নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
দক্ষিণ এশিয়া ফুটবলের সর্বোচ্চ টুর্নামেন্ট সাফের আরেকটি শিরোপা জিতল বাংলাদেশের মেয়েরা। সিনিয়রদের মতো সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপেও এখন সেরা বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার রাতে কমলাপুরস্থ বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্টের ফাইনালে নেপালকে ৩-০ গোলে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের শিরোপা জিতে নিলো বাংলাদেশ। চ্যাম্পিয়ন দলের হয়ে ফরোয়ার্ড শাহেদা আক্তার রিপা, অধিনায়ক শামসুন্নাহার জুনিয়র ও ফরোয়ার্ড উন্নতি খাতুন একটি করে গোল করেন।
বৃহস্পতিবার ফাইনালে সেরা একাদশে দু’টি পরিবর্তন এনে মাঠে নামে বাংলাদেশ। উন্নতি খাতুনের জায়গায় সোহাগী কিসকু ও আইরিন খাতুনের বদলে মাঠে নামেন মাহফুজা খাতুন। তবে নেপাল তাদের সেরা একাদশে কোনো পরিবর্তন আনেনি। লিগ পর্বেও নেপালকে ৩-১ ব্যবধানে হারিয়েছিল স্বাগতিকরা। ফাইনালে হিমালয় কন্যাদের সামনে ছিল প্রতিশোধ নেওয়ার হাতছানি। কিন্তু পারলো না নেপাল। বরং আরও একটি শিরোপা হারিয়েই দেশে ফিরতে হলো তাদের। সিনিয়র সাফের পরে এবার নেপালীদের হাতছাড়া হলো প্রথমবার প্রবর্তিত সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাও।
ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে স্বাগতিক দল। যদিও গোল পেতে তাদের অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে দীর্ঘ সময়। ২ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারতো বাংলাদেশ। কিন্তু ডি-বক্সের বাইরে থেকে ফাঁকায় বল পেয়েও আকলিমা খাতুনের শট ক্রসবারের উপর দিয়ে চলে যায়। ১৮ মিনিটে শাহেদা আক্তার রিপার আড়াআড়ি ক্রসে আকলিমা শট নিলেও নেপালের গোলরক্ষক কবিতা বিকে ডানদিকে সরে এসে দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় তা রক্ষা করেন। ৩২ মিনিটে বক্সের ভিতরে শামসুন্নাহার জুনিয়রকে নেপালের কুমারি তামাং ফেলে দিলেও তা ভুটানের রেফারির চোখ এড়িয়ে যায়! চার মিনিট পর নেপাল সুযোগ পেয়েও সাফল্য পায়নি। বক্সের ভেতরে বল পেয়ে আমিশা কারকি জোরালো শট নিলে বল বাইরে চলে যায়। গোলশূন্য অবস্থায় ম্যাচ যখন বিরতির দিকে ছুটছিল ঠিক তখনি সাফল্য পায় লাল-সবুজরা।
ম্যাচের ৪২ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে স্বপ্না রানী উড়ন্ত লম্বা পাস দেন। তার পাস ধরে আকলিমা নেপালের বক্সে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের ট্যাকলে তিনি বল নিয়ন্ত্রণে নিতে না পেরে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তবে নেপালের ডিফেন্ডার কুমারী তামাং বলটি ঠিকমতো বিপদমুক্ত করতে পারেননি। বল পেয়ে যান শাহেদা আক্তার রিপা। বক্সের ঠিক লাইন থেকে তিনি ডান পায়ের কোনাকুনি শটে গোল করে শাহেদা দলকে এগিয়ে নেন (১-০)। প্রথমার্ধের যোগকরা সময়ে (৪৫+১ মিনিট) ব্যবধান দ্বিগুন করেন অধিনায়ক শামসুন্নাহার জুনিয়র।
এসময় নিজেদের সীমানা থেকে উঁচু-লম্বা লব করেন আফিদা। সেই বল নিজেদের বক্সের ভেতরে নেপালের প্রতীক্ষা চৌধুরী বিপদমুক্ত করতে না পারায় বল নিয়ে ঢুকে পড়েন শামসুন্নাহার। এদিকে বিপদ বুঝে ততক্ষণে সামনে এগিয়ে আসেন নেপালের গোলরক্ষক কবিতা। ঠা-া মাথায় বাংলাদেশ অধিনায়ক তার ডান পায়ের দর্শনীয় গড়ানো প্লেসিং শটে লক্ষ্যভেদ করে আরও একবার দর্শকদের আনন্দে ভাসান (২-০)। ৮৭ মিনিটে বক্সের ঠিক বাইরে থেকে ডান প্রান্ত দিয়ে শাহেদা আক্তার রিপার ফ্রিকিক। পোস্টের খুব কাছে দাঁড়ানো উন্নতি খাতুন পায়ের আলতো টোকায় বল জালে জড়িয়ে দিলে ব্যবধান আরও বড় করে স্বাগতিকরা (৩-০)। শত চেষ্টা করে একটি গোলও শোধ দিতে পারেনি নেপাল। ফলে শেষ পর্যন্ত ৩-০ গোলের হাতাশার হার নিয়েই মাঠ ছাড়ে তারা।
জাতীয় দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের প্রতিবিম্বই যেন অনূর্ধ্ব-২০ দলের শামসুন্নাহার জুনিয়র। টুর্নামেন্টের শুরু থেকে শেষ অবদি দলকে টেনে নিয়ে এসেছেন। নিজে গোল করেছেন। অন্যকে দিয়ে করিয়েছেন। হ্যাটট্রিকও রয়েছে তারা। পুরো মাঠ জুড়ে খেলেন এই ফরোয়ার্ড। সিনিয়র সাফে যেমন ট্রাম্পকার্ড হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন সাবিনা খাতুন। ইতিহাস গড়া শিরোপা এনে দিয়েছিলেন। ঠিক তেমনি বয়সভিত্তিক এই টুর্নামেন্টের ট্রাম্পকার্ডও ছিলেন শামসুন্নাহার। সিনিয়র সাফে সাবিনা হয়েছিলেন সর্বাধিক গোলদাতা। এখানে তার উত্তরসূরী শামসুন্নাহারও তাই। কতটা মিল এই দুই ফরোয়ার্ডের মধ্যে। টুর্নামেন্টে একটি হ্যাটট্রিকসহ মোট ৫ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার পান শামসুন্নাহার জুনিয়র। মোস্ট ভেল্যুয়েবল প্লেয়ারও তিনিই। সেরা গোলরক্ষকের খেতাব জিতে নেন স্বাগতিক দলের রুপনা চাকমা। আর ফেয়ার প্লে ট্রফি পায় ভুটান। ফাইনাল শেষে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ী ও বিজিত দলের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল।
গত ছয় মাসে নারী সাফের তিনটি টুর্নামেন্টের ফাইনালে নেপালকে পেয়ে দু’টিতে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে লাল-সবুজরা। এর মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে কাঠমান্ডুতে সিনিয়র সাফে স্বাগতিকদের হারিয়ে ইতিহাস গড়ে শিরোপা জিতেছিলেন সাবিনারা। ডিসেম্বরে ঢাকায় সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ টুর্নামেন্টে অবশ্য রানার্সআপ ট্রফি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে স্বাগতিকদের। নেপালীরা ম্যাচ ১-১ ব্যবধানে ড্র করে চ্যাম্পিয়ন হয়। আর বৃহস্পতিবার সেই নেপালকে হারিয়েই সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।