পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
থমকে গেছে চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত সাড়ে ১৬ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ। নেভি হাসপাতাল গেইট এলাকায় নর্দমা সংষ্কারের কাজ করছেন কিছু শ্রমিক। সল্টগোলা এলাকায় কয়েকজন শ্রমিককে ফাইলিংয়ের কাজ করতে দেখা গেছে। এছাড়া আর কোথাও কোন তৎপরতা নেই। এক সময় রাতে-দিনে কাজ হলেও এখন প্রকল্প এলাকায় সুনসান নীরবতা। অথচ হাতে সময় আর বেশি নেই।
ঈদের ছুটির আগে থেকেই চলছে এমন অবস্থা। গুরুত্বপূর্ণ এই মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে এমন সম্ভুক গতিতে দেশের প্রধান বাণিজ্যিক নগরীতে জনদুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে দুই বছর আগে। দ্বিতীয় দফায় মেয়াদ আরো বাড়িয়ে আগামী বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়েছে এক হাজার দুইশ’ কোটি টাকা।
তবে কাজের ধীরগতির কারণে বর্ধিত সময়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ আদৌ শেষ হবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে এমন বেহাল দশায় আসন্ন বর্ষায় মহানগরীর এই প্রধান সড়কে জনদুর্ভোগ আরো বাড়বে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। জনদুর্ভোগ লাঘবে নেয়া মেগা প্রকল্পটি এখন বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ-সিডিএ’র এই প্রকল্প যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স-র্যাঙ্কিন। চলতি বছরের শুরুতে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছিলেন, সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ের ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ চলমান। সাড়ে চার মাস পর গতকাল সোমবার প্রকল্প পরিচালক জানালেন কাজ ৬৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। অর্থাৎ সাড়ে চার মাসে কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র পাঁচ ভাগ।
গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, পতেঙ্গা থেকে ইপিজেড পর্যন্ত গাডার বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। তবে সিমেন্ট ক্রসিং থেকে ইপিজেড পর্যন্ত চলছে নর্দমা সংস্কারের কাজ। নেভি হাসপাতাল গেইট এলাকায় কয়েকজন শ্রমিক সংষ্কার কাজ করছেন। বাকি এলাকায় কোন তৎপরতা নেই। ইপিজেড থেকে সল্টগোলা ক্রসিং হয়ে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত ফাইলিংয়ে কাজ এখনও শেষ হয়নি। কিছু অংশে কাজ শেষ হলেও গাডার বসানো হয়নি। বারিক বিল্ডিং থেকে আগ্রাবাদ হয়ে দেওয়ানহাট পর্যন্ত ফাইলিংয়ের কাজ শেষ করে ফেলে রাখা হয়েছে। সেখানেও বসানো হচ্ছে না গাডার। শুধুমাত্র সল্টগোলা এলাকায় কিছু শ্রমিককে কাজ করতে দেখা গেছে। বারিক বিল্ডিং থেকে দেওয়ানহাট হয়ে টাইগারপাস লালখান বাজার পর্যন্ত অংশেও কোন কাজ হচ্ছে না। এই এলাকায় নির্মাণ কাজ এক প্রকার বন্ধ। এক্সপ্রেসওয়ের নয়টি এলাকায় ২৪টি র্যাম্প থাকবে। এখনো পর্যন্ত একটি র্যাম্পও নির্মাণ করা হয়নি।
জানা গেছে, নির্মাণ সামগ্রির দাম ঊর্ধমুখী হওয়ার পর থেকে কাজের গতি আরো শ্লথ হয়ে যায়। এর মধ্যে ঈদের ছুটিতে কাজ কার্যত পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ঈদের ছুটি শেষ হয়েছে অনেক আগে কিন্তু এখনও প্রকল্প এলাকায় কাজে গতি ফিরেনি। কাজ শেষ না করায় সড়কে খানাখন্দে কোথাও ডোবার আকার ধারণ করেছে। কোন কোন এলাকায় ধুলা উড়ছে, কোথাও আবার কাদা-পানিতে একাকার। সড়কে বড় বড় গর্তে আটকে পড়ছে যানবাহন। ফাইলিংয়ের জন্য রাস্তা দখল করে রাখায় সরু পথে চলতে গিয়ে যানবাহন আটকে তীব্র যানজট হচ্ছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দর ও ইপিজেড এলাকায় রাতে-দিনে তীব্র যানজট হচ্ছে। অসহনীয় জটে আটকা পড়ে সীমাহীন দুর্ভোগ আর বিড়ম্বনার মুখোমুখি হচ্ছেন লাখো মানুষ। অনেকে ওই সড়ক এড়িয়ে চলছেন। বেশি বিপাকে পড়েছেন এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা। সড়কে বেহাল দশার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য লাটে উঠার উপক্রম হয়েছে। বিগত তিন বছরের বেশি সময় ধরে এমন দুর্ভোগের মুখোমুখি এলাকাবাসীর প্রশ্ন এই দুর্ভোগের শেষ কবে হবে।
দেশের প্রধান বন্দরনগরীর অব্যাহত যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় তিন হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। তিনবছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা হয়নি। প্রথম দফায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এসে প্রকল্পের সময় আরো দেড় বছর বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়। একই সঙ্গে এর ব্যয়ও এক হাজার ২০০ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। যা এখন বেড়ে চার হাজার ৪৪৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের জুন মাসে। শুরু থেকেই চট্টগ্রাম বন্দর ও ট্রাফিক বিভাগের আপত্তিতে কাজ থমকে যায়। দফায় দফায় প্রকল্পের নকশা পরিবর্তন করতে হয়। এতে কাজে তেমন গতি আসেনি। সেবা সংস্থাগুলোর সাথে কোন সমন্বয় না থাকায় মানুষের দুর্ভোগ আরো বেড়ে যায়। ফাইলিংয়ের সময় কয়েক দফায় পানি ও গ্যাস লাইন কাটা পড়ে। যথাসময়ে সরানো হয়নি গ্যাস, পানি, টেলিফোন ও বিদ্যুতের লাইন। এতে কাজ করতে গিয়ে লেজেগোবরে অবস্থায় পড়তে হয়। গত তিনবছর ধরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টাইগারপাস থেকে বিমানবন্দর সড়কে চলাচলে জনদুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছায়।
সরকারের অগ্রাধিকার এই মেগা প্রকল্পটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নগরীর দীর্ঘতম এই এক্সপ্রেসওয়ে মুরাদপুর ও বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার হয়ে নগরীর চান্দগাঁও, বায়েজিদ, পাঁচলাইশসহ উত্তর চট্টগ্রামের সাথে পতেঙ্গায় নির্মাণাধীন দেশের প্রথম টানেল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের মাধ্যমে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাথে সংযোগ তৈরি করবে। একই সাথে এই এক্সপ্রেসওয়ে পতেঙ্গা সৈকত ঘেঁষে নির্মিত সিটি আউটার রিং রোডের সাথে সংযুক্ত দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাথে বন্দরনগরীর সেতুবন্ধন সৃষ্টি করবে। এই এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর এবং পতেঙ্গা এলাকায় গড়ে উঠা বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো এবং চট্টগ্রাম ও কর্ণফুলী ইপিজেডমুখী আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী ভারী যানবাহন চলাচলে নতুন গতি আনবে। তাতে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যোগ হবে নতুন মাত্রা। অথচ অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে চলছে চরম ধীরগতি।
জনদুর্ভোগ লাঘব এবং চট্টগ্রাম বন্দরমুখী আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী পরিবহন চলাচল নির্বিঘ্ন করতে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এক্সপ্রেসওয়ের পতেঙ্গা থেকে বারিক বিল্ডিং অংশ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার কথা ছিল। তবে কাজের ধীরগতির কারণে তাও সম্ভব হচ্ছে না। কাজে ধীরগতির কারণ হিসাবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা সেবা সংস্থার অসহযোগিতাকে দুষছেন। তারা বলছেন, যথাসময়ে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইন সরানো না হওয়ায় কাজ শুরু করতে দেরি হয়। আবার একই সাথে সেবা সংস্থার লাইন অপসারণ আর প্রকল্পের কাজ করতে গিয়েও সময় বেশি লেগে যায়। এছাড়া বন্দরের আপত্তির কারণে কয়েক দফায় নকশা বদল করতে হয়। তাতেও সময় ক্ষেপণ হয়।
এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, কিছু টেকনিক্যাল কারণে এবং সেবাসংস্থার লাইন অপসারণে দীর্ঘসূত্রতার কারণে প্রকল্পের সময় বেশি লাগছে। ঈদের ছুটি শেষে কাজে এখনো তেমন গতি আসেনি। তবে সামনের দিনগুলোতে কাজ দ্রুত এগিয়ে যাবে বলে জানান তিনি। প্রকল্পের ব্যয় এবং সময় বাড়ানোর প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও এখনো পর্যন্ত তা অনুমোদন দেয়া হয়নি বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, প্রকল্পের কাজ ৬৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। পতেঙ্গা থেকে বারিক বিল্ডিং অংশ আগামি জানুয়ারির মধ্যে খুলে দেয়া যাবে। তখন যানজট সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।