বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
হজ এমন একটি ফরজ ইবাদত, যা বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর ধর্মীয় জীবনে, সামাজিক জীবনে এবং অর্থনৈতিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একমাত্র ইসলাম ছাড়া অন্য কোথাও এতসব বিশেষত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না।
যিলহজ্জের আট তারিখ ইহরাম বেঁধে হজ আদায়কারীগণ মিনায় চলে যান। সেখানে রাত্রিযাপন করেন। তারপর নয়ই যিলহজ্জ যোহর হতে মাগরিব পর্যন্ত সময় আরাফাত ময়দানে অবস্থান করেন। এই আরাফাতই হলো হজ পাওয়ার মোক্ষম উপায়। যে ব্যক্তি আরাফাতে অবস্থান করার নির্ধারিত সময়ে সেখানে উপস্থিত থাকতে পারেনি, তার হজ হবে না। এ জন্যই পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘আল হাজ্জুল আরাফাতু’ অর্থাৎ আরাফাতে অবস্থান করার সময়ে যে তথায় উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য অর্জন করল সে প্রকৃতই হজ পেল।
নয়ই যিলহজ্জ তারিখে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতে অবস্থান গ্রহণ করার পর হজ আদায়কারীগণকে মুযদালিফার মাশয়ারুল হারাম মসজিদের আশপাশে রাত্রিযাপন করতে হয়। এতদপ্রসঙ্গে আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : তোমাদের ওপর কোনো পাপ নেই যে, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ অনুসন্ধান করবে। সুতরাং তোমরা যখন আরাফাত হতে বের হয়ে আসবে, তখন মাশয়ারে হারামের নিকট আল্লাহকে স্মরণ করো এবং তাকে সেভাবে স্মরণ করো যেভাবে তিনি তোমাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। যদিও তোমরা এর পূর্বে পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে। (সূরা বাকারাহ : ১৯৮)।
মোযদালেফায় রাত্রিযাপনের পর হজ আদায়কারীগণ দশই যিলহজ্জ ফযর আদায়ের পর মোযদালেফা হতে মিনায় প্রত্যাবর্তন করেন। এই দিনে সেখানে চারটি কাজ সমাধা করতে হয়। প্রথমত, শয়তানকে কঙ্কর মারা। দ্বিতীয়ত, কুরবানি আদায় করা, তৃতীয়ত, মাথা মুণ্ডন করা, তাওয়াফে যিয়ারত আদায় করা। এই চারটি কাজ নিষ্পন্ন করার পর হজ আদায়কারীগণ মিনায় চলে আসেন এবং সেখানে রাত্রিযাপন করেন।
তারপর এগারোই যিলহজ্জ মিনার তিনটি জামরায় (শয়তানকে) কঙ্কর নিক্ষেপ করেন। এবং বারই যিলহজ্জ তারিখেও তিনটি জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ করে মক্কায় চলে আসেন। এভাবে তারা হজের আমলসমূহ পরিপূর্ণভাবে আদায় করেন।
মোটকথা, যার ওপর হজ আদায় করা ফরয হয়ে যায় তার উচিত হজ তাড়াতাড়ি আদায় করা। এতদপ্রসঙ্গে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : হজের ইচ্ছা পোষণকারী যেন তাড়াতাড়ি তা সম্পাদন করে ফেলে। কেননা, সে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে, তার উট হারিয়ে যেতে পারে, কিংবা তার ইচ্ছা বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে। (মোসনাদে আহমাদ : ৫/৩৩৪০)।
বিশেষত, কুরবানির মাহাত্ম্য ও ফজিলত সম্পর্কে আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : আমি প্রত্যেক জাতির জন্য কুরবানির নিয়ম করে দিয়েছি, যাতে তারা আমার নাম স্মরণ করতে পারে, যে সমস্ত জন্তু তিনি রিজিক হিসেবে দিয়েছেন তার ওপর। তোমাদের উপাস্য তো এক উপাস্য, অতএব তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণ করো, আর অনুগতদের সুসংবাদ দাও। (সূরা হজ্জ : ৩৪)। অপর এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে : আল্লাহর কাছে পৌঁছে না কুরবানির পশুর গোশ্ত ও রক্ত, বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া। এভাবেই তিনি সেগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর তাকবীর পাঠ করতে পার, যেভাবে তিনি তোমাদের হেদায়েত দান করেছেন। সুতরাং তুমি সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ দান করো। (সূরা হজ্জ : ৩৭)।
এতদপ্রসঙ্গে উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : কুরবানির দিনে মানব সন্তানের কোনো নেক আমলই আল্লাহর নিকট তত প্রিয় নয়, যত প্রিয় রক্ত প্রবাহিত করা (অর্থাৎ কুরবানি করা)। কুরবানির পশুগুলো তাদের শিং, পশম ও ক্ষুরসহ কিয়ামতের দিন (কুরবানিদাতার পাল্লায়) এনে দেয়া হবে। কুরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহর নিকট সম্মানীত স্থানে পৌঁছে যায়। সুতরাং তোমরা সানন্দচিত্তে কুরবানি করবে। (জামে তিরমিজী : ৪/১৪৯৩)।
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার নিরিখে সুস্পষ্টভাবে বলা যায় যে, পবিত্র হজ বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর ধর্মীয় জীবনের চূড়ান্তভাবে সফলতা এনে দেয় এবং বিশ্ব মুসলিম সমাজের ঐক্যবন্ধনকে দৃঢ় হতে দৃঢ়তর করে তোলে এবং তাদের অর্থনৈতিক জীবনের দুয়ারকে সম্প্রসারিত করে দেয়, যার নজির খুঁজে পাওয়া একান্তই দুষ্কর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।