পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ভারতের ঠেলে দেয়া পানি ও তার সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ’র কারণে বাংলাদেশের মানুষ অতীষ্ট, বিচলিত ও ক্ষতিগ্রস্ত। এখন বর্ষকাল বটে, কিন্তু তেমন বৃষ্টিপাত নেই। অথচ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে ব্যাপকভাবে বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যা মধ্যাঞ্চলে পর্যন্ত হানা দিয়েছে। পূর্বাঞ্চলও বাদ যায়নি। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তাদের বাড়িঘর, জমি-জিরাত, ক্ষেতের ফসল ডুবে গেছে। এই অস্বাভাবিক বন্যা ও তার ব্যাপক ক্ষতির জন্য ভারত থেকে ধেয়ে আসা পানিই দায়ী। ভারতের আসাম, মেঘালয়, পশ্চিমবঙ্গ প্রভৃতি রাজ্যে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় ভারত ফারাক্কা ও গজলডোবা বাঁধ খুলে দিয়েছে। এতে একযোগে বিপুল পানিরাশি বাংলাদেশে আছড়ে পড়ায় এই দুর্ঘট পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বাঁধ খুলে পানি ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি ভারত বাংলাদেশকে জানায়নি। জানালে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন ও সরকার সর্তক হতে পারতো, আত্ম ও সম্পদ রক্ষায় যতটা সম্ভব ব্যবস্থা নিতে পারতো। নদী ও পানি সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদানের জন্য দু’দেশের মধ্যে সমঝোতা থাকলেও ভারত, যে কোনো কারণেই হোক, এ তথ্য দেয়না। এ জন্য প্রতিবছরই বাংলাদেশ ও তার জনগণকে অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। ভারতের এই আচরণের রহস্য ওয়াকিবহাল মহলের অজানা থাকার কথা নয়। অন্যদিকে অনেকেই লক্ষ্য করে থাকবেন, সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্তে বিএসএফ হত্যা ও নির্যাতনের তুফান ছুটিয়ে দিয়েছে। গত কয়েক দিনে বিএসএফ’র গুলিতে লালমনিরহাট, চাপাইনবাবগঞ্জ, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, সুনামগঞ্জ প্রভৃতি সীমান্তে বাংলাদেশী নিহত হয়েছে। রাজশাহী অন্যান্য সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিক অপহরণ করে নিয়ে গেছে বিএসএফ। বলা যায়, অত্যন্ত পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিএসএফ সীমান্তে একটা ভীতজনক অবস্থা সৃষ্টি করেছে। অথচ সীমান্তে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না করার একটা সমঝোতা ও সিদ্ধান্ত আছে দু’ দেশের মধ্যে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি এটা মেনে চললেও বিএসএফ মানে না।
বরাবরই বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত অরক্ষিত। এই অরক্ষ্য পরিস্থিতি বিএসএফ’রই সৃষ্টি। ভারতের সঙ্গে আরো কয়েকটি দেশের সীমান্ত রয়েছে। এই সব সীমান্তে বিএসএফ’র দৌরাত্ম্য দেখা যায়না। পাকিস্তান, নেপাল ও চীনের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে বিরোধ আছে ভারতের। বিরোধ থাকলেও তাদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ তেমন একটা লক্ষ্য করা যায় না। সীমান্ত নিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের তেমন উল্লেখ করার মতো বিরোধ নেই। ভারতের ভূমি দখল প্রবণতার কারণে কখনো কখনো সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় বটে। পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে এমনকি নেপালের সঙ্গেও ভারত পারতপক্ষে লড়তে যায় না। গেলে তার নগদ ফলাফলও পেয়ে যায়। গত ১৬ জুন লাদাখ সীমান্তে চীনের সঙ্গে কেরদানি দেখাতে গিয়ে ভারতের উচিৎ শিক্ষা হয়েছে। হাতাহাতি লড়াই হলেও সেখানে অন্তত ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছে, অনেকে আহত ও নিখোঁজ হয়েছে। পাকিস্তানও সীমান্তে ভারতীয় উস্কানির জবাব দিতে পিছ-পা হয় না। সেদিন নেপাল পর্যন্ত গুলি চালিয়ে ভারতীদের হত্যা করতে কুণ্ঠিত হয়নি। অনেকে মনে করেন, সীমান্তে বিজিবি সর্তক থাকলে এবং টিট ফর ট্যাট নীতি অনুসরণ করলে বিএসএফ এভাবে নির্বিচারে বাংলাদেশী হত্যা করতে পারতো না। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার হিসাবে বিশ্বে সবচেয়ে নাজুক সীমান্ত হলো বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত। এই সীমান্তে বিএসএফ’র পাখির মতো মানুষ শিকার করা নীতি ও স্বভাবের অংশে পরিণত হয়েছে। জানা যায়, গত ৩ মাসে অন্তত ২৫ জন বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে বিএসএফ। দু:খজনক হলো, এর প্রতিবাদ খুব কমই হয়েছে, প্রতিকারের তো কথাই নেই।
ভারত অন্যান্য সীমান্তে তার উস্কানিমূলক আচরণের জবাব হাতে-নাতেই পাচ্ছে। বাংলাদেশ সীমান্তেই কেবল সে দাদাগিরি ফলাচ্ছে। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে, চলতি বছরের শুরুতেই বিএসএফ’র গুলিতে ১৯জন বাংলাদেশী নিহত হয়েছে। সংস্থাটির মতে, ২০১৯ সালে নিহত হয়েছে ৫৩ জন, ২০১৮ সালে ১৪ জন, ২০১৭ সালে ২৪ জন, ২০১৫ সালে ৪৫ জন এবং ২০১৪ সালে ৩৩ জন। প্রশ্ন হলো, বিএসএফ’র হাতে আর কত বাংলাদেশী নিহত হবে? সীমান্তে লাশের মিছিল আর কত লম্বা হবে? এর জবাব কেউই দিতে পারেনা। অথচ এই সময়ে একজন ভারতীয়ও বিজিবি’র হাতে নিহত হয়েছে বলে তথ্য নেই। পর্যবেক্ষকদের মতে, বাংলাদেশের অনুসৃত অতিরেক ভারততোষণ নীতিই এজন্য দায়ী। ভারতের দাদাগিরি মেনে চলা আমাদের স্বাধীনতার চেতনার সঙ্গে যায় না। আমরা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সার্বভৌম সমতার নীতির অনুসরণ দেখতে চাই। পারস্পারিক সম্মান-শ্রদ্ধা ও মর্যাদার নীতি টেকসই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তি। একথা বলাই বাহুল্য, ভারত তার নীতির কারণেই বাংলাদেশ ছাড়া সকল প্রতিবেশীকেই হারিয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ ভারতের ওপর ত্যাক্ত-বিরক্ত ও বিক্ষুব্ধ। জনগণের এই প্রতিক্রিয়ায় অনুধারণ করে সীমান্তে হত্যা ও জুলুমের বিরুদ্ধে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে শক্ত ভাষায় প্রতিবাদ করা উচিৎ। প্রতিকারের পথ বের করা উচিত। ভারতেরও উচিৎ বাস্তবতার বিবেচনায় সীমান্তকে শান্তির সীমান্তে পরিণত করা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।