পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ভারতের বহুল আলোচিত নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ) সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে মন্তব্য করেছেন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রণিধানযোগ্য। সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের সময় গালফ নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘আমরা বুঝলাম না, তারা (ভারত সরকার) এটা কেন করলো। এর কোনো প্রয়োজন ছিল না।’ ন্যায় ও সমতার দৃষ্টিকোণ থেকে সিএএ যে যথার্থ হয়নি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বস্তুত সেটাই জানিয়ে দিয়েছেন। শুধু সিএএ নয়, এর আগের জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) নিয়েও তুমুল বিতর্ক রয়েছে। ভারতের তরফে বলা হয়েছে, এনআরসি ও সিএএ তার অভ্যন্তরীণ বিষয়। একথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার বরাবরই এনআরসি ও সিএএ-কে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসাবেই দেখে আসছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে অবহিত ও আশ্বস্থ করেছেন। বলা বাহুল্য, ভারত যতই বলুক এনআরসি ও সিএএ তার অভ্যন্তরীণ বিষয়; কিন্তু আদৌ বিষয় দুটি অভ্যন্তরীণ বিষয়ের সীমায় আবদ্ধ নেই। তা আন্তর্জাতিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে ও হচ্ছে তাতেই এটা স্পষ্ট। খোদ ভারতে এনআরসি ও সিএএ’র বিরোধিতা করে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে উঠেছে এবং কোথাও কোথাও আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। আসামে এনআরসি’র পর দেখা গেছে, লাখ লাখ লোকের নাম তালিকায় নেই। আসামে এনআরসি করা হয় মুসলমানদের নাগরিত্বহীন করার জন্য। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, অনেক হিন্দুর নামও তালিকায় নেই। কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার ও আসামের বিজেপি রাজ্য সরকারের তরফে দাবি করা হয়, বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি মুসলমান সেখানে অনুপ্রবেশ করে বসবাস করছে। তাদের বের করে দেয়ার জন্যই যে এনআরসি, এটা বিজেপি নেতারা প্রকাশ্যই বলেছেন। ওদিকে সিএএ’র লক্ষ্যও মুসলমান। এই আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে নির্যাতিত হয়ে যেসব হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসী ও খ্রিস্ট সম্প্রদায়ের মানুষ ২০১৪ সালের পূর্বে ভারতে গেছে, তারা সে দেশের নাগরিক হওয়ার যোগ্য হবে। এই তালিকায় মুসলমানদের নাম রাখা হয়নি। না রাখার মাধ্যমে ভারতীয় মুসলমানদের নাগরিকত্বহীন করার ও বের করে দেয়ার রাস্তা পরিষ্কার করা হয়েছে। আসামে এনআরসি’র সঙ্গে বাংলাদেশের নাম এসেছে। বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী রাজ্যসহ অন্যত্র এনআরসি হলেও বাংলাদেশের নাম আসবে। অন্যদিকে সিএএ’র সঙ্গে বাংলাদেশের নাম আছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের পাশাপাশি। এই তিনটি দেশের ওপর প্রকারান্তরে সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং বিতাড়নের অভিযোগ করা হয়েছে। কাজেই, এনআরসি ও সিএএ-কে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসাবে গণ্য করার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বর্তমান সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার বলে দাবি করে দু’ দেশের সরকারই। এই প্রেক্ষাপটে দু’ সরকারের মধ্যে এ নিয়ে যে কথাবার্তা হয়েছে, যে বক্তব্য ও আশ্বাস ভারতের তরফ থেকে বাংলাদেশকে দেয়া হয়েছে, বাংলাদেশ তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছে। সে কথাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য উঠে এসেছে। এনআরসি ও সিএএ ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে স্বীকার করেও তিনি একথা বলে দিয়েছেন, সিএএ ঠিক হয়নি। অত্যন্ত সতর্ক ভাষায় তিনি তার বক্তব্য পেশ করেছেন। একই সঙ্গে ভারতের অভিযোগেরও তিনি চমৎকার জবাব দিয়েছেন। ভারত অভিযোগ করে থাকে যে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা ধর্মীয় কারণে নির্যাতিত হয়ে ভারতে চলে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা এই অভিযোগ নাচক করে দিয়েছেন। কিছুদিন আগে বাংলাদেশি বলে কিছু লোককে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করে ভারত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সফলও হয়। সে সময় পত্রপত্রিকায় এখবর প্রকাশিত হয়। তবে অতীতের মতো এবারও ভারত ব্যর্থ হয়। ওদিকে ভারত থেকে কোনো লোকের বাংলাদেশে আসা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভারত থেকে কারো বাংলাদেশ আসার ঘটনা ঘটেনি। তিনি এই সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, ‘ভারতের মধ্যেই অনেকে নানা সমস্যায় আছেন।’
প্রধানমন্ত্রী তার গোটা বক্তব্যে বাংলাদেশের নীতি, অবস্থান ও অভিমত তুলে ধরেছেন। নরেন্দ্র মোদির আশ্বাসে আস্থা রেখেও বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয়টি আড়াল করেননি। পাশাপাশি ভারতীয় নেতাদের বক্তব্যের সঙ্গে অত্যন্ত সৌজন্য প্রদর্শন করে দ্বিমত পোষণ করেছেন। এনআরসি ও সিএএ নিয়ে ভারতে এখন তর্ক-বির্তক ও আন্দোলন-সংগ্রাম যা চলছে তাতে এটা পরিষ্কার যে, ভারত এই দুই ইস্যুতে দ্বিধাবিভক্ত এবং পক্ষের চেয়ে বিপক্ষের শক্তি মোটেই কম নয়। অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এনআরসি ও সিএএ কার্যকর হলে ভারত তার কথিত উদার গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র হারাবে। জাতীয় ঐক্য-সংহতিও এর ফলে হুমকির মুখে পড়তে পারে। হিন্দুত্ববাদী বিজেপি ক্ষমতায় এসে ভারতের ‘প্রতিষ্ঠাতা পিতাদের’ দেখানো পথ থেকেই বিচ্যুত হয়নি, গোটা দেশকে নানামুখী সমস্যার মধ্যে নিক্ষেপ করেছে। এর মধ্যে অর্থনৈতিক ও কর্মসংস্থানের সমস্যাই প্রকট। হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠা কিংবা রামরাজ্য স্থাপন এসব সমস্যার সমাধান দেবে না। কাজেই, ক্ষমতাসীন বিজেপির উচিৎ স্বাভাবিক ও সঙ্গত অবস্থায় ফিরে আসা এবং দেশকে ফিরিয়ে আনা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।