পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
আমাদের চিকিৎসব্যবস্থা কতটা অপর্যাপ্ত, অনিয়ন্ত্রিত, নাজুক ও সমন্বয়হীন, দেশব্যাপী করোনা মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর সেটা বিশেষভাবে লক্ষ করা যাচ্ছে। দু’য়েকটি বাদে সব জেলাতেই করোনা মহামারী বিস্তার লাভ করেছে। প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যের সংখ্যা বাড়ছে। আগামীতে পরিস্থিতি আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই পটভূমিতে করোনা চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ ও ব্যবস্থা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, করোনা চিকিৎসায় এখনো ন্যূনতম ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়নি। করোনা চিকিৎসার জন্য রাজধানীসহ দেশের অন্যত্র অবস্থিত বেশ কিছু হাসপাতালকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। কিন্তু সেসব হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, সেবা ও চিকিৎসা তেমন একটা হচ্ছে না। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীদের বরাতে পত্রপত্রিকায় বেশ কিছু রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। হাসপাতালের পরিস্থিতি কত ভয়াবহ হতে পারে, ডাক্তার-নার্সরা কত হৃদয়হীন ও অমানবিক হতে পারে, তার প্রমাণ রয়েছে ওইসব রিপোর্টে। আবার ভিন্নচিত্রও আছে। এমন কিছু ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী আছেন, যারা ভয়ভীতি ও আক্রান্তের ঝুঁকি উপেক্ষা করে করোনা রোগীদের চিকিৎসা ও সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে কয়েকশ’ ইতোমধ্যেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, একজন মৃত্যু বরণ করেছেন। তাদের পেশাগত দায়িত্বশীলতা ও মানবিক বোধের উচ্চ প্রশংসা না করে পারা যায় না। করোনা চিকিৎসার যখন এই অবস্থা, তখন সাধারণ চিকিৎসা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়তই বিভিন্ন রোগে মানুষ আক্রান্ত হয়। চিকিৎসার জন্য তাদের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হয়। পরিতাপের বিষয়, মাসাধিককাল ধরে সাধারণ রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীরা হাসপাতালগুলোতে কোনো চিকিৎসা ও সেবাই পাচ্ছে না। সরকারি-বেসরকারি উভয় শ্রেণির হাসপাতালেরই চিত্র-চরিত্র অভিন্ন। প্রায় কোনো হাসপাতালেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রোগী দেখছে না, সাধারণ ডাক্তারও দুষ্প্রাপ্য। যাদের কাজ রোগাক্রান্ত মানুষের চিকিৎসা ও সেবা দেয়া, তারাই যদি দায়িত্ব থেকে নিজেদের এভাবে বারিত করে রাখে, তখন দুঃখ রাখার কোনো জায়গা থাকে না।
সাধারণ রোগ-ব্যাধি ছাড়াও উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও ফুসফুসের অসুখ এবং ক্যান্সারসহ নানা গুরুতর রোগ-ব্যাধিতে ভুগছে দেশের অসংখ্য মানুষ। তাদের নিয়মিত ডাক্তার দেখানো, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ও চিকিৎসা নেয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়া অতি স্বাভাবিক ঘটনা। এই ধরনের রোগীরাও হাসপাতালে কোনো চিকিৎসা পাচ্ছে না। সাধারণ সর্দি-কাশি, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ঠান্ডালাগা এমনকি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়াও এদেশে নতুন কিছু নয়। এসব রোগের চিকিৎসা ও ওষুধপত্র দেশে আছে। অথচ করোনার ভয়ে কোনো ডাক্তার-নার্সই এসব রোগে আক্রান্ত রোগীদের স্পর্শ পর্যন্ত করতে চায় না, চিকিৎসা তো আরো পরের কথা। করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেশে মৃতের সংখ্যা দেড়শ’ ছুঁই ছুঁই করছে। অথচ করোনা উপসর্গে মৃতের সংখ্যা অনেক আগেই দু’শ ছাড়িয়ে গেছে। হতে পারে, যারা করোনা উপসর্গে মারা গেছে তারা আসলে করোনাতেই মারা গেছে। আবার এমনও হতে পারে, করোনাকারণে তারা মারা যায়নি। তারা সর্দিকাশি, গলাব্যাথা, শ্বাসকষ্ট, ঠান্ডলাগা ও নিউমোনিয়ায় মারা গেছে, উপযুক্ত চিকিৎসা হলে হয়তো তাদের অনেকেই বেঁচে যেতে পারতো। যেহেতু করোনা চিকিৎসার জন্য কিছু হাসপাতাল নির্দিষ্ট করা হয়েছে, কাজেই ওইসব হাসপাতাল বাদে অন্যান্য সকল সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে করোনাবহির্ভূত রোগ-ব্যাধির চিকিৎসা স্বাভাবিকভাবেই চলতে পারে। সাধারণ রোগীদের চিকিৎসার অধিকার কোনো অজুহাতেই খর্ব করা চলতে পারে না। বাস্তব কারণে হাসপাতালগুলোতে রোগীর ভিড় কম। যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়া, এর একটা কারণ। পরিবহন বন্ধ থাকা, অ্যাম্বুলেন্স ও হাসপাতালের গাড়ি না পাওয়াও অন্য একটি কারণ হতে পারে। অথচ কোনো কোনো হাসপাতালের সামনে অ্যাম্বুলেন্স ও গাড়ির কোনো অভাব নেই। অভিযোগ রয়েছে, এসব অ্যাম্বুলেন্স ও গাড়ি চাইলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না।
দেশে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র একেবারে কম নেই। আন্তর্জাতিক মানের বেসরকারি কয়েকটি হাসপাতালও আছে। করোনা রোগীদের চিকিৎসা, সেবা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সরকারি কিছু হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি কিছু হাসপাতালও এগিয়ে আসতে পারে, এমন ধারণা খুবই স্বাভাবিক। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর তরফে এমন আশ্বাস দেয়া হয়েছিল বটে, তবে তাদের ইতিবাচক কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। করোনাকারণ যুক্ত হওয়ায় দেশের চিকিৎসা-ব্যবস্থাকে পুনর্বিন্যাস করা যেতে পারে। করোনা চিকিৎসার জন্য সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের সমন্বয়ে একটি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা যেতে পারে, যার লক্ষ্য হবে, করোনা চিকিৎসা নিশ্চিত করা। অন্যদিকে সাধারণ ও অন্যান্য চিকিৎসার জন্য সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের সমন্বয়ে গড়ে তুলতে হবে পৃথক ব্যবস্থাপনা, যার লক্ষ্য হবে করোনাবহির্ভূত রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা। করোনাক্রান্ত অন্যান্য দেশে কীভাবে করোনা ও অন্যান্য রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে বা হচ্ছে, প্রয়োজনে সেটাও বিবেচনা করে দেখা যেতে পারে। স্বীকার করতেই হবে, আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগ যথেষ্ট পারঙ্গমতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। সর্বত্রই একটা হযবরল লক্ষ করা যাচ্ছে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগ একলা চলো নীতি অনুসরণ করছে। তাই যদি না হবে, তবে গণস্বাস্থ্যের উদ্ভাবিত টেস্টিং কিট হস্তান্তর অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের কোনো কর্মকর্তার দেখা পাওয়া যাবে না কেন? এ মুহূর্তে যেখান থেকে যে সহযোগিতা আসে, তাই নিতে হবে। না নেয়া নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক, দুর্ভাগ্যজনকও। ডাক্তার-নার্স ও চিকিৎসাকর্মীদের সার্বিক নিরাপত্তাই এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করা যায়নি। এতগুলো ডাক্তার-নার্স-চিকিৎসাকর্মীর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার বিরূপ প্রভাব অন্যদের ওপর পড়া খুবই সম্ভব। করোনাযুদ্ধের একেবারে সামনের সারির যোদ্ধাদেরই যদি এতটুকু নিরাপত্তা না থাকে, তাহলে যুদ্ধে বিজয় অর্জন কীভাবে সম্ভব হবে? করোনার কারণ দেখিয়ে সাধারণ ও অন্যান্য রোগের চিকিৎসার প্রতি অবহেলা প্রদর্শনের কোনো অবকাশ নেই। যে কোনো মূল্যে সাধারণ রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।