পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে জমজমাট প্রচারণার পর আজ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে শেষদিনেও বিএনপি, সচেতন নাগরিকবৃন্দ এবং পশ্চিমাদেশগুলোর কূটনীতিকরা নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা ও প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করেছেন। বিএনপি’র অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে সিটি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়ায় বিদেশি কূটনীতিকরা এই নির্বাচনকে শেষ পর্যন্ত অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ ও গণনা নিশ্চিত করে জনগণের ভোটাধিকার ও রায়ের প্রতিফলন নিশ্চিত করার আহবান জানিয়েছেন। পাশাপাশি কোনো কোনো পশ্চিমা রাষ্ট্রদূতকে নির্বাচন কমিশনার, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-এমপি ও মেয়র প্রার্থীদের সাথে সাক্ষাৎ করে নিজেদের প্রত্যাশা ও মতামত তুলে ধরতে দেখা গেছে। বিশেষত গোপীবাগে বিএনপি প্রার্থী ইশরাক হোসেনের র্যালিতে হামলার পর বৃটিশ রাষ্ট্রদূত তার বাসায় গিয়ে সাক্ষাৎ করেন। একটি স্থানীয় নির্বাচনে বিদেশি কূটনীতিকদের এমন তৎপরতাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেননি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ. কে. এম. আব্দুল মোমেন। বৃহস্পতিবার এক প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়ায় কূটনৈতিক কন্ডাক্ট না মানলে তাদের দেশে চলে যেতে বলবেন বলে অনেকটা ধমকের সুরে, কথা বলেছেন তিনি। নির্বাচন নিয়ে কূটনীতিকদের প্রত্যাশা এবং স্টেকহোল্ডারদের সাথে মতবিনিময়ের কার্যক্রমকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘নাক গলানো’ বললেও পশ্চিমা কূটনীতিকরা তা অস্বীকার করেছেন। ঢাকায় নিযুক্ত নয়টি পশ্চিমা দেশের কূটনীতিক এক যৌথ বিবৃতিতে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটদান নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। সরকার বা জনগণ যেভাবেই গ্রহণ করি না কেন, নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড গঠনে নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা, বিদেশি কূটনীতিকদের তৎপরতা এবং প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের বাস্তবতাকে অস্বীকার করা যায় না।
গ্লোবালাইজড বিশ্বে কোনো দেশই বিশ্ব রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে এ কথা আরো বাস্তব। অতীতের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের দায় নির্বাচন কমিশন বা সরকার এড়াতে পারে না। এভাবেই বাংলাদেশ ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশের তালিকায় স্থান পাচ্ছে। আর আমাদের রাজধানী শহর এখন বিশ্বের অন্যতম দূষিত ও বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় স্থান পাচ্ছে। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং রাজধানী ঢাকা নগরীকে বাসযোগ্য, দূষণমুক্ত ও পরিবেশবান্ধব করে গড়ে তুলতে অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় যোগ্য মেয়র নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ পশ্চিমা ৯টি দেশের কূটনীতিকদের যৌথ বিবৃতিতে সেই প্রত্যাশাই ফুটে উঠেছে। সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে মার্কিন দূতাবাসের ফেইসবুক পেজে দেয়া এক পোস্টে বলা হয়েছে, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি হাতে হাত রেখে চলে। আমাদের অভ্যন্তরীণ ইস্যু নিয়ে বিদেশিদের অযাচিত তৎপরতা কাম্য না হলেও নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হোক, কোনো প্রশ্নবিদ্ধ বা ভোট জালিয়াতির নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি না হোক, তা সকলেরই প্রত্যাশা। তবে সিটি নির্বাচনে পশ্চিমা কূটনীতিকদের তৎপরতায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমামসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের নাখোশ হওয়া এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কঠোর মন্তব্য নিয়ে সমাজে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবেশী দেশের রাজনৈতিক নেতাদের অব্যাহত বাংলাদেশ বিরোধী বক্তব্য, সীমান্তে বিএসএফ’র বাংলাদেশি হত্যা ও পুশইন তৎপরতার বিরুদ্ধে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চেতনা এমন শাণিত হলে দেশবাসী আরো আশান্বিত হতে পারতো।
সিটি নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা কূটনীতিকদের যৌথ বিবৃতি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রচ্ছন্ন হুমকির ঘটনাটি এমন সময় ঘটল, যখন ঢাকায় বিডিএফ বা বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের বৈঠক উপলক্ষে পশ্চিমা উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। উন্নয়ন সহযোগীরা তাদের প্রতিশ্রুত অর্থ ছাড় না করায় সম্মেলনে কঠোর সমালোচনা করেছেন অর্থমন্ত্রী। উন্নয়ন সহযোগিতা ছাড়াও পশ্চিমা দেশগুলো আমাদের গার্মেন্টসহ বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রধান অংশীদার। তাদের সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক আমাদের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক বিকাশের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গত এক দশকের বাস্তবতা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মধ্যপ্রাচ্যসহ আমাদের বৈদেশিক কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ এবং বৈদেশিক বাণিজ্য নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে লাখ লাখ বাংলাদশি অভিবাসি রয়েছেন। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে তাদের সাথে টানপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। সউদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথেও সম্পর্কের টানপোড়েন অস্বীকার করা যায় না। এসব ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারে না। প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে আঞ্চলিক ও দ্বিপাক্ষিক ইস্যুগুলোতেও পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের দক্ষতা ও সক্ষমতা প্রশ্নবিদ্ধ। আমাদের অর্থনৈতিক স্বার্থেই নির্বাচন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। ঢাকা সিটি নির্বাচন এ ক্ষেত্রে সরকার, নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য অনেক বড় পরীক্ষা। সব আশঙ্কাকে মিথ্যা প্রমাণিত করে সব পক্ষ সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হোক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। সিটি নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা কূটনীতিকদের তৎপরতা ও নাক গলানোর বিপরীতে অযাচিত বাক্য প্রয়োগ না করে সুষ্ঠু, অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে তাদেরসহ সাধারণ মানুষকে আস্থায় আনাই হবে এক্ষেত্রে উত্তম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।