পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বহুল প্রত্যাশিত-আলোচিত ঢাকা-মাওয়া চারলেন এক্সপ্রেসওয়ে অবশেষে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে তার যাত্রা শুরু করল। পদ্মাসেতুর কানেক্টিং রোড হিসেবে এই এক্সপ্রেসওয়েটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ৫৫ কিলোমিটার চারলেন এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে প্রাথমিকভাবে ৬ হাজার ২৫২ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ দেয়া হলেও বাস্তবায়নকালে দুই দফায় সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে দেয়ার পরও যখন পরিকল্পনামাফিক কাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাকি রয়ে যায়, তখন ২০১৮ সালে আরো ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা হাইওয়ের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ প্রকল্প নামে নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। অর্থাৎ ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে বাস্তবায়নে সরকারের খরচ হয়েছে ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি। প্রতি কিলোমিটারে যার খরচ দাঁড়ায় ২০০ কোটি ৭ লাখ টাকা। এটি শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এক্সপ্রেসওয়ে বলে খ্যাত হয়েছে। অবকাঠামো নির্মাণে অস্বাভাবিক উচ্চব্যয় একটি ভিন্ন প্রসঙ্গ। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই বহু আকাক্সিক্ষত প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন। সরকারের জন্য এটা অবশ্যই একটি ইতিবাচক ও প্রশংসনীয় দিক হিসেবে বিবেচিত হবে। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন এক্সপ্রেসওয়ের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চলেছে। এটা আমাদের অবকাঠামো খাতে একটি মাইলফলক অর্জন।
হাইওয়ে নির্মাণ ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। বার বার সময় বাড়ানোর পাশাপাশি বাজেট বৃদ্ধির পরও ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ে চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজের মান নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন দেখা গেছে। বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের ধীরগতির জন্য বছরের পর বছর ধরে জনভোগান্তির পর কাজ শেষ না হতে হতেই খানাখন্দে রাস্তা বিপজ্জনক হয়ে পড়ার বাস্তবতা এখনো বিদ্যমান। এক্ষেত্রে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত হতে পারে। অস্বাভাবিক প্রকল্প ব্যয় নিয়ে জনমনে প্রশ্ন থাকলেও প্রকল্প বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের ভূমিকার কারণে যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হয়েছে এবং কাজের মান রক্ষিত হয়েছে বলে আশা করা যায়। হাতিরঝিল উন্নয়ন প্রকল্পসহ যে সব প্রকল্প বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অংশগ্রহণ ছিল সে সব কাজের মান এবং দীর্ঘসূত্রিতার প্রশ্ন উঠেনি। পদ্মাসেতু বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে রাজধানীর সাথে দেশের দক্ষিণাংশকে সড়কপথে সংযুক্ত করার যে মহাপরিকল্পনা সরকার গ্রহণ করেছিল, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের বাস্তবায়ন সে মহাপরিকল্পনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। তবে এক্সপ্রেসওয়ে বাস্তবায়ন করার পাশাপাশি এর যথাযথ ব্যবহার, শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কোনো রকম শৈথিল্যের সুযোগ নেই।
ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প হিসেবে যে ধরনের মান, সৌন্দর্য, সুযোগ-সুবিধা, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা থাকা প্রয়োজন তার উপর যথাযথ গুরুত্ব ও নজরদারি থাকতে হবে। ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে নির্মিত ফ্লাইওভারগুলোর নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতা এবং ট্রাফিক শৃঙ্খলায় বড় ধরনের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। এমনকি ফ্লাইওভারগুলো শহরের যানজট নিরসনে তেমন কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে। দেশের প্রথম সর্বাধুনিক এক্সপ্রেসওয়ে যেন গতানুগতিক অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাহীনতার শিকার না হয় সে দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। যাত্রী-ছাউনি, বাস-বেসহ মহাসড়ক ব্যবস্থাপনায় আধুনিক যে সব ব্যবস্থা এই এক্সপ্রেসওয়েতে যুক্ত করা হয়েছে তার যথাযথ ব্যবহারিক মান নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের রাজধানী শহর বাসযোগ্যতা হারাতে বসেছে, হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে অবকাঠামো উন্নয়নের পরও যানজট পরিস্থিতির দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। দেশের রাজধানী শহরের এমন বাস্তবতায় বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হওয়াই স্বাভাবিক। যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের পথ ধরেই দেশের শিল্প ও বাণিজ্যের সম্ভাবনা তরান্বিত হয়ে থাকে। এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্টো, মাস-ট্রানজিট ব্যবস্থা বাস্তবায়নের পাশাপাশি আমাদের সামগ্রিক যোগাযোগ অবকাঠামো, গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের প্রতি নজর দিতে হবে। যেখানে ৫৫ কিলোমিটার হাইওয়ে ৩০ মিনিটে অতিক্রম করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, সেখানে রাজধানী শহরে ১০ মিনিটের পথ এক ঘণ্টায় পার হওয়ার বাস্তবতা মেনে নেয়া যায় না। গণপরিবহন নিয়ে মালিক-শ্রমিকদের সিন্ডিকেটেড অপতৎপরতা ও চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। সেই সাথে অবকাঠামো খাত উন্নয়নে অস্বাভাবিক উচ্চ ব্যয়ের পেছনে অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতির অভিযোগগুলোও খতিয়ে দেখতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।