২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
মানুষ সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে যে রোগগুলো প্রকৃতি সৃষ্টি করেছে তার মধ্যে ডায়াবেটিস অন্যতম। প্রাচীন চিকিৎসাশাস্ত্রে একেই বলা হয়েছে মধুমেহ। চরক সংহিতা, সুশ্রুত সংহিতায় এই রোগ সম্বন্ধে অনেক বর্ণনা আছে। বলা হয়েছে, এ রোগ নিরাময় হয় না, কিন্তু আয়ত্তে রাখা যায়। প্রস্রাবে চিনি, দুর্বলতা, ঘা না-শুকানো, বিষফোড়া, গ্যাংগ্রিন, তন্দ্রাভাব এগুলো মধুমেহের লক্ষণ।
এই রোগ সারা জীবনের সঙ্গী হলেও নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা, ওষুধ খাওয়া এবং সংযত জীবনযাপন করলে এ রোগের প্রকোপকে প্রতিরোধ করা যায়।
কেন ডায়াবেটিস হয় তা বলা শক্ত। তবে এ রোগটি সংক্রামক নয়। পেটে পাকস্থলী নীচে অগ্ন্যাশয় বা প্যাংক্রিয়াস থেকে নিঃসৃত ইনসুলিন নামক পরিপাক সহায়ক হরমোন রক্তে বিপাক প্রক্রিয়ায় রক্তের শর্করা থেকে প্রয়োজনীয় শক্তি ও গ্লাইকোজেন উৎপন্ন করে। কোনো কারণে অগ্ন্যাশয়ে ইনসুলিন তৈরি ঘাটতি হলে বা ওই ইনসুলিন রক্তে না-মিশলে বা দেহের চাহিদা বেড়ে গেলে, রক্তের চিনির যথাযথ ব্যবহার হয় না এবং রক্তে চিনি বৃদ্ধি পেতে থাকে।
কাদের সহজে ডায়াবেটিস হয় জানলে মানুষের পক্ষে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা বা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। যাঁদের বংশগত ইতিহাসে ডায়াবেটিস আছে তাঁদের শতকরা ৪৬ জনের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রোগা লোকের চেয়ে মোটা লোকেরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। কায়িক পরিশ্রমীদের চেয়ে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, জজ, অফিসকর্মী, ব্যবসায়ী, শিক্ষক প্রভৃতি বৃক্তিমূলক বুদ্ধিজীবীরা বেশি আক্রান্ত হন। বাচ্চাদের চেয়ে বয়স্কদের এই রোগ হওয়ার বেশি সম্ভাবনা থাকে। বেশিদিন ধরে মূত্র অধিক হওয়ার ওষুধ ব্যবহার করলে এ রোগ হতে পারে। মামস, ফ্লু প্রভৃতি ভাইরাস শিশুদের অগ্ন্যাশয় আক্রমণ করলে এ রোগ হতে পারে।
বেশি উপবাস, বেশি মাত্রায় শ্বেতসার খেলে বা উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার প্রচুর পরিমাণে খেলেও এ রোগ হতে পারে। মানসিক দুশ্চিন্তাও এই রোগ বৃদ্ধিতে সহায়ক।
এই রোগের কতগুলো উপসর্গ দেখা দিলে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। অজ্ঞাত কারণে দেহের ক্লান্তি ও মানসিক অবসাদ, শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া এ সব কারণে এ রোগ হতে পারে।
যদি খিদে বেড়ে যায়, মুখ শুকিয়ে যায়, তেষ্টা বেশি পায়, বারে বারে পানি খাওয়ার ইচ্ছা জাগে, এক সঙ্গে প্রচুর ও বারে বারে প্রস্রাব হয়, ওজন কমে যায়, শরীর দুর্বল বলে মনে হয়। দৃষ্টিতে অস্বচ্ছতা ও অকালে ছানি পড়া, গায়ে বা হাত-পায়ে ব্যথা ও যন্ত্রণা, রাত্রে পায়ে যন্ত্রণা ও খিচুঁনি হয়, প্রায়ই ঠান্ডা লাগে, সর্দি-কাশি, ফোড়া, কার্বঙ্কল, ঘা শুকাতে দেরি হচ্ছে বা মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয় তাহলে ডায়াবেটিস রোগের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক-কলামিস্ট।
মোবাইল-০১৭১২১০০০৭৭।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।