পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বন্ধ থাকা স্কুল-কলেজগুলো অনাদায়ী টিউশন ফি বা বেতন পরিশোধে অভিভাবকদের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্কুলকর্তৃপক্ষের তরফ থেকে পাঠানো মোবাইলফোন মেসেজে নির্ধারিত দিন-তারিখের মধ্যে টিউশন ফি পরিশোধ করার না হলে শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল এবং প্রমোশন বন্ধ রাখার হুমকি দেয়া হয়েছে। করোনাকালে অধিকাংশ মানুষের আয়-রোজগার বন্ধ থাকার বাস্তবতা কারোর অজানা নয়। সাধারণ ছুটি ও শাটডাউন-লকডাউনের কারণে দেশের অধিকাংশ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বেসরকারি চাকরিজীবীদের বড় অংশই এখন কর্মহীন হয়ে পড়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের বেশিরভাগই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী অথবা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী। চারমাস ধরে কাজকর্ম বন্ধ থাকায় বাসাভাড়াসহ সংসারের ব্যয়ভার লাঘব করতে অনেকের পরিবার নিয়ে গ্রামে চলে যাওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। যে সব নামি-দামি বেসরকারী স্কুল-কলেজ ভর্তির সময় নামে-বেনামে কয়েকগুন বেশি অর্থ আদায় করে, যারা কোচিং বাণিজ্যসহ নানাভাবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সারা বছর অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে, মূলত সে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই এ সময় টিউশন ফির জন্য অভিভাবকদের কাছে হুমকিমূলক বার্তা পাঠাচ্ছে। পাশাপাশি অনলাইন ক্লাসের লিঙ্ক না দেয়া এবং ফলাফল স্থগিত রাখার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করা হচ্ছে বলে জানা যায়।
সারাবছর নিরবে-নির্বিবাদে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টিউশন ফিসহ সব দাবী পুরণ করে আসলেও এখন এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে বন্ধ শিক্ষা থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর টিউশন ফি পরিশোধের চাপ সাধারণ অভিভাবকরা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছেন না। টিউশন ফি মওকুফের দাবীতে ঢাকার বিভিন্ন নামি-দামী স্কুলের সামনে প্রতিবাদ ও মানববন্ধনে শামিল হচ্ছেন অভিভাবকরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি শিক্ষা মন্ত্রনালয় ও অধিদফতরের নিরব ভ’মিকারও প্রতিবাদ করছেন অভিভাবকরা। করোনা সংকটের শুরু থেকেই লকডাউনে কর্মহীন মানুষের খাদ্যসহ আর্থিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছে সরকার। বিভিন্ন সেক্টরের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ও উদ্ধার তহবিল ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষাখাত নি:সন্দেহে দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জনসম্পৃক্ত খাত। করোনা মহামারীতে এই সেক্টরের ক্ষয়ক্ষতির পুরোটা পোষানো হয়তো সম্ভব নয়। বিশেষত এমপিওভুক্তির বাইরে থাকা ভাল মানের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের জন্য একটি সরকারি সহায়তা বরাদ্দ দেয়া এখন সময়ের দাবী। সেই সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা অন্তত ৫ মাসের টিউশন ফি মওকুফ অথবা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অর্ধেক টিউশন ফি পরিশোধের সিদ্ধান্তে আসা প্রয়োজন। করোনাকালে সীমিত পরিসরে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অজুহাতে সমুদয় টিউশন ফি আদায়ের যুক্তি দেখাচ্ছেন কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান প্রধান। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের এই চরম সংকটময় মুহূর্তে শিক্ষা মন্ত্রনালয় ও অধিদফতরের নিরবতা, নির্লিপ্ততা বিষ্ময়কর ও দু:খনজক।
ইতিপূর্বে শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে করোনাকালে টিউশন ফি আদায়ের জন্য চাপ না দিয়ে মানবিক হতে বলা হয়েছিল। কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে ৫০ ভাগ টিউশন ফি মওকুফের ঘোষণা দিয়েছে বলে জানা যায়। অথচ কিছু প্রতিষ্ঠান মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দেখানোর তাগিদ বোধ করছে না। তারা একদিকে বেতন পরিশোধের জন্য অভিভাবকদের উপর চাপ দিচ্ছে, অন্যদিকে টিউশন ফি আদায় না হওয়ায় শিক্ষকদের বেতন না দেয়ার অজুহাত খাড়া করছে। অভিভাবকরাও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভ‚মিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। এমতাবস্থায় সরকারের শিক্ষামন্ত্রনালয়ের নিরব নিশ্চুপ-থাকার কোনো সুযোগ নেই। তাকে অবশ্যই বিষয়টি আমলে নিতে হবে এবং যৌক্তিক বাস্তবোচিত সিদ্ধান্ত প্রদান করতে হবে। এ ব্যাপারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অভিভাবকদের সাথে কথাবার্তা বলা যেতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অভিভাবকদের মধ্যে একটা উইন উইন পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ও বড় ক্ষতি যেমন কাম্য নয়, তেমনি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পড়ে তেমনটাও অভিপ্রেত নয়। এ ক্ষেত্রে উভয়পক্ষে ভারসাম্য রক্ষায় সমঝোতা ও সমন্বয়ের দায়িত্ব পালনে শিক্ষামন্ত্রনালয়কে সুস্পষ্ট ভূমিকা নিতে হবে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের তরফে আর্থিক সহায়তা ও প্রণোদনা দেয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। দেশের লাখ লাখ ঘরবন্দি শিক্ষার্থী ও কর্মহীন অভিভাবকের উপর চাপ সৃষ্টির অমানবিক তৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।