পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গত ১৬ জুন লাদাখের গালওয়ান উপত্যাকায় কী ঘটেছিল, এখনো বিশ্ববাসীর কাছে তা পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। কেবল এটুকু জানা গেছে, চীন ও ভারতের সেনারা সেদিন রাতে এক প্রাণঘাতী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। আগ্নোয়াস্ত্রের ব্যবহার ছাড়াই তারা কার্যত হাতাহাতি যুদ্ধে লিপ্ত হয়। ব্যবহার করে পেরেক মারা লোহার রড ও পাথর। এতে ভারতীয় বাহিনীর একজন কর্নেলসহ ২০ জন নিহত হয় বলে ভারত স্বীকার করেছে। অনেকে আহত হয়েছে। অনেকে গালওয়ান নদে ভেসে গেছে। কিছু চীনা সেনাদের হাতে ধরা পড়েছে, যাদের কয়েকজনকে ইতোমধ্যে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। চীনেরও কিছু সেনা হতাহত হয়েছে এবং সেটাই স্বাভাবিক। তবে তাদের সংখ্যা কত, তা জানা যায়নি। ভারত দাবি করেছে, চীনের ৪৩ জন সেনা হতাহত হয়েছে। চীন এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেয়নি। কোনো নিরপেক্ষ সূত্র থেকে বিস্তারিত জানা যায়নি।
কারা উসকানি বা প্ররোচণা দেয় এবং প্রথমে হামলা করে তা নিয়ে চীন ও ভারতের বক্তব্য পরস্পরবিরোধী। চীন এ জন্য ভারতকে এবং ভারত চীনকে দায়ী করেছে। তারা ভবিষ্যতে এ ধরনের হামলার পরিণতি সম্পর্কে একে অপরকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য দু’রকম। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, চীনা সেনারা ভারতীয় ভূখন্ডে প্রবেশ করে। পক্ষান্তরে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারতীয় ভূখন্ডে কোনো দেশের সেনা প্রবেশ করেনি। বরং ভারতীয় সেনারা চীনকে উচিত শিক্ষা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতির পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য আর দাঁড়ায় না। প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতিতে কোনো রাখ ঢাক নেই। চীনা সেনারা যদি ভারতীয় ভূখন্ডে প্রবেশ না করে তবে ভারতীয় সেনারা চীনা ভূখন্ডে প্রবেশ করে। তাতে কোনো সংশয় থাকে না। চীনকে উচিত শিক্ষা দেয়ার দাবি থেকেও বোঝা যায়, আক্রমণটা ভারতের পক্ষ থেকেই আগে করা হয়েছে। কে কাকে উচিত বিষয় শিক্ষা দিয়েছে, সে ব্যাপারে বিতর্কের অবকাশ আছে বলে মনে হয় না। ভারতীয় সেনা হতাহত হওয়া, ভেসে যাওয়া কিংবা চীন সেনাদের হাতে ধরা পড়ার তথ্য থেকেই সেটা স্পষ্ট হয়ে যায়।
বলা হয়েছে, চীন-ভারত সীমান্তে এত বড় হতাহতের ঘটনা গত ৫০ বছরে ঘটেনি, যদিও এই সংঘাতে কোনো পক্ষই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেনি। এ ব্যাপারে উভয়পক্ষ সংযম ও ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। চুক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছে। সীমান্ত নিয়ে ইতোপূর্বে দু’দেশের মধ্যে এরূপ সমঝোতা ও চুক্তি হয়েছে যে, সীমান্তে সৃষ্ট উত্তেজনায় কোনো পক্ষই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করবে না। সে চুক্তি তারা রক্ষা করেছে। বলা বাহুল্য, রড-পাথর না হয়ে যদি আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার হতো, তাহলে হতাহতের ঘটনা আরো অনেক বেশি হতে পারতো। যা হোক, যে কোনো বিবেচনায় ঘটনাকে ছোট বা খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। স্মরণ করা যেতে পারে, সীমান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করেই ১৯৬২ সালে দু’দেশের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। যুদ্ধে ভারত পরাজিত ও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও চীন তার দখলকৃত ভারতীয় এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করে বিরল নজির স্থাপন করে। ১৬ জুনের সংঘাতের পর আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ওই সীমান্তে ঘটেনি। তবে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বা লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলের দু’পাশে উত্তেজনা যথেষ্টই আছে। সীমান্ত শান্ত রাখার বিষয়ে দু’দেশের মেজর জেনারেল পর্যায়ের আলোচনা হয়েছে। সে আলোচনায় ইতিবাচক ফলাফল না হলেও সীমান্তে উসকানিমূলক কোনো আলামত দেখা যায়নি। উভয়পক্ষ উত্তেজনা লাঘব করার বরং কোশেশ করে যাচ্ছে। তবে চীন ও ভারত ওই অঞ্চলের ঘাঁটিগুলোতে উন্নত যুদ্ধ বিমান, অস্ত্রশস্ত্র মোতায়েন করেছে এবং নতুন ঘাঁটি তৈরির কাজ করছে।
চীন ও ভারত উভয়ই পরাশক্তির অধিকারী। ভারত সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে চীনের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও অত্যাধুনিক যুদ্ধ বিমান, অস্ত্রশস্ত্র, সামরিক যান ইত্যাদি নিতান্ত কম নেই। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অনুমান: চীনের কাছে ৩২০টির মতো এবং ভারতের কাছে ১৫০টি পারমাণবিক অস্ত্র থাকতে পারে। স্বভারতই এ ধরনের দুই পরাশক্তির মধ্যে উত্তেজনা ও সংঘাতময় পরিস্থিতি প্রলম্বিত হলে যে কোনো সময় তা পারমাণবিক যুদ্ধে মোড় নিতে পারে। এটা ওই দু’দেশের জন্যই নয়, বরং উপমহাদেশের গোটা এশিয়ার জন্যই উদ্বেগজনক।
চীন ও ভারতের মধ্যে সীমান্তবিরোধ নতুন নয়। চীনের কিছু এলাকা ভারতের মধ্যে আছে এবং ভারতের কিছু এলাকা চীনের মধ্যে আছে বলে তারা পরস্পর দাবি করে। ভূখন্ডগত অধিকার কেউ ছাড়তে নারাজ। এই বিরোধের পেছনে এ অঞ্চলে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের দায় যেমন অস্বীকার করা যায় না তেমনি, দ্বিপক্ষীয়ভাবে সীমান্ত নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ব্যর্থতা ও অনমনীয় মনোভাবও বিশেষভাবে দায়ী। যতদূর জানা যায়, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও চীনের তিব্বত অঞ্চলের মধ্যে সীমান্ত নির্ধারত হয়েছে তিনবার। প্রথমবার ১৮৬৫ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ অফিসার জনাসন লাইন টেনে সীমান্ত নির্ধারণ করেন, যাকে বলা হয় জনাসন লাইন। দ্বিতীয়বার ১৮৯৫ সালে ম্যাকাটনি ম্যাকডোল্যান্ড অনুরূপভাবে লাইন টেনে সীমান্ত নির্ধারণ করেন, যা ম্যাকাটনি ম্যাকডোল্যান্ড লাইন হিসেবে পরিচিত। এই সীমানা বিভাজনে আকসাই চীন অঞ্চলের বৃহত্তর অংশ চীনকে দিয়ে দেয়া হয়। অতঃপর ১৯১৪ সালে ম্যাকমোহন লাইনের মাধ্যমে সীমান্ত নির্ধারণ করেন, যা ম্যাকমোহন লাইন হিসেবে চিহ্নিত। ব্রিটিশ ও তিব্বতের কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলোচনা সাপেক্ষে এটি করা হয়। ১৯৫১ সালে চীন তিব্বত অধিকার করে নেয়। ১৬ জুন লাদাখের যে গালওয়ান উপত্যাকায় সংঘাতের ঘটনা ঘটে সেটি চীনের আকসাই চীনের অন্তর্গত। চীন নিয়ন্ত্রিত লাদাখ ও আকসাই চীন জিংজিয়াং প্রদেশভুক্ত। গালওয়ান উপত্যকা চীন ও ভারতের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা। এর দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটার। গত এক দশক ধরে চীন ও ভারত উভয় দেশই নিয়ন্ত্রণ রেখার দু’পাশে ব্যাপকভাবে রাস্তাঘাট, ব্রিজ, রেল লিংক, এয়ারফিল্ড ইত্যাদি নির্মাণ করেছে এবং এখানো করছে। এ নিয়ে মাঝে মধ্যেই উত্তোজনা দেখা দেয়। গত বছর ভারত নিয়ন্ত্রিত লাদাখে কেন্দ্রীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করার পর ভারত তার সামরিক ঘাঁটির সঙ্গে যুক্ত করে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর একটা রাস্তা নির্মাণ করলে উত্তেজনা চরমে ওঠে। ওদিকে চীনও সেখানে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মণ করেছে। ভারতের অভিযোগ, উপত্যকায় প্রবেশ করে চীন বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে নিয়েছে এবং সেখানেও বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছে। ১৬ জুনের ঘটনার সূত্রপাত এ থেকেই।
ভারত তার কৌশলগত দিক বিবেচনায় নিয়ে গালওয়ান উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর রাস্তা নির্মাণ করার প্রশ্নে চীনের আপত্তি গ্রাহ্য করেনি। চীনের দাবি, রাস্তাটি নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছাকাছি হওয়ায় তার নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। অন্যদিকে তিব্বত সিংডিয়াং হাইওয়ে, যা কিনা বেল্ট অ্যান্ড রোডের অংশ এবং কারাকোরাম গিরিপথ দিয়ে গেছে, ভারতের রাস্তাটি তারও কাছাকাছি। চীনের এই ইনিশিয়েটিভের ক্ষেত্রেও এটা ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। এছাড়া ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও এই বিরোধ-সংঘাত উসকে দেয়ার জন্য কম দায়ী নয়। কাশ্মীরের বিশেষ সুবিধাপ্রদায়ী ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করে সেই সুবিধা হরণ, লাদাখকে আলাদা করে কেন্দ্রীয় শাসনের অধীনে আনা এবং বছরখানেক আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর, গিলগিট, বাল্টিস্তানসহ আকসাই চীন দখল করার দম্ভোক্তি চীন সহজভাবে নিতে পারিনি। ভারতের নীল-নকশার অংশ হিসাবে একে গণ্য করা তার পক্ষে অসম্ভব নয়। চীনের বেল্ড অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আকসাই চীন, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও নেপাল একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই হুমকি তার সরাসরি প্রতিপক্ষে যায়। এরপর থেকেই চীন এই সীমান্তে তার মনোযোগ আরো বাড়িয়েছে।
’৬২ সালের যুদ্ধে পর চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ‘চীনী-হিন্দী ভাই ভাই’ পর্যায়ে আর যেতে পারেনি। চীন ভারতের প্রতি অতটা বিমুখ নয় যতটা চীনের প্রতি ভারত। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়াটিভের সঙ্গে ভারতকে যুক্ত করার সব চেষ্টাই চীন করেছে; কিন্তু ভারত রাজি হয়নি। এ ছাড়া বিভিন্ন আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রচেষ্টার সঙ্গেও তাকে সম্পৃক্ত করতে চীন ব্যর্থ হয়েছে। অথচ ভারতে চীনের হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। পণ্যবাণিজ্যও ভারতে ব্যাপক। এখন ভারতের কিছু উগ্রবাদী সংগঠন, যারা মূলত রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের অনুসারী-অনুগামী এবং চীনবিরোধী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, চীনা বিনিয়োগ ও পণ্য বর্জন করার ডাক দিয়েছে। দু’ দেশের মধ্যে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যবিরোধ জোরদার করাই তাদের উদ্দেশ্য। বলা বাহুল্য, চীনের বিনিয়োগ ও পণ্য বন্ধ হলে চীনের যতটা ক্ষতি, তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হবে ভারতের। চীনা পণ্য নিয়ে আগেও বিরোধী প্রচার ছিল। কারণ, চীন-ভারত বাণিজ্য ঘাটতি ভারতের প্রতিকূলে বিশাল। এই ঘাটতি বৃদ্ধির কারণ, চীনা পণ্যের স্বল্প দাম ও ক্রেতাদের পছন্দ। এত কম দামে পণ্য অন্য কোনো দেশ থেকে আমদানি করা সম্ভব নয়। ভারতের বড় বড় প্রজেক্টে চীনের হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। এ বিনিয়োগ বন্ধ হলে অনুরূপ বিনিয়োগ ভারত আর জোগাড় করতে পারবে না। ভারতের দূরদর্শী ও বিজ্ঞ-বিচক্ষণ ব্যক্তিরা মনে করেন, বিনিয়োগ ও বাণিজ্য নিয়ে বিরোধে জড়ানো ভারতের বৃহত্তর স্বার্থেই উচিৎ হবে না।
২০১৭ সালে চীন-ভুটান সীমান্তের দোকলামে চীন ও ভারতের মধ্যে যে তুমুল উত্তেজনা দেখা দেয় তাতে ভারতীয় প্ররোচণার ভূমিকা ছিল নিয়ামক। আড়াই মাস স্থায়ী ওই উত্তেজনা ভারতের পিছু হটার মধ্যে দিয়ে অবসান ঘটে। চীনের রাস্তা নির্মাণ বন্ধে ভারত বাধা দিলেও আখেরে চীন সে রাস্তা নির্মাণ করেছে। লাদাখের ঘটনায়ও ভারতের উসকানি-প্ররোচণাই মুখ্য। ভারতের এই আচরণ পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলক বলে মনে করেন অনেকে। এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের সায় ও সমর্থন আছে বলেও তাদের ধারণা। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ চলছে অনেক দিন ধরে। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এই স্নায়ুযুদ্ধ আরো জোরালো হয়েছে। চীনকে মোকাবিলা করার জন্য ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সখ্য গড়ে তুলেছে, তার দীর্ঘদিনের মিত্র পাকিস্তানকে উপেক্ষা করে। ওদিকে ভারতও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নিবিড় করার জন্য তার পরীক্ষিত মিত্র রাশিয়াকে দূরে সরিয়ে দিতে পিছ-পা হয়নি। উভয়ের একটাই লক্ষ্য চীনকে দাবানো।
ভারত পরাশক্তি হিসেবে নিজেকে এখনো সুপ্রতিষ্ঠত করতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র তাকে কাক্সিক্ষত সহযোগিতা দিতে পারে বলে তার স্থির ধারণা। যুক্তরাষ্ট্রের তরফে তেমন আশ্বাসও আছে। এটাও যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের উচ্চতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। অর্থনৈতিক, সামরিক ও প্রভাববলয় বিস্তারের দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিপক্ষ চীন, যদিও এসব ক্ষেত্রে বিশ্বে এখানো শীর্ষস্থানে যুক্তরাষ্ট্র। এই তিন দিকে চীন যেভাবে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে শীর্ষস্থানটি চীনের হতে খুব দেরী নেই বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। আশঙ্কার এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে সাথে নিয়ে চীনের মোকাবিলা করতে চায়, তাকে কাবু করতে চায়। চীন-ভারত সীমান্ত সংঘাতের প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া থেকে সেটা স্পস্ট বুঝা যায়। চীনকে ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশেষত এশিয়ার কয়েকটি দেশে সেনা মোতায়েন করতে চায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ব্রাসেলসে এক ভিডিও কনফারেন্সে এমন পরিকল্পনার কথই জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের জন্য চীন বড় হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) মোকাবিলায় আমরা সব রকমভাবে প্রস্তুত আছি কিনা, সেটা আমরা নিশ্চিত করতে চাইছি। বলা বাহুল্য, চীনের বিরুদ্ধে এটা যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি উসকানি।
ভারতের অতীতের নেতৃবৃন্দ চীনের মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর সহযোগিতা নিতে কিছু দ্বিধা করতেন, রাখঢাক করতেন। কিন্তু হিন্দত্ববাদী বিজেপি ক্ষমতায় আসায় এবং নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সেই দ্বিধা ও রাখঢাক আর নেই। ট্রাম্প ও মোদী এখন পরস্পরের ঘনিষ্ট মিত্র ও বন্ধু। ট্রাম্প ও মোদী দেশ পরিচালনায় যোগ্যতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। উভয়ের ভাব-মর্যাদার দ্রুত অবনমন ঘটছে। মোদীর অবস্থা তুলনামূলকভাবে অধিক শোচনীয়। তার উগ্র হিন্দত্ববাদের অস্ত্র অনেকটা ভোতা হয়ে পড়েছে। অর্থনীতির বিকাশ তো দূরের কথা, তা রীতিমত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কর্মসংস্থান, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ এবং নাগরিক সুযোগ-সুবিধা দিতে মোদী ব্যর্থ। ওদিকে পররাষ্ট্রনীতি ও সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার ব্যর্থতাও পর্বতসম। প্রতিবেশী কোনো দেশের সঙ্গেই ভারতের সম্পর্ক ভালো নেই। ‘প্রতিবেশী সবার আগে’, এ কথা যে নিতান্তই কথার কথা, প্রতিবেশীদের বিমুখ হওয়া তার প্রমাণ। কেউ ভারতের সঙ্গে নেই। এ জন্য তার অনুসৃত নীতিই দায়ী। যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল এবং পশ্চিমা কয়েকটি দেশ ছাড়া ভারতের পক্ষে আর কোনো রাষ্ট্র নেই। এই গুটিকয় দেশের ওপর ভরসা করে চীনের সঙ্গে লড়তে যাওয়া ভারতের জন্য হবে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কথায় বলে, যুক্তরাষ্ট্র যার মিত্র, তার শত্রু র প্রয়োজন নেই। যুক্তরাষ্ট্রের একান্ত বংশবদদের বিশ্বাস করা যায় না। যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছার বাইরে যাওয়ার শক্তি তাদের নেই।
বিশ্লেষকদের অভিমত, ভারত যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গ না ছাড়ে এবং যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া পরামর্শে চলে তবে তাকে খুব চড়া মূল্য দিতে হবে। চীনের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ বা শক্তি প্রয়োগ তার জন্য হতে পারে বুমেরাং। ১৯৬২ সালের যুদ্ধে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল দখল করেও চীন সে দখল ছেড়ে দিয়েছিল, সেনা প্রত্যাহার করেছিল। এবার ভারতের অনুরূপ পরিস্থিতি হলে সেটা আর নাও নিতে পারে। ভারতকে এই সাতপাঁচ ভালো করে ভেবেই তবে অগ্রসর হতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।