Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কী ধরণের প্রতিশোধ নিতে পারে ইরান?

জেনারেল সোলাইমানি হত্যা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

বাগদাদে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত ইরানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর সামরিক কমান্ডার কাসেম সোলাইমানির লাশ ইরানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গত শনিবার তার প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়। এরপর হাজার হাজার মানুষ সমবেত হয়ে এক শোক মিছিল বের করে এবং ‘আমেরিকার মৃত্যু চাই’ বলে শ্লোগান দিতে থাকে।

এলিট ফোর্স কুদস বাহিনীর প্রধান হিসেবে পুরো মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ইরানের কৌশলগত অপারেশনের নেতৃত্ব দিতেন কাসেম সোলাইমানি। তাকে হত্যা করায় আমেরিকার বিরুদ্ধে ‘বড় ধরনের প্রতিশোধ’ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। তবে কীভাবে বা কোথায় এ প্রতিশোধ নেয়া হবে, ইরান পাল্টা সামরিক হামলা চালাবে, নাকি সাইবার আক্রমণ হবে - তা নিয়ে সারা বিশ্বের সামরিক-কৌশল বিশেষজ্ঞরা নানা রকম বিশ্লেষণ দিচ্ছেন। জেনারেল সোলাইমানি হত্যাকান্ডের ব্যাপারে ইরানের তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর সৈয়দ মোহাম্মদ মারান্দির সাক্ষাৎকার নিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদসংস্থা বিবিসি। সেখানে মারান্দি জানান, মধ্য প্রাচ্যে মার্কিন আধিপত্য ধরে রাখার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্যই তাকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমেরিকা সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব নষ্ট করতে চেয়েছিল, ইরাক দখল করে রাখতে চেয়েছিল, তাদের মিত্র ইসরায়েল লেবাননে দখলদারি করতে চেয়েছিল, সউদী আরব এবং মার্কিনীরা ইয়েমেনকে পদানত করতে চেয়েছিল। জেনারেল সোলাইমানি এই মার্কিন আধিপত্যের সবগুলো পরিকল্পনা বানচাল করে দিয়েছিলেন। মার্কিনীদের সাম্রাজ্য কায়েমের চেষ্টায় তিনি ছিলেন কাঁটার মতো। এটাই তাকে হত্যা করার কারণ।’

তবে সোলাইমানির শূন্যস্থান প‚রণ হবে না, বা তাকে ছাড়া ইরানের আঞ্চলিক নীতি এগিয়ে নিতে সমস্যা হবে - এমনটা মানতে নারাজ মারান্দি। বর্তমানে জেনারেল কাসেম সোলাইমানির জায়গায় এসেছেন জেনারেল ইসমাইল কানি। যিনি নিজেও একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি। সোলাইমানির যোগ্য সহযোগীদের নিয়ে তিনি নতুন চিন্তা ও নতুন নির্দেশনা নিয়ে সফলভাবে কাজ করবেন বলে মনে করেন মারান্দি। তিনি বলেন, ‘জেনারেল সোলাইমানি একজন আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের লোক ছিলেন। তার স্থলে যিনি এসেছেন তিনিও অভিজ্ঞ। তাছাড়া ইরান কোন একক ব্যক্তিত্বের ওপর নির্ভরশীল নয়। তাই জেনারেল সোলাইমানির স্থান পূরণ হবে না; বিষয়টি এমন নয়।’

তার মানে কি এই যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা ভেবে এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে তা পূরণ হবে না? এমন প্রশ্নের জবাবে মারান্দি বলেন, ‘আমি মনে করি আমেরিকা বোকার মতো কাজ করেছে। এটা ছিল যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। এতে ইরান আরও ক্রুদ্ধ হয়েছে, ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোকাবিলা করতে আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়েছে।’ তার মতে, সোলাইমানিকে হত্যা করে আমেরিকা আসলে ইরানকে আরও শক্তিশালী করে দিয়েছে। এতে একজন ইরাকি কমান্ডারও নিহত হওয়ায়, ইরাক ও ইরান উভয় দেশের বিরুদ্ধেই যুক্তরাষ্ট্র এক প্রকার যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।
যুদ্ধ ঠেকাতেই এ আক্রমণ চালানো হয়েছে বলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে দাবি করেছেন সে প্রসঙ্গে মারান্দি বলেন, ‘ট্রাম্প তো নিজেই যুদ্ধে নেমে পড়লেন। আমার মনে হয় না, ইরানের কেউই ট্রাম্পকে গুরুত্বের সাথে নেয়। বরং এই হামলা, আমেরিকার বিরুদ্ধে দুই দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেছে - যা তাদেরই ক্ষতি করবে।’

ইরান এই হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নেয়ার কথা বলে আসছে, সেই প্রতিশোধ কি ধরণের হতে পারে, সেটা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। ইরানিরা পরিশীলিত জাতি, আমেরিকানদের মতো অমার্জিত ও পাশবিক নয় উল্লেখ করে মারান্দি বলেন, ‘ইরানিরা রাজনীতি করে দাবা খেলোয়াড়ের মতো। তারা হিসেব করে, অনেক চিন্তা ভাবনা করে এমন কিছু করবে যাতে আমেরিকানরা নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতাপ করে।’

ইরানের এই প্রতিশোধ নিয়ে নানা গুঞ্জন উঠেছে। এ আক্রমণ কি সামরিক হবে না সাইবার আক্রমণ হবে, মধ্যপ্রাচ্যে হবে না উত্তর আফ্রিকায় হবে, নানা জল্পনা চলছে। কিন্তু আসলে কি ঘটবে, সে বিষয়ে কোন ধারণা দিতে পারেননি মারান্দি। তবে তিনি বলেছেন, ‘ইরানি এবং ইরাকিদেরও নানা ধরণের সক্ষমতা আছে। আমেরিকানদের অনেক দুর্বল জায়গা আছে।’ ইরান কোন আক্রমণ চালালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আবার পাল্টা হামলা চালাতে পারে এমন আশঙ্কা রয়েছে। সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা জবাব সামলে নেয়ার ব্যাপারে ইরান কতোটা প্রস্তুত? মারান্দি জানান, ‘ইরান যে আমেরিকাকে শাস্তি দেবে এ নিয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই। ইরানিরা যুদ্ধ চায় না। তবে যুদ্ধ বাঁধলে তারা পালিয়ে যাবে না। আমেরিকা যা করেছে তা যুদ্ধের শামিল - তাই আমেরিকাকে, ইরান শাস্তি দেবে। আমেরিকান, সউদী এবং আমিরাতের যা আছে ইরান তা সব ধ্বংস করে দেবে। তখন আমেরিকানরা বুঝবে যে তারা বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে।’

এক্ষেত্রে ইরানের শক্তি হিসেবে কাজ করতে পারে ইরাক, আফগানিস্তান, ইয়েমেনসহ, পুরো মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে থাকা মিত্র দেশগুলো। এছাড়া মার্কিন শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ইরানের অনেক রকম সক্ষমতা আছে বলেও মনে করেন মারান্দি। তিনি বলেন, ‘ইরান কঠোর না হলে আমেরিকানরা আবার এমন কাজ করবে। আমেরিকা জানে ইরানে তারা যদি আবার আক্রমণ চালায় তাহলে ইরানের জবাব হবে আরও তীব্র। আমেরিকানরা জানে যে এ যুদ্ধে তারা জিততে পারবে না।’

জেনারেল সোলাইমানির মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের মিত্র দেশগুলোয় প্রভাব ফেলবে বলে জানিয়ে মারান্দি বলেন, ‘ইরান থেকে লেবানন পর্যন্ত যে শিয়া ক্রিসেন্ট রয়েছে তার পাশাপাশি সিরিয়া, ফিলিস্তিন, আফগানিস্তানের সুন্নিরাও ইরানের মিত্র। জেনারেল সোলাইমানির মৃত্যুতে তারা এক হয়ে আরও শক্তিশালী হবে। আমেরিকা খুবই বোকার মতো একটা কাজ করেছে।’ সূত্র : বিবিসি বাংলা।



 

Show all comments
  • পালক ওরে আকাশে ৬ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৪৮ এএম says : 0
    যে কোন মুল্যে প্রতি শোধ নিতে হবে নইলে ট্রাম্প মুস্লিম জাতিকে দুর্বল ভাববে। বারবার অাঘাত করতেই থাকবে।
    Total Reply(0) Reply
  • বিপ্লবী জীবন ৬ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৪৮ এএম says : 0
    আল্লাহ তুমি মুসলিম রাষ্ট্র ইরান কে আমেরিকার সাথে যুদ্ধ করার জন্য সাহায্য করো. এমন করে সাহায্য করো যে আমেরিকা যেন ধ্বংস হয়ে যায়.হে আল্লাহ তুমি সারা বিশ্বের মুসলিক কে শক্তি দাও আমেরিকাকে পরাজিত করার জন্য আর মুসলিমদের কে এক হওয়ার তওফীক দান করো আল্লাহ
    Total Reply(0) Reply
  • Milon W ৬ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৪৮ এএম says : 0
    যুদ্ধতো লাগলে বোঝা যাবে কে জিতে আর কে হারে, সবাই মুখের উপর বলতে পারে কার ক্ষমতা কত সেটা বুঝা যাবে শেষে,
    Total Reply(0) Reply
  • SM Biplob Hossain ৬ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৪৯ এএম says : 0
    হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয়া হোক শুধু তাদের জন্যই খোলা হোক ইরানের মিত্রদের জন্য চীন রাশিয়া প্রভৃতি রাষ্ট্র যেসব ইরানের পক্ষে কথা বলে তাদের জন্য খুলে দেয়া হোক ইরানের বিপক্ষে যারা কথা বলে তাদের জন্য হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয়া হোক চিরতরের জন্য
    Total Reply(0) Reply
  • S Ahomad Sayd ৬ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৪৯ এএম says : 0
    ইরান কিছু একটা করবে তা নিশ্চিত, তবে ঠান্ডা মাথায়, সাদ্দামের মথ কোন ভুল করে বসবেনা এমন অনুমান করা যায়, হয়ত ইরান আমেরিকা এবং ইসরাইলকে সরাসরি যুদ্ধে আহবান করবেনা, ইরান চাইবে যেভাবেই হোক ইরাককে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার, যেই কাজটা কাসেম সোলাইমানি জীবিত অবস্থায় অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছে,এবং মৃত্যুর পরে তা আনুষ্ঠানিক রুপ পেয়েছে, যা দেখে ট্রাম্পও বিস্মিত যেটা ট্রাম্পের ভাষায় বুঝা যাচ্ছে, আর এর ফলে ইরান ইরাকে আরো শক্তি বাড়াতে পারবে যা এখন দৃশ্যমান, ইরান জেনারেল হত্যার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে ভুল করবেনা, কারণ ইরান খুব ভালকরেই জানত এই জেনারেল জীবন্ত শহীদ, ইরান পুর্ব পরিকল্পনা মথই এগিয়ে যাবে, তবে একটা বিষয় নিশ্চিত ট্রাম বোকার মথ কাজ করেছে, তাইতো পেন্টাগন দায়ভার নিজেদের কাদে নিচ্ছেনা।
    Total Reply(0) Reply
  • Abu Said ৬ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৫০ এএম says : 0
    ইরান অবশ্যই এর বদলা নিবে এবং এর চেয়ে আরো তিব্র প্রতিসোদ হবে ইরান ভালো করে যানে কোথায় কখন আমিরিকা কে আঘাত করতে হবে আর আমি মনে করি এই হত্যার বদলা নিতে যুদি ইরান কে দেরি করতে হয় তাহলে করবে কার আমিরিকা এমন শিক্ষা দেয়া উচিত যাতে কোনো দেশে হামলা করতে হলে তাকে ১০০ বার তার পরিনতির কতা চিন্তা করতে হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Anwar Hussain ৬ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৫০ এএম says : 0
    এখন ইরানের উচিত সক্ষমতা যদি থাকে দ্রুত পরমানু অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে দেখিয়ে দেয়া সে এটা অর্জন করেছে। এটা যদি সে করতে পারে তাহলে পশ্চিমাদের তাফালিং অটোমেটিক্যালি বন্ধ হয়ে যাবে। সেটা না করে ইরান যে বাক যুদ্ধ করে তা বাক যুদ্ধই রয়ে যাবে, মাইরও খেতে থাকবে। মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিবাস্থার জন্য ইরানের পরমানু সক্ষমতা খুব জরুরী হয়ে পড়ছে। '০৬ সালে উত্তর কোরিয়া পরমানু পরীক্ষা চালানোর পরও পশ্চিমারা এজদম ঠান্ডা হয়ে
    Total Reply(0) Reply
  • Areya Dewan ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৯:৩৫ পিএম says : 0
    ইরানি প্রতিশোধ নেওয়ার সক্ষমতা আছে। ইরানের আছে বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র যা দিয়ে আমেরিকান অনেক সৈন্য বিভিন্ন দেশে আছে সেগুলো কে আঘাত করা যাবে। তাছাড়া আমি মনে করি সবচাইতে নাটের গুরু দখলদার ইসরাইল। কারণ ইজরাইল মনে করত আসানসোল আমারই থাকলে তাদের জন্য বিপদ হবে। এই কারণে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইল মিলে কাসেম সুলাইমানি হত্যা করছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Areya Dewan ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৯:৩৬ পিএম says : 0
    ইরানি প্রতিশোধ নেওয়ার সক্ষমতা আছে। ইরানের আছে বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র যা দিয়ে আমেরিকান অনেক সৈন্য বিভিন্ন দেশে আছে সেগুলো কে আঘাত করা যাবে। তাছাড়া আমি মনে করি সবচাইতে নাটের গুরু দখলদার ইসরাইল। কারণ ইজরাইল মনে করত আসানসোল আমারই থাকলে তাদের জন্য বিপদ হবে। এই কারণে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইল মিলে কাসেম সুলাইমানি হত্যা করছে। যদি কোনরকম যুক্তরাষ্ট্র আগ্রাসন চালায় প্রথমেই ধ্বংস করতে হবে দখলদার ইসরাইলকে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইরান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ