Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সোলাইমানি হত্যায় বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ৩:৫৬ পিএম

ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার কাসেম সোলাইমানি হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই উদ্বেগ বেড়েছে পুরো বিশ্বে। বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন এর ফলে নতুন করে আরেকটি যুদ্ধ দেখতে যাচ্ছে বিশ্ববাসী। এদিকে এই ঘটনার পর মধ্যপ্রাচ্যে আরও চার হাজার সেনা মোতায়েন করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

সোলাইমানিকে হত্যায় যেমন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিকরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন, তেমনি বিশ্বের বড় বড় শক্তিগুলোতে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সোলাইমানিকে হত্যার নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, সিরিয়া, চীন ও ইউরোপিয়ান কাউন্সিল। তবে প্রতিক্রিয়া দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করেছে বৃটিশ সরকার।

খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিন্দার মুখে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেট দলের নেতারা এই হত্যাকাণ্ডকে ট্রাম্পের বোকামি বলে ‘আখ্যা’ দিয়েছেন। আর মার্কিন সিনেটররা দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধের নির্দেশ দেয়ার ক্ষমতা প্রত্যাহার করে নিতে মার্কিন কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ডেমোক্রেট নেতা জো বাইডেন এক টুইট বার্তায় বলেন, হামলার কারণে মধ‌্যপ্রাচ‌্যে আমরা বড় ধরনের সংঘাতে পড়ে যেতে পারি। তবে এই হত্যা করার জন্য ট্রাম্পের প্রশংসা করছেন অনেক রিপাবলিকান নেতা। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পে এক টুইট বার্তায় জানান, সোলাইমানি নিহত হওয়ার পর বাগদাদে নাচানাচি করছে মানুষ।

এদিকে সোলাইমানি হত্যায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সঙ্গে এক ফোনালাপে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ সময় ম্যাখোঁও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ফ্রান্স এক বিবৃতিতে জানায়, এ হামলা পৃথিবীকে আরও বিপজ্জনক স্থানে নিয়ে যাচ্ছে।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক বিবৃতির মাধ্যমে জানায়, মধ্যপ্রাচ্যে আর কোনো যুদ্ধ হলে সামলাতে পারবো না। তিনি বিশ্বনেতাদের সংযমী হতে আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে সোলাইমানিকে হত্যা করার জন্য ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, ইসরায়েলের যেমন আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে তেমনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও একই অধিকার রয়েছে।

সোলেইমানি হত্যার ফলে ভয়াবহ যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী আদিল আবদুল-মাহদি। আর চীন ও ব্রিটেন দুই দেশকেই সংযম থাকার আহ্বান জানিয়েছে।

ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান, এই হত্যাকাণ্ডের কঠিন প্রতিশোধ নেওয়া হবে।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এই হত্যাকাণ্ড মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনাকে বৃদ্ধি করবে। জেনারেল কাসেম সোলাইমানি হত্যাকে একটি ‘অ্যাডভেঞ্চারিস্ট’ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে রাশিয়া। দেশটির রাষ্ট্র পরিচালিত বার্তা সংস্থা তাস’কে এ কথা বলেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কূটনীতিক। রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির প্রধান যুক্তরাষ্ট্রের ওই বিমান হামলাকে একটি ভুল পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, এটা হামলাকারীদের বিরুদ্ধেই বুমেরাং হতে পারে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ইউরোনিউজ।

এতে বলা হয়, শুক্রবার কোনস্টান্টিন কোসাচেভ তার ফেসবুকে লিখেছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে সমাধানের শেষ আশাটুকুও ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেছেন, এখন ইরান তার পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পদক্ষেপ দ্রুততর করতে পারে, যদিও এর আগে তাদের এমন পরিকল্পনা ছিল না। রাশিয়া ইস্ট ওয়েস্ট সেন্টারের স্ট্রাজেটিক স্টাডিজ অ্যান্ড এনালাইসিসের পরিচালক ভ্লাদিমির সন্তেকোভ বলেছেন, সোলাইমানিকে হত্যা একটি বড় ভুল। হতে পারে পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টারা পুরোপুরি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অবহিত করেন নি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে। এ বিষয়ে মার্কিনিরা কোনো স্ট্রাটেজিক অবস্থান নেয় নি। কিন্তু কৌশলগত দিক দিয়ে এটা একটা ভুল। এর ফলে ইরানে নতুন করে মার্কিন বিরোধিতা উসকে উঠবে। নির্বাচনী প্রচারণায় ইরানের সঙ্গে সমঝোতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তাতে আঘাত লাগবে। এর ফলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে তার অংশীদারদের সম্পর্কে টান ধরতে পারে।

ওদিকে হত্যাকান্ডের পর উভয় পক্ষকে শান্ত ও বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র চীন। তারা এ ঘটনায় উচ্চ মাত্রায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জেং শুয়াং ৩রা জানুয়ারি এমন কথা বলেন। এতে তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তির ব্যবহারের সব সময় বিরোধিতা করে চীন। উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার বিরুদ্ধে তারা সতর্ক করেছে। ইরানকে একঘরে করে দেয়া এবং তার অর্থনীতিকে ধসিয়ে দিতে যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রচেষ্টা তার বিরোধিতা করে আসছে সেব দেশ, তার মধ্যে অন্যতম চীন। গত মাসে ভারত মহাসাগরে প্রথমবারের মতো ইরান ও রাশিয়ার নৌবাহিনীর সঙ্গে মহড়ায় যোগ দিয়েছে চীন।

হত্যাকান্ডকে ঘিরে উত্তেজনা বৃদ্ধিতে উদ্বেগ জানিয়েছে ফ্রান্স। দেশটির পররাষ্ট্র বিষয়ক উপমন্ত্রী আমেলি ডি মন্টচালিন বলেছেন, আমরা ঘুম থেকে উঠলাম আরো বিপজ্জনক এক পৃথিবীতে। সামরিক উত্তেজনা সব সময়ই বিপজ্জনক। এই উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর পরে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। তিনি নতুন বিপজ্জনক উত্তেজনা এড়ানোর পক্ষে এবং সবাইকে বিরত থাকার অনুরোধ করেন।

বৃটিশ সরকার সতর্কতার সঙ্গে বলেছেন, আরো যুদ্ধ আমাদের কারো পক্ষে যাবে না। বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোমিনিক রাব বলেছেন, কাসেম সোলাইমানি নেতৃত্বাধীন ইরানের কুদস বাহিনী যে আগ্রাসী হুমকি হয়ে আছে, সে বিষয়টি সব সময়ই স্বীকার করে বৃটেন। তবে এই বিবৃতিতে ওই হত্যাকান্ডের পক্ষে বা বিপক্ষে সুনির্দিষ্ট কোনো মন্তব্য করা হয় নি।

কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে জার্মানি। বলা হয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি ভয়াবহ এক উত্তেজনাকর অবস্থায় উপনীত হয়েছে। এই সংঘাত শুধুমাত্র কূটনৈতিক উপায়েই সমাধান করা যেতে পারে।

তবে ইরান এরই মধ্যে তেলবাহী ট্যাংকার ও সউদী আরবের তেল স্থাপনায় যে হামলা করেছে, সেদিকে ইঙ্গিত করে জার্মান সরকারের মুখপাত্র উলরিক ডেমার মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ওইসব ঘটনার মধ্য দিয়ে সামরিক উস্কানি দিয়েছিল ইরান। তারই জবাবে যুক্তরাষ্ট্র এমন হামলা চালিয়েছে।

ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল যেকোনো মূল্যে সব পক্ষকে উত্তেজনা এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইরাকে সহিংসতা থেকে পুরো অঞ্চলে তা ছড়িয়ে পড়তে পারে।

শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) ইরাকের বাগদাদে মার্কিন বিমান হামলায় নিহত হয় ইরানের কুদস বাহিনীর প্রধান জেনারেল কাসিম সোলাইমানি। হত্যার কিছুক্ষণ পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দফতর পেন্টাগন হামলার দায় স্বীকার করে। সূত্র: রয়টার্স, আল-জাজিরা।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইরান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ