২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
ডায়াবেটিস চিকিৎসা একটি আধুনিকতম চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা। যদিও ডায়াবেটিস খুবই সনাতন একটি রোগ। কয়েক শতক বয়সি রোগটি বৈজ্ঞানিক এই উৎকর্ষের সময়েও নিয়ন্ত্রণ দুঃসাধ্য অবস্থায় বিরাজমানই নয় শুধু এর প্রাবল্যও রুখতে সমর্থ হচ্ছি না আমরা। তারপরও বহুবিধ প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সাপোর্ট ডায়াবেটিস চিকিৎসায় ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। সে টেকনিক্যাল ব্যাপারগুলো এখন আলোচনা করা হচ্ছে-
ইনসুলিন: ১৯২১ সালে আবিস্কৃত হবার পরে ইনসুলিন লক্ষ লক্ষ ডায়াবেটিস রোগীর জীবন বাঁচাতে সমর্থ হয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক সময়ের ইনসুলিনগুলোতে এলার্জিক রিয়েকশনসহ বেশকিছু জটিলতা ছিল। নতুন এনালগ ইনসুলিনগুলোর ক্ষেত্রে এলার্জিক রিয়েকশনের ঘটনা নাই বললেই চলে। পূর্বের ইনসুলিনগুলোতে পরবর্তী খাবারের ঠিক আগে আগে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়া এবং শেষ রাতের দিকে রক্তের গ্লকোজ কমে গিয়ে মারাত্মক অবস্থা হতে পারত। কিন্তু নতুন ইনসুলিনগুলো এটি অতিক্রম করতে সমর্থ হয়েছে। একই সাথে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ আরো নিখুঁত করতে ভূমিকা রাখছে।
যে দুটি ক্ষেত্রে নতুন ইনসুলিন বেশি উদ্ভাবনী ভূমিকায় সমৃদ্ধ হয়েছে; তা হল- ইনসুলিন পাম্প ও ইনহেলার ইনসুলিন।
ইনসুলিন পাম্প : এটি একটি সার্বক্ষনিক ইনসুলিন সরবরাহকারী যান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা। টাইপ-১ ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য ডায়াবেটিসে, যেখানে রক্তের গ্লকোজ নিয়ন্ত্রণ করা খুব দূরুহ (রক্তের গ্লকোজ অনেক বেশি থাকে অথবা চট করে কমে যায়)। সেক্ষেত্রে ইনসুলিন পাম্প দারুন ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশে ইনসুলিন পাম্পটি খুব বেশি জনপ্রিয় না হয়ে উঠলেও পৃথিবী ব্যাপী এটি ব্যাপকভাবে সমাদৃত। বাংলাদেশেও ক্রমশ: এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
ইনহেলার ইনসুলিন : ইনহেলার ইনসুলিন খুব সাম্প্রতিক কালের সংযোজন। বহুদিন থেকেই এ ইনসুলিন ইনজেকশনের বিকল্প খোঁজা হচ্ছিল, তারই ধারাবাহিকতায় ইনহেলার ইনসুলিন আবিষ্কার। কিন্তু এটিও শুধুমাত্র বিত্তবানদের নাগালের মধ্যে থেকে গেল। ইনহেলার ইনসুলিনটি অন্য ইনহেলারের মতোই নিতে হয়। এটি শুধুমাত্র খাবার খাওয়ার পরের বেড়ে যাওয়া রক্তের গ্লকোজকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে।
ইনসুলিন ইনজেকশন দেওয়ার কাঁচের সিরিঞ্জ, তৎপরিবর্তী প্লাষ্টিক সিরিঞ্জ ডায়াবেটিস রোগীদের খুব বেশি স্বস্তি দিতে পারেনি। ইনসুলিন পেন এসে রোগীদের স্বাচ্ছন্দ বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু এটাও তো ইনজেকশন! যুক্তরাষ্ট্রের হাভার্ড ইউনিভার্সিটি ও ম্যাসাচুসেট্স জেনারেল হাসপাতালের গবেষকদল কর্তৃক উদ্ভাবিত ইনসুলিন ট্যাবলেটটি বছর খানেকের মধ্যেই ইউএসএফডি’র অনুমোদন প্রাপ্ত হয়ে ডায়াবেটিস রোগীদের হাতের নাগালে পৌঁছে যাবে।
সাম্প্রতিক কালে ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিন নেবার ক্ষেত্রে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে; ইনসুলিন পোর্ট। এটি চামড়ায় লাগিয়ে রাখলে তিন দিনে সর্বোচ্চ ৭২ বার ব্যবহার করা যায়। এর সুবিধা হলো শুধু প্রথমবার ছিদ্র করে লাগাতে হয়, পরবর্তীবারগুলোতে পোর্টের ভিতরে ইনসুলিন দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা চর্বিতে শোষিত হয়।
ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ ভালো করতে গেলে বা তা বজায় রাখতে গেলে নিয়মিতভাবে ঘুম থেকে উঠার পরে, প্রধান খাবারগুলোর আগে বা পরে রক্তের গ্লকোজ মাপার প্রয়োজন হয়। হাতের মাঝখানের তিনটি আঙুলের ডগার পাশে ছিদ্র করে ক্যাপিলারির রক্ত নিয়ে গ্লকোমিটারের সাহায্যে এ পরীক্ষাটি করা হয়। এ কাজটি ইনসুলিন দেওয়ার চেয়ে ব্যথা দেয়। কিন্তু সম্প্রতিক যান্ত্রিক সুবিধা এ ক্ষেত্রে সু বাতাস বয়ে নিয়ে এসেছে। এক ধরণের “প্যাচ” পাওয়া যাচ্ছে যাতে “মাইক্রোচিপ” লাগানো থাকে যেটি ৫ বা ১৫ মিনিট পর পর রক্তের গ্লকোজের মাত্রা পরিমাপ করে মোাবইল ফোনের মতো ডিভাইসে প্রেরণ করতে থাকে। একটি প্যাচ একটানা ৭ দিন কাজ করে। ইনসুলিন পাম্পের সাথে তো বটেই আলাদা ভাবেও নিরন্তর রক্তের গ্লকোজ মাপার (সিজিএম) যান্ত্রিক সুবিধা এখন হাতের মুঠোয়। এটি ২৪ ঘণ্টায় ২৮৮ বার পর্যন্ত রক্তের গ্লকোজ মাপতে পারে। একবার লাগালে তা তিন দিন পর্যন্ত কাজ করে।
ডায়াবেটিস রোগীর জন্য মোবাইল এ্যাপস্ : স্মার্ট ফোন আধুনিক জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অনুসঙ্গ। স্মার্ট ফোন ব্যবহারকারীদের অর্ধেকেরও বেশি বিভিন্ন রকম স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য পেয়ে থাকেন। ডায়াবেটিস বিষয়ক তথ্যও সেখানে আছে। নিয়মিত হাঁটা, ক্যালরি ব্যবহার, গৃহিত খাদ্যের ক্যালরির পরিমাণ, চাহিদার ত‚লনায় শারীরিক শ্রমের ঘাটতি, দৈহিক ওজনের লক্ষ্যমাত্রা ও তা অর্জনের হার মোবাইল এ্যাপস্ থেকে পাওয়া যেতে পারে। অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের ডায়াবেটিসের রোগীদের বাড়ীতে নিয়মিত রক্তের গ্লকোজ পরিমাপের তাগাদা মোবাইল এ্যাপসের মাধ্যমে দিতে পারেন এবং রক্তের গ্লকোজের মাত্রার হিসাবও পেতে পারেন।
ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে পা সবসময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক রোগীই পায়ের সমস্যা বাস্নোয়ুবিক সমস্যায় ভোগেন এবং অনেক ক্ষেত্রেই তা লক্ষ্য করেন না অথবা ঠিক ঠাক মতো চিকিৎসার আওতায় থাকেন না। বর্তমানে বহুরকম জুতো, মোজা এক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়ক। কম্পিউটার ভিত্তিক পায়ের স্নায়ুবিক সমস্যা মূল্যায়ন ও উক্ত ব্যক্তির পায়ের জন্য সঠিক জুতোর ডিজাইন এখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাওয়া সম্ভব।
যান্ত্রিক সুবিধাগুলো ব্যবহার করে ডায়াবেটিস শনাক্তকরণ, নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে হবে।
ডাঃ শাহজাদা সেলিম
সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ
ফোন: ০১৯১৯০০০০২২
ইমেইল: [email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।