পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
আমাদের সংবিধানে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করার কথা বলা হয়েছে। জাতি সংঘের এসডিজি’র ১৭টি লক্ষ্যের একটি লিঙ্গ বৈষম্য দূর করা। পবিত্র ইসলাম ধর্মে নারীকে পুরুষের সমান মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। বহুল প্রচলিত প্রবাদবাক্য হচ্ছে সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে। এত কিছুর পরও নারী তার পূর্ণ মর্যাদা পায়নি। বরং ব্যাপক হারে নানা নির্যাতন, বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ব্রিটেনে পুরো কর্মজীবনে পুরুষের তুলনায় নারীর গড় আয় এক-তৃতীয়াংশেরও কম। সরকারি পরিসংখ্যানেই এ কথা বলা হয়েছে। উক্ত পরিসংখ্যান মতে, সম্পূর্ণ কর্মজীবনে একজন নারীর গড় আয় মাত্র ৩.৮০ লাখ পাউন্ড। আর একজন পুরুষের গড় আয় ৬.৪৩ লাখ পাউন্ড। এ তো গেল বৈষম্যের কথা। ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য ঘটনাও পশ্চিমা দেশগুলোতে ব্যাপক। যুক্তরাষ্ট্রে এক মিনিট বিদ্যুৎ গেলে কয়েক হাজার ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এমনকি সেখানে আর্মির নারী সদস্যদের অনেকেই ধর্ষণের শিকার হয় সহকর্মীদের দ্বারা। ভারতের কোন কোন রাজ্যে নারীর সন্তান হলে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। সে ভয়ে অনেক নারী জরায়ু কর্তন করে ফেলে। বাংলাদেশেও নারী নির্যাতনের হার অনেক। পারিবার, শিক্ষাঙ্গন, কর্মস্থল, ব্যবসা, রাজনীতি, শিল্প-সাহিত্য, খেলা, যানবাহন তথা দেশের সব ক্ষেত্রেই নারীরা নির্যাতন ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। সা¤প্রতিককালে ধর্ষণ তো মহামারীর আকার ধারণ করেছে। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের কিছু লোকও জড়িত আছে। নারী হত্যার সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। নির্বাচন কমিশনের আইন অনুসারে ২০২০ সালের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩% নারী নেতৃত্ব রাখা বাধ্যতামূলক। কিন্তু ছোট-খাট দলে তো তার বিন্দুমাত্র নেই। এমনকি বড় রাজনৈতিক দলেরও নির্বাহী কমিটিতে ৩৩% নারী নেই। গণ প্রতিনিধিদের মধ্যেও একই অবস্থা। সংরক্ষিত আসনে নারীরা আছে, কিন্তু তারা স্বাবলম্বী নয়, পুরুষ প্রতিনিধিদের বা সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়। নারীকে বিভিন্ন প্রণোদনা দেওয়ার কারণে দেশে নারী শিক্ষা বৃদ্ধির হার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু ঝরে পড়ার হারও নারীর বেশি। গত ২৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত সেভ দ্য চিলড্রেনসহ ছয়টি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদন মতে, ‘বাংলাদেশে মাধ্যমিক পর্যায়ে ৪১% মেয়ে শিক্ষার্থী ও ৩৩% ভাগ ছেলে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে।’ প্রাথমিক পর্যায়ে মেয়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার আরও বেশি। ২০১৬ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল ৩০,৩৫,২৫০ জন। এরাই ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। তাদের সংখ্যা ২৩,৯৭,৫৬০ জন। অবশিষ্ট ৬,৩৭,৬৯০ জন শিক্ষার্থী কম বলে গত ৩০ অক্টোবর মিডিয়ায় প্রকাশ। প্রায় সাড়ে ছয় লাখ ঝরে পড়েছে। এর মধ্যে নারীই বেশি। দেশের উচ্চ শিক্ষায়ও নারীর হার কম। ব্যানবেইস’র সর্বশেষ তথ্য মতে, বাংলাদেশে নারীর শিক্ষার হার স্নাতকোত্তর-৩৬.৭% (প্রাথমিকে-৫০.৭৫%, ৬-৮ম শ্রেণি-৫৫.১৪%, ৯-১০ম শ্রেণি-৫১.৬৫%, এইচএসসি-৪৬.৯৭% ও ডিগ্রিতে-৪১.৩৯%)। অর্থাৎ প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে নারীদের শিক্ষার হার হ্রাস পাচ্ছে। এছাড়া, বিজ্ঞান,আইটি ও কারিগরি শিক্ষায় নারীদের হার খুবই কম। দেশে নারী শিক্ষার্থীদের এই অবস্থার প্রধান কারণ হচ্ছে, দারিদ্র ও নিরাপত্তাহীনতা। এছাড়া, বাল্য বিবাহ তো রয়েছেই। ২৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ৬ এনজিও’র সমন্বয়ে গঠিত ‘জয়েনিং ফোর্সেস বাংলাদেশ’ এর গবেষণা প্রতিবেদন মতে, ‘বাংলাদেশে এখনো ১৮ বছরের আগেই মেয়েদের বিবাহের হার ৫৯% এবং ১৫ বছর হওয়ার আগেই ১৮% মেয়েকে বিবাহ দেয়া হয়। যা বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক।’ নারীর বিবাহ হলে আর লেখা-পড়া হয় না। অন্যদিকে, অনেক পুরুষ নারীর শিক্ষা ও চাকরির প্রচন্ড বিরোধী। কিন্তু এ দেশের নারী বিশ্ব পর্যটক নাজমুন নাহার ১৩৫ দেশ ভ্রমণের ঐতিহাসিক রেকর্ড অর্জন করেছেন। সে জন্য গত ২৭শে অক্টোবর ‘পিচ টর্চ অ্যাওয়ার্ড’ ও ‘ডটার অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত হন। এর আগে এই সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন মাদার তেরেসার মতো মনীষী ও বিশ্ব বিখ্যাত রাষ্ট্রনায়করা। নাজমুন নাহার এখন জলবায়ু আন্দোলনের জনক গ্রেটা থুনবার্গের মতো ‘বিশ্ব হিরো’তে পরিণত হয়েছে। এর আগে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে,ভাষা আন্দোলনে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে এমনকি মহান মুক্তিযুদ্ধে অসংখ্য নারী অবদান রেখে অমর হয়ে আছে। তারামন বিবি,বীর প্রতীক মুক্তিযুদ্ধের সাব সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত নারী জাগরণে পথিকৃৎ হয়ে আছেন। সর্বোপরি প্রিয় নবী করিম (সা.) এবং পরবর্তীতে খলিফাদের শাসনকালে নারীরা যুদ্ধে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে অংশগ্রহণ করেছেন। নবী করিম (সা.) এর সঙ্গে যুদ্ধে শরীক হয়েছিলেন উম্মে আম্মারা (রা.) এবং স্ত্রী হযরত খাদিজা (রা.) সে সময়কার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ছিলেন। সে সময় হযরত সাদিয়া (রা.) বাজার মনিটর করতেন। নবী করিম (সা.) এর স্ত্রী হযরত আয়েশা সিদ্দিকী (রা.) হযরত আলী (রা.) এর সঙ্গে জঙ্গে জামাল যুদ্ধে শরীক হয়েছিলেন। তারা সকলেই ইসলামী বিধান মেনেই যুদ্ধ ও বাণিজ্য করতেন। তাহলে এখন নারীরা সেসব কাজ এবং শিক্ষা গ্রহণ করতে কেন পারবে না? নিশ্চয় পারবে।
যা’হোক, চরম বাধা বিপত্তি মোকাবেলা করে ক্রমান্বয়ে দেশে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। তা প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক উভয় ক্ষেত্রেই। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কৃষি, নির্মাণ ও গৃহকর্মী। প্রাতিষ্ঠানিক খাতের মধ্যে প্রধানতম হচ্ছে গার্মেন্ট শিল্প ও বিভিন্ন অফিস। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে নারীরা মজুরী যেমন কম পায়, তেমনি নির্যাতনেরও শিকার হয়। গার্মেন্ট খাতের শ্রমিকদের বেশিরভাগ চাকরির নিয়োগ পত্রও পায়না! আর গৃহকর্মীরা তো কাজের স্বীকৃতিই পায়নি। তদ্রুপ গৃহীনিরাও। অথচ গৃহীনিরা সন্তান লালন-পালন ছাড়াও গৃহের সমস্ত কাজ করে দিন-রাত পরিশ্রম করে। তাদের ও গৃহকর্মীর হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের কোন মূল্য নেই ঘরে-বাইরে। এমনকি তাদের এই কর্মমূল্য জিডিপি ও প্রবৃদ্ধিতেও অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। অথচ এটা করা হলে জিডিপি ও প্রবৃদ্ধির হার অনেক বেড়ে যেত। অপরদিকে, বিভিন্ন সরকারি অফিসে নারী কর্মীর হার ১৫% এর বেশি নয়। সামরিক ও আধাসামরিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে নারীর অংশগ্রহণ আরও কম- অতি নগণ্য! তবে শিক্ষকতায় নারীর হার ভালো। তবে এ ক্ষেত্রে বিধি বাম। সরকারী অফিসে নারীরা যে কর্মরত আছে,তার বেশিরভাগ হয়েছে কোটায়। কিন্তু সেই কোটা এখন বাতিল করা হয়েছে। ফলে সরকারি অফিসে নারীর হার ভবিষ্যতে অনেক হ্রাস পাবে নিশ্চিত। অপরদিকে, বেসরকারি চাকরিতে নারীর সংখ্যা নগণ্য। ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সরকারি ও বেসরকারি অফিসের উচ্চ পদে নারীর অবস্থা অতি নগণ্য। অবশ্য দেশে একযোগে প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার ও বিরোধী দলের নেতার আসনে নারী রয়েছেন। তাই এ ক্ষেত্রে বিশ্বে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু তথাপিও নারীর অনুকূলে তেমন কিছু হয়নি।
দেশে যৌতুক বিরোধী আইন আছে। কিন্তু তা কার্যকর নয়। তাই এই ঘৃণ্য অপরাধ বহাল আছে। তাই যৌতুকের অর্থ জোগাড় করতে না পারায় বহু নারী কুমারী থেকে যায়। আবার যৌতুকের দাবি পূরণ করতে না পারায় বহু নারীর তালাক হয়ে যায়। আর নির্যাতনের সীমা-পরিসীমা নেই। অপরদিকে, ধর্ষণের মাত্রা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সে সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যা। কিন্তু এসবের তেমন বিচার হয় না। তাই এই অপরাধগুলো ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে । একমাত্র নুসরাত হত্যার বিচার খুব দ্রুত হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির রায় হয়েছে। যদিও এর চূড়ান্ত ফয়সালা দ্রুত হবে কি-না তা নিয়ে জনমনে সন্দেহ রয়েছে। এছাড়া, সাগর-রুনি, তনু, মিতুসহ অনেক নারীর লোমহর্ষক হত্যাকান্ড হয়েছে। এসবের বিচার হয়নি। কবে হবে তাও বলা কঠিন। এছাড়া, নারী বিরোধী আরও অসংখ্য কর্ম রয়েছে দেশে। তাই নারীর ক্ষমতায়ন তেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে না। কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে আবার পিছনে ফিরছে। যেমন: নারীদের কর্মসংস্থান, নিরাপত্তা, রাজনীতিতে অংশগ্রহণ ও ব্যাংকে লেনদেনের নারীদের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করে বৈশ্বিক সূচক তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির ইন্সটিটিউট ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি এবং নরওয়ের পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউট যৌথভাবে। ‘দ্য উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি ইনডেক্স ২০১৯-২০’ শিরোনামের প্রতিবেদন মতে, ‘১৬৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৪২তম (২০১৭ সালে ছিল ১২৭তম। অর্থাৎ দুই বছরে ১৫ ধাপ পিছিয়েছে)’। উক্ত প্রতিবেদনে তিনটি মৌলিক বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তা হলো: অন্তর্ভুক্তি, ন্যায্যতা ও নিরাপত্তা। এক্ষেত্রে মোট ১১টি সূচক ব্যবহার করা হয়েছে। অন্তর্ভুক্তি পরিমাপের সূচক হিসাবে শিক্ষা, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, নিয়োগ, মোবাইল ব্যবহার ও সংসদে প্রতিনিধিত্বকে ধরা হয়েছে। ন্যায্যতার সূচক হিসাবে দেখা হয়েছে আইনগত বৈষম্য, পুত্রসন্তানের প্রতি পক্ষপাত ও বৈষম্যমূলক রীতিনীতিকে। নিরাপত্তার সূচক ছিল তিনটি: স্বামীর নির্যাতন, সামাজিক নিরাপত্তা ও কাঠামোগত সহিংসতা। প্রতিটি সূচকের জন্য নির্ধারিত নম্বর আছে। ১১ সূচকে বাংলাদেশের মোট নম্বর দশমিক ৬১২। এবারের তালিকায় বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে: ‘গত দুই দশকে বাংলাদেশে নারীর কর্মসংস্থান প্রায় ৩ ভাগেরও বেশি উন্নতি হয়ে ৩৮ শতাংশে পৌঁছেছে। উৎপাদন খাত আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে, তবে কৃষিতে নারীর কর্মসংস্থান কমেছে। বর্তমানে ৮৫ শতাংশেরও বেশি নারী এখন অনুৎপাদনশীল কাজে নিয়োজিত। বৈষম্যমূলক আইনও নারী ক্ষমতায়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ৩৪ শতাংশ নারী সম্পত্তির অধিকার ভোগে, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলায়, ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে অথবা চাকরি পেতে ও শুধু পুরুষদের জন্য সংরক্ষিত পেশায় ঢুকতে প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়।’
অনেক শিক্ষিত নারী পেশায় যুক্ত হয় না।এমনকি ঘরে বসে আউট সোর্সিংয়ের কাজেও তেমন সম্পৃক্ত নয়। ফলে নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পাচ্ছে না। আবার কর্মজীবনে গিয়েও অনেকে ত্যাগ করে চলে আসে ডেকেয়ার সেন্টার না থাকায়। অথচ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিটি কর্মস্থলে ডে-কেয়ার সেন্টার চালু করার জন্য সরকার নির্দেশ জারী করেছেন কয়েক বছর আগে। কিন্তু যৎসামান্য সরকারি অফিসে ডে-কেয়ার সেন্টার চালু করা হয়েছে। আর বেসরকারি খাতে তো এর নাম-নিশানাও নেই। গৃহকর্মীদের শিশুদের পছন্দ করে না মালিকরা। তাই বাধ্য হয়ে অনেক মা তার শিশুকে ঘরের মধ্যে তালা দিয়ে অথবা শেকলে বেধে রেখে কর্মে যায়, যা বিশ্বে বিরল। এই অবস্থায় এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭ অক্টোবর মাননীয় হাইকোর্ট এক রুলে ‘কর্মস্থল, বিমানবন্দর, বাস স্টপেজ, রেলওয়ে স্টেশন, শপিং মলে ব্রেস্ট ফিডিং ও বেবি কেয়ার কর্নার স্থাপনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না-তা জানতে চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে পাবলিক প্লেস ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপনে নীতিমালা তৈরি করতে নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে। প্রসূতি ছুটির সরকারি বিধান থাকলেও বেসরকারি পর্যায়ের বেশিরভাগ স্থানে প্রসূতি ছুটি নেই। ফলে অনেকে কর্মজীবনের অবসান ঘটায় বাধ্য হয়েই। বশিরভাগ কর্মস্থলে ও শিক্ষাঙ্গনে নারীর নিরাপত্তার প্রচন্ড অভাব রয়েছে। এছাড়া, অন্য নানাবিধ সমস্যার তো অন্ত নেই। অনেক নারীর অভিযোগ থানায় গ্রহণ করে না বলে অভিযোগ রয়েছে। সামাজিক বিচারও বেশিরভাগ নারীর প্রতিকূলে যায়। অসংখ্য প্রবাসী নারী নানা হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে প্রায়ই। তাদের অনেকেই ফেরত আসতে বাধ্য হচ্ছে। সৌদি আরবে গৃহকর্মী হিসেবে যাওয়া বাংলাদেশের নারী শ্রমিকদের দেশে ফেরার প্রবণতা বাড়ছে। সেখানে ধর্ষণসহ নানা ধরনের নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।
মোটকথা, দেশে নারীর ক্ষমতায়ন খুব আশাপ্রদ নয়। এটা নারীদের ব্যর্থতা নয়। নারীদের সদ্ব্যবহার করার সামর্থ্যরে ব্যর্থতা। বাংলাদেশের এই নারীদেরই অনেকে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা বাহিনীতে অংশগ্রহণ করে সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন করছে। প্রতিকূল আবহাওয়া, পরিবেশ-পরিস্থিতি এবং প্রতিটি মুহূর্তে জীবনের শঙ্কা ইত্যাদি শত বাধা অসীম সাহস ও দৃঢ়তার সাথে মোকাবেলা করে সাফল্য অর্জন করে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে, পুরস্কার লাভ করেছে অনেকেই। সিলেটের এক নারী নাসায় বিজ্ঞানী হিসাবে যোগদান করেছে। এভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি নারী বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করছে কৃতিত্বের সাথে। অনেকেই এমপি-মন্ত্রীও হয়েছে এবং সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন করছে। দেশের অভ্যন্তরেও নারীরা ব্যাপক সাফল্যজনক কর্ম করে প্রশংসিত হচ্ছে। কথায় বলে, শিশু না কাঁদলে মায়ে দুধ দেয় না। অর্থাৎ শিশুকেও তার অধিকার আদায় করে নিতে হয়। তদ্রæপ নারীর অধিকার নারীকেই আদায় করে নিতে হবে এবং তা বিচ্ছিন্নভাবে নয়, সম্মিলিতভাবে এবং তা সমাজ, দেশের ঐতিহ্য ও ধর্মীয় বিধান অনুসারে। নারী স্বাধীনতার নামে উগ্রতা গ্রহণযোগ্য নয়। উগ্রবাদী নারীরা নির্যাতনের শিকার হয় বেশি। পুরুষেরও উচিৎ নারীদের অগ্রগতিতে সহায়তা করা, সব প্রতিকূলতা দূর ও মোকাবেলা করা।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।