Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দীর্ঘায়িত হচ্ছে জনদুর্ভোগ

চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প নির্মাণ ব্যয় বাড়ছে ১২০০ কোটি টাকা, সময় ২ বছর

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০১ এএম

চট্টগ্রামের আলোচিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের সময় এবং ব্যয় দুটোই বাড়ছে। তাতে সীমাহীন জনদুর্ভোগ আরো দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এই মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ কাজ শেষ করতে আরো দুই বছর সময় চেয়েছে। আর প্রকল্প ব্যয় ১২শ’ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছে। আবেদন মঞ্জুর হলে প্রকল্পের ব্যয় ৩৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়াবে চার হাজার ৪৫০ কোটি ৫৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। বন্দরনগরীর শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে প্রকল্প ব্যয় দ্বিতীয় দফা এবং সময় তৃতীয় দফা বাড়ানো হচ্ছে।

উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তীব্র অসন্তোষ ও বিরক্তি প্রকাশের মধ্যেই অগ্রাধিকার ভিত্তিক এ প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব গেল সরকারের কাছে। গত মঙ্গলবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পসহ মেগা প্রকল্প বহরে দীর্ঘসূত্রিতা তথা সময় এবং ব্যয়বৃদ্ধিতে (ওভার রান) প্রধানমন্ত্রী এ বিরক্তি প্রকাশ করেন। সেই সাথে তিনি এসব মেগা প্রকল্প বারবার সংশোধন না করে দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশনাও দেন। চট্টগ্রামের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটিও প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের অন্যতম। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি এবং দফায় দফায় প্রকল্পের সংশোধন করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার সাথে কোনরকম আলাপ-আলোচনা ছাড়াই তড়িঘড়ি করে নকশা প্রণয়ন এবং বারবার নকশা বদল ও সমন্বয়ের অভাবেই মূলত এমন অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। প্রকল্পের শুরু থেকেই কাজ চলছে সম্ভুক গতিতে। এর ফলে একদিকে প্রকল্পের ব্যয় এবং সময় বাড়ছে অন্যদিকে প্রলম্বিত হচ্ছে জনদুর্ভোগ। সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়িতে মহানগরীর প্রধান সড়কটির অবস্থা এখন বেহাল। প্রকল্পের জন্য বৈধ-অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির লাইন না সরিয়েই শুরু হয় খোঁড়াখুঁড়ি। এতে দফায় দফায় কাটা পড়ছে ওয়াসার পাইপ লাইন এবং গ্যাস লাইন। তাতে মানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়ছে।

দেশের প্রধান বাণিজ্যিক নগরীর মূল সড়কটিতে টানা প্রায় চার বছর এমন খোঁড়াখুঁড়িতে অচলাবস্থা নগরজুড়ে। চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহন স্থবির হয়ে পড়েছে। সড়কের দুইপাশের দোকানপাট, ব্যবসা-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রধান সড়কে স্থায়ী হওয়া যানজট বিস্তৃত হচ্ছে নগরীর বিশাল অংশে। কখনো কাঁদাপানির প্লাবন আবার কখনো ধুলাবালিতে সয়লাব হচ্ছে সড়কের দুইপাশের এলাকা। পুরো সড়কজুড়ে খানাখন্দে ভরা। প্রকল্প চলাকালে সড়কটি যানবাহন চলাচলের উপযোগী রাখার দায়িত্ব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হলেও এ ব্যাপারে পুরোপুরি উদাসীন তারা। রাস্তায় গর্তে উল্টে যাচ্ছে যানবাহন। প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি যুক্ত হবে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের সঙ্গে। একইসাথে এটি সিটি আউটার রিং রোড হয়ে দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাথে সংযুক্ত হবে। দেশের সর্ববৃহৎ এবং প্রথম চট্টগ্রাম ইপিজেড ও কর্ণফুলী ইপিজেডে উৎপাদিত পণ্য এবং কাঁচামাল পরিবহনে নতুন মাত্রা যোগ করবে এ এক্সপ্রেসওয়ে। সেই সাথে পতেঙ্গা এলাকায় গড়ে ওঠা বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোমুখী পণ্য পরিবহনও সহজতর হবে। ব্যস্ততম মহানগরীর ক্রমবর্ধমান যানজট নিরসনে এ প্রকল্পটি নেয়া হয়। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতিতে এটি এখন চট্টগ্রামবাসীর জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। বিগত ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। শুরুতে ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। এর মধ্যে প্রকল্পের মাত্র ৬২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আর এ অবস্থায়ী তৃতীয় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ আগামী ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে সিডিএ।

শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৭শ’ কোটি টাকা। কাজ শুরুর আগে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় তিন হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা করা হয়। নতুন করে এক হাজার ১৯৯ কোটি ৭১ লাখ ১০ হাজার টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে চার হাজার ৪৫০ কোটি ৫৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। সংশ্লিষ্টরা জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে আলোচনা ছাড়াই এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প প্রণয়ন এবং কাজ শুরু করে দেয় সিডিএ। তবে বন্দর এলাকায় কাজ শুরু হলে তাতে আপত্তি জানায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এ নিয়ে দফায় দফায় বন্দরের সাথে বৈঠক এবং প্রকল্পের নকশা বদল করা হয়। এছাড়া কাজ শুরুর সময় ট্রাফিক বিভাগের সাথেও কোন সমন্বয় করা হয়নি। সিডিএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, আউটার রিং রোড নির্মাণ কাজ শেষ করে এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু করা হবে। কিন্তু রিং রোড শেষ না করে এ প্রকল্প শুরু হওয়ায় নগরীর বন্দর এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। তাতে ট্রাফিক পুলিশের বাধায় কাজ বন্ধ রাখতে হয়। এসব কারণে বেড়ে যায় প্রকল্পের ব্যয় এবং সময়।

তবে প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান বলেন, কয়েক দফায় নকশা বদল করতে হয়েছে। কিছু জমিও অধিগ্রহণ করতে হচ্ছে। ব্যক্তিগত জমির পাশাপাশি টাইগারপাস এলাকায় রেলওয়ের কাছ থেকে জমি নিতে হবে। এছাড়া টোল প্লাজাসহ আরো কিছু আনুষঙ্গিক স্থাপনা নির্মাণের কারণে ব্যয় বাড়ছে। প্রকল্প ব্যয় ৩৬ শতাংশ এবং সময় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়াতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৬২ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। পতেঙ্গা থেকে বন্দরটিলা পর্যন্ত গার্ডার বসানো হয়েছে। বন্দরটিলা থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত পাইলিংয়ের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করা যাবে বলে জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ