Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পদ্মার ভাঙনে দিশেহারা গোয়ালন্দবাসী

মো. মোজাম্মেল হক, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

অসময়ে তীব্র ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মা পাড়ের মানুষ। গত বর্ষার ভয়াবহ নদী ভাঙনের ক্ষত না শুকাতেই আবার শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। শুষ্ক মৌসুমের এই ভাঙনে গত এক সপ্তাহে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে শ’ শ’ বিঘা ফসলী জমি। সরিয়ে নিতে হচ্ছে বসতবাড়ি। ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে পদ্মা পাড়ের হাজারো মানুষের।
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের ত্রান ও পুর্নবাসন শাখার তথ্য মতে, প্রমত্তা পদ্মার ভয়ালগ্রাসে গত ২০১৭ সালে ১৯১৫টি, ২০১৮ সালে ২০৭০টি এবং ২০১৯ সালে জেলায় ৩১২০টি বসতবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সূত্র আরো জানায়, নদী ভাঙনের কবলে পরা এসব বাড়ির মালিকদের মধ্যে নগদ অর্থ, টিন ও চাল সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার দেবোগ্রাম ইউনিয়নের কাওয়াজানি গ্রামে দেখা যায়, একের পর এক নদী তীরের মাটি ভেঙে ফসলী জমি বিলীন হচ্ছে পদ্মায়। নদী তীরে আবাদকৃত পেয়াজ, টমেটো, বেগুনসহ অন্যান্য সবজিসহ ফসলি জমি তলিয়ে যাচ্ছে। জমির মালিকেরা জমিতে থাকা ফসল তুলে কিছুটা হলেও বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।
ফসল বাঁচানো কাজে ব্যস্ত থাকা দেবোগ্রাম ইউনিয়নের আলেয়া বেগম বলেন, তিনমাস আগের ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে মনে চাপা কষ্ট আর বুকভরা বেদনা নিয়ে অন্যের জমিতে তিন মেয়েকে নিয়ে কুড়ে ঘরে বাস করে আসছিলাম। ওই সময়ের ভাঙন থেকে রেহাই পাওয়া ১০ শতাংশ জমিতে করেছিলাম টমোটোর আবাদ। হঠাৎ আবারও ভাঙনে নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে আমার শেষ সম্বল। এখন আমার দাঁড়ানোর কোন জায়গা নেই। ভাঙন আমার জীবনে এটাই প্রথম নয়, এর আগেও ভেঙেছে আরো তিনবার, তবে এবার নিঃস্ব হলাম।
একই এলাকার কৃষক আ. জলিল প্রামানিক (৬৫) বলেন, পদ্মার ভাঙনে দিশেহারা আমরা। এখন কোথায় যাবো? কি করবো? কার কাছে বললে ভাঙন বন্ধ হবে? আমাদের এখন একটাই চিন্তা যেভাবে ফসলী জমি ভাঙছে বসত বাড়ি আর রক্ষা পাবে না। এভাবে আর দু’এক দিন ভাঙলেই কাওয়াজানি গ্রামটি মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।
এ সময় দেবোগ্রামের বাসিন্দা খলিল মল্লিক বলেন, শুধু ফসলী জমি নয়। ভাঙন ঝুঁকিতে আছে পুরো গ্রাম। ভাঙন ঝুঁকি দৌলতদিয়া ও দেবোগ্রামের পাঁচটি বিদ্যালয়, মসজিদ, মন্দিরসহ হাজার হাজার বসত বাড়ি। শুষ্ক মৌসুমে এমন ভাঙন আমরা এর আগে কখনও দেখিনি বলেও জানান তিনি।
অপর এক বাসিন্দা নুরী বিবি বলেন, আমরা এ দেশের নাগরিক। ভোটের সময় জনপ্রতিনিধি, চেয়ারম্যান মেম্বার এমপিরা আসেন বলেন, ভোট দেন নদী বেঁধে দিবো। কিন্তু ভোটের পরে আর কারো দেখা পাওয়া যায় না। আমরা কোন চাল চাই না চাই নদী শাসন।
গোয়ালন্দ উপজেলা চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) আসাদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, নদীর পানির লেয়ার নিচে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমের মতই ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও দেবোগ্রাম ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা ভেঙেছে। এ ব্যপারে বার বার বলা সত্যেও বিভিন্ন অযুহাত ছাড়া কোন পদক্ষেপ নেই পানি উন্নয়ন বোর্র্ডের। অচিরেই নদী শাসনের দাবিও জানান তিনি।
এ ব্যপারে রাজবাড়ীর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো’র) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, শুষ্ক মৌসুমের হঠাৎ ভাঙনের কথা শুনেছি। ভাঙন কবলীত কাওয়াজানি এলাকাটি বিআইডবিøটিএর একটি প্রকল্পের আওতায় পড়েছে। ওই প্রকল্পটি একনেকে পাশ হলেই কাজ শুরু করা হবে। তবে আশা করচ্ছি এ মাসের মধ্যেই প্রকল্পটি পাস হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পদ্মা

১১ জানুয়ারি, ২০২৩
৩১ অক্টোবর, ২০২২
৪ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ