পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
![img_img-1722040331](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678437663_IMG-20230310-WA0005.jpg)
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের ৮৪ লাখের বেশি মানুষ ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন। যাদের চিকিৎসায় ১৫০ জন এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট (ডায়াবেটিস ও হরমোন বিশেষজ্ঞ) রয়েছেন। এ হিসাবে প্রতি ৫৬ হাজার রোগীর সেবায় চিকিৎসক সংখ্যা মাত্র একজন। আর মোট জনসংখ্যা হিসাবে প্রতি ১২ লাখ মানুষের জন্য একজন বিশেষজ্ঞ রয়েছেন।
প্রতিবছর ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশসহ প্রায় ১৭০টি দেশে এ দিবসটি পালিত হয়। বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে রোগটি সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টিই বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবসের প্রধান লক্ষ্য। এবারের প্রতিপাদ্য- ডায়াবেটিস সেবা নিতে আর দেরি নয়।
দিবসটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ তার বাণীতে বলেছেন, নগরায়নের কারণে জীবন-যাপন, খাদ্যাভ্যাসে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। কায়িক পরিশ্রমের অভাবে দিন দিন ডায়াবেটিসের প্রকোপ বাড়ছে। এ অবস্থায় রোগটি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সময়মতো চিকিৎসা নিতে হবে। সচেতনতা তৈরিতে চিকিৎসক, গণমাধ্যম, সামাজিক সংগঠন বেসরকারি সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, ডায়াবেটিস সারাজীবনের রোগ। কিন্তু একে সুনিয়ন্ত্রিত রাখতে পারলে সুস্থ্য স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব। কাজেই এর ঝুঁকি সম্পর্কে জানতে হবে। অন্যদেরকে অবহিত করতে হবে। সরকার জনগণের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় একটি গণমুখী স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নে কাজ করছে। ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সরকারের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
এছাড়া দিবসটি উপলক্ষ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীও বিশেষ বাণী দিয়েছেন। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি (বাডাস) নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সমিতির অন্যান্য অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত অধিভুক্ত সমিতিগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে র্যালি বা পদযাত্রার পরিবর্তে রোড শো’র আয়োজন করা হয়েছে। আজ সকাল সাড়ে আটটায় শাহবাগে থেকে রমনা পার্ক পর্যন্ত প্ল্যাকার্ড হাতে সড়কের একপাশে দাঁড়িয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হবে। সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত রমনা পার্ক, ধানমন্ডি রবীন্দ্র সরোবর এবং এনএইচএন ও বিআইএইচএস’র বিভিন্ন কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকায় প্রচরাণা চালানো হবে। সকাল ১০টায় চিকিৎসক রোগীদের নিয়ে বারডেম অডিটোরিয়ামে প্রশ্নোত্তর পর্ব ও দুপুর সাড়ে ১২টায় তৃতীয় তলায় আলোচনা সভা হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করবেন বারডেমের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের প্রফেসর ফারুক পাঠান। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে চুতুর্থ তলায় স্বল্পমূল্যে হার্ট ক্যাম্প হবে। এছাড়াও ডায়াবেটিস সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে দৈনিক পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ, কান্ত্রি’র বিশেষ সংখ্যা, সচেতনতামূলক পোস্টার ও লিফলেট প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরে ইনসুলিন নামক এক প্রকার হরমোনের অভাব হলে, কিংবা উৎপাদিৎ ইনসুলিনের কার্যকরিতা কমে গেলে রক্তের গ্লুকোজ দেহের বিভিন্ন কোষে প্রয়োজনমত ঢুকতে পারে না। রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। এ পরিস্থিতিকেই ডায়াবেটিস বলে। যথা সময়ে চিকিৎসা না নিলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, কিডনি জটিলতা, অন্ধত্ব, মাড়ির রোগ এবং অঙ্গহানীর মতো শারীরিক জটিলতা হতে পারে। এসব কারণে মৃত্যু ঝুঁকিও আছে। ফলে রোগটির চিকিৎসায় ব্যবহƒত ইনসুলিনসহ সব ধরনের সেবা ব্যবস্থা নিশ্চত করতে হবে। কিন্তু দেশে রোগটির মানসম্মত চিকিৎসা দিতে মাত্র ১৫০ জন (এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট) বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। এতে তৃণমূেেল রোগীরা সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে এখনই অনন্ত জেলা হাসপাতালগুলোতে এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ খোলা ও চিকিৎসক বাড়াতে হবে।
আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন (আইডিএফ) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বাংলাদেশে ৮৪ লাখের বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। যাদের প্রায় অর্ধেকই মহিলা। কিন্তু আক্রান্তদের অর্ধেকই জানেনা তাদের ডায়াবেটিস রয়েছে। এছাড়া দেশে শতকরা ২০ জন মহিলা গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। যাদের মধ্যে ৬৫ শতাংশই পরবর্তীতে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে এসব মায়েদের গর্ভস্থ শিশুর আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি।
জানতে চাইলে বাডাসের সভাপতি ও ন্যাশনাল প্রফেসর ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব ডায়াবেটিস মহামারি ধারণ করেছে। আইডিএফের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৬ কোটি (প্রতি ১১ জনে ১ জন)। যা ২০৩০ সালে ৫৮ কোটিতে দাঁড়াবে। অপরিকল্পিত ও অব্যাহত নগরায়ন, পরিবর্তিত খাদ্যাভ্যাসের কারণে এই সংখ্যা বাড়ছে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চললে এবং পরিমাণমত ওষুধ সেবনে রোগটি নিয়ন্ত্রিত রাখা সম্ভব।
বাডাসের মহাসচিব মোহাম্মাদ সাইফ উদ্দীন বলেন, প্রতি চারজনের তিনজন ডায়াবেটিস রোগীর বসবাস বাংলাদেশের মতো মধ্যম ও নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে। বিশ্বব্যাপী রোগটি এখনই প্রতিরোধ করা না গেলে ২০৪৫ সাল নাগাদ আক্রান্তের সংখ্যা ৭০ কোটিতে পৌছানোর আশঙ্কা রয়েছে। ৮০ শতাংশ ডায়াবেটিস প্রতিরোধযোগ্য হলেও প্রতি দুইজন রোগীর মধ্যে একজেনর ইনসুলিন বা ট্যাবলেট কেনার সুযোগ নেই। তবে বাডাস নিবন্ধনকৃত প্রায় ৫৬ লাখ (মোট আক্রান্তের ৬৫ শতাংশ) রোগীকে সেবা দিয়ে আসছে। এ লক্ষ্যে ১৮ হাজার চিকিৎসককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। গর্ভধারণ পূর্ব একটি প্রকল্পের মাধ্যমে চার’শ কাজি, একশ’জন ইমাম ও ৩০০ চিকিৎসক এ কর্মসূচিতে যুক্ত রয়েছেন।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার এক গোলটেবিল বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, দেশে অসংক্রামক রোগের কারণে দেশের অন্তত ৬১ ভাগ মানুষ কোনোনা কোনো স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন। এরমধ্যে ডায়াবেটিস অন্যতম। রোগটি নীরবে শরীরে চলে আসে। দেশের প্রান্তিক অঞ্চলের পাশাপাশি শহরের মানুষজনও অনেকেই স্বাস্থ্য সচেতনতা বা ডায়াবেটিস নিয়ে তেমন একটা সচেতন নয়।
তিনি বলেন, দেশের মাত্র ১২ ভাগ মানুষের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু অনেকেই টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে হাসপাতালে যান না। ফলে শহর বা গ্রামের প্রতিটি হাসপাতাল থেকেই রোগটির প্রায় সব ওষুধ ও চিকিৎসা বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। ডায়াবেটিসের ব্যয়বহুল চিকিৎসা সামগ্রী ইনসুলিনও বিনামূল্যে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।