২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র আজকের যুগের অন্যতম মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে উঠেছে। এই রোগের সাথে খাদ্যের গভীর সম্পর্ক আছে সে কথাও সবাই জানেন। তাই এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কী ধরনের খাদ্য গ্রহণ করা উচিত সে ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিত। ডায়াবেটিস রোগের প্রকোপ বর্তমানকালে যথেষ্ট বেড়েছে। কেউ কেই মনে করেন আশঙ্কাজনকভাবেই বেড়েছে। শহরকেন্দ্রিক মানুষের তুলনামূলক অলস জীবন যাপন আর এর সাথে অতিরিক্ত কথিত ‘সুখাদ্য’ এই রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি করেছে। ডায়াবেটিস হলে দেহে পরিমাণ মতো ইনসুলিন তৈরি হয় না বা তার ঘাটতি দেখা দেয়। এ কারণে দেহ চিনি জাতীয় খাদ্যকে ভেঙ্গে মাত্রা নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেড়ে যায়। বহুমূত্রের পথ ধরে রোগীর দেহে হৃদরোগ কিডনিসহ নানা জটিল রোগ বাসা বাঁধতে পারে। এ-কারণে ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে প্রথমেই খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অর্থাৎ চিনি ও শর্করা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। একই সাথে অতিরিক্ত ভাজা-পোড়া খাওয়া যথাসাধ্য বন্ধ রাখতে হবে। যদি নিয়মিত ব্যায়াম না করেন তবে যতই ওষুধ গ্রহণ করুন না কেন, তাঁর রক্তের চিনির মাত্রা হ্রাস পাবে না। বহুমূত্র নিয়ন্ত্রণ হবে না। একই সাথে ডায়াবেটিসের পথ ধরে অন্যান্য রোগের আক্রমণের আশঙ্কা কমবে না।
সাধারণ মানুষ যে পরিমাণ শর্করা জাতীয় খাদ্য অর্থাৎ ভাত বা রুটি খান ডায়াবেটিসের রোগী মোটেও সে পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করতে পারবেন না। তাঁর যে পরিমাণ ক্যালরির প্রয়োজন পড়ে তাঁর মধ্যে ষাট থেকে সত্তর শতাংশ শর্করা খাদ্য হওয়া উচিত। এরপর বাকি ২০ থেকে ২৫ শতাংশ প্রোটিন বা আমিষ এবং ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ফ্যাট বা স্নেহ জাতীয় খাবার থেকে অর্জন করা উচিত। সাধারণভাবে পূর্ণবয়সী মানুষের দেহের ওজোন যতো কিলোগ্রাম হতে ততগ্রাম আমিষ তাকে খেতে দিতে হবে। অর্থাৎ কারও ওজন যদি ৭৫ কিলোগ্রাম হয় তবে তাকে ৭৫ গ্রাম আমিষ গ্রহণ করতে হবে। তবে শিশুদের বেলায় এই পরিমাণ একটু বাড়বে। অর্থাৎ তাকে প্রতিকিলো ওজনের জন্য ১.২ গ্রাম আমিষ সরবরাহ করতে হবে। অর্থাৎ কোনও শিশুর ওজন যদি ১৮ কিলোগ্রাম হয় তবে তাঁকে ২১ গ্রাম আমিষ গ্রহণ করতে হবে। তবে গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে এ নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটবে। যেসব মায়ের ডায়াবেটিস আছে তাঁরা পরিপূর্ণভাবে তা নিয়ন্ত্রণ না করে গর্ভধারণ করা মোটেও উচিত হবে না। গর্ভে সন্তান থাকাকালীন অবস্থা এ ধরনের মায়ের খাদ্য তালিকায় চিনি জাতীয় খাবার নিয়ন্ত্রণ করার দরকার নেই। অন্যদিকে সন্তান গর্ভে থাকার কারণে অনেকের মধ্যে বহুমূত্রের উপসর্গ দেখা দেয়। এক্ষেত্রে সাধারণভাবে সামান্য সতর্কতা ছাড়া বিশেষ কোনও নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন পড়ে না।
ডায়াবেটিস রোগীর খাবারের সময়সূচি রক্ষা করা একান্তভাবে প্রয়োজনীয়। এধরনের রোগীদের প্রতি ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘন্টা অন্তর তাকে খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। খাদ্যের এই সময়সূচি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে তার পরিণাম ভাল হবে না। ডায়াবেটিস রোগী চিকিৎসায় এবং আনুষঙ্গিক নিয়ম মানার ফলে যে সুফল অর্জন করতে পারবেন কেবল খাদ্যের নিয়ম না মানার কারণে ডায়াবেটিসের রোগীদের রক্তে চিনির পরিমাণ অতিমাত্রায় কমে যেতে পারে, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে হাইপোগ্লাইসিমিয়া বলা হয়। এছাড়া খাদ্য গ্রহণের পর রক্তে চিনির পরিমাণ অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পেতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এ অবস্থাকে হাইপারগ্লাইসিমিয়া বলা হয়। তাই যদি তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টা পরপর খাবার গ্রহণ করা হয় তবে রক্তে চিনির এই মাত্রা উঠানামা করার সুযোগ পায় না।
মনে রাখতে হবে ডায়াবেটিস কখনই সারে না। এই রোগ সারাবার কোনও ওষুধ এখনও পর্যন্ত কেউ উদ্ভাবন করতে পারেননি। তবে ডায়াবেটিস রোগকে নিয়ন্ত্রণে রেখে দীর্ঘদিন বা রোগ সারিয়ে তোলার জন্য নয় রোগী যেন সুস্থ সক্রিয় জীবন যাপন করতে পারেন তার জন্যেই। তাই ডায়াবেটিসের রোগীকে সুস্থ জীবন যাপন করতে হলে নিয়ম মেনে খাদ্য গ্রহণ ও প্রত্যেহ ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক-কলামিস্ট।
নির্বাহী সদস্য, ডায়াবেটিক সমিতি, সিলেট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।