Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফেরার ম্যাচে নায়ক স্টোকস

রুটের ‘মি.ইনক্রেডিবল’ হয়েও বিনয়ী!

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২২ জুলাই, ২০২০, ১২:০০ এএম

পুরো একদিন বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় ফল বের করা ছিল দুরূহ। কিন্তু ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানদের উপর ঝাঁজ দেখিয়ে একজনের কাঁধে সওয়ার হয়ে সেই কাজটাই করে দেখাল ইংল্যান্ড। অবিশ্বাস্য দক্ষতা, অতুলনীয় সাহস, শতভাগ নিবেদন। ম্যানচেস্টার টেস্টে বেন স্টোকস যা করেছেন তাতে এতসব বিশেষণও একটুও বাড়াবাড়ি হবে না। স্থিতধী থেকে বড় ইনিংস খেলে দলকে শক্ত পূঁজি পাইয়ে দেওয়া, আবার দ্রæত রান আনার চাহিদায় সামনে থেকে নেতৃত্ব। ভীষণ দরকারি সময়ে বল হাতে ব্রেক থ্রো। একজন স্টোকস ছিলেন বলেই না পুরো একদিন ভেসে যাওয়ার পরও দুর্দান্ত জয়ে সিরিজে ফিরল ইংল্যান্ড। তিন ম্যাচ সিরিজে তাই এখন এসেছে ১-১ সমতা। আগামী পরশু এই ভেন্যুতেই হবে সিরিজের নিষ্পত্তিমূলক অলিখিত ‘ফাইনাল’ টেস্টটি।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতে জাদুকরী এক ইনিংস খেলে কাজটি এগিয়ে দিয়েছিলেন স্টোকস, পরে পেসারদের সঙ্গে তার সুর মেলানো বোলিংয়ে রোমাঞ্চকর শেষ দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে কাবু করে দারুণভাবে সিরিজে ফিরেছে স্বাগতিকরা। ম্যানচেস্টারের ওল্ড টার্ফোডে দ্বিতীয় টেস্টে ১১৩ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছে ইংল্যান্ড। ম্যাচ শেষে নায়ক তাই একজনই- স্টোকস।
আগের দিনের ২ উইকেটে ৩৭ রান নিয়ে নেমেছিল ইংল্যান্ড। স্টোকসের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে সেই রান তরতর করে বেড়েছে। ম্যাচ জিততে মরিয়া ইংল্যান্ড ৩ উইকেটে ১২৯ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে দেয়। ৩১২ রানের লক্ষ্য দিয়ে লাঞ্চের আগেই স্টুয়ার্ট ব্রডের জোড়া আঘাত আর ক্রিস ওকসের তোপে বিপদে পড়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২৫ রানেই তারা খুইয়ে বসে ৩ উইকেট। লাঞ্চ থেকে ফিরেই বিদায় নেন রোস্টন চেজও।
ওই ধাক্কা সামলালেও ইংলিশ পেসারদের আগ্রাসনের নিচে নড়বড়ে অবস্থা কাটেনি ক্যারিবিয়ানদের। সারমাহ ব্রæকস আর জারমেইন বø্যাকউড তবু দিচ্ছিলেন আস্থা। পঞ্চম উইকেটে দুজনের জুটিতে আসে শতরান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচ বাঁচানোর আশাও পোক্ত হচ্ছিল। কিন্তু স্টোকসের কারণে তা আর এগুতে পারেনি। বø্যাকউডকে নিজের বলে ক্যাচ বানিয়ে আরও একবার গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অবদান রাখেন এই অলরাউন্ডার। খানিক পর দ্রæত ফিরে যান শেন ডরিচও।
অধিনায়ক জেসন হোল্ডার টেল এন্ডারদের নিয়ে পার করতে পারতেন কঠিন পথ। কিন্তু অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস কাল হয়েছে তার। অফ স্পিনার ডম বেসের বল পড়তে না পেরে স্টাম্প খোয়ান তিনি। তখনই মূলত ম্যাচের ইতি। বাকি লম্বা সময় টিকে থাকার সামর্থ্য ছিল না ক্যারিবিয়ানদের। ১৯৮ রানেই শেষ হয় হোল্ডারদের দ্বিতীয় ইনিংস।
শুধু ব্যাটিং আর বোলিং-ই নয়, ফিল্ডিংয়েও উজার করে দিয়েছেন সবটুকু। নিজে বোলিং করে বলের পিছু ছুটে গেছেন বাউন্ডারি পর্যন্ত। মাঠে ছিলেন যেন ইংল্যান্ডের প্রাণশক্তির উৎস। দিন শেষে স্টোকসের সামর্থ্যরে আরেকটি উজ্জ্বল বিজ্ঞাপন হয়েই যেন থাকল ওল্ড ট্র্যাফোর্ড টেস্ট। তার পারফরম্যান্স এতটাই চমকপ্রদ যে, জো রুট পর্যন্ত বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে পড়ে যাচ্ছেন। ইংল্যান্ড অধিনায়ক বলছেন, স্টোকসের সামর্থ্যরে সীমানা কেবলই আকাশ, ‘আমার মনে হয় সে ‘মি. ইনক্রেডিবল।’ আমি নিশ্চিত, এই পর্যায়ের পারফরম্যান্স সে নিয়মিতই করে যেতে পারে। সত্যি বলতে, ওর সামর্থ্যরে সীমানা ছুঁতে পারে আকাশ। সে যেভাবে নিজেকে এগিয়ে নিচ্ছে, এমন পারফরম্যান্স নিয়মিত না করতে পারার কারণ নেই।’
দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে তিনি মাতিয়ে চলেছেন গত কয়েক বছর ধরেই। সাউদাম্পটনে সিরিজের প্রথম টেস্টে রুটের অনুপস্থিতিতে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন স্টোকস। দল হারলেও সেই ম্যাচে দুই ইনিংসে করেছিলেন ৪৩ ও ৪৬, উইকেট নিয়েছিলেন ৬টি। এই টেস্টে তার পরও যেন নতুন করে ছাড়িয়ে গেছেন নিজেকে। তাইতো অধিনায়কও জানেন চাইলে সবই পারেন স্টোকস, ‘এই ম্যাচের মতো পরিপ‚র্ণ পারফরম্যান্স দেখানো এবং বিভিন্ন পরিস্থিতির দাবি মেটানো, এসব আসলে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সামর্থ্যকেই আরও বাড়িয়ে তোলে। সবচেয়ে গুরুত্বপ‚র্ণ হলো, যদি এভাবেই সব পরিস্থিতি পড়তে পারে এবং এই আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে পারে, তাহলে এই সপ্তাহে যা করেছে ও গত ১২ মাস ধরেই যা করে আসছে, এমন অসাধারণ পারফরম্যান্স ধরে রাখতে না পারার কারণ নেই।’
অধিনায়ক যতই বাড়িয়ে-চাড়িয়ে বলুক, এমন ম্যাচ জিতিয়েও বিনয়ীই থাকলেন স্টোকস। গতকালই বিশ^সেরার খেতাব পাওয়া এই অলরাউন্ডার বলছেন, দলের যেকোনো চাহিদা মেটাতেই তৈরি থাকেন ম্যাচসেরা, ‘অবশ্যই, আমার কাছে যাই চাওয়া হয়, দলের জন্য সবটা দিতে আমি মুখিয়ে থাকি।’ দ্বিতীয় ইনিংসে নিজেকে ওপেন করতে নামার সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং সেটি ঠিকঠাক কাজ করাকেই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখছেন স্টোকস, ‘জো (রুট) চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, খুবই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত ছিল তা। আমাদের পক্ষে ফল আনতে যা খুবই কার্যকর হয়েছে। সে সত্যিই দারুণ বুদ্ধিমত্তার পচিয় দিয়েছে। সেটির ফল পেয়ে আমিও তার উপর গর্বিত।’

সংক্ষিপ্ত স্কোর
ইংল্যান্ড : ৪৬৯/৯ ডিক্লে ও ২য় ইনিংস : ১৯ ওভারে ১২৯/৩ (ইনিংস ঘোষণা) (আগের দিন ৮ ওভার ৩৭/২) (স্টোকস ৭৮*, বাটলার ০, ক্র’লি ১০, রুট ২২, পপ ১২*; রোচ ২/৩৭, গ্যাব্রিয়েল ০/৪৩, হোল্ডার ০/৩৩, জোসেফ ০/১৪)।
উইন্ডিজ : ২৮৭ ও ২য় ইনিংস (লক্ষ্য ৩১২) : ৭০.১ ওভারে ১৯৮ (ব্র্যাফেট ১২, ক্যাম্পবেল ৪, হোপ ৭, ব্রোকস ৬২, চেজ ৬, বø্যাকউড ৫৫, হোল্ডার ৩৫, রোচ ৫, জোসেফ ৯; ব্রড ৩/৪২, ওকস ২/৩৪, কারান ১/৩০, বেস ২/৫৯, স্টোকস ২/৩০)।
ফল : ইংল্যান্ড ১১৩ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : বেন স্টোকস (ইংল্যান্ড)।
সিরিজ : ৩ ম্যাচ সিরিজে ১-১ সমতা।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্টোকস

২৯ এপ্রিল, ২০২২
১১ নভেম্বর, ২০১৬

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ