পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়। নির্যাতন-নিষ্পেষণ বন্ধসহ নারীদের সব অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে ১৯১১ সাল থেকে এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। তবুও কি নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? নির্যাতন দূর হয়েছে? হয়নি। কিছু অগ্রগতি হয়েছে, এই যা। এ ব্যাপারে দেশ ও বিদেশের চিত্র তুলে ধরা যেতে পারে। গ্লােবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০২০ অনুযায়ী, বিশ্বের ১৫৩টি দেশে জেন্ডার গ্যাপ পূরণ হয়েছে ৬৯%। এ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৫০তম (নেপাল ১০১তম, শ্রীলংকা ১০২তম, ভারত ১১২তম, ভুটান ১৩১তম ও পাকিস্তান ১৫১তম, সিঙ্গাপুর ৫৪তম, চীন ১০৬তম, জাপান ১২১তম)। সূচক মতে, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অংশগ্রহণে ১৪১তম, শিক্ষাগত অর্জনে ১২০তম, স্বাস্থ্য ও বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে ১১৯তম, রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে ৭তম, নারী এমপির ক্ষেত্রে ৮৬তম, নারী মন্ত্রীর ক্ষেত্রে ১২৪তম। দ্য গ্লােবাল ইনডেক্স ডাটাবেজ ২০১৭ প্রতিবেদন মতে, বিশ্বের ব্যাংকিং সেবা বঞ্চিত জনগোষ্ঠির ৬৭% নারী। হিসাবধারী নারীদের মধ্যে ৬৭% ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে লেনদেন করেন। উন্নয়নশীল দেশে অকার্যকর ব্যাংক হিসাব রক্ষার ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের চেয়ে ৫% এগিয়ে রয়েছে। স্মরণীয় যে, গত ৯০ দশকের প্রারম্ভে এ দেশে নারীদের শিক্ষার ক্ষেত্রে কিছু প্রণোদনা দেওয়ার পর থেকে নারীদের শিক্ষা ও ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমানে সমাজের প্রায় সব ক্ষেত্রেই নারীর অংশগ্রহণ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষার প্রাথমিক স্তরে মেয়েদের উপস্থিতি এখন প্রায় শতভাগ। পোশাক শিল্পের কৃতিত্বের সিংহভাগই নারীর। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদেরও বড়ো অংশই নারী। সরকারি-বেসরকারি ও আধাসরকারি অফিস-আদালত, কলকারখানা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল-ক্লিনিক এবং বড়ো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মতো আনুষ্ঠানিক কর্মস্থলে এবং সরকার পরিচালনায়, রাজনীতিতে, প্রশাসনে, সামরিক বাহিনীতে, আইনশৃঙ্খলা বিভাগে নারীর অবস্থান বেড়েছে। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতেও নারীর অংশগ্রহণ অনেক বেড়েছে। এসবের সকল ক্ষেত্রেই বেশিরভাগ নারী কৃতিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করছে। এমনকি জাতিসংঘের শান্তি মিশনেও। কিন্তু অর্থনৈতিক ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতার ক্ষেত্রে এ দেশের নারীরা অনেক পিছিয়ে আছে। রাজনীতিতেও তাই। বাংলাদেশের বর্তমান সংসদে সংরক্ষিত আসনসহ ৭২ জন এমপি রয়েছেন। মন্ত্রীও আছেন। স্থানীয় সরকারের অধীনস্থ পরিষদে সংরক্ষিত আসন ছাড়া নারীর প্রতিনিধিত্ব সামান্য। ২০২০ সাল থেকে রাজনৈতিক দলে ৩৩% পদ নারীর জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছে ইসি। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ, বৃহৎ ২/৩টি দলে কিয়দংশ হতে পারে। আর বাকী দলগুলো এর ধারে কাছেও যেতে পারবে না। সে ইচ্ছাও নেই তাদের। সামাজিক সংগঠনগুলোতেও তাই। দেশে মজুরীর ক্ষেত্রেও নারীরা চরম বৈষম্যের শিকার। চাকরির নিরাপত্তাও কম। বিশেষ করে বেসরকারি খাতে। আবার নিপীড়নের মাত্রা বেশি নারীদের। গত ৫ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন রিলেশন্স কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে রানা প্লাজা ধসের সাত বছর পরও গার্মেন্ট কারখানাগুলোতে শ্রমিক নিপীড়ন বেড়েছে। বিশেষ করে নারী শ্রমিকরা নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন।’ এর আগে এক গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশের গার্মেন্টের বেশিরভাগ শ্রমিক নিয়োগ পত্র পায় না, যার ৮০% নারী। অপরদিকে, দেশে লাখ লাখ গৃহকর্মী রয়েছে। তারা মজুরীর দিকে দিয়ে চরমভাবে বঞ্চিত! এছাড়া, চরম অবহেলা ও নির্যাতন তো রয়েছেই।
অবশ্য এতকিছুর পরও দেশে নারী শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে, যা মোট শ্রমশক্তির ৩০% নারী। এটা স্বাধীনতার পর থেকে ক্রমান্বয়েই বাড়ছে। যেমন: ১৯৭৪ সালে মোট শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ছিল মাত্র ৪%, ২০১০ সালে ২৩. ৯%, ২০১৭ সালে ৩৬.৩%। গ্লােবাল জেন্ডার গ্যাপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৬ সালে বাংলাদেশে পুরুষের তুলনায় নারীর অগ্রগতি ছিল ৬২ শতাংশের বেশি, যা ২০১৮ সালে দাঁড়ায় ৭১ শতাংশে। অন্যদিকে, শ্রমশক্তি জরিপ ২০১৬-১৭ অনুযায়ী, কাজে নিয়োজিত নারীর হার কৃষি ও এ-সংশ্লিষ্ট কাজে ৫৯.৭% , শিল্প খাতে ২৩.৫%, তৈরি পোশাক খাতে ৬০-৬৫%। এছাড়া শ্রমবাজারের ৯১.৮% নারীই অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত। আর গৃহকতৃতে নিয়োজিত ৩৯.২%। সাংবাদিকতায় ১৬%। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন গত ৯ মার্চ বলেছেন, ‘বাংলাদেশ বর্তমান সময়ে অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিকে যাচ্ছে। বাংলাদেশের এই অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান মেয়েদের।’ আর স্পিকার বলেছেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ বিশ্বে অনন্য, যেখানে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, সংসদ উপনেতা এবং বিরোধীদলীয় নেতা প্রত্যেকেই নারী।’ কিন্তু এতকিছুর পরও দেশে নারীর ক্ষমতায়ন যথেষ্ট নয়। তাই গত ৮ মার্চ মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রী বলেছেন, ‘দেশ হিসাবে উন্নয়নের পথে থাকতে হলে বাংলাদেশের নারীদের পেছনে সরিয়ে রাখা যাবে না। এটা একেবারেই অসম্ভব। কর্মক্ষেত্রে আমাদের আরও বেশি করে নারীদের আনতে হবে।’ হ্যাঁ, দেশে প্রায় সব ক্ষেত্রেই অসংখ্য নারীর কাজ করার ব্যাপক সুযোগ আছে। এমনকি ঘরে বসেও নারীদের কুটির শিল্প ও আইটি খাতে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
জাতিসংঘের ‘বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং সম্ভাবনা ২০২০’ মতে, ‘পরিশ্রম করে রোজগার করার ক্ষেত্রে উচ্চ-আয়ের দেশের নারীদের পিছনে ফেলেছেন বাংলাদেশের নারীরা। বিশ্বের নির্ধারিত ৬৪ দেশের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশেই প্রতি ঘণ্টায় পুরুষদের চেয়ে নারীরা বেশি আয় (৪.৭%) করে থাকে।’ কিন্তু এই রিপোর্টের সাথে দেশের মজুরীর বাস্তবতা মিল পাওয়া যায় না। যেমন: হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের ১৭টি চা বাগানের নারী চা শ্রমিকরা দিনে পারিশ্রমিক হিসেবে পায় ১০২ টাকা। এ জন্য তাদের কাজ করতে হয় মোট ৮ ঘণ্টা। আর পুরুষ শ্রমিকরা কাজ করে ৩-৪ ঘণ্টা। অথচ উভয়ের ক্ষেত্রে পারিশ্রমিক সমান। দ্বিতীয়ত সেই টাকাও নারীরা নিজের হাতে পায় না। বাগান কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নারী শ্রমিকদের পক্ষে তাদের স্বামী বা পরিবারের পুরুষ প্রতিনিধিই টাকা উত্তোলন করে। উপরন্তু পুরুষ শ্রমিকরা পদোন্নতি পেয়ে সর্দার হলেও নারী শ্রমিকদের সাধারণত পদোন্নতি দেয়া হয় না। এছাড়া মাতৃত্বকালীন সময়েও বঞ্চনার স্বীকার হন নারী শ্রমিকরা বলে গত ৭ মার্চ এক দৈনিকে প্রকাশ। এই অবস্থা দেশের সব চা বাগান, কৃষি, নির্মাণসহ সব অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতেই বিদ্যমান। উপরন্তু দেশের বেসরকারি খাতের নারী শ্রমিকদের বেশিরভাগই মাতৃত্বকালীন ছুটি পায় না। অথচ সারাবিশ্বেই এটা চালু আছে। উপরন্তু বহু দেশে নারীর ন্যায় পুরুষরাও পিতৃত্বকালীন ছুটি পায়। অপরদিকে, সরকারি বিধান থাকা সত্তে¡ও দেশের বেশিরভাগ কর্মস্থলে চাইল্ড কেয়ার হোম নেই। যা শিশু ও মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য চরম ক্ষতিকর। এ দেশের নারীদের বেশিরভাগ পৈত্রিক সম্পদ থেকেও বঞ্চিত। অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত পরিচালিত এক গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘দেশের ভূমিতে গ্রামীণ নারীর মালিকানা মাত্র ২.৪%।’ অন্যদিক, এ দেশের গৃহকতৃরা দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে সংসার পরিচালনা, সন্তান লালন-পালন ও শিক্ষার ব্যবস্থা করার পরও তারা কর্মের স্বীকৃতি পায় না। এমনকি তাদের এই উৎপাদনশীলতা জিডিপিতেও সংশ্লিষ্ট নয়। এ ব্যাপারে কতিপয় মন্ত্রী বারংবার বলার পরও তা হয়নি। অথচ এটা করা হলে দেশের জিডিপির পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পাবে। সারাবিশ্বেই এটা করা হয়েছে। যা’হোক, সব মিলে দেশের জিডিপিতে নারীর অবদান প্রায় ৪০%। সিপিডির গবেষণা রিপোর্ট মতে, নারীদের হিসাববহির্ভূত কাজ জিডিপির ৮৭ শতাংশের সমান।
অবশ্য নারীদের প্রতি ব্যাপক বৈষম্য সারা বিশ্বেই। গত ৫ মার্চ প্রকাশিত জাতিসংঘের ‘জেন্ডার সোশ্যাল নর্ম’ সূচক মতে, ‘নারীর প্রতি বিশ্বের ৯০% নারী-পুরুষেরই নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে। বিশ্বের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডেও নারী-পুরুষ বৈষম্য বিদ্যমান। রাজনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রভৃতি খাতে নারীর অংশগ্রহণ এখনো সুপ্রতিষ্ঠিত নয়। বিশ্বে সংসদীয় আসনে নারীদের অবস্থান মাত্র ২৪% এবং ১৯৩টি দেশের মধ্যে মাত্র ১০% সরকারপ্রধান নারী। শ্রমবাজারে নারীদের পারিশ্রমিক পুরুষদের চেয়ে অনেক কম। এ ক্ষেত্রে শীর্ষপদে নারীদের অবস্থান নেই বললেই চলে। প্রতিষ্ঠানের সিইওদের মধ্যে মাত্র ৬% নারী এবং পুরুষদের চেয়ে নারীর কর্মঘণ্টা বেশি।’ এ দেশেও নারীর নিরাপত্তার প্রচন্ড অভাব রয়েছে। তাই হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, নির্যাতন ইত্যাদি নিত্যদিনের ঘটনা এবং তা ব্যাপক হারে। এ ব্যাপারে গত ৭ মার্চ এক দৈনিকে প্রকাশ, ‘সারাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এক বছরেই ধর্ষণ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। প্রতিদিন গড়ে ১৪ জনের বেশি নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আর ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৩ জনের বেশি নারী। গত ১০ বছরে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে অর্ধ লক্ষাধিক। উচ্চবিত্ত পরিবার থেকে নিম্নবিত্ত পরিবারের কারও কোন স্থানে নিরাপত্তা নেই। অথচ দৃষ্টান্তমূলক বিচার হয়েছে এমন নজির অনুপস্থিত।’ এমনকি এক রিটের প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ১৪ মে উচ্চ আদালত কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ১১টি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেন। তাতে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে পৃথক আইন করার কথা বলা হয়। কিন্তু সেই আইন করা হয়নি এখনও! গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত এক গবেষণা রিপোর্ট মতে, ইন্টারনেটের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী নারীদের ৬৮% সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছে। অবশ্য নারী নির্যাতনের সব ঘটনাই মিডিয়ায় আসে না। তাই প্রকৃত ঘটনা আরও বেশি। অথচ কিছুদিন আগেও দেশে ইভটিজিং ও অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা ছিল ব্যাপক। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তির বিধান করে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ায় এসব অপরাধ অনেক হ্রাস পেয়েছে। নারী হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, নির্যাতন ইত্যাদির ক্ষেত্রে তাই কঠোর শাস্তির বিধান করে দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করা হলে এসব অপরাধ অনেক হ্রাস পাবে, তা নিশ্চিত। ওদিকে, বাল্য বিবাহের হার প্রায় ৬০%, যা বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক। দেশে তালাকের সংখ্যাও ব্যাপক। মূলত যৌতুক দিতে না পারার কারণেই এটা বেশি হয়। এছাড়া নানা নির্যাতনও হয়। অথচ এই প্রথাটি দেশে নিষিদ্ধ। কিন্তু তবুও এটা বহাল আছে। সংশ্লিষ্ট আইন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ায় এই অবস্থা চলছে এবং তা মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের মধ্যে বেশি। আবার এই তালাক উচ্চবিত্ত এবং উচ্চ শিক্ষিত ও উপার্জনকারীদের মধ্যেও অনেক এবং তাতে নারীরা অগ্রগামী বলে কিছুদিন আগে এক জরিপ রিপোর্টে প্রকাশ। এদের মধ্যে প্রগতিশীল বলে খ্যাতরাই বেশি। এরা নারী অধিকারের নামে সংসারের ঘাত-প্রতিঘাত ও যৌথ পরিবার প্রথার বিরোধী। তারা আত্মকেন্দ্রিক। তাই বিবাহের পরপরই যৌথ পরিবার থেকে বেড়িয়ে পৃথক সংসার গড়ে তোলে। ফলে অনেকের বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে চরম কষ্টের মধ্যে থাকতে হয়। এই অবস্থা দরিদ্রদের মধ্যেও আছে। তাদের মধ্যে অনেকে ভিক্ষা করে চলে। আবার অনেক আলটা মডার্ন নারীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের প্রতিই আকর্ষণ বেশি, যাকে বলে লিভ টুগেদার। এদের মানসিকতা আমার শরীর, আমার সিদ্ধান্ত-যা ধর্মীয় নীতি ও সামাজিক রীতির পরিপন্থী। আবার অনেক নারী নানা অপরাধের সাথে জড়িত। অন্যদিকে নারী কর্তৃক নারী নির্যাতনের হারও অনেক এ দেশে। ক্ষেত্রে বিশেষে পুরুষের চেয়ে বেশি। বৈষম্যের ক্ষেত্রেও তাই। বেশিরভাগ মা মেয়ে সন্তানের চেয়ে ছেলে সন্তানের দিকে গুরুত্ব দেয় বেশি। তাতেই অংকুরিত হয় বৈষমের বীজ। অপরদিক, বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীকে পণ্য হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এ ক্ষেত্রেও অনেক নারী অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
যা’হোক, প্রতিটি দেশেই নারী ও পুরুষের সংখ্যা প্রায় সমান। তাই যে দেশে নারীর যত ক্ষমতায়ন হয়েছে, সে দেশ তত উন্নত হয়েছে। এ দেশেও মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। দ্বিতীয়ত, এ দেশের নারীদের মহান ভাষা আন্দোলনে, ৬৯ এর গণঅভ্যুন্থানে, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ও উন্নতিতে বিশেষ অবদান রয়েছে। উপরন্তু দেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমঅধিকারের কথা বলা হয়েছে। এসডিজিরও ৫ম লক্ষ্যে আছে নারী-পুরুষের সমতা। সর্বোপরি যে পরিবারে গৃহকতৃ শিক্ষিত হয়, সে পরিবারের সন্তানরা শিক্ষিত হয়। আর যে পরিবারের নারীরা অর্থ উপার্জন করে, সে পরিবার আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়। তাই দেশের সার্বিক ও টেকসই উন্নতি এবং শান্তির জন্য নারীর প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও ক্ষমতায়ন আবশ্যক। এছাড়া, প্রতিটি নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত, বাল্য বিবাহ বন্ধ ও বৈষম্য দূর করা দরকার। অপরদিকে, নারীর সামাজিক নিরাপত্তা, গৃহশ্রমিকের মানবাধিকার কার্যকর, সুরক্ষা ও উন্নয়ন, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি ও সহিংসতামুক্ত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে আইএলও কনভেনশন ১০২, ১৮৯ ও ১৯০-এ সরকারের অনুস্বাক্ষর করা জরুরি বলে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন দাবি জানিয়েছে গত ৮ মার্চ। যা বিবেচ্য বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। এসব করার দায়িত্ব প্রধানত সরকারের। পাশাপাশি নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দেশে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার। এ ক্ষেত্রে পুরুষের অগ্রণী ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন। কারণ, নারী-পুরুষ একে অপরের সম্পূরক। অপরদিকে, নিজের যোগ্যতা, আগ্রহ ও নিষ্ঠা থাকলে নারীর অগ্রগতিকে প্রতিরোধ করার সাধ্য নেই পুরুষের। নারীরা আপন যোগ্যতা ও নিষ্ঠায় তার যোগ্যতম স্থান অর্জন করেই। তাই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের জিগির তুলে নারীদের বসে থাকলে চলবে না। নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করতে হবে এবং তাতে সফল হতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।