পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ভারতের আগরতলা থেকে সীমান্ত নদীপথে বিষাক্ত কেমিক্যাল, মেডিক্যাল, গৃহস্থালী, চামড়াজাত বর্জ্য সীমান্ত নদী দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে পুরো আখাউড়া উপজেলার পরিবেশ-প্রতিবেশ, চাষাবাদ এবং মানুষের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। এই বিষাক্ত বর্জ্য বছরের পর বছর ধরে রামনগর খাল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। বিষয়টি আজ বিজিবি ও বিএসএফ-এর মধ্যকার দ্বিবার্ষিক বৈঠকে বিজিবি আলোচনার জন্য উত্থাপন করবে। গতকাল ইংরেজী দৈনিক ডেইলি স্টারের এক সরজমিন প্রতিবেদনে ভারত থেকে খাল দিয়ে আসা বিষাক্ত বর্জ্যরে ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইন্ডিয়ান গান্ধী মেমোরিয়াল হাসপাতাল, বিভিন্ন রং, চামড়া ও মেলামাইন কারখানা এবং গৃহস্থালী বর্জ্যসহ বিষাক্ত কেমিক্যাল সেনারবাদি খাল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এতে খালের পানি পিচের মতো কালো হয়ে আছে। ১৫ ফুট চওড়া এই খাল আখাউড়ার ১৫টি গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। এতে গ্রামের পরিবেশ যেমন মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি খালের পানি দিয়ে চাষাবাদও করা যাচ্ছে না। পানিতে মাছের কোনো অস্তিত্ব নেই। পরিবেশ অধিদপ্তর বেশ কয়েকবার খালের পানি পরীক্ষা করে শিসা, সালফার, ম্যাঙ্গানিজ, ক্যাডমিয়াম এবং ক্রোমিয়ামের মতো বিষাক্ত কেমিক্যাল পেয়েছে। এলাকাবাসী জানিয়েছে, সেনারবাদিতে এক সময় স্বচ্ছ পানির ধারা ছিল। এ পানি দিয়ে তাদের চাষাবাদ থেকে শুরু করে ঘরের কাজে ব্যবহার করা হতো। এখন এ খালের পানি তাদের জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ভারতের সাথে বাংলাদেশের ন্যায্য পানি প্রাপ্তির বিষয়টি বহু বছর ধরেই ঝুলে আছে। দেশটি একতরফাভাবে অভিন্ন নদ-নদীতে বাঁধ, গ্রোয়েন নির্মাণ করে পানি প্রত্যাহার করে চলেছে। পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে বহু দেন-দরবার করেও ভারত থেকে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। তিস্তার পানি পাওয়া নিয়ে করা চুক্তিও করা যাচ্ছে না। নানা অজুহাতে চুক্তিটি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। উল্টো ভারত মানবিক কারণ দেখিয়ে ফেনী নদীর পানি উত্তোলনের সুবিধা নিয়েছে। দেখা যাচ্ছে, অভিন্ন নদ-নদীর পানি বিভিন্নভাবে প্রত্যাহার করে ভারত তার পুরো সুবিধা নিলেও বাংলাদেশকে পানিশূন্যতায় ভুগতে হচ্ছে। দেশটির ইচ্ছামতো পানি প্রত্যাহারের কারণে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে মরুকরণ শুরু হয়েছে। নাব্য হারানোর কারণে বর্ষায় ভারতের ছেড়ে দেয়া অতিরিক্ত পানির কারণে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিচ্ছে। এ বছরের দীর্ঘ বন্যার কারণও ভারত থেকে ছেড়ে দেয়া পানির জন্যই হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। সীমান্তে বাংলাদেশের নদীভাঙ্গনের কারণও ভারতের অংশে নদীর বাঁধ তৈরি করা। দেশটি এমনভাবে তার অংশের নদীতে বাঁধ দিয়েছে যে, এতে বাংলাদেশের অংশে ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিচ্ছে। এর ফলে একদিকে বাংলাদেশ ভূমি হারাচ্ছে, অন্যদিকে নদীর অপর পারে জেগে উঠা ভূমি ভারতের হয়ে যাচ্ছে। বলা যায়, সীমান্তনদীর ভাঙ্গনে বাংলাদেশের মানচিত্র বদলে যাচ্ছে। চিরকালের এই সমস্যার মধ্যেই আখাউড়া দিয়ে ভারতের আগরতলার হাসপাতাল ও শিল্পকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য বাংলাদেশে প্রবেশ করে পরিবেশ ও প্রতিবেশের মারাত্মক দূষণ ঘটাচ্ছে। বিষাক্ত এই পানির কারণে খালের পাশের পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় বসবাস করা মানুষের জীবন-জীবিকা এখন হুমকির মুখে। শুকনো মৌসুমে এই বিষাক্ত পানির কারণে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। সীমান্ত সংলগ্ন আখাউড়ার প্রায় ১৫শ’ হেক্টর জমির চাষাবাদ সেনারবাদি খালের পানির ওপর নির্ভরশীল। অথচ ভয়াবহ দূষণের কারণে চাষীরা এই পানি ব্যবহার করতে পারছে না। আখাউড়া কৃষিবিভাগও কৃষকদের বিষাক্ত পানি ব্যবহার করতে নিষেধ করেছে। ফলে তাদের জীবন-জীবিকা ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয় এলাকাবাসী এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে স্থায়ী সমাধান চাচ্ছে।
ভারত থেকে আসা বিষাক্ত কেমিক্যাল বন্ধের বিষয়টির সমাধান জরুরি হয়ে পড়েছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এ নিয়ে বিজিবি-বিএসএফ বৈঠকের পাশাপাশি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করা দরকার। অন্যদিকে বাংলাদেশ যেহেতু ভাটির দেশ তাই উজানে থাকা ভারতের কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য আসা অস্বাভাবিক নয়। তারা মনে করছেন, অভিন্ন নদ-নদীর তীরে কল-কারখানা স্থাপনের বিধি-বিধান থাকা উচিৎ। এমন একটি নীতিমালা করা দরকার, যাতে ভারতের অংশে নদ-নদীর তীরবর্তী কল-কারখানা সীমান্ত থেকে নিরাপদ দূরত্বে স্থাপন করা হয়। এতে উভয় দেশেরই পরিবেশ ও প্রতিবেশ মারাত্মক দূষণ থেকে রক্ষা পাবে। বিদ্যমান যেসব কল-কারখানা ও হাসপাতাল থেকে বিষাক্ত বর্জ্য ভেসে আসছে, সেগুলোর বর্জ্য শোধনাগার তৈরি বাধ্যতামূলক করে দেয়া জরুরি। বলার অপেক্ষা রাখে না, ভারত বরাবরই বলে আসছে, বাংলাদেশের ক্ষতি হয়, এমন কাজ সে করবে না। আমরাও আশা করি, ভারত তার কথা মতো আগরতলা থেকে আসা যে বিষাক্ত কেমিক্যাল ও গৃহস্থালী বর্জ্য বাংলাদেশের পরিবেশকে বিপন্ন করে তুলছে, তা বন্ধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেট নেবে। এ পদক্ষেপ নেয়া ভারতের পক্ষে কঠিন নয়। এক্ষেত্রে প্রয়োজন কেবল সদিচ্ছা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।