পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
প্রতিবেশীর সাথে সংঘর্ষে জড়ালে বা দাদাগিরি করতে গেলে কী পরিণতি ভোগ করতে হয়, তা ভারত হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। এতদিন নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও বাংলাদেশে ছড়ি ঘোরালেও চীনের সাথে লাগতে গিয়ে বুঝতে পেরেছে, সব জায়গায় দাদাগিরি চলে না। তার ছোট্ট নমুনা হচ্ছে, গত ১৫ জুন রাতে ভারত-চীন সীমান্তের পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় দুই দেশের সেনাদের মুখোমুখি সংঘর্ষ। এ সংঘর্ষে ভারতের এক কর্ণেলসহ ২০ সেনা নিহত হয়েছে এবং আটক হয়েছে প্রায় ১০ জন। সংঘর্ষে গুলির পরিবর্তে কাঁটাযুক্ত ভারি রড, পাথর ব্যবহৃত হয়। বলা যায়, কমবেট ফাইট হয়েছে, যাতে ভারতের সেনারা পরাজিত হয়েছে। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো অবশ্য বলেছে, এ যুদ্ধে চীনের ৪৩ জন হয় নিহত হয়েছে, নতুবা আহত হয়েছে। তবে এ সংবাদের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিগত ৪৫ বছরের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে এমন যুদ্ধের ঘটনা ঘটেনি। সর্বশেষ ১৯৭৫ সালে অরুণাচল প্রদেশের তুলুং লাতে এক যুদ্ধে ভারতের চার সেনা নিহত হয়েছিল। ১৫ জুনের যুদ্ধের সূত্রপাত হিসেবে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ভারতীয় সেনারা দুইবার সীমান্ত অতিক্রম করে এবং চীনা সেনাদের উসকানি দেয় ও আক্রমণ করে। এর ফলে যুদ্ধ বেঁধে যায়। বিষয়টি এমন যেন, ভারতের সেনারা চীনের সাথে কাবাডি খেলতে গিয়েছিল। সীমান্তরেখা পার হয়ে ‘কাবাডি কাবাডি’ বলতে বলতে চীন সেনাদের ছুঁয়ে পয়েন্ট আনতে চেয়েছিল। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। পয়েন্ট ছিনিয়ে আনা দূরে থাক, উল্টো চরম ধোলাই খেয়ে জান খুইয়েছে। ভারত ভেবেছিল, তার অন্যান্য প্রতিবেশীর সীমান্ত যেভাবে পেরিয়ে ফিরে যেতে পারে বা ‘লে পাঙ্গা’ বলতে পারে, চীনের সাথেও এমন পাঙ্গা নিয়ে ফিরে আসতে পারবে। তা হয়নি। যেখানে চীন বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক এবং সামরিক শক্তি নিয়ে ‘শীতল যুদ্ধ’ চালিয়ে যাচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে থোড়াই কেয়ার করছে, সেখানে তার সাথে লাগতে যাওয়া যে চরম বোকামি, ভারত তা বুঝতে অক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। চীন বুঝিয়ে দিয়েছে, তার সাথে লাগতে যাওয়া মানে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা। আর ভারতের মতো দুর্বল অর্থনীতির একটি দেশের পক্ষে চীনের সাথে ‘পাঙ্গা’ নেয়া চরম বোকামি ছাড়া কিছু নয়। চীনের কাছে মার খেয়ে এখন সে নিজের সার্বভৌমত্ব রক্ষা নিয়ে হায় হায় শুরু করে দিয়েছে। বলেছে, ভারতের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা ও আঞ্চলিক অখন্ডতা সুনিশ্চিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। একেই বলে ‘ঠেলার নাম বাবাজি।’
দুই.
ভারতের বর্তমান অবস্থা কি? এ প্রশ্ন যদি করা হয়, তবে একবাক্যে সবাই স্বীকার করবেন, দেশটি কোন দিক দিয়েই ভাল নেই। না অর্থনৈতিকভাবে ভাল আছে, না প্রতিবেশীদের সাথে সুসম্পর্ক রয়েছে। এক করোনার ধাক্কায় দেশটির অর্থনীতি তলানীতে গিয়ে ঠেকেছে। প্রতিদিন করোনায় হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। মৃত্যুও হচ্ছে শত শত। এই বিপদ ঠেকাতে গিয়ে দেশটি একদিকে হিমশিম খাচ্ছে, অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবে চরম প্রতিকূলতার মধ্যে ডুবে গেছে। বিশ্বব্যাংক থেকে শুরু করে অন্যান্য সংস্থা বলেছে, ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বা জিডিপি শূন্যের নিচে নেমে যেতে পারে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, দেশটি কত বড় বিপদে আছে। এর মধ্যেই সে প্রতিবেশীদের সাথে পাঙ্গা দিচ্ছে। বিষয়টি অনেকটা ‘ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার’ এর মতো। এ সুযোগটা নেপাল বাপের বেটার মতো নিয়েছে। সে ভারত ও তার সীমান্তের কালাপানি এলাকা নিজেদের মানচিত্রে যুক্ত করে দিয়েছে। ভারত টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করতে পারছে না। উল্টো নেপালের পুলিশের গুলিতে তার কয়েকজন নাগরিক নিহত হয়েছে। এমন সাহস দেখিয়ে মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়িয়েছে নেপাল। অবশ্য নেপাল প্রায় বছর খানেক আগে ভারতের আধিপত্যবাদ থেকে বের হয়ে আসা শুরু করে। বিশ্বের একমাত্র হিন্দু রাষ্ট্র থেকে বের হয়ে বহুজাতিক দেশে পরিণত হতে সংবিধান পরিবর্তন করে। তার আগে ভারত নেপালে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিলে দেশটি পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ভারতের সব টিভি চ্যানেল বন্ধসহ অন্যান্য বিষয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। অবশেষে বাধ্য হয়ে ভারত তার খাদ্য নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। এখন ভারতের দাবীকৃত ভূখন্ড নিজের মানচিত্রে যুক্ত করে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে দিয়েছে। নেপালের এই শক্তির উৎস কি? এ প্রশ্নের জবাবে বলা যায়, দেশটি তার আত্মমর্যাদা অটুট রাখা এবং এককেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি বা ভারত নির্ভরতা থেকে সরে উন্মুক্ত বিশ্বের দিকে দৃষ্টি দিয়েছে। সে তার সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিবেশী চীনের দিকে ঝুঁকেছে। ভারত যে ভূখন্ড নিয়ে নেপালের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দ করতে পারল না, তার মূল কারণ চীন। চীনের সাথে নেপালের সীমান্ত রয়েছে। এ হিসাবে নেপাল চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ায় চীনের শক্তি তার মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছে। অর্থাৎ পরোক্ষভাবে হলেও চীন নেপালকে দিয়ে ভারতকে ঘিরে রেখেছে। অন্যদিকে চীন লাদাখে সরাসরি ভারতের ভূখন্ডের কাছে তার প্রতিরক্ষা বুহ্য স্থাপন থেকে শুরু করে তার দাবীকৃত অংশ সুরক্ষার ব্যবস্থা নিয়েছে এবং ভারত যুদ্ধ করতে এলে তাকে উচিৎ শিক্ষা দেয়া হবে, এমন প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। হচ্ছেও তাই। ভারত চীনের এই মনোভাব বুঝতে পেরে এখন অনেকটা মিউ মিউ করে চীনের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের দিকে ঝুঁকেছে। চীনও আলাপ-আলোচনা করতে রাজি। তবে সে ‘তালগাছ আমার’ এ মনোভাব বজায় রেখেছে। একদিকে আলোচনা, অন্যদিকে ভারতের যুদ্ধ বাঁধানোর মতো উস্কানির জবাবও সে দিয়ে দিচ্ছে। অর্থাৎ ভারত এখন ব্যাকফুটে থেকে চীনের সাথে সমঝোতা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আলোচনার ফল যে ভারতের পক্ষে যাবে না, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। কারণ, ভারতের দৌঁড় কতটুকু, চীন তা বুঝে গেছে। ভারত ভেবেছিল, এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র তার পাশে দাঁড়াবে। দেখা গেল, যুক্তরাষ্ট্র তার পাশে নেই। উল্টো মাস দেড়েক আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের সাথে ভারতের মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়ে নরেন্দ্র মোদীর সাথে তার কথা হয়েছে বলে বলেছিল। পরবর্তীতে জানা যায়, ট্রাম্পের সাথে এ নিয়ে মোদীর কোনো কথাই হয়নি। ট্রাম্পের এ ধরনের অসত্য ভাষণ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, ভারতের পাশে যুক্তরাষ্ট্র নেই। যেখানে হুমকি-ধমকি ও যুদ্ধ জাহাজের মহড়া দিয়েও যুক্তরাষ্ট্র চীনের মধ্যে এতটুকু বিচলন ঘটাতে পারছে না, বিশ্বরাজনীতিতে তার নেতৃত্ব হারানোর আশঙ্কার যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে রয়েছে, ট্রাম্প নিজেই দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হতে চীনের সাহায্য চেয়েছেন, সেখানে ভারতের পাশে তার দাঁড়ানোর সময় কোথায়? এর ফলে তার আশায় যে গুঁড়ে বালি পড়েছে। ভারত এখন এক গভীর খাদের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে ভারতের অভ্যন্তরের রাজনীতিও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। তারা এ পরিস্থিতির জন্য নরেন্দ্র মোদীর দুর্বল রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিকে তীব্রভাবে কটাক্ষ করছে। বলা বাহুল্য, চীন এমন এক শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে, যার সাথে পাঙ্গা নেয়ার মতো শক্তি ও সামর্থ্য ভারতের নেই। একজন সাধারণ মানুষও তা বোঝে। শুধু তাই নয়, এক সময় ভারতের আধিপত্যের মধ্যে থাকা ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপও তার কাছ থেকে দূরে সরে গেছে। কম-বেশি সবাই চীনের দিকে ঝুঁকেছে। তারা ভাল করেই জানে, যুদ্ধ ও আধিপত্য দিয়ে নয়, চীন সত্যিকারের বন্ধুত্ব নিয়ে তাদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তার সুফলও তারা পাচ্ছে। চীন দেশগুলোতে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। এতে দেশগুলো একদিকে যেমন অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হচ্ছে, তেমনি ভারতের দাদাগিরি থেকেও মুক্ত থাকতে পারছে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের সাথে ভারত কখনোই দাদাগিরি দেখাতে পারেনি এবং পারছেও না। পাকিস্তানে ইট ছুঁড়লে, তার জবাবে পাকিস্তান পাথর ছোঁড়ে। বিগত এক বছরে ভারত-পাকিস্তানের সংঘাতচিত্র দেখলেই তা বোঝা যায়। ভারতের কারণেই প্রতিবেশীরা একে একে ছেড়ে গেছে। তারা তাকে আর তেমন তোয়াক্কা করছে না।
তিন.
ভারতের আধিপত্যবাদ বা দাদাগিরি উপেক্ষা করে যখন তার অধিকাংশ প্রতিবেশী চলে গেছে, তখন তার শেষ সঙ্গী হিসেবে কেবল আমরাই রয়ে গেছি। এখানে আমরা বলতে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ নয়, সরকার ও বিরোধী দলকেই বোঝানো হয়েছে। তারা এখনও বিশ্বাস করে, ক্ষমতায় থাকা ও যাওয়ার একমাত্র পথ ভারতের আশীর্বাদ। এ আশীর্বাদ না থাকলে ক্ষমতায় থাকা ও যাওয়া যায় না। ফলে সরকারি দল ও বিরোধী দল উভয়েই ভারতকে তুষ্ট ও সন্তুষ্ট রাখা নিয়ে এক ধরনের অদৃশ্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। ক্ষমতাসীন দল কেবল ভারতের চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছে, আর বিরোধী দল তার দিকে টানার জন্য নানা লবিং করছে। এই দুইয়ের মাঝে ভারত গোঁফে তা দিয়ে মজা নিচ্ছে। আমরা সবাই জানি, আমাদের দেশের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে ভারতের কী ধরনের প্রভাব থাকে। অনেকে বলেন, ২০১৪ ও ২০১৯-এর নির্বাচন ভারতের পরামর্শের কারণেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পেরেছে এবং এই দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকতে পারছে। অন্যদিকে, নির্বাচনের আগে বিরোধী দল ভারতকে কনভিন্স করার জন্য নানাভাবে চেষ্টা চালিয়েও তার সমর্থন আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছে। ভারত দলটির ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে পারেনি এবং পারছে না। তার একমাত্র আস্থাভাজন দল আওয়ামী লীগ। কারণ, দলটি ভারতের কোনো চাহিদা অপূর্ণ রাখে না এবং রাখবেও না। যখন যেভাবে যা চেয়েছে, বিনাবাক্যে তা দিয়ে দিয়েছে। বিনিময়ে ভারত আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে কী ভূমিকা রেখেছে, তার স্মৃতিচারণ করেই সান্ত¦না পাচ্ছে। কাজেই ভারতের প্রতি বিশ্বস্ত এমন একটি দল থাকতে, আরেকটি দলকে কেন সে সমর্থন দেবে? এই সরল হিসাবটি আমাদের বৃহৎ বিরোধী দল বুঝতে পারেনি বা বুঝতে চায়নি। তারা কেবল আশায় আছে, ভারত কোনো না কোনো সময় তাদের সমর্থন দেবে। এজন্য ভারতের চাহিদা পূরণ করতেও দ্বিধা করবে না। আমরা দেখেছি, দেশের স্বার্থ পরিপন্থী অনেক চুক্তি এবং আমাদের ন্যায্য দাবী ভারতের পূরণ না করা ও তার চাহিদা অনুযায়ী সব দিয়ে দেয়া নিয়ে দলটি কার্যকর কোনো প্রতিবাদ করেনি, করছেও না। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, যেখানে নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কার মতো দেশ ভারতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তার প্রভাব বলয় থেকে বের হয়ে গেছে, সেখানে আমাদের ক্ষমতাসীন ও বৃহৎ বিরোধী দল দেশের মর্যাদার কথা বিবেচনা না করে কেবল দলীয় স্বার্থের কথা ভেবে ভারতকে তোয়াজ করে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন দল সবসময়ই বলছে, ভারতের সাথে আমাদের বন্ধুত্ব সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, এ বন্ধুত্ব সরকারি দলের সাথে সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকলেও দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সাথে নেই। কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ভালভাবেই দেখছে এবং বুঝছে, ভারত আমাদের সাথে কী অমানবিক আচরণ করছে! আমাদের কোনো চাহিদা পূরণ না করে, সে তার সব চাহিদা আদায় করে নিয়েছে। সীমান্তে পাখির মতো গুলি করে বাংলাদেশীদের মারছে। বিএসএফ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে হুটহাট ঢুকে মানুষ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের নির্যাতন করে মারছে। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন দল তো বটেই, বিরোধী দলের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের প্রতিবাদ করা হচ্ছে না। এমনকি ভারতের রাজনীতিকরা আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে আপত্তিকর কথা বললেও, তা নিয়ে কোনো ধরনের টুঁ শব্দ করেনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সৌজন্য বশতঃ কোনো বিবৃতিও দেয়া হয়নি। এমন নতজানু পররাষ্ট্রনীতি এবং প্রতিবাদহীন রাজনীতির কারণে ভারত আমাদের সাথে যা খুশি তা করে বেড়াতে পারছে। অথচ নেপাল ভারতের নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে বিশ্বে নিজের অবস্থান সুসংহত করেছে। এ নিয়ে ভারতেরও কিছু বলার থাকছে না। অর্থাৎ সাহস করে ঘুরে দাঁড়ালে যে বাঘও পালিয়ে যায়, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান তা দেখিয়ে দিয়েছে। তাহলে আমরা কিসের আশায় বসে আছি? ক্ষমতা? এ ক্ষমতা দেয়ার মালিক তো জনগণ। দেশের জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারলে কি কেউ তা থেকে বিচ্যুত করতে পারে?
যার ক্ষমতা ও শক্তি আছে, তার কাছেই মানুষ যায়। এই যে নেপাল ভারতকে দেখিয়ে দিল, তা শুধু চীনের সঙ্গে সুষম বন্ধুত্বের কারণেই সম্ভব হয়েছে। এমন বন্ধুত্বইতো দরকার। আমাদের সঙ্গেও তো চীনের ভাল বন্ধুত্ব এবং চীন দেশের বিনিয়োগ থেকে শুরু করে করোনা মোকাবেলায় সহযোগিতা করে যাচ্ছে। করোনাকালীন অর্থনীতির মহাসংকটে চীন শর্তহীনভাবে শূন্য শুল্কে ৯৭ শতাংশ বা ৮ হাজার ২৫৬টি বাংলাদেশী পণ্য তার দেশে রপ্তানির অপূর্ব সুযোগ দিয়েছে। এছাড়া করোনা মোকাবিলায় বিভিন্ন সুরক্ষা সামগ্রী দেয়া এবং চিকিৎসক দল পাঠিয়ে সহযোগিতা করেছে। করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারে দেশটি অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। দ্রুতই এই ভ্যাকসিন আসবে। তখন দেশটি সবার আগে আমাদের দেবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। কই, ভারত তো এভাবে বাংলাদেশের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়নি। বরং আরও কী সুবিধা নেয়া যায়, এ হিসাব কষছে। সে কেবল নিতে জানে, দিতে জানে না। এ প্রেক্ষিতে, আমাদের উচিত চীনের সাথে সম্পর্ক আরো গভীর করা। এ সময়টিকে কাজে লাগানো কর্তব্য। চীনের সাথে বন্ধুত্ব সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো জরুরি। এ সুযোগ হেলায় হারালে আমরাই ক্ষতিগ্রস্ত হব। বর্তমান এবং আগামীর একমাত্র অর্থনৈতিক পরাশক্তি চীনের সাথেই বন্ধুত্ব গভীর করা সময়ের দাবী।
চার.
বিশ্ব রাজনীতি এখন পুরোপুরি বদলে গেছে। করোনা পরবর্তী বিশ্ব হবে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের যুদ্ধ ক্ষেত্র। এ যুদ্ধ ক্ষেত্রে যে চীন নেতৃত্ব দেবে, তাতে সন্দেহ নেই। উপমহাদেশের দেশগুলো যেহেতু অর্থনীতির পরাশক্তি চীনের দিকে ঝুঁকেছে, আমাদেরও সেদিকে এগিয়ে যাওয়া উচিৎ। এটা প্রমাণিত সত্য, চীন আমাদের অনেক ভালবন্ধু এবং ভারতের মতো খবরদারি বা দাদাগিরি করে না। তাকেই আমাদের কাছে টানতে হবে। চীনও আন্তরিকতার সাথে পারস্পরিক বন্ধুত্বকে যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে চায়, তার নজির ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি। বলার অপেক্ষা রাখে না, চীন পাশে থাকলে ভারতও আমাদের প্রতি বিরূপ আচরণ করতে সাহাস পাবে না। ভারত ভাল করেই জানে, তার পাশে বাংলাদেশ ছাড়া আর কোনো প্রতিবেশী নেই। পরিবর্তিত বিশ্বে আমাদেরকে এই সুযোগ নিতে হবে। এজন্য সরকার ও বিরোধী দলের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।