পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ভারতের রাজধানী দিল্লীতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় মুসলমানদের হত্যা, নির্যাতন, বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেয়া ও মসজিদে অগ্নিসংযোগের তীব্র প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে বাংলাদেশে। দলমত নির্বিশেষে প্রত্যেকেই দিল্লীর এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রতিবাদ করছে। বিভিন্ন ইসলামী দল তো বটেই, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলোও ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে বিভিন্ন ইসলামী দলের ব্যানারে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বিশ্বসেরা সন্ত্রাসী ও হিন্দু জঙ্গি আখ্যা দেয়া হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠানে তাকে আসতে না দেয়া ও প্রতিহত করার ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। মোদি যদি বাংলাদেশে আসে তাহলে তাকে স্বাগত জানাতে এদেশের মুসলমানরা কাফনের কাপড় পড়ে বায়তুল মোকাররম থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত রাজপথে শুয়ে থাকবে বলে বক্তারা বলেছেন। এদিকে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ভারতে সাম্প্রদায়িক কসাই হিসেবে পরিচিতি লাভ করা মোদিকে আমন্ত্রণ জানানো বাংলাদেশের জনগণ গ্রহণ করবে না। ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন, বাঙালির মুক্তির সংগ্রামে অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীতে ভারতের সাম্প্রদায়িক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ রুখতে প্রয়োজনে রক্তের গঙ্গা বয়ে যাবে তবুও তাকে দেখতে চাই না। দিল্লীতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় মুসলমান হত্যা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে মুসলিম বিশ্বসহ সারাবিশ্বে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। জাতিসংঘ এবং ওআইসিসহ বিভিন্ন বিশ্বসংস্থা তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
ভারতে উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে মুসলমানদের ওপর হত্যা ও নির্যাতনের স্টিম রোলার চলছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস করার মধ্য দিয়ে নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ দেশটি থেকে মুসলমানদের বিতাড়িত করার কৌশল নিয়েছে। এ নিয়ে বিগত কয়েক মাস ধরে দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ ও আন্দোলন চলছে। সর্বশেষ দিল্লীতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধিয়ে মুসলমানদের হত্যা ও নির্যাতনের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটানো হয়েছে। এ ঘটনাকে ২০০২ সালে গুজরাটে সংঘটিত ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় মুসলমান নিধনের প্রতিচ্ছায়া হিসেবে বিশ্লেষকরা দেখছেন। সে সময় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। বলা হয়ে থাকে, গুজরাটের ঘটনায় তার ইন্ধন ছিল। এ সময়ে দিল্লীতে যে দাঙ্গা সংঘটিত হচ্ছে, তখন সেই মোদিই ভারতের প্রধানমন্ত্রী। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মোদি-অমিত শাহ জুটিই এ দাঙার নেপথ্যে কাজ করছেন। তাদের এ ধারণা যে অমূলক তা মনে করার কারণ নেই। মোদি প্রধানমন্ত্রী এবং অমিত শাহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। তাদের সদিচ্ছা থাকলে এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই সংঘটিত হতো না। ঘটনা ঘটতে দিয়ে তারা দুজন তাদের মুসলমান বিদ্বেষ এবং হিং¯্র মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন। তাদের মনোভাবে এটাই প্রতীয়মাণ হয় যে, ভারত থেকে মুসলমানদের বিতাড়ন এবং হত্যা-নির্যাতন করে ধ্বংস করে দেয়াই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। বিশ্লেষকরা বলছেন, কোনো সভ্য দেশে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ওপর এ ধরনের হত্যাযজ্ঞ চলতে দেখা যায় না। অথচ ভারত বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পরিচিত। এ পরিচিতি বিজেপি সরকার ধুলিস্যাত করে দিয়েছে শুধুমাত্র সাম্প্রদায়িক ও মুসলিম বিদ্বেষের কারণে। বিজেপির এ ধরনের ঘৃণ্যনীতির বিরুদ্ধে দেশটির সুশীল সমাজও প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠেছে। প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেকে বিজেপির রোষানলেও পড়েছেন। নরেন্দ্র মোদি এসব প্রতিবাদ ও প্রতিক্রিয়া থোড়াইকেয়ার করে তার ভয়ংকর নীতিতে অটল রয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে দেশটিতে যদি বিভিন্নভাবে বিভক্তির সৃষ্টি হয়, তবে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ভারতের হিন্দুদের বেশিরভাগ মোদি সরকারের পরিকল্পিত এই মুসলমান নিধন ধরতে পারছে কিনা, তা বড় বিষয় নয়, বড় বিষয় হচ্ছে, এই পরিকল্পনা বুঝতে পারার পরও মুসলমানদের টার্গেট করার বিষয়ে মোদি সরকারের কূটকৌশল বোঝার মতো তাদের বোধ-বুদ্ধি কাজ করছে কিনা। মোদি সরকার দেশটিকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, এ সম্পর্কে তাদের স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। বলা বাহুল্য, সাম্প্রদায়িকতার যে বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে তাতে ভবিষ্যতে দেশটির রূপ কী হবে সে বিষয়ে তাদের সচেতন হওয়া বাঞ্চনীয়।
ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং মুসলমান নিধনে যে বিজেপি সরকারের দায় রয়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এ নিয়ে মুসলমান বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশেও এর প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ হওয়া স্বাভাবিক। আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টিকে ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয় বলা হলেও তা গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে মুসলিম বিশ্বে গণ্য হচ্ছে। বলা এবং তা কূটনৈতিকভাবে সমিচীন হলেও বাস্তবে তা সবসময় পরিলক্ষিত হয় না। আমাদের সরকার ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে কূটনৈতিক শিষ্টাচার বর্হিভূতভাবে কখনো নাক না গলালেও ভারত এ ধরনের আচরণ করতে কুণ্ঠিত হয় না। অতীতে আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিজেপির বিভিন্ন নেতাকে ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য করতে দেখা গেছে। বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর কথিত হামলা নিয়ে দেশটির বিভিন্ন রাজনৈতিক দল শিষ্টাচার বর্হিভূত মন্তব্য ও তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। ভারতে মুসলমান নিধন প্রক্রিয়া নিয়েও আমাদের দেশের মুসলমানদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পেছনে যখন সরকারি দলের মদদ থাকার অভিযোগ ওঠে, তখন তা নিছক বা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা হিসেবে গণ্য করা যায় না। ইতোমধ্যে নরেন্দ্র মোদিকে কসাই, সন্ত্রাসী, জঙ্গি এবং হিটালারের চেয়েও ভয়ংকর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে এমন একজন ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানোয় দেশের মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়া স্বাভাবিক। বঙ্গবন্ধু সারাজীবন নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের পক্ষে এবং অসাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যবিরোধী চিন্তা-চেতনা নিয়ে সংগ্রাম করে গেছেন। এমন মহাপুরুষের জন্মশত বার্ষিকীতে একজন উগ্র সাম্প্রদায়িক ব্যক্তির উপস্থিতি দেশের মানুষের পক্ষে মেনে নেয়া অসম্ভব। বঙ্গবন্ধুর চেতনা থেকেই দেশের মানুষ তাঁর জন্মশতবার্ষিকীতে মোদির আমন্ত্রণের বিরোধিতা করছে। দেশের মানুষের এই সেন্টিমেন্টকে সরকারের উপলব্ধি ও মূল্যায়ণ করা উচিত। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতে অসাম্প্রদায়িক মানসিকতার এবং বাংলাদেশের শুভাকাক্সক্ষী অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব রয়েছে। দেশটির সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে পরিচিত। এ দেশের মানুষও তাকে পছন্দ করে। এরকম আরও অনেক ব্যক্তিত্বকে আমন্ত্রণ জানানো হলে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। মোদির বিরুদ্ধে যেভাবে তীব্র গণপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে তাতে তার আগমনের সময় কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার উদ্ভব হওয়া অসম্ভব নয়। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং অনুষ্ঠানাদি কোনো কারণে ব্যহত বা বিঘ্নিত হোক, তা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এ প্রেক্ষাপটে, সরকারকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।