Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নির্মাণশ্রমিক থেকে দুনিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী জেনারেল সুলাইমানি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ৫:১১ পিএম

জীবন শুরু করেছিলেন নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে। পরবর্তীতে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী সামরিক কমান্ডারে পরিণত হন। তিনি হচ্ছেন পরিকল্পিত হামলায় খুন হওয়া ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাসেম সুলাইমানির কথা।

পশ্চিম ইরানের র‌্যাবোর্ড গ্রামে একটি কৃষক পরিবারে জন্ম সোলাইমানির। বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা পাঁচ বছরেই শেষ করেন। এরপর ১০০ ডলারের মতো পারিবারিক কৃষি ঋণ শোধ করতে ১৩ বছর বয়সে তিনি কেরমানে চলে যান। সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডে নির্মাণ শ্রমিকের চাকরি নেন তিনি। কৃষি কাজও করেছেন বহুদিন। অবসর সময়ে কুলির কাজ করতেন আর ধর্মপ্রচারক হুজ্জাত কামিয়াবের ওয়াজ শুনতেন।

ইরানের শীর্ষ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির অনুগ্রহভাজন হুজ্জাতের বক্তৃতাই সোলাইমানিকে বিপ্লবী কর্মকান্ডে যোগ দিতে উৎসাহিত করেছে।
শাহ শাসনের পতনের পর তিনি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর একটি ইউনিটে যোগ দেন। নতুন সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থান ঠেকাতেই এই বাহিনী গঠন করা হয়েছিল। দুই মাসের একটি ক্যাম্পে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

জীবনের নতুন ভূমিকায় কুর্দিশ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে তাকে উত্তর পশ্চিমে পাঠানো হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৮০-৮৮ সালের ইরান-ইরাক যুদ্ধে অংশ নেন কাসেমি।
এরপর দ্রæতই পদোন্নতি পেয়ে কুদস ফোর্সের কমান্ডান হন সোলাইমানি। ইরানে তিনি ছিলেন একজন সেলিব্রেটির মতো। ইনস্টাগ্রামে তার বিপুল অনুসারি রয়েছে।
যুদ্ধের হিসাব ঘনিষ্ঠভাবে জানা ছিল তার। ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় অধিকাংশ বড় সামরিক অভিযানে তিনি জড়িত ছিলেন। অন্যান্য কমান্ডারের মতোই বহু লোক হারাতে হয়েছে তাকে।

লড়াইয়ে নিহত হওয়া সেনা ও তাদের পরিবারের প্রতি তিনি সবসময় মনোযোগী ছিলেন। কিন্তু যুদ্ধের ক্ষেত্রের স্বাদ কখনো মেটেনি তার। যেটাকে তিনি মানবজাতির হারানো বেহেস্ত (ম্যানকাইন্ডস লস্ট প্যারাডাইস) বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।

ইরাক-ইরান যুদ্ধ শেষ হলে মাদক পাচারবিরোধী লড়াইয়ে মনোযোগী হন এই জেনারেল। এতে তার সফলতা ১৯৯০ এর দশকে নতুন পদোন্নতিতে সহায়তা করে তাকে।
এরপর আল-কুদস ফোর্সের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় সোলাইমানিকে। জেরুজালেম শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতেই এই বাহিনী গঠন করা হয়েছিল। বিদেশে ইরানের প্রভাব বিস্তারে কুদস ফোর্স সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে কাজ করলেও নিজ দেশে তার ব্যাপক প্রভাব ছিল। তার সফলতাই তাকে খামেনির নজরে নিয়ে আসেন।
থিংকট্যাংক সেঞ্চুরি ফাউন্ডেশনের গবেষক দিনা ইসফান্দিয়ারি বলেন, প্রেসিডেন্টের চেয়েও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন। ইরানের সব দল-উপদলের সঙ্গে তিনি কথা বলতেন। শীর্ষ ধর্মীয় নেতার সঙ্গে তার সরাসরি যোগাযোগ ছিল। আর ইরানের আঞ্চলিক নীতির দায়িত্বে ছিলেন।

এরপর নিরাপত্তা বাহিনীর ছায়ার জগত থেকে প্রকাশ্য জনপ্রিয় ব্যক্তিতে পরিণত হন সোলাইমানি। তাকে দেশপ্রেমিক ও ধার্মিক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। সম্প্রতি যুদ্ধক্ষেত্রে সেনাদের সঙ্গে সেলফির অনুরাগী হয়ে পড়েছিলেন তিনি। এতে তার প্রেসিডেন্ট হওয়ার উচ্চাভিলাষ আলোচনায় চলে আসে। তবে এমন আকাক্সক্ষার কথা সবসময়ই অস্বীকার করে আসছিলেন এই জেনারেল।

মানুষের কাছে সোলাইমানি ছিলেন যোদ্ধা, দার্শনিক ও পরম ধার্মিক ব্যক্তি। কিন্তু যুদ্ধের মাঠে ছিলেন চরম বাস্তববাদী। সেই সোলাইমানিকেই কঠিন পরিণতির মুখোমুখি হতে হলো। চলতি সপ্তাহে মার্কিন গুপ্তহত্যায় নিহত হন ইরানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনপ্রিয় ব্যক্তি মেজর জেনারেল কাসেম সোলাইমানি।
আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি বিপ্লবী গার্ডস বাহিনীর কমান্ডার ও আল-কুদস ফোর্সের প্রধান ছিলেন। কিন্তু অনানুষ্ঠানিকভাবে তিনি মধ্যপ্রাচ্যের মিত্র রাজনীতিবিদ ও বিশাল ছায়া মিলিশিয়া বাহিনীরও নেতা ছিলেন।

ইরাকের বাগদাদ বিমান বন্দর থেকে বেরিয়ে আসার সময় তার ওপর ড্রোন হামলা চালায় মার্কিন বিমান বাহিনী। প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন ক্ষমতাচ্যুত ও হত্যাকান্ডের শিকার হওয়ার পর ইরাককে তার মতো করে কেউ নতুন আকার দিতে পারেনি।

দেশটিতে তিনি সরকার গঠন ও নীতি নির্ধারণ করেছেন। মার্কিন বাহিনীকে দুর্বল করে দিতে কয়েক বছর ধরে হামলার অভিযোগও করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে।
এক দশক আগে ইরাকে সদ্য নিযুক্ত মার্কিন কমান্ডারকে একটি বার্তা পাঠিয়ে বলেছিলেন, প্রিয় জেনারেল (ড্যাভিড) পেট্রাউস, আপনার জানা উচিত যে ইরাক, লেবানন, গাজা ও আফগানিস্তান সংশ্লিষ্ট ইরানের নীতি আমি নিয়ন্ত্রণ করি।

তখন সিরিয়া এই তালিকায় ছিল না। কিন্তু কয়েক বছর পরে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে একজন গোয়েন্দা প্রধানের ছায়া থেকে বৈশ্বিক আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসেন তিনি। প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে তার ভূমিকার জন্যই এমনটি ঘটেছে। এরপর বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সঙ্গে তার নাম জড়িয়ে পড়ে।



 

Show all comments
  • Mohammed Kowaj Ali khan ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ৬:৪১ পিএম says : 0
    সুলাইমানির মারাত্বক এবং বড় ভূল মাথায় পাগড়ি, টুপি ব্যবহার না করা। অলৌকিক ঘটনা লন্ডনে আমাদের জুয়েলারস ২০১৩ সালে যখন ঢাকাতি হয় ( Kowaj jewellers 310 Bethnal Green Road London E2 0AG )তখন আমার মাথায় ছিলো টুপি ঢাকাত আমাকে আক্রমণ করে অনেক উজনের হামার দিয়ে। ইনশাআল্লাহ। আমাকে আল্লাহতা'আলা রক্ষা করেন, আমার মাথায় ছিলো টুপি। ইসলাম ধর্ম শান্তি,ইসলাম মুক্তি, ইসলাম শিফা, ইসলাম রাজনীতি, ইসলাম শক্তি, ইসলাম সম্পদ। ISLAM ALL IN ONE. INSALLAH.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইরান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ