পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
চীনের ওহান থেকে শুরু হওয়া নোভেল করোনাভাইরাস এখন বিশ্বের শতাধিক রাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্ত লক্ষাধিক মানুষের মধ্যে চার হাজারের বেশি মৃত্যুর ঘটনা এখন আতঙ্কজনক পর্যায়ে উন্নীত হতে চলেছে। জানুয়ারীতে করোনা সংক্রমন শুরুর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই চীনের অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব দেখা দেয়। বিশ্বের অন্যতম বড় অর্থনীতি এবং শিল্পখাতের মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামালের অন্যতম যোগানদাতা হিসেবে চীনে শিল্প কারখানা ও উৎপাদন ব্যবস্থায় যে কোনো নেতিবাচক প্রভাব এর সাথে সংশ্লিষ্ট সব দেশের উপরই কমবেশি পড়বে, এটাই স্বাভাবিক। তবে করোনা ভাইরাস ইতিমধ্যে সব মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ায় এর প্রভাব থেকে এখন আর কেউ মুক্ত থাকার দাবি করতে পারছে না। বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং শিল্পখাতের উৎপাদন ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে চীন থেকে আমদানির উপর নির্ভরশীল। এমনকি চীনা শ্রমিক ও ইঞ্জিনিয়ারদের অনুপস্থিতি এবং লজিস্টিক সাপোর্ট বন্ধ থাকায় পদ্মাসেতুসহ দেশে চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর বেশ কয়েকটি প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়ন ও এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এহেন বাস্তবতায় ইতিমধ্যে বাংলাদেশে প্রথমবারের মত ৩জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া যাওয়ার পর দেশব্যাপী করোনাআতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবেশি দেশ ভারতসহ করোনাক্রান্ত বেশ কয়েকটি দেশের বিভিন্ন শহরে স্কুল-কলেজ, গণজমায়েত, জাতীয়-আন্তর্জাতিক ইভেন্ট স্থগিত হয়ে গেছে। আমাদের দেশেও বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকীর পূর্ব নির্ধারিত মূল অনুষ্ঠান স্থগিত করে অন্যান্য কর্মসূচী সীমিত আকারে করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
দেশে শনাক্ত হওয়া ৩ করোনাভাইরাস রোগীর ২ জনই সেরে উঠেছেন। অবশিষ্ট একজনও আশঙ্কামুক্ত। দেশে নতুন কোনো করোনা সংক্রমনের ঘটনাও গত কয়েকদিনে না ঘটা স্বস্তিদায়ক হলেও করোনার অর্থনৈতিক প্রভাব থেকে বাঁচতে জরুরী উদ্যোগ প্রয়োজন। করোনাভাইরাসের সামাজিক-অর্থনৈতিক ইম্প্যাক্ট রোধে সম্মিলিত জাতীয় উদ্যোগ প্রয়োজন। প্রায় দুই মাস ধরে করোনাভাইরাস বিশ্বঅর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেয়ার প্রেক্ষাপটে ইতিমধ্যে চীন-আমেরিকা-ইউরোপের দেশগুলো করোনাভাইরাস ও তার অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবেলায় শত শত কোটি ডলারের বাজেট ঘোষণা করেছে। চীনের উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল অর্থনীতির দেশ হওয়ায় করোনা ভাইরাসের প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশের যথাযথ প্রস্তুতি ও পদক্ষেপ নেয়ার বিকল্প নেই। করোনাভাইরাস সংক্রমন রোধে প্রয়োজনীয় জনসচেতনতা এবং তা মাহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়লে কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে, তার সঠিক পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির পাশাপাশি সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায় কার্যকর সিদ্ধান্ত এখনই চূড়ান্ত করা প্রয়োজন। বিশেষত: গার্মেন্টে ও ওষুধ শিল্প বড় রকমের সংকটে পড়তে পারে। এ সংকট মোচনে যথাযথ উদ্যোগ নেয়া এখন সময়ের দাবিতে পরিনত হয়েছে। এখনো করোনা ভাইরাসের সরাসরি প্রাদুর্ভাব থেকে মুক্ত থাকলেও করোনা ভাইরাসের প্রভাবে একটি সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সঙ্কট আমাদের ঘাড়ের উপর নি:শ্বাস ফেলছে। নানা রোগে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ মারা যায়। করোনাভাইরাসে ১০-২০জন বা তার বেশি সংখ্যক মারা গেলেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে অর্থনীতিতে ধস নামলে দেশের কোটি কোটি মানুষের জীবনে চরম বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
করোনাভাইরাস মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনায় কিছু ঘাটতি থাকলেও আমাদের জনগণের সচেতনতা এবং ডাক্তার, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য বিভাগের প্রস্তুতি খুব অকিঞ্চিৎকর নয়। ইতিমধ্যে একসঙ্গে ১০ হাজার রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশন ব্যবস্থা সম্পর্কে সরকারি ব্যবস্থার কথা জানা গেছে। তবে এরই মধ্যে সম্ভাব্য করোনা রোগিদের জন্য জোড়াতালি মার্কা প্রস্তুতির কথাও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। আমরা দেখেছি, করোনা মোকাবেলায় চীন সরকার ওহানে মাত্র ১০ দিনের মধ্যে বিশালাকার নতুন হাসপাতাল নির্মান করার পাশাপাশি করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে সফল হয়েছে। ইতিমধ্যে চীনের তরফ থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তবে রফতানিমুখী শিল্পে সম্ভাব্য সংকটসহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করাই আমাদের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ও বিপদ হয়ে দেখা দিতে পারে। করোনাভাইরাস এখনো আমাদের জন্য বিপদ হয়ে না উঠলেও এর অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক প্রভাব ইতিমধ্যেই আমাদের অর্থনীতিতে পড়তে শুরু করেছে। বিভিন্ন পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং পুঁজিবাজারে দরপতনের কথা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়। আমরা আশা করছি, আগামি দিনগুলোতে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে করোনাভাইরাসের ঝঁকিও হ্রাস পাবে। আর যদি এর বিস্তার এবং প্রভাব আরো দীর্ঘায়িত হয়, সে ধরনের বাস্তবতা মোকাবেলায় এখনি পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও বাস্তবায়ন শুরু করা প্রয়োজন। রফতানি ব্যহত হওয়া, রেমিটেন্স ও রাজস্ব আয় কমে যাওয়ার সম্ভাব্য আশঙ্কায় সরকারের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে এক সময়ের সফল পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে আমাদের অর্থমন্ত্রী কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ভুল করবেন না, এ বিশ্বাস আমাদের আছে। সরকার করোনাভাইরাসের প্রভাবকে যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেছে। বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকীর প্রোগ্রাম কাটছাঁট করার মধ্য দিয়ে তা ইতিমধ্যে প্রমানিত। তবে করোনার অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবেলা এবং সরকারের ব্যয় নির্বাহের জন্য সম্ভাব্য প্রস্তুতি হিসেবে ব্যয় সঙ্কোচন নীতি গ্রহণ করা আবশ্যক। করোনাভাইরাস সংক্রমনের ঝুঁকি, সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সংকট এবং ব্যাপক হারে আক্রান্ত হলে উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমন্বিত পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি এখনি নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।