মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানের শীর্ষ কমান্ডার কাসেম সোলাইমানির মৃত্যুর পরই মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের দামামা শুরু হয়ে যায়। এই প্রেক্ষিতে গতকাল ইরানের বিখ্যাত জামকরন মসজিদের শীর্ষে লাল পতাকা ওড়ানো হয়েছে। যার অর্থ, দেশের জনগনকে যুদ্ধের জন্য তৈরি হতে নির্দেশ দেয়া। এদিন দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর আহওয়াজে সোলাইমানের শোক মিছিলে অংশ নেন লক্ষাধিক মানুষ। এদিকে, ইরাকে তিনটি মার্কিন স্থাপনা লক্ষ্য করে মর্টার ও রকেট হামলা চালানো হয়েছে। তবে এসব ঘটনায় কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
সোলাইমানির হত্যার প্রতিশোধ নিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ ৩৫টি স্থাপনা টার্গেটে রেখেছে ইরান। দেশটির ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) এক জ্যেষ্ঠ কমান্ডারের বরাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য মিরর। তবে সোলাইমানির হত্যার ‘বদলা’ কী ভাবে নিতে পারে ইরান, তা নিয়ে কার্যত অন্ধকারে আমেরিকা। কিন্তু তেহরানের তেমন কোনও পরিকল্পনা থাকলে তার ফল যে ভাল হবে না, তা জানিয়ে আগেভাগেই হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখল হোয়াইট হাউস। ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়ে দিলেন, কোনও মার্কিন নাগরিক বা প্রতিষ্ঠানের উপর হামলা হলে, আমেরিকা ইরানের আরও ৫২টি জায়গায় আক্রমণ করার জন্য চিহ্নিত করে রেখেছে। এমন অবস্থায় যুদ্ধের দামাম বাজতে দেখছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। আমেরিকার পদক্ষেপে প্রচন্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ইরান। ওয়াশিংটনকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে তেহরান। আমেরিকাকে এর মূল্য চোকাতে দিতে হবে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছিলেন ইরানের সুপ্রিম লিডার আয়াতোল্লাহ আলি খামেনি। মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় তরতর করে বাড়ছে সোনা ও অপরিশোধিত তেলের দাম। যার প্রভাব পড়েছে বিশ্বের বাজারে। এর মধ্যে ইতিহাসে প্রথমবার ইরানের বিখ্যাত জামকরন মসজিদের গম্বুজের উপর লাল পতাকা উড়তে দেখা গিয়েছে। এই লাল পতাকা হল দেশবাসীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে বলার প্রতীক। ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানে মসজিদের উপর লাল পতাকা ওড়া মানেই যুদ্ধের ইঙ্গিত। রোববার এই দৃশ্যই চমকে দিয়েছে গোটা দুনিয়াকে। তাহলে কি যুদ্ধ ঘোষণা করে দিল তেহরান? উদ্বেগে মধ্যপ্রাচ্য।
এই লাল পতাকার ইতিহাস প্রাচীন। ইরাকে কারবালার প্রান্তরে যুদ্ধের সময় হজরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর দৌহিত্র হযরত হোসেন ইবন আলি মসজিদের উপর লাল পতাকা উড়িয়ে যুদ্ধের ঘোষণা করেছিলেন। সেই থেকে এই লাল পতাকা যুদ্ধের প্রতীক হয়ে রয়েছে উপসাগরীয় অঞ্চলে। লাল রং রক্ত ও ত্যাগের প্রতীক। তাই মনে করা হচ্ছে, সোলাইমানির মৃত্যুর বদলা নিতে ইরানের মসজিদে পতাকা ওড়ানো হয়েছে।
শনিবার রাতে কাসেম সোলাইমানির মৃতদেহ ইরানে নিয়ে আসা হয়েছে। গতকাল তার উদ্দেশ্যে শোক মিছিলে অংশ নেয় লক্ষাধিক মানুষ। শহরের অনেকগুলো রাস্তা জুড়ে মিছিল চলে। তাদের অনেকের হাতে ছিল সোলাইমানি এবং ইরানের ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ছবি। তার মৃত্যুতে কয়েকদিন ধরে শোক পালন করতে যাচ্ছে ইরান ও ইরাকের সমর্থকরা। ইরান প্রেসের তোলা ভিডিওতে দেখা যায়, আহভাজ শহরে তার শেষকৃত্যানুষ্ঠানে অংশ লাখো মানুষের মিছিল। আগামী কয়েকদিন ধরে তার এই শেষকৃত্যানুষ্ঠান চলবে। আগামীকাল মঙ্গলবার তাকে তার নিজ শহর কেরমানে দাফন করা হবে।
এদিকে, ইরানের আইআরজিসি কমান্ডার ঘোলামালি আবু হামজেহ বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন ও ইসরায়েলি স্থাপনাগুলো অনেক আগেই চিহ্নিত করে রেখেছে ইরান। তবে বিশেষ কোনো টার্গেটের নাম এখনই প্রকাশ করা হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ‘অঞ্চলটিতে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫টি স্থাপনা ও তেল আবিব (ইসরায়েলের) পর্যন্ত আমাদের হামলার আওতায় রয়েছে। যে কোনো সময় বিশ্ব এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিঘাত দেখবে।’
পাশাপাশি ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় কেরমান প্রদেশের কমান্ডার জেনারেল গোঘামালি আবুহামজেহ বলেছেন, ‘ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবসহ ৩৫টি লক্ষ্যবস্তু আমাদের আওতায়। কাজেই কাসেম সোলেইমানি হত্যার প্রতিশোধ নিতে যেখানে আমেরিকানরা আমাদের আওতায় থাকবে, সেখানেই তাদের শাস্তি দেওয়া হবে।’ পারস্য উপসাগরের জাহাজগুলো সম্ভাব্য হামলার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন সোলাইমানির নিজ শহর কেরমানের বিপ্লবী গার্ডসের এই কমান্ডার।
তবে কাসেম সোলাইমানির হত্যার ‘বদলা’ নিতে ইরান কোনও পদক্ষেপ নিলে তার ফল যে ভাল হবে না, তা জানিয়ে আগেভাগেই হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখল হোয়াইট হাউস। ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়ে দিলেন, কোনও মার্কিন নাগরিক বা প্রতিষ্ঠানের উপর হামলা হলে, আমেরিকা ইরানের আরও ৫২টি জায়গায় আক্রমণ করার জন্য চিহ্নিত করে রেখেছে। ‘খুব দ্রুত এবং খুব বড়’ আঘাত হানা হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। স্বাভাবিক ভাবেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই হুমকির জেরে ফের উত্তেজনা বেড়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার বাগদাদ বিমাবন্দরের কাছে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হন ইরানের সামরিক কমান্ডার কাসেম সোলাইমানি। তার পর থেকেই কার্যত ফুঁসছে ইরান। যে কোনও সময় প্রত্যাঘাত আসতে পারে বলে মনে করছে আমেরিকাও। আর সেই পাল্টা আঘাত হতে পারে ইরাকে মার্কিন সেনা বা ইরান-মার্কিন যৌথ বাহিনীর উপর। কিন্তু কোথায় হামলা হতে পারে, তার কোনও নির্দিষ্ট তথ্য আপাতত হোয়াইট হাউসের হাতে নেই বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইতিমধ্যেই অন্তত তিন জায়গায় হামলার খবর পাওয়া গেছে। শনিবার বাগদাদে মার্কিন দ‚তাবাসের কাছে দু’রাউন্ড মর্টার বিস্ফোরণ ঘটেছে। প্রায় একই সময়ে ইরাকে আল-বালাদ সামরিক ঘাঁটিতেও দু’টি রকেট ছোড়া হয়েছে বলে খবর। এই ঘাঁটিতে ইরাকি ও মার্কিন যৌথ সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। তবে দুই হামলার কোনওটিতেই কেউ হতাহত হননি। ইরাকের নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, অন্তত একটি রকেট কিংবা মর্টারের গোলা গ্রিন জোনের সেলিব্রেশন স্কয়ারে আছড়ে পড়েছে এবং অপর একটি শহরের জাদরিয়া অঞ্চলে বিস্ফোরিত হয়েছে। আর, সংবাদ সংস্থা এএফপি জানায়, বালাদ বিমান ঘাঁটিতে দুটি রকেট আঘাত করার পর তার কোথা থেকে ছোড়া হয়েছে জানার জন্যে নজরদারি সক্ষম ড্রোন প্রেরণ করা হয়। তবে কোনো গোষ্ঠীই এই হামলার দায় অবশ্য স্বীকার করেনি। তবে ইরান পন্থী মিলিশিয়া গ্রুপগুলোকে এই হামলার জন্যে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতেই ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইটারে লিখেছেন, ‘ইরানের ৫২টি জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। তার মধ্যে বেশ কয়েকটি ইরান ও তার সংস্কৃতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সব লক্ষ্যবস্তুতে খুব দ্রুত এবং খুব কঠোর আঘাত করা হবে। আমেরিকা আর কোনও হুমকি সহ্য করবে না।’
কয়েক বছর আগে ইরানে মার্কিন দ‚তাবাসে ৫২ জনকে পণবন্দি করার ঘটনা ঘটেছিল। সেই ৫২ জনের বদলে ৫২টি জায়গায় হামলার কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তবে ক‚টনৈতিক মহল মনে করছে, সংখ্যাটা তাৎপর্যপূর্ণ নয়। আসলে ইরান বদলা নেওয়ার কথা ভাবলে আমেরিকা যে আরও হামলা চালাতে পারে, সেই হুঁশিয়ারি দিয়ে কার্যত ইরানকে দমিয়ে রাখতে চাইছে ওয়াশিংটন। সূত্র : ডেইলি মেইল, দ্য গার্ডিয়ান, ইউকে মিরর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।