মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
উপযুক্ত সময়ে ও স্থানে আমেরিকার বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিশোধ নেবে ইরান। গতকাল ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দেয়া বিবৃতিতে একথা বলা হয়েছে। গত শুক্রবার মার্কিন বিমান হামলায় ইরানের অন্যতম শীর্ষ কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলাইমানি নিহত হওয়ার পর ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষ থেকে এ বিবৃতি দেয়া হলো। এদিকে, শুক্রবার হত্যার সপক্ষে সাফাই গেয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, দিল্লি ও লন্ডনেও সুলেইমানি হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন। গতকাল সোলাইমানি ও আবু মাহদি আল মুহান্দিসের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ইরাকের বিভিন্ন শহরে অসংখ্য মানুষ সমবেত হয়েছিলেন।
মার্কিন হামলায় ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর কুদ্স ব্রিগেডের কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলাইমানি নিহত হওয়ার পর গতকাল ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ এ ঘটনার বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে জরুরি বৈঠক করেছে। বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমেরিকার এটা জেনে রাখা উচিত, এতবড় অপরাধযজ্ঞ চালিয়ে পশ্চিম এশিয়ায় তারা সবচেয়ে বড় কৌশলগত ভুল করেছে এবং এত সহজে তারা এই ভুলের পরিণতি থেকে রেহাই পাবে না।’ উপযুক্ত সময়ে ও উপযুক্ত স্থানে আমেরিকার বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিশোধ নেয়া হবে জানিয়ে ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ‘সোলাইমানিকে শহীদ করার মাধ্যমে আইএস সন্ত্রাসীদের পতন ও তাদের শীর্ষ নেতাদের নিহত হওয়ার প্রতিশোধ নেয়া হয়েছে যারা কিনা ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হত।’
এদিকে, সোলাইমানির মৃত্যুতে আতঙ্কের রাজত্ব শেষ হল বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প। সোলাইমানির হত্যাকে সমর্থন করে শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন যে, ইরাকে নিরপরাধ মার্কিনীদের নির্বিচারে হত্যা করেছে সোলাইমানি। বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসেও তার নির্দেশেই হামলা চালানো হয়। এমনকি দিল্লি ও লন্ডনেও তিনি হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে দাবি করেন ট্রাম্প।
সোলাইমানির মৃত্যুকে ঘিরে অস্থির হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের ভ‚-রাজনৈতিক ভারসাম্য। কেন তাকে টার্গেট করেছিল মার্কিন প্রশাসন তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা এবার দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফ্লোরিডার একটি সংবাদমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বহু নিষ্পাপ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী কাসেম সোলাইমানি। সুদূর দিল্লি ও লন্ডনেও নাশকতার ছকে মদত ছিল তার। আমরা সোলেমানির চালানো হিংসায় নিহতদের স্মরণ করছি, তাদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করছি। এটা ভেবে শান্তি পাচ্ছি যে, সন্ত্রাসের রাজত্ব শেষ হয়ে গেছে।’ যদিও দিল্লিতে কোন হামলার পিছনে সোলেমানির মদদ ছিল তা নির্দিষ্ট করে বলেননি ট্রাম্প। তবে, গত ২০ বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যে সোলাইমানি অস্থিরতা তৈরি করে রেখেছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন ট্রাম্প।
শুক্রবারের ড্রোন হামলা নিয়ে কার্যত বুক ঠুকেই ট্রাম্প দাবি করেছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা করেছে তা অনেক আগেই করা উচিত ছিল। তাহলে অনেকের জীবন বাঁচানো যেত। অতি সম্প্রতি ইরানে বিক্ষোভকারীদের দমনপীড়ন করা হয়েছিল সোলাইমানির নেতৃত্বেই। তাতে কয়েক হাজার নিষ্পাপ মানুষকে অত্যাচার করা হয়েছিল ও মেরে ফেলা হয়েছিল।’
অন্যদিকে, ইরান সমর্থিত ইরাকের আধাসামরিক বাহিনী হাশদ আল-শাবি’র এক কমান্ডারকে লক্ষ্য করে নতুন করে বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল ভোরে চালানো ওই হামলায় অন্তত ৬ জন নিহত হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এতে আরও তিন জন মারাত্মক আহত হয়েছে। আধাসামরিক বাহিনী হাশদ আল-শাবি পপুলার মোবিলাইজেশন ইউনিট ফোর্স (পিএমইউ) নামেও পরিচিত। ইরাকি সেনাবাহিনীর অধীনে থাকা বিভিন্ন মিলিশিয়া গ্রুপের জোট এটি। জোটটি ইরানি সমর্থনপুষ্ট।
ইরাকের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, গতকাল ভোরে রাজধানী বাগদাদের উত্তরে তাজি সড়কে একটি গাড়িবহর লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। তাজি সড়কে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী জোটের একটি ঘাঁটি রয়েছে। এই জোটে যুক্তরাজ্য ও ইতালির সেনা রয়েছে। তবে পিএমএফ-এর কোন কমান্ডারকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে তা জানানো হয়নি।
গতকাল শনিবার ইরানি জেনারেল কাসেম সোলাইমানি ও হাশদ আশ-শাবি’র সেকেন্ড ইন কমান্ড আবু মাহদি আল-মুহান্দিসের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ইরাকের বিভিন্ন শহরে লাখ লাখ মানুষ সমবেত হয়েছিলেন। ইরাকের রাজধানী বাগদাদে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন অসংখ্য মানুষ।
ইরাকের কাজেমাইন শহরে লাখ লাখ মানুষ তাদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। বাগদাদে অবস্থিত ইরানের দূতাবাস জানিয়েছে, ইরাকি জনগণের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে জেনারেল সোলাইমানিসহ নিহতদের লাশ কারবালা এবং নাজাফে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ইরাকি জনগণ তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
গতকাল বিকালে কাসেম সোলাইমানিসহ নিহত পাঁচ ইরানির লাশ ইরানে পৌঁছায়। আজ রোববার ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন শেষে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তাদের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল-উজমা খামেনী নিজে জানাজা পড়াবেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
ইরানের কুদ্স ফোর্সের কমান্ডার কাসেম সোলাইমানি হত্যাকান্ডের পর থেকেই উদ্বেগ বেড়েছে পুরো বিশ্বে। বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন এর ফলে নতুন করে আরেকটি যুদ্ধ দেখতে যাচ্ছে বিশ্ববাসী। এদিকে এই ঘটনার পর মধ্যপ্রাচ্যে আরও চার হাজার সেনা মোতায়েন করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সোলাইমানিকে হত্যায় যেমন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিকরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন, তেমনি বিশ্বের বড় বড় শক্তিগুলোতে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সোলাইমানিকে হত্যার নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, সিরিয়া, চীন ও ইউরোপিয়ান কাউন্সিল। তবে প্রতিক্রিয়া দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করেছে বৃটিশ সরকার।
খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিন্দার মুখে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার রাজনৈতিক প্রতিদ্ব›দ্বী ডেমোক্রেট দলের নেতারা এই হত্যাকান্ডকে ট্রাম্পের বোকামি বলে ‘আখ্যা’ দিয়েছেন। আর মার্কিন সিনেটররা দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধের নির্দেশ দেয়ার ক্ষমতা প্রত্যাহার করে নিতে মার্কিন কংগ্রেসের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।