পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনাভাইরাস মহামারীতে বিশ্বঅর্থনীতি লন্ডভন্ড দশায় উপনীত হতে শুরু করেছে। একটি বৈশ্বিক তান্ডবের শিকার হয়ে মুখ থুবড়ে পড়তে বসেছে বিশ্ব অর্থনীতি। শিল্পোন্নত দেশগুলো তাদের বিশাল অর্থনৈতিক সামর্থ্য, ট্রিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ ফান্ড ও আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলোকে ব্যবহার করে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক মহাদুর্যোগ মোকাবেলায় সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করার আভাস দিচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশের মতো প্রান্তিক অর্থনৈতিক সামর্থ্যের দেশগুলোর অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা নিয়ে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। নানা প্রতিবন্ধকতা ও সীমাবদ্ধতা সত্তে¡ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স এবং তৈরী পোশাক রফতানির উপর ভর করে প্রায় এক দশক ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। বিগত দশকের অর্থনৈতিক বিশ্বমন্দা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। প্রায় ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পদার্পণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ। এমনই সন্ধিক্ষণে কালবৈশাখী ঝড়ের তান্ডব ও হিমশীতল মৃত্যুর আতঙ্ক নিয়ে এলো করোনাভাইরাস মহামারী। প্রায় একমাস ধরে দেশের সব অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ও উৎপাদন ব্যবস্থা স্তব্ধ হয়ে আছে। প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলারের গার্মেন্ট ক্রয়াদেশ বাতিল হওয়ার মধ্য দিয়ে দেশের প্রধান রফতানিমুখী খাত এবং জাতীয় রাজস্ব মুখ থুবড়ে পড়তে বসেছে।
বিশ্বের প্রায় সব রাষ্ট্র ও অঞ্চল করোনাভাইরাস মহামারীর শিকার। আইএমএফ বলেছে, বিশ্ব অর্থনীতি মন্দার মধ্যে ঢুকে পড়েছে। জীবন বাঁচাতে ঘরে বসে থাকলে সংকট আরো বাড়বে। বাংলাদেশ বিশ্ব অর্থনীতির এই নাজুক পরিস্থিতির বাইরে নয়। আগামীতে বিশ্ব অর্থনীতিতে যা কিছুই ঘটুক, বাংলাদেশ তার প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারবে না। বাংলাদেশের তৈরী পোশাক খাতের প্রধান বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজার খুব সহসা আগের অবস্থানে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। একইভাবে আমাদের প্রধান বৈদেশিক কর্মসংস্থানের বাজার সউদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনৈতিক বাস্তবতা আগে থেকেই সংকটাপন্ন। সেই সাথে ইউরোপ আমেরিকা থেকেও হাজার হাজার বাংলাদেশি নাগরিক প্রতিমাসে শত শত মিলিয়ন ডলার পাঠাচ্ছে। করোনামহামারীতে সেসব দেশে কোটি কোটি মানুষের কর্মহীন হয়ে পড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেই সাথে বিভিন্ন দেশের অভিবাসী শ্রমিকদের ফেরত পাঠানোর কথাও শোনা যাচ্ছে। অর্থাৎ আমাদের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এখন চরম অনিশ্চয়তার মুখোমুখী। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ-এর তরফ থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে যেসব প্রিডিকশন দেওয়া হয়েছে তা খুবই হতাশাজনক। বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩-২ শতাংশে নেমে যাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এর মানে হচ্ছে, দেশের ক্রমবর্ধমান বেকার জনসংখ্যার সাথে করোনা পরবর্তী বাস্তবতায় নতুন করে লাখ লাখ কর্মহীন মানুষ যোগ হবে। প্রায় একমাস ধরে লকডাউন করোনাভাইরাসের প্রাণঘাতী সংক্রমণের ভীতি অগ্রাহ্য করেই সারাদেশে লাখ লাখ মানুষকে খাদ্য সহায়তার জন্য ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তায় নেমে আসতে দেখা যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাবাহিনীর কড়াকড়ি তাদেরকে ঘরে আবদ্ধ রাখতে পারছে না। করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দা, বেকারত্ব ও দরিদ্র মানুষের ন্যূনতম খাদ্য নিরপত্তা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা না গেলে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি দেশে সামাজিক বিশৃঙ্খলা নেমে আসার আশঙ্কা রয়েছে।
এমনিতেই গত কয়েক বছর ধরে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক ধারা অব্যাহত ছিল। শুধুমাত্র প্রবাসী কর্মীদের রেমিটেন্স এবং গার্মেন্ট রফতানি থেকে প্রাপ্ত আয়ে দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় থাকলেও নতুন কর্মসংস্থানের সংকট এবং এবং ব্যাংকসহ আর্থিক খাতসমূহের ভগ্নদশায় অর্থনীতিবিদরা বরাবরই সরব ছিলেন। চলমান করোনা সংকট কতদিন প্রলম্বিত হয়, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তবে করোনা পরবর্তী সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সংকট মোকবেলায় এখনই সমন্বিত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষত আগামীতে অনানুষ্ঠানিক খাতের কোটি কোটি মানুষের কর্মসংস্থান ফিরিয়ে দিতে সম্ভাব্য সব রকম সহায়তার আঞ্জাম দিতে হবে। ইতোমধ্যে দুই দফায় প্রায় লক্ষকোটি টাকার উদ্ধার তহবিলের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। সেখানে লকডাউনে থাকা সাধারণ মানুষের জন্য খাদ্য ও অর্থসহায়তার খাত খুব সন্তোষজনক নয়। যতটুকু বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তাতেও প্রশাসন ও সরকারি দলের লোকদের বিশৃঙ্খলা, অস্বচ্ছতা ও লুটপাটের শিকার হওয়ার চিত্র পাওয়া যাচ্ছে। সরকারি সহায়তার খাত এমন লুটপাটের ধারাবাহিক প্রবণতা থেকে বের করতে না পারলে আগামীতে বড় ধরনের সামাজিক অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা রয়েছে। এমন বৈশ্বিক ও জাতীয় দুর্যোগের সময়কে জাতীয় ঐক্যের মধ্য দিয়ে মোকাবেলার উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। দলীয় স্বার্থ ও মতভেদ ভুলে সব রাজনৈতিক দলকে একমঞ্চে দাঁড়াতে হবে। বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর বিশেষ প্যাকেজ থেকে বাংলাদেশের উদ্ধার তহবিলে প্রাপ্য আদায় করার পাশাপাশি জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলায় দেশের অর্থনীতিবিদদের মতামতের ভিত্তিতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এই মুহূর্তে দেশের কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর বিশেষ নজর দিতে হবে। করোনাভাইরাসের লকডাউন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসনের সাথে টেলিকনফারেন্স করেছেন। দেশে বিদেশে থাকা অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের নিয়েও অনুরূপ টেলিকনফারেন্স করা যেতে পারে। তাদের সুচিন্তিত মতামতের ভিত্তিতে অর্থনৈতিক বেইল-আউট ও প্রণোদনার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।