Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চীন-ভারত সীমান্তে উত্তেজনা ও সংঘাত

| প্রকাশের সময় : ১৮ জুন, ২০২০, ১২:০১ এএম

এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ চীন ও ভারতের মধ্যকার বৈরিতা ও উত্তেজনা কোনো নতুন বিষয় নয়। বিশ্ব রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতের নতুন বন্ধুত্ব এবং চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ঠান্ডা লড়াই, বাণিজ্যযুদ্ধ ও উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ভারত-চীন বৈরিতা এক নতুন মাত্রায় উন্নীত হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও এখন তা শুধুই দুই দেশের শক্তির লড়াইয়ে পরিণত হতে দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি লাদাখের গ্যালওয়ান উপত্যকায় দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করেছে। তবে ভারতের পুরনো বন্ধু এবং চীনের কৌশলগত মিত্র রাশিয়ার মধ্যস্থতায় ইতোমধ্যেই দুই দেশই আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছে বলে জানা যায়। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকটি ভার্চুয়াল ফর্মেটে অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানা গেছে। তার আগেই দুই দেশের সেনাবাহিনী গ্যালওয়ান উপত্যকায় রক্তক্ষয়ী সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। দুই দেশই সীমান্তে বাড়তি হাজার হাজার সৈন্য সমাবেশ ঘটানোর মধ্য দিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। গত সোমবার রাতে দুই পক্ষের সংঘাতে একজন সেনা অফিসারসহ অন্তত ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। ভারতের পক্ষ থেকে নিজেদের ২০ জন নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি উভয় পক্ষেই হতাহতের খবর দিলেও চীনের পক্ষ থেকে গতকাল পর্যন্ত হতাহতের কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য নিশ্চিত করা হয়নি।

ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা প্রতিবেশী দেশগুলোর সীমান্তে সব সময় অস্ত্র তাক করে থাকলেও গত সাড়ে ৪ দশকের মধ্যে চীন সীমান্তে ভারতীয়রা সরাসরি কোনো সংঘাতে জড়ায়নি। ১৯৬২ সালে চীন ও ভারতের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধটি ভারতের শোচনীয় পরাজয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছিল। এরপর ১৯৭৫ সালে বিতর্কিত সীমান্ত সংঘাতে কয়েকজন ভারতীয় সেনা হতাহত হওয়ার পর গত সোমবার প্রথম বড় ধরনের সংঘাত ও হতাহতের ঘটনা ঘটল। শক্তি ও কৌশলগত অবস্থানের দিক থেকে ভারতের চেয়ে চীন সব সময়ই এগিয়ে। চলমান কোভিড পরিস্থিতি, আঞ্চলিক ও বিশ্ব রাজনীতিতে ভারতের লেজেগোবরে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। চীনের সাথে দ্ব›েদ্ব কৌশলগত কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। ভারতের পাশে দাঁড়ানোর কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত কোনো প্রতিবেশীর সাথে আস্থাপূর্ণ সম্পর্কে গড়ে তুলতে বা ধরে রাখতে পারছে না। সাম্প্রদায়িক রাজনীতি এবং ছোট প্রতিবেশীদের সাথে বড়ভাইসুলভ আচরণ ভারতকে একপ্রকার বন্ধুহীন করে তুলেছে। প্রতিবেশিদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার প্রতিশ্রæতি দিয়ে বিজেপি সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার অভিষেক শুরু করলেও গত ৭ বছরে তিনি হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িকতা, সংঘাত হানাহানি ও বিভাজন ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেননি। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ভারতকে তিনি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে ঠেলে দিয়েছেন। সাংবিধানিকভাবে বিশ্বের একমাত্র হিন্দু রাষ্ট্র এবং ট্রাডিশনালভাবে ভারতের উপর নির্ভরশীল নেপালও এখন বিতর্কিত অঞ্চলকে নিজেদের মানচিত্রভুক্ত করে নিয়েছে। কেবল তাই নয়, ইন্দো-নেপাল সীমান্তে নেপালি পুলিশের গুলিতে ভারতীয় নাগরিক হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। শ্রীলঙ্কা, ভুটান এমনকি মালদ্বীপ পর্যন্ত ভারতের আধিপত্যবাদী আচরণের কারণে আস্থাহীন হয়ে চীনের প্রভাব বলয়ে ঢুকে গেছে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ছাড়া আর কোনো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে ভারতের স্বাভাবিক সুসম্পর্ক নেই।

আভ্যন্তরীণ বিভিন্ন ক্ষেত্রসহ আঞ্চলিক রাজনীতি ও অর্থনীতিতে নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে নরেন্দ্র মোদি সাম্প্রদায়িক সংঘাত ও প্রতিবেশীদের সাথে উত্তেজনা বৃদ্ধির কৌশল নিতে পারেন বলে কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। চীন সীমান্তে চলমান সংঘর্ষের নেপথ্যে যাই থাকুক, চীন বা কোনো প্রতিবেশীর সাথে সংঘাতে জড়ানোর ক্ষেত্রে ভারতের জন্য এটা কোনো সুবিধাজনক সময় নয়। অন্যদিকে কোভিড-১৯ মহামারী এবং বিশ্বের জন্য রাজনৈতিক-অর্থনৈতিকভাবে এক নাজুক পরিস্থিতিতে এ সময়ে চীনকেও যুদ্ধের আশঙ্কা দূর করতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে। নিকটতম প্রতিবেশীদের সাথে বৈরিতা ও অনাস্থা জিইয়ে রেখে পরাশক্তি হিসেবে এগিয়ে যাওয়া ও অবস্থান টিকিয়ে রাখা অসম্ভব। এটা ভারত ও চীনকে মনে রাখতে হবে। অন্যদিকে পাকিস্তান-ভারত, চীন-ভারত, নেপাল-ভারত সীমান্ত এবং আঞ্চলিক বাস্তবতায় বাংলাদেশের জন্য অনেক কিছুই শিক্ষণীয় রয়েছে। যদিও ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, পানিবণ্টন ও বাণিজ্যঘাটতিসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাংলাদেশের সরকার ও রাজনৈতিক শক্তিগুলোর অবস্থান শুরু থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ। পাকিস্তানের কথা বাদ দিলেও যেখানে মিয়ানমার, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ পর্যন্ত নিজেদের সার্বভৌমত্ব ও অর্থনৈতিক স্বার্থ ও নিরাপত্তার প্রশ্নে ভারতের সাথে আপসহীন ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের সরকার ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ আন্যরা ভারতমুখী নতজানু নীতি অনুসরণ করে যাচ্ছে, যা দেশের স্বাধীনচেতা মানুষ মেনে নিতে পারছে না। তবে এ কথা ঠিক যে, রাজনৈতিকভাবে ভারত নির্ভরতা সত্তে¡ও চীনের সাথে বাংলাদেশের পুরনো বন্ধুত্ব ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক অক্ষুণœ রয়েছে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে দ্রæত পরিবর্তনশীল, আশঙ্কাজনক অর্থনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশকে নিজের সামগ্রিক স্বার্থের কথা বিবেচনায় রেখে স্বাধীনভাবে সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। হীন রাজনৈতিক স্বার্থে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দেয়ার নীতি পরিহার করতে হবে।



 

Show all comments
  • jack ali ১৮ জুন, ২০২০, ৫:৪২ পিএম says : 0
    There are many Ayat in the Qurán that we are not allow to have kafir Friends: (3:28) Let not the believers Take for friends or helpers kafirin rather than believers: if any do that, in nothing will there be help from Allah: except by way of precaution, that ye may Guard yourselves from them. (4:139) Yea, to those who take for friends kafirin rather than believers: is it honour they seek among them? Nay,- all honour is with Allah. (4:144) O ye who believe! Take not for friends kafirin rather than believers: Do ye wish to offer Allah an open proof against yourselves? (5:57) O ye who believe! take not for friends and protectors those who take your religion for a mockery or sport,- whether among those who received the Scripture before you, or among the kufaru; but fear ye Allah, if ye have faith (indeed) Now we muslim do not have our own leg, we are leg less muslim as such no body respect us. We need to rule all the muslim populated country by the Law of Allah then we will overcome all Kafir/Murtrd/Munafiq/Zalem and as such our past glory will come back.
    Total Reply(0) Reply
  • ash ১৮ জুন, ২০২০, ৮:৪৫ পিএম says : 0
    IF INDIA WANTS TO KEEP GOOD RELATION WITH BANGLADESH? THEN INDIA SHOULD DESTROY FRAKKA BAD !! & RESPECT EACH OTHER, NOT LIKE DADAGIRI ! OR BANGLADESH SHOULD WAY FROM INDIA & GET CLOSE WITH CHINA
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন