুক্তরাষ্ট্র সেপথে হাঁটেনি। ঠিকই তাদের জন্য দরজা খেলা রেখেছিল ইউএস ওপেন কতৃপক্ষ। গতকাল দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে বেলারুশের সাবেক নাম্বার ওয়ান ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা মুখোমুখি হয়েছিলেন ইউক্রেনের মার্টা কস্টিউকের। ম্যাচটি সরাসরি ৬-২, ৬-৩ ব্যবধানে জেতেন আসরের ৩ বারের ফাইনালিস্ট আজারেঙ্কা। ম্যাচ শেষে দুই খেলোয়াড় হাত মেলানোর রেওয়াজ থাকলেও তা মানেননি কস্টিউক। হাতের বদলে র্যাকেট বাড়িয়ে দেন এই তারকা। এ যেন অভিনব প্রতিবাদ। কস্টিউক ম্যাচ শেষে বলেন, ‘ম্যাচের আগের দিন আমি ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়ে বলে দিয়েছিলাম যে আমি হাত মেলাবো না। কিন্তু সে এই যুদ্ধ নিয়ে তার মতামতটা জানায়নি।’ ম্যাচ শেষে যুদ্ধের ব্যাপারে একটা শব্দও উচ্চারণ করলেন না ২ বারের গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী আজারেঙ্কা। জানান, ‘আমি অবাক হইনি। এই হাত মেলানোটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছুও নয়।’
এদিকে আরেক যুদ্ধে অবতীর্ণ রাফায়েল নাদালও। নিজের সাথে যুদ্ধ। তলপেটের যন্ত্রণা নিয়ে উইম্বলডন সেমিফাইনাল থেকে সরে যাতে হয়েছিল এই স্প্যানিয়ার্ডকে। বছরের শেষ গ্র্যান্ড স্ল্যাম যখন চলছে, তখন রাফার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী স্পেনের হাসপাতালে ভর্তি। কিন্তু তার জয়ের ক্ষুধার কাছে নতী স্বীকার করে সকল প্রতিকূলতাই। গতকাল বাংলাদেশ সময় সকালে দ্বিতীয় রাউন্ডে নেমেছিলেন ইতালির ফ্যাবিয়ো ফগনিনির বিপক্ষে। চতুর্থ সেটে নিজের র্যাকেটের বাড়িতে নাক ফাটে রক্ত পড়ল। কিন্তু কিছুই রাফার দাপুটে জয়কে আটকাতে পারল না। ৬০ নম্বর বাছাইকে ২-৬, ৬-৪, ৬-২, ৬-১ গেমে হারিয়ে তৃতীয় রাউন্ডে উঠে গেলেন আসরের চারটি শিরোপা জেতা নাদাল। যেখানে তার অপেক্ষায় র্যাঙ্কিংয়ের ৮৪ নম্বরে থাকা ফ্রান্সের রিচার্ড গ্যাসকেট।
তবে এতটা সহজ ছিল না এই জয়। প্রথম সেটটিই যে হেরে যান নাদাল! দ্বিতীয় সেটেও পিছিয়ে গিয়েছিলেন ২-৪ গেমে। ম্যাচ শেষে বলেন, ‘প্রথম থেকেই শট খেলার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু ঠিক মতো হচ্ছিল না। খুব খারাপ খেললাম।’ খারাপ খেলার নমুনা অবশ্য পাওয়া গেল না। দ্বিতীয় সেটে ২-৪ গেমে পিছিয়ে থাকার পরেও জিতে নিলেন ৬-৪ গেমে। এরপর আর পিছে তাকাতে হয়নি রেকর্ড ২২ গ্রান্ডস্ল্রামের মালিককে। তৃতীয় সেট জিতলেন ৬-২ গেমে। দাঁড়াতেই পারলেন না ফগনিনি। ৩৫ বছরের ইটালীয় শুরু থেকে লড়াই করছিলেন কিন্তু রাফা ছন্দে ফিরতেই দৃষ্যপট বদলে গেল। একের পর এক আনফোর্সড এরর করতে শুরু করলেন ফগনিনি। নাদালের বিরুদ্ধে এই ধরনের ভুল করা মানে ম্যাচ হাত থেকে বেরিয়ে যাওয়া।
চতুর্থ গেমে নাদাল জিততেই পারতেন ৬-০ গেমে। কিন্তু তখনই নাকে আঘাত পান। কোর্টেই চিকিৎসা নিলেন। এর পর কিছুটা অস্বস্তিতে ছিলেন। সেই সুযোগ নিয়ে ফগনিনি পয়েন্ট তুলে নেন। সেট যদিও জিততে পারেননি। চোট নিয়ে ম্যাচ শেষে নাদাল বলেন, ‘এমন ঘটনা আগে গলফ ক্লাব হয়েছে। কিন্তু র্যাকেটে কখনও হয়নি। নিজের র্যাকেট এসেই নাকে লাগল। সকলকে ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য।’ ২০১৫ সালের এই আসরেই ফগনিনির কাছে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল নাদালকে। সাত বছর সেটার মধুর প্রতিশোধ নিলেন ২২টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিক।
একই দিনে দর্শকে ঠাসা গ্যালারির সামনে ডাবলসে হেরে বিদায় হয়ে গেল কিংবদন্তি হয়ে ওঠা ভেনাস উইলিয়ামস ও সেরেনা উইলিয়ামস জুটির। এ দিন দর্শক আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল ম্যাচটি। চার বছরের বেশি সময় পর একসঙ্গে আবার কোর্টে নামেন দুই বোন। এবারই হয়তো শেষ বার!
সেরেনা তো শেষের ইঙ্গিত দিয়েই রেখেছেন। কদিন পর বয়স হবে ৪১। ভেনাসের বয়স ৪২ পেরিয়েছে বেশ আগেই। ১৪টি ডাবলস গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী জুটিকে আরও একবার দেখতে ও উৎসাহ জোগাতে গ্যালারি ছিল টইটম্বুর। তবে কোনো রূপকথার জন্ম দিনে পারেননি তারা। চেক প্রজাতন্ত্রের জুটি লুসিয়ে হেরাদেস্কা ও লিন্দা নসকোভার কাছে ৭-৬ (৫), ৬-৪ গেমে হেরে যান দুই বোন। ম্যাচ শেষে আবেগের খুব বেশি প্রকাশ দেখা যায়নি দুজনের শরীরী ভাষায়। দর্শকেরা দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানান তাদের। তারা পরস্পরকে আলতো আলিঙ্গন করে দর্শকের দিকে হালকা হাত নেড়ে বিদায় নেন কোর্ট থেকে।
সেরেনা অবশ্য এখনও টিকে আছেন সিঙ্গেলসে। দ্বিতীয় রাউন্ডে বিশ্বের দুই নম্বর তারকা আনেত কন্তাভেতকে হারিয়ে তৃতীয় রাউন্ডে গতরাতেই নেমেছিলেন খেলতে। এতক্ষণে নিশ্চয়ই জেনেও গেছেন কি ঘটেছে মতার ভাগ্যে!
তবে আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামের অভিষেকটা ঠিকই রাঙিয়ে রাখলেন নারী এককের শীর্ষ বাছাই ইগা শোয়ানটেক। দ্বিতীয় রাউন্ডে ঘরের তারকা স্লােয়েন স্টেফেনসকে সরাসরি ৬-৩, ৬-২ ব্যবধানে হারিয়ে তিনি আরেক ধাপ এগিয়ে গেলেন প্রথম ইউএস ওপেন জয়ের লক্ষ্যে। ২০১৭ সালের ইউএস ওপেন জয়ী স্টেফেনস এই ম্যাচে ১২টি ব্রেক পয়েন্টের ৮ টি থেকে বাঁচালেও ম্যাচ বাঁচাতে পারলেন না। স্টেফেনসের বাজে সার্বের সুযোগ নিয়ে পোলিশ তারকা ইগা দ্বিতীয় সেটে টানা ৪টি গেম জেতেন। এই সময় ফোরহ্যান্ডে ম্যাচ টেনে নিয়ে স্টেফেনসকে ভুল করতে বাধ্য করেন ইগা। ২ বারের গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী পোলিশ তারকা ম্যাচ শেষে জানান, ‘আমি দারুণ মনোযগী ছিলাম আজ।’ শৈশবের তারকা সেরেনা উইলিয়ামসের খেলা এক সময় এই মাঠে বসেই দেখতেন। সেখানে খেলতে পেরে দারুণ আনন্দিত ইগা জানান, ‘এখানে স্ট্যান্ডে না থেকে কোর্টে থাকাটা অসাধারণ এক অনূভুতি।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।