মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
মুসোলিনি তার ছেলেকে জানিয়েছিলেন, তার অন্যতম দু:স্বপ্ন যে, ধরা পড়লে তাকে নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে বিচারের জন্য উপস্থিত করা হবে। নরেন্দ্র মোদির স্বপ্ন ছিল যে, রাম মন্দির নিয়ে তিনি সেখানে বিজয় মিছিল করবেন, যেমনটি করেছিলেন ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর।
২০০২ সালে গুজরাটে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন মোদির মুসলিম বিরোধী কার্যকলাপের জন্য তার মার্কিন ক‚টনৈতিক ভিসা প্রত্যাখ্যান করা হয় এবং তার পর্যটক ভিসা বাতিল হয়ে যায়। ২০১৪ সালে সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টাইম্স স্কয়ারে ২০ হাজার সমর্থক নিয়ে জমকালো সমাবেশ করেন। সেই থেকে, ‘হাওডি মোদি’ এবং ‘নমস্তে ট্রাম্প’ এর মতো সখ্যতার মধ্য দিয়ে মোদি আমেরিকাকে তার দ্বিতীয় বাড়ি এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বন্ধু বানিয়েছেন। সভ্যতার প্রাচীন এবং আধুনিক এবং একইসাথে দুটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের একাত্মকরণের সাথে যোগ হয়েছে বিশ্বের করোনা সংক্রমণের সর্বোচ্চ হার। করোনাভাইরাস মোদির স্বপ্নগুলিকে থামিয়ে দেবে বলে আশা করা হলেও এটি যুক্তরাষ্ট্রে মোদির হিন্দুত্ববাদী সমর্থকদের থামাতে পারেনি। তারা ভারতে হিন্দু দেবতা রামের চিত্র এবং মোদির রাম মন্দিরের উদ্বোধনী প্রদর্শন করতে গত ৫ আগস্ট টাইমস স্কয়ারের বিশাল স্ক্রিনগুলি ভাড়া নেয়। তাদের মন্দির নির্মান উদযাপনটি বিশাল পর্দায় উপস্থিত হওয়ার সাথে সাথে ‘ভারতীয় সম্প্রদায়’ টাইমস স্কয়ারে মিষ্টি বিতরণ করে।
ভারতের উত্তর প্রদেশের অযোধ্যা শহরে চলছে মন্দিরের নির্মাণ। বাবরি মসজিদ ভেঙে রাম মন্দির নির্মানের এই ধ্বংসযজ্ঞটি হিন্দুত্ববাদী আন্দোলন পরিচালিত সুদীর্ঘ প্রচারের একটি উচ্চ পর্যায়ের সাফল্য। মসজিদটি রামের কথিত জন্মভ‚মির উপর প্রতিষ্ঠিত, এমন একটি কল্পনা প্রসূত অভিযোগ তৈরিতে বিজেপি এতটাই সফল হয়েছে যে, এটি দলটিকে রাজনৈতিক বৈষম্যকারী থেকে আজকের সর্বগ্রাসী সত্তায় পরিণত করেছে। বাবরি মসজিদ ভেঙে দেয়ার আগেই ভারত ও বিদেশের হিন্দুত্ববাদীদের রাম মন্দির তৈরির জন্য ইট দান করতে বলা হয়েছিল। এই অভিযানের প্রতিক্রিয়া হিসাবে ব্রিটেন থেকে আসা ইটের সাথে কয়েকটি স্বর্ণের ইট এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের হাজার হাজার গ্রাম এবং শহর থেকে ইট এসেছিল। তবু জন্মের বদলে সহিংস হত্যাই ছিল এই প্রচারণার আসল উদ্দেশ্য। মসজিদটি ভেঙে ফেলার সহিংসতার প্রায় ২ হাজার মানুষ মারা যায়।
পাশাপাশি, শীঘ্রই মুসলিম বিলোপ কার্যক্রম ভারতে নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। গত ডিসেম্বরে অযোধ্যা সফর শেষে কবি বিবেক নারায়ণ, যিনি রামায়ণ দ্বারা অনুপ্রাণিত কবিতার বইয়ের উপর কাজ করছেন (যা মহাকাব্যে রামের শোষণের বিবরণ দিয়েছিল), তিনি অযোধ্যাকে বর্ণনা করেছিলেন ভেঙে যাওয়া ঘরবাড়ি এবং ক্রোধ ও বঞ্চনায় নিমজ্জিত মানুষের ‘প্রায় ভ‚তুড়ে শহর’ হিসেবে। সৈন্যরা মন্দিরের নির্মাণ স্থানটিকে এমনভাবে সুরক্ষিত করে রেখেছিল যে, এটিকে সর্বাধিক সুরক্ষিত কারাগারের মতো মনে হচ্ছিল।
যেহেতু গত ৫ আগস্ট কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার ওপর বিজেপির একতরফা স্থগিতাদেশের এক বছর পূর্ন হয়েছিল, যার মাধ্যমে কাশ্মীরিদের সমস্ত নাগরিক স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিল। তাই এই দাম্ভিকতাপূর্ন উদযাপনটি ভারতের মুসলমানদের সমস্ত উপায়ে তাদের পরাধীন অবস্থার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য। এবং স্মরণে রাখার জন্য যে, মোদির ভারতে তাদের জন্য কিছুই অবশিষ্ট নেই, ইতিহাস বা ভ‚গোলও নয়। দেশে বিদেশে মোদির ৫ অগাস্টের বিজয়োল্লাসে একবিংশ শতাব্দীর একটি চটুল ফ্যাসিবাদ এখন সুস্পষ্ট। মুসোলিনি ছিলেন একজন পুরাতন ধ্যানধারণার ফ্যাসিস্ট যিনি নিউ ইয়র্কের জনতার অভিযোগের দৃষ্টি এড়াতে চেয়েছিলেন। এবং তাদের কাছে ‘খাঁচাবন্দি বন্য শ^াপদ’ জাতীয় কিছু হিসাবে উপস্থিত হতে ভয় পেয়েছিলেন। তবে, মোদি আরও বুদ্ধিমান। কীভাবে শ^াপদদের খাঁচার বাইরে রেখে তাদেরকে বিশ্বমঞ্চে গ্রহণযোগ্য, এয়ার ব্রাশড এবং মর্যাদাবান করে উপস্থিত করতে হয়, তিনি তা ভালোই জানেন। কাশ্মীর এবং অযোধ্যা থেকে সমগ্র ভারতে তার সর্বোচ্চ সুরক্ষার কারাগার সম্প্রসারণের জন্য তার নিষ্ঠুরতার চক্রটি চালু রয়েছে। তবে দায়মুক্তির জন্য এই সবার আগে এই শ^াপদটিকে খাঁচায় পুরতে হবে। বিশ্বের অন্যতম বৈচিত্রময় দেশটিতে কখনই বিদ্বেষকে প্রকাশ করার অনুমতি দেয়া সমিচীন হয়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।