২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
অক্টোবর মাসটি স্তন ক্যান্সার সচেতনতার মাস হিসাবে পালন করা হয়। নারীদের ক্যান্সারের ফলে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হলো স্তন ক্যান্সার। স্তন ক্যান্সারের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ার পরে ক্যান্সার শনাক্ত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, স্তন ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণের ভিত্তি হলো ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ। নারীদের মধ্যে এই রোগটিকে এড়িয়ে যাওয়ার লজ্জা প্রাধান্য পেলেও পুরুষদের অনেকেই নিজেদের স্তন ক্যানসার হয়েছে সেটা বিশ্বাসই করতে নারাজ। এখনও পর্যন্ত এই রোগে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। কারণ প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার রোগ সহজে ধরা পড়ে না, ফলে শেষ পর্যায়ে গিয়ে ভালো কোন চিকিৎসা দেয়াও সম্ভব হয় না। বাস্তবিক অর্থে এখনও পর্যন্ত ক্যান্সারে চিকিৎসায় পুরোপুরি কার্যকর একক কোনও চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি। ক্যান্সার সারানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা। তবে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পরলে এই রোগ সারানোর সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। প্রত্যেক ক্যান্সারই আলাদা আলাদা এবং এদের চিকিৎসা পদ্ধতিও আলাদা।
গত দুই যুগ ধরে এ রোগে যত রোগী মৃতুবরন করেছে, কোন যুদ্ধেও এত লোক জীবনাহুতি দেয়নি। মানব দেহে যত রকম জটিল ও কঠিন রোগ আছে ক্যান্সার তার অন্যতম। মানুষের শরীরটা একটি চলমান ফ্যাক্টরি। মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষকে তৈরি করে শরীরের ভেতর ও বাহিরে যে সমস্ত অঙ্গ-প্রতঙ্গ দিয়েছেন তাদের প্রত্যেকটির নিদিষ্ট কাজ নির্ধারণ করে রেখেছেন। আমাদের নিত্যদিনের চলাফেরা ও খাওয়া-দাওয়ার ইত্যাদির নির্দিষ্ট জীবন আচরণে অনিয়ম হলেই আমারা অসুস্থ হয়ে পড়ি। বিভিন্ন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ি। অংসখ্য কোষের সমন্বয়ে মানবদেহ গঠিত হয়। প্রতিটি কোষের একটি নির্ধারিত আয়ুষ্কাল আছে। কোষ বিভাজনের মাধ্যমে শরীরে নতুন কোষ সৃষ্টি হয়। কিন্তু এটি অনিয়ন্ত্রিতভাবে হলে শরীরে মাংসের দলা বা চাকা সৃষ্টি হয়। এটিই টিউমার নামে পরিচিত। অনেক ক্ষেত্রে টিউমার ক্ষতিকর হয় না। কেবল ফুলে থাকে, এটি ‘বিনাইন টিউমার’ নামে পরিচিত। ক্ষতিকর টিউমারগুলো ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বা ক্যান্সার নামে পরিচিত। শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্ত বা লসিকানালীর মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে পড়ে অকাল মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। তবে ক্যান্সার কোনোভাবেই সংক্রামক নয়, অর্থাৎ একজন থেকে আরেকজনে সংক্রমিত হয় না।
আর বিশ্বের প্রতি আটজনে একজনের স্তন ক্যানসার! আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসার- আইএআরসি’র হিসাবে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৩ হাজারেরও বেশি নারী নতুন করে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। মারা যান ৬৭৮৩ জন। নারী ক্যানসার রোগীদের মধ্যে ১৯% ভোগেন স্তন ক্যানসারে। তথ্যগুলো মোটেও সুখকর নয়। বাংলাদেশের স্তন ক্যান্সারের রোগীর মধ্যে ৯৮ শতাংশই নারী। প্রতি বছর প্রায় ২০ হাজার নারী এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রতিরোধের মাধ্যমে তাদের মধ্যে ৫০ শতাংশই নিরাময়যোগ্য বলে মনে করি। আর সে কারণেই একটু নির্বিঘে¦ বেঁচে থাকার জন্য আমাদের মতো স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দেশে ক্যানসার প্রতিরোধ ছাড়া আর কোনো সুখকর উপায় নেই। শরীরের ভেতরের ক্যানসারগুলো তো বুঝতে সমস্যা হয় কিন্তু স্তন ক্যানসারের লক্ষণগুলো উঁকি দেয় শরীরের বাইরেই। শুধু চাই একটু সচেতনতা, আর একটু সতর্কতা। আর এই সতর্কতা চাই নারী পুরুষ সবারই। অবাক হওয়ার কিছু নেই কারণ, পুরুষরাও এখন স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। বাংলাদেশে প্রতিনিয়তই বাড়ছে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। নারী-পুরুষ মিলে তা ৮.৩%।
ক্যানসার চিকিৎসায় আছে নানা বিড়ম্বনা। অর্থনৈতিক উন্নয়নে সঙ্গে সঙ্গে দেশে ক্যানসারের সব ধরনের চিকিৎসা বিদ্যমান থাকলেও তার সুব্যবস্থাপনা নিয়ে আছে বিস্তর প্রশ্ন। এছাড়াও ব্যয়বহুল এসব চিকিৎসায় হিমশিম খেতে হয় মধ্যবিত্ত থেকে নিন্মবিত্ত মানুষের। তার উপর সত্যিকার অর্থেই কোথায় ভালো একটু চিকিৎসা পাবেন সেই তথ্য নিয়েও আছে হাজারও বিভ্রান্তি। আর এসব বিবেচনায় ক্যানসার মানেই ভোগান্তির এক দীর্ঘ অধ্যায়।
> ক্যন্সার কি?
বিশ্বে সমস্ত প্রাণীর শরীর অসংখ্য ছোট ছোট কোষের মাধ্যমে তৈরি। এই কোষগুলো একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর মারা যায়। এই পুরনো কোষগুলোর জায়গায় নতুন কোষ এসে জায়গা করে নেয়। সাধারনভাবে কোষগুলো নিয়ন্ত্রিতভাবে এবং নিয়মমতো বিভাজিত হয়ে নতুন কোষের জন্ম দেয়। সাধারনভাবে বলতে গেলে যখন এই কোষগুলো কোনও কারণে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে তখনই কোষ কলার দলা অথবা চাকা দেখা যায়। একেই টিউমার বলে। এই টিউমার বিনাইন বা ম্যালিগন্যান্ট হতে পারে। ম্যালিগন্যান্ট টিউমারকেই ক্যান্সার বলে। টিউমার কোষ আশেপাশের কলাকে ভেদ করতে না পারলে তাকে বলে নিরীহ বা বিনাইন টিউমার। বিনাইন টিউমার ক্যান্সার নয়। কলা ভেদক ক্ষমতা সম্পন্ন হলে তাকে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বা ক্যান্সার, এবং তার অনিয়ন্ত্রিত বিভাজনক্ষম ভেদক ক্ষমতাযুক্ত কোষগুলিকে ক্যান্সার কোষ বলে। অনেক ক্যান্সার প্রথমে বিনাইন টিউমার হিসাবে শুরু হয়, পরে তার মধ্যেকার কিছু কোষ পরিবর্তিত (ট্রান্সফর্মেসন) হয়ে ম্যালিগন্যান্ট (অর্থাৎ ভেদক ক্ষমতাযুক্ত) হয়ে যায়। তবে বিনাইন টিউমার ক্যান্সারে পরিবর্তিত হবেই তার কোন স্থিরতা নেই। কিছু বিনাইন টিউমার সদৃশ ব্যাধি আছে যাতে ক্যান্সার হওয়া অবশ্যম্ভাবী - এদের প্রি-ক্যান্সার বলে। নামে বিনাইন অর্থাৎ নিরীহ হলেও বিনাইন টিউমারও আশেপাশের কলার ক্ষতি করতে পারে। মেটাস্ট্যাসিস হলো ক্যান্সারের একটি পর্যায়, যাতে ক্যান্সার কোষগুলি অন্যান্য কলাকে ভেদ করে ও রক্ত, লসিকাতন্ত্র ইত্যাদির মাধ্যমে দূরবর্তী কলায় ছড়িয়ে যায়।
> স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে-
১. বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে। ২. স্তনে গ্রন্থির পরিমাণ অধিক হলে। ৩. অল্প বয়সে ঋতু বন্ধ হলে এবং বেশি বয়সে স্রাব বন্ধ হলে। ৪. কখনো সন্তান ধারণ না করলে। ৫. মেদবহুল দেহ, মোটা ভুঁড়ি ও অতিরিক্ত ওজন হলে। কারণ এর সঙ্গে হরমোনের সম্পর্ক থাকে। ৬. রক্ত সম্পর্কীয় কোনো আত্মীয় যদি স্তন, কোলন বা জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। পরিবারের অতি নিকট আত্মীয় যদি (যেমন মা, বোন, খালা, ফুপু) ৫০ বছর বয়সের আগেই স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন অথবা পরিবারে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দুইয়ের অধিক হয় তাহলে এ রোগের ঝুঁকি আরো বেড়ে যায়। ৭. দীর্ঘদিন একটানা জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ি সেবন করলে। ৮. ঋতুস্রাব বন্ধের (মেনোপজ) পর অনেকদিন হরমোন রিপ্লেসমেন্ট বড়ি সেবন করলে। ৯. অতিরিক্ত লাল মাংস খেলে। ১০. এক স্তনে ক্যান্সার হলে। ১১. মদ্যপান। ১২. বাচ্চাকে বুকের দুধ না খাওয়ালে।
> স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে : ১. নিয়মিত ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে দেহের স্বাভাবিক ওজন বজায় থাকলে। সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হালকা শারীরিক পরিশ্রম এ ঝুঁকি বহুলাংশে কমাবে। ২. শিশুকে পূর্ণ দুই বছর মায়ের দুধ খাওয়ালে। ৩. ৩০ বছরের মধ্যে ১-২টি সন্তান গ্রহণে ঝুঁকি কমে। ৪. প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় মাংস, চর্বি ও শর্করা জাতীয় খাবার কমিয়ে শাক-সবজি, ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবারের পরিমাণ বাড়ালে।
> ক্লিনিক্যাল স্তন পরীক্ষা-
চিকিৎসক দ্বারা মহিলাদের স্তনের ক্যান্সারের লক্ষণগুলো খুঁজে বের করা। ক্যান্সারের লক্ষণ- স্তনবৃন্ত ব্যথা, বৃন্ত দিয়ে পুঁজ আসা, স্তনটি কুকড়ে যাওয়া, স্রাব আসা ইত্যাদি।
> প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করতে হলে : ১. ২০ বছর বয়স হলেই প্রতি মাসে নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করা। ২. ৪০ বছর বয়স হলেই প্রতি বছর চিকিৎসক দ্বারা শারীরিক পরীক্ষা করা।
> স্তন ক্যান্সারের জন্য স্ক্রিনিং ম্যামোগ্রাফি-
ম্যামোগ্রাফি স্তন ক্যান্সারের স্ক্রিনিংয়ের মডেলটি বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত হয়। এটি রেডিওগ্রাফ আকারে স্তনের চিত্রগুলো ক্যাপচারের জন্য এক্স-রে ব্যবহার করে। ম্যামোগ্রাফি প্রাথমিক স্তরের স্তন ক্যান্সার শনাক্তকরণ এবং স্তন ক্যান্সারের সাথে যুক্ত মৃত্যু হ্রাসে উপকারি হিসেবে প্রমাণিত।
স্তন ক্যান্সার সন্দেহ হলে ঘাবড়ে না গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ
ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
মোবাইল: ০১৮২২৮৬৯৩৮৯
ইমেইল: [email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।